হলদিয়া বন্দর শুধুমাত্র হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের উন্নতির সহায়ক নয়, পশ্চিমবঙ্গসহ সমগ্র পূর্ব ভারতের অর্থনীতির উন্নতিতে এই বন্দরের গুরুত্ব অপরিসীম। এই বন্দর বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ, যেমন一
[1] কলকাতা বন্দরের পরিপুরক বন্দর : হুগলি নদীর নাব্যতা হ্রাসজনিত কারণে কলকাতা বন্দরকে বিরাট সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বড়াে বড়াে জাহাজগুলি অগভীর নদীপথ অতিক্রম করে কলকাতা বন্দরে প্রবেশ করতে পারত না, ফলে কলকাতা বন্দর ক্রমশ এক অপ্রধান বন্দরে পরিণত হচ্ছিল। তাই কলকাতা বন্দরকে এই অবলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য হলদিয়া বন্দর নির্মাণ করা হয়। বড়াে বড়াে জাহাজগুলি হলদিয়া বন্দরে পণ্য খালাস করে এবং সেখান থেকে ছােটা ছােটো জাহাজে অথবা সড়ক ও রেলপথের মাধ্যমে কলকাতা বন্দরে পাঠানাে হয়।
[2] বহির্বাণিজ্যের সুবিধা : হলদিয়া ভারতের প্রধান বন্দরগুলির মধ্যে অন্যতম। এই বন্দরের মাধ্যমে ভারতের বহির্বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে। পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ইউরােপের বিভিন্ন দেশের সাথে এই বন্দরের মাধ্যমে বাণিজ্য করা হয়ে থাকে। অপরিশােধিত খনিজ তেল, পাটজাত দ্রব্য, চা প্রভৃতি এই বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি করা হয়।
[3] পশ্চিমবঙ্গে শিল্পের উন্নত : পশ্চিমবঙ্গের শিল্পোন্নয়নে হলদিয়া বন্দর যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশ থেকে শিল্পের জন্য প্রয়ােজনীয় কাঁচামাল, রাসায়নিক দ্রব্য ও বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আমদানি এবং বিভিন্ন শিল্পজাত দ্রব্য রপ্তানি এই বন্দরের মারফত করা হয়। বিশেষত হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের উন্নতিতে হলদিয়া বন্দরের ভূমিকা বিশেষ উল্লেখযােগ্য।
[4] কর্মসংস্থান সৃষ্টি : হলদিয়া বন্দরের পশ্চাদভূমিতে শিল্পোন্নয়নের ফলে কর্মসংস্থানের সুযােগ অনেক বেড়েছে। বিশেষত রাসায়নিক ও ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে বহু লােকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এ ছাড়া বন্দরের বিভিন্ন বিভাগে কাজের জন্যও সেখানে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
[5] পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতি : হলদিয়া বন্দর স্থাপনের ফলে পরিবহণ ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে। হলদিয়া বন্দরে পণ্য আনা এবং বন্দর থেকে পণ্য বিভিন্ন জায়গায় পাঠানাের জন্য উন্নত সড়ক এবং রেল পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তােলা হয়েছে।
[6] অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের উন্নতি : অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের উন্নতিতেও হলদিয়া বন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। কারণ, হলদিয়া বন্দর থেকে ভারতের বিভিন্ন বন্দরে সহজেই জাহাজ চলাচল করায় পণ্য আদানপ্রদান সহজ হয়েছে।
[7] জাতীয় আয় বৃদ্ধি : হলদিয়া বন্দরের সাহায্যে শিল্প ও ব্যাবসাবাণিজ্যের উন্নতি ঘটায় এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাওয়ায় জাতীয় আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে।
-
হলদিয়া বন্দরে 12টি বার্থ গড়ে উঠলেও বর্তমানে ওটি বার্থে কাজকর্ম হয়।
-
বঙ্গোপসাগর থেকে হলদিয়া বন্দর পর্যন্ত অনেক স্থানে হুগলি নদীর নাব্যতা হ্রাস পেয়েছে।
-
শ্রমিক অসন্তোষ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতাজনিত কারণে বন্দরের কাজকর্ম প্রায়ই বন্ধ থাকে।
-
হলদিয়া বন্দর পরিচালনার ক্ষেত্রে নানারকম সমস্যা দেখা দিয়েছে। অনেক সময় বন্দর পরিচালনার ক্ষেত্রে ত্রুটিপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
-
উন্নতমানের ড্রেজারের সাহায্যে নদীবক্ষ থেকে পলি তােলা অত্যধিক খরচ সাপেক্ষ হওয়ায় নিয়মিত পলি অপসারণ করা হচ্ছে না।
-
ভারতের অন্যান্য অনেক বন্দরের তুলনায় হলদিয়া বন্দরের শুল্কহার অনেক বেশি।
-
হলদিয়া বন্দরে সমুদ্রগামী বড়াে বড়াে জাহাজের রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়ােজনীয় সুযােগসুবিধা যথেষ্ট কম।
Leave a comment