অথবা, অগাস্টিন কিভাবে ন্যায়তত্ত্বটিকে ব্যাখ্যা করেছেন তা আলােচনা কর।
ভূমিকাঃ মধ্যযুগীয় রাষ্ট্রদর্শনে সেন্ট অগাস্টিন একটি বিশিষ্ট নাম। গ্রীক ও রােমান সভ্যতা এবং খ্রিষ্টীয় সভ্যতার সন্ধিস্থলে দাঁড়িয়ে সেন্ট অগাস্টিন এই পৃথিবীর মানুষের জন্য এক অভয়বাণী উচ্চারণ করেন। তার রচনাবলীর মধ্যে ‘De civitate Die’ গ্রন্থ হচ্ছে সর্বাধিক উল্লেখযােগ্য। এ গ্রন্থে তিনি রাজনৈতিক দর্শন সম্পর্কে আলােচনা করেন। তিনি যেসকল তত্ত্ব দাঁড় করেছেন তার মধ্যে ন্যায়বিচার তত্ত্বটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অগাস্টিনের ন্যায়তত্তঃ ন্যায়বিচার সম্পর্কে অগাস্টিনের ধারণা হলাে এই যে, নির্দিষ্ট কোনাে প্রতিষ্ঠানের সদস্যবৃন্দ যখন উক্ত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গতি বিধান করে তাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং উক্ত ব্যবস্থা কর্তৃক আরােপিত কর্তব্য ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকে, তখন বলা যায় যে, উক্ত প্রতিষ্ঠানে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানের সদস্যবৃন্দ সকলেই ন্যায়পরায়ণ। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠান যদি সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান না হয়ে উচ্চতর কোনাে প্রতিষ্ঠানের অংশবিশেষ হয় তবে এই ন্যায়বিচার হতে পারে না, তা হবে আপেক্ষিক ন্যায়বিচার। আগাস্টিনের মতে, সত্যিকার অর্থে ন্যায়বিচার সেই রাষ্ট্রে সম্ভবপর নয় যা খ্রিষ্টীয় গীর্জার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় অর্থাৎ যে রাষ্ট্র খ্রিষ্টান রাষ্ট্র নয়।
অগাস্টিনের ন্যায়তত্ত্বের বিভিন্ন দিকসমূহঃ মধ্যযুগীয় রাষ্ট্র দার্শনিক অগাস্টিনের ন্যায় তত্ত্বটিকে বিশ্লেষণ করলে নিম্নেত্ত দিকসমূহ স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
(১) পরিবার বা প্রতিষ্ঠানঃ অগাস্টিনের ন্যায় তত্ত্বটিকে বিশ্লেষণ করলে পরিবার বা প্রতিষ্ঠান স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তিনি মনে করেছেন পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত। তার মতে পরিবারের সদস্যদের যে কর্তব্য ও দায়িত্ব রয়েছে তা যদি পালন না করে চলে তবে উক্ত সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না এবং পরিবারের সদস্যবৃন্দ যারা পরােক্ষভাবে সমাজেরও সদস্য তারাও ন্যায়পরায়ণ থাকে না।
(২) দায়িত্ব কর্তব্যঃ অগাস্টিনের মতে রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার তখনই প্রতিষ্ঠিত হয় যখন ওই রাষ্ট্রের বিভিন্ন শ্ৰেণী বা সদস্যবৃন্দ নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততার সাথে তাদের জীবনের ক্ষেত্রে নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় প্রতি পরিপূর্ণ আনুগত্য প্রকাশ করে।
(৩) রাষ্ট্রঃ অগাস্টিন তার ন্যায় তত্ত্বকে ব্যাখ্যার জন্য রাষ্ট্রের আশ্রয় নিয়েছেন। ন্যায়তত্ত্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাষ্ট্র হলাে একটি দৈব সংস্থা। তার মতে পার্থিব কোনাে দৈব রাষ্ট্রে কিংবা কোনাে প্যাগানন রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে। না। চূড়ান্ত ও সর্বোচ্চ ন্যায় বিচার একমাত্র বিধাতার রাষ্ট্রের একক ও অনন্য বৈশিষ্ট্য।
(৪) স্রষ্টাঃ ন্যায়তত্ত্বে মধ্যযুগীয় দার্শনিক অগাস্টিন স্রষ্টার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন। ন্যায়বিচার কেবল সেই রাষ্ট্রেই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে যেখানে জনগণ এবং রাষ্ট্র খ্রিষ্টীয় চার্চের নির্দেশানুযায়ী স্রষ্টার আনুগত্য স্বীকার করে চলে।
(৫) সম্পত্তিঃ পঞ্চম শতাব্দী নাগাদ অবহেলিত লােকদের হাতে এত বেশী সম্পদ সৃঞ্চিত হয়েছে যে, স্বাভাবিকভাবে এত বেশীর মালিকানা ন্যায়সঙ্গত কিনা সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উদ্ভব হয়। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, খােদা সকল মানুষকে তার ভােগের জন্য সম্পত্তি দান করেছেন এবং মানুষ তার অভাব পূরণের জন্য সম্পত্তির অংশ গ্রহণ করতে পারবে কিন্তু তা হতে হবে ন্যায়সঙ্গত।
পরিশেষঃ আলােচনার সুপরিসরে পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, সেন্ট অগাস্টিনের ন্যায়বিচার তত্ত্ব তার, রাজনৈতিক তত্ত্বসমূহের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি তৎকালীন পাপাচারে ক্লিষ্ট রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে, শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিলেন।
Leave a comment