অথবা, অকল্যাণ কী?
ভূমিকাঃ মানবজীবনে মঙ্গল ও অমঙ্গল উভয়ই উপস্থিত। মঙ্গল ও অমঙ্গল হলো মানুষের অভিজ্ঞতালব্ধ দু’টি তথ্য। পরিনামদর্শিতা এ জীবনে সৎকাজের সঙ্গে সুখের এবং অসৎ কাজর সাথে শাস্তির সমন্বয় সাধন করে। তবে এ সমন্বয় এই কিংবা পরজীবনে ঘটা সম্ভব। তবে এরূপ সমন্বয় সাধানের ফলে নৈতিক ন্যায়পরতাকে সব সময় রক্ষা করা এ জগতে সম্ভব নয়। এ জগত কেবল নৈতিক শিক্ষা ও শিক্ষানবিসের স্থানমাত্র। কিন্তু আমাদের জীবনে নৈতিক পরিণামদর্শিতাই অমঙ্গল বা অকল্যাণ ডেকে আনে। আর এই অমঙ্গল বা অকল্যাণ হলো আমাদের আলোচ্য বিষয়।
অমঙ্গল / অকল্যাণের সংজ্ঞা: অম্ল বা অকল্যাণ বলতে আমরা মন্দ, অশুভ, ক্ষতিকর, অবাঞ্ছিত, বিরক্তিকর ও দোষণীয় কিছুকে বুঝে থাকি। যেমন রোগ, শোক বা দুঃখ। এগুলো মানব জীবনের মন্দ, অশুভ, ক্ষতিকর ও অবাঞ্চিত দিক প্রকাশ করে থাকে বলে এর আমাদের কাছে অকল্যাণ হিসেবে পরিচিত। অমঙ্গল বা অকল্যাণ বলতে কিন্তু নঞর্থক কোনো কিছুর নির্দেশ করে না বরং অকল্যাণ একটি সদর্থক ও বাস্তব ধারণা। তাই আমরা সদর্থকতার বাস্তবতাকে অস্বীকার করতে পারি না। আমাদের অন্যান্য বাস্তব সমস্যা যা আমরা অভিজ্ঞতায় পাই যেমন: মন্দ, অশুভ, দুঃখ, বেদনা, ব্যর্থতা ইত্যাদির। একইরকমভাবে অকল্যাণও বিদ্যমান। তাই এগুলোকে মিথ্যা জ্ঞান বলে ওড়িয়ে দেয়া সম্ভব নয়। বাস্তবতার আলোকে বিচার করলে একথা প্রমাণিত হয় যে, মানব জীবনে কল্যাণ ও অকল্যাণের ধারণাটি পরস্পর সাপেক্ষ।
প্রমাণ্য সংজ্ঞাঃ অকল্যাণ সম্পর্কে একটি প্রমাণযোগ্য ও তথ্যনির্ভর সংজ্ঞা পরিলক্ষিত হয় ভারতীয় দর্শনের বৌদ্ধ দর্শনে। বৌদ্ধ দর্শনের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ তার শিষ্যদের বলেন, পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ যে পরিমাণ অশ্রু বিসর্জন দিয়েছেন তার সাথে পৃথিবীর চার মহাসাগরের সমস্ত জলরাশির তুলনা করা হলে দেখা যাবে তোমরা যা আশা করেছিল তা হয়নি। তোমরা যা চেয়েছো তা পাওনি। আর এ কারণে তোমরা অশ্রু ঐ জলরাশির চেয়েও বেশি হবে। তিনি আরো বলেছেন পৃথিবী দুঃখময়, প্রিয়-বিয়োগ, অপ্রিয়-যোগ, জরা-জন্ম মৃত্যু সবই দুঃখের বিষয়। এমনকি আপাতদৃষ্টিতে যাকে আমরা দুঃখ মনে করি তার মধ্যে দুঃখের বীজ নিহিত।
লাইবনিজ বলেন, আমরা যাকে অকল্যাণ বলি তা আসলে আমাদের সসীম বিচারবুদ্ধি সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির যৌক্তিক ফলশ্রুতি মাত্র।
পরিশেষঃ সুতরাং উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, মানবিক জীবনের জন্য ক্ষতিকর; অশুভ, মন্দ বা, অবাঞ্ছিত কোনোকিছুকে অকল্যাণ বলা হয়। দর্শনে অকল্যাণ প্রত্যয় ব্যাপক অর্থে গ্রহণ করা হয়। এই যুক্তিতে, কোনো শোনো দার্শনিক অকল্যাণ সমস্যাকে একটি সার্বিক সমস্যা বলেছেন, কল্যাণের ধারণার ন্যায় অকল্যাণের ধারণাটিও আমাদের অভিজ্ঞতায় অঙ্গীভূত ও বাস্তব। তাই এই অকল্যাণের ধারণাটিকে আমরা অস্বীকার করতে পারি না।
Leave a comment