প্রশ্নঃ হযরত আলী (রা) ও মুয়াবিয়া (রা)-এর মধ্যে গৃহযুদ্ধের কারণ ও ফলাফল বর্ণনা কর।

অথবা, হযরত আলী ও মুয়াবিয়া (রা)-এর মধ্যে সংঘটিত গৃহযুদ্ধের বিবরণ দাও। এই যুদ্ধে মুয়াবিয়ার সাফল্যের.এবং আলীর ব্যর্থতার কারণগুলাে কী ছিল? বর্ণনা কর।

অথবা, সিফফিনের যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল আলােচনা কর। এ যুদ্ধে খলিফা হযরত আলী (রা)-এর ব্যর্থতার কারণ কী ছিল?

অথবা, সিফফিনের যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

উপস্থাপনাঃ ‘প্রত্যেক মুসলমান ভাই ভাই’-এ শাশ্বত বাণী কলুষিত করে ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছিল হযরত আলী (রা)-এর খেলাফতকালে। ফলে ইসলামের ইতিহাসে এক বিষাদময় অধ্যায়ের সূচনা হয়। হযরত আলী ও মুয়াবিয়া। (রা)-এর মধ্যে বেধে যায় ভ্রাতৃঘাতী লড়াই। এভাবে সমাপ্ত হয় খেলাফত, সূচনা হয় রাজতন্ত্রের। ঐতিহাসিকগণ বলেন- The second largest calamitous incident in the history of Islam.

আলী ও মুয়াবিয়ার মাঝে গৃহযুদ্ধ বা সিফফিনের যুদ্ধের কারণঃ

হযরত ওসমান (রা)-এর শাহাদাত, বিশৃঙ্খলা, অস্থিরতা এবং দলীয় বিদ্বেষ সর্বোপরি পারস্পরিক ভুল বুঝাবুঝির আবর্তে পড়েই মূলত আলী ও মুয়াবিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্বের সূচনা হয়। নিম্নে এর কতিপয় সুনির্দিষ্ট কারণ পেশ করা হলাে-

১. হযরত ওসমান (রা)-এর নির্মম হত্যাকাণ্ডঃ হযরত আলী (রা) খেলাফতে অধিষ্ঠিত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের মতাে মুয়াবিয়াও (রা) হযরত ওসমান (রা)-এর হত্যার সাথে সংশিষ্টদের আশু বিচার দাবি করেন। কিন্তু এ হত্যাকাণ্ড ব্যক্তি বিশেষের কাজ ছিল না বিধায় আলী (রা) দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে পরিস্থিতির উন্নতির জন্য অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। হযরত মুয়াবিয়া (রা) এরূপ সিদ্ধান্তের বিরােধিতা করেন। অনিবার্য পরিণতিতে গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত হয়।

২. ভূমি ও রাজস্বনীতি পরিবর্তনঃ হযরত আলী (রা) ভূমি ও রাজস্বনীতির পরিবর্তন সাধন করে অন্যায়ভাবে দখলীকৃত সকল জমি সরকারকে ফিরিয়ে দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। তাতে উমাইয়াদের বিশেষত মুয়াবিয়ার স্বার্থ বিঘ্নিত হয়। এ অবস্থায় প্রতিশােধ গ্রহণের অজুহাতে মুয়াবিয়ার পক্ষে খলিফার আদেশ অমান্য করা ছাড়া আর কোনাে উপায় ছিল না।

৩. উমাইয়া ও হাশেমী বিরােধঃ হযরত আলী ও মুয়াবিয়ার মধ্যে সংঘর্ষের অন্যতম কারণ ছিল উমাইয়া-হাশেমী বিরােধ। মুয়াবিয়া ছিলেন উমাইয়া এবং আলী ছিলেন হাশেমী গােত্রের। ওসমান (রা)-এর সময় উমাইয়াদের প্রভাব প্রতিপত্তি বিনষ্ট করার জন্য হাশেমীগণ যেমন তৎপর ছিল হাশেমী বংশীয় আলী ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে উমাইয়াগণও তেমনি এর ধ্বংস সাধনে লিপ্ত হয়।

৪. প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের অপসারণঃ ঐতিহাসিক মুইর বলেন, খেলাফত লাভের পর হযরত আলী (রা) সাম্রাজ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কুফা, বসরা, সিরিয়া ও মিসরের পূর্ববর্তী শাসনকর্তাদের পদচ্যুত করে তদস্থলে নতুন শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। এতে করে আলী ও মুয়াবিয়া (রা)-এর মধ্যে দ্বন্দ্ব ব্যাপকভাবে শুরু হয়।

৫. উমাইয়াদের সকল সম্পত্তি ফেরত নেয়াঃ ওসমান (রা) এর খেলাফতকালে উমাইয়াদের কেউ কেউ সরকারি সম্পত্তি জায়গির হিসেবে লাভ করেছিল। আলী (রা) তা ফিরিয়ে নিলে উমাইয়া বংশোদ্ভূত সিরিয়ার শাসনকর্তা মুয়াবিয়া (রা) আলী (রা)-এর বিরুদ্ধাচরণ শুরু করেন।

৬. সন্ধি প্রস্তাবঃ ঐতিহাসিক আমীর আলী বলেন, সাম্রাজ্যে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য খলিফা সরলভাবেই তালহা ও যােবায়েরের কাছে সন্ধির প্রস্তাব দেন। দুর্ভাগ্যবশত খলিফার পক্ষের লােকে এর বিরােধিতা করে। সে মুহূর্তে তারা আসে রাজি হলে ক্ষতির শঙ্কা করেন। ফলে উমাইয়া ও হাশেমী দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে এবং গৃহযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে।

৭. আয়েশা (রা)-এর বিরোধীতাঃ ঐতিহাসিক ওয়াটসন বলেন, হযরত আয়েশা (রা) তালহা ও যােবায়েরের কথায় প্ররােচিত হয়ে ওসমান, তার বিচারের জয় খালফার ওপর নির্ভর না করে আইন নিজের হাতে তুলে নেন।

৮. রাজধানী পরিবর্তনঃ রাজধানী মদিনা থেকে কুফায় স্থানান্তর করলে মদিনার মুসলমানরা অসন্তুষ্ট হন। ফলে তিনি সর্বসাধারণ মুসলমানের সহযোগিতা ও সমর্থন থেকে বঞ্চিত হন। অন্যদিকে বিপদের সময় কুফাবাসীর সহায়তা তিনি পাননি।

৯. মুয়াবিয়াকে বহিস্কারঃ উত্তেজনাময় পরিস্থিতির অবসান হলে ওসমান (রাঃ) হত্যার বিচারের আশ্বাস দিলেও মুয়াবিয়া উসকানিমূলক কার্যক্রম চালাতে থাকে। অবশেষে আলি (রাঃ) অবাধ্যতার অবসানকল্পে সিরিয়ার শাসনকর্তার পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করেন।

৯. আলির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানঃ উভয়পক্ষের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি হলে হযরত আলি (রাঃ) সর্বশেষ শান্তি প্রস্তাবসহ মুয়াবিয়ার নিকট পত্র পাঠালে মুয়াবিয়া (রাঃ) তা প্রত্যাখ্যান করে হযরত আমর ইবনুল আসের সাথে পরামর্শক্রমে হরত আলীর (রাঃ) বিরুদ্ধে যুদ্ধের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।

১০. তালহা ও যুবায়েরের বিরোধীতাঃ হযরত তালহা ও যুবায়ের (রা) খলিফা আলি (রা)-এর কাছে হযরত ওসমান হত্যার বিচার প্রার্থনা করেন। খলিফা তৎক্ষণিকভাবে তাদের এ দাবি পূরণে সক্ষম হননি। অধিকন্তু তিনি প্রাদেশিক শাসকদের পরিবর্তন করলে তারা প্রকাশ্যে বিরােধিতা শুরু করেন।

১১. খারেজী সম্প্রদায়ের উৎপত্তিঃ খারেজি সম্প্রদায়ের উৎপত্তি, বিদ্রোহ ও পরবর্তী নাহরাওয়ানের যুদ্ধে খলিফা আলী (রা)-এর শক্তি ক্ষমতা বহুলাংশে ক্ষতিগ্রস্থ এবং হযরত মুয়াবিয়া (রা)-এর অবস্থান সুদৃঢ় হয়।

১২. দ্বন্দের চূড়ান্ত রূপঃ আলী ও মুয়াবিয়ার মধ্যকার দ্বন্দ্বের পরিসমাপ্তি ঘটে রক্তক্ষয়ী সিফফিনের যুদ্ধের মাধ্যমে, যার পরিণামে ইসলামের ঐতিহ্যে নেমে আসে ধ্বস। নবুয়তের পদাঙ্কানুসারে খেলাফত চলার পরিবর্তে তা রাজতন্ত্রে পর্যবসিত হওয়ার মঞ্চ তৈরি হতে থাকে।

সিফফিনের যুদ্ধের ঘটনাঃ

১. হযরত আলী (রা)-এর আনুগত্য অস্বীকারঃ হযরত আলী (রা) মুয়াবিয়াকে আনুগত্যের আহ্বান জানালে তিনি জবাবে চরম ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করে আনুগত্য অস্বীকার করেন। এতে হযরত আলী (রা) মুয়াবিয়াকে বরখাস্ত করলে তিনি ৬০,০০০ সৈন্য নিয়ে আলী (রা)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন।

২. সৈন্য সমাবেশঃ হযরত আলী (রা) মুয়াবিয়া (রা)-কে দমন করার জন্য ৬৫৭ খ্রিস্টাব্দে ৫০,০০০ সৈন্য নিয়ে সিরিয়া অভিমুখে রওয়ানা হলে মুয়াবিয়া (রা)-ও ৬০,০০০ সৈন্য নিয়ে সিফফিন প্রান্তরে উপস্থিত হন।

৩. মুয়াবিয়ার কৌশল অবলম্বনঃ ৬৫৭ সালের ২৬ জুলাই উভয়ের মধ্যে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধের দ্বিতীয় দিন মুয়াবিয়া (রা) পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হলে পরাজয় এড়ানাের জন্য তার নির্দেশে তার দলের লােকেরা বর্শা ও পতাকার সাথে কুরআন ঝুলিয়ে দেয়। তখন আলী (রা)-এর আল্লাহভীরু সৈনিকরা কুরআনের সম্মানে যুদ্ধে বিরতি দেন।

৪. দুমাতুল জান্দালের মীমাংসা বৈঠকঃ যুদ্ধবিরতির পর চলমান বিরােধ মীমাংসার উদ্দেশ্যে দুমাতুল জান্দালে উভয় পক্ষের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে হযরত আলী (রা)-এর পক্ষে মুসা আশআরী ও মুয়াবিয়া (রা)-এর পক্ষে আমর ইবনুল আস শান্তি প্রক্রিয়া বের করার উদ্দেশ্যে আলােচনায় বসেন। আলােচনার এক পর্যায়ে আমর ইবনুল আস (রা) হযরত আলী (রা)-কে পদচ্যুত করে হযরত মুয়াবিয়া (রা)-কে খলিফা ঘােষণা করেন। এতে আলীর দল থেকে ১২,০০০ লােক বের হয়ে চলে যায়। এরাই ইসলামের ইতিহাসে খারেজী নামে পরিচিত। পরবর্তীতে ৬৬১ খ্রিষ্টাব্দে হযরত আলী (রা) এ খারেজীদের হাতেই শহীদ হন।

সিফফিনের যুদ্ধের ফলাফলঃ

১. সাম্রাজ্যের বিভক্তিকরণ সন্ধিঃ দুমাতুল জাান্দালের সালিশী এবং খারেজী বিপ্লবের পরিপ্রেক্ষিতে হযরত আলী (রা) মুয়াবিয়ার সাথে ন্যক্কারজনক সন্ধি স্থাপন করে খেলাফতকে সংকুচিত করেন। এই সন্ধির শর্ত অনুসারে সিরিয়া ও মিসরের যাবতীয় কর্তৃত্ব মুয়াবিয়ার ওপরে ন্যস্ত হয়। সাম্রাজ্যের অবশিষ্টাংশে হযরত আলী (রা)-এর কর্তৃক বজায় থাকে।

২. খেলাফতের মর্যাদা লােপঃ হযরত আলী (রা) মুয়াবিয়ার সাথে সন্ধির মাধ্যমে খেলাফতকে দ্বিখণ্ডিত করেন। এতে খেলাফতের বৈশিষ্ট্য ও ভিত্তি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে খলিফা ও খেলাফতের ওপর মানুষের ভক্তি ও শ্রদ্ধা লােপ পেতে খাকে। এটা খেলাফতের মর্যাদা বিনষ্ট করে।

৩. চরমপন্থি সম্প্রদায়ের উদ্ভবঃ সিফফিনের যুদ্ধ, দামাতুল জান্দালের শঠতা, আলীর নমনীয় নীতি ইত্যাদির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে মুসলমানদের মধ্যে একদল চরমপন্থি সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়। এরা খারেজী ও শিয়া নামে পরিচিত।

৪. মুয়াবিয়ার ক্ষমতা সুসংহতঃ আলী ও মুয়াবিয়ার দ্বন্দ্বের ফলে মুয়াবিয়ার ক্ষমতা সুসংহত হয়। আলী (রা) নানাদিক দিয়ে সমালােচনার পাত্র হয়ে ওঠেন। এসব দুর্বলতার সুযােগে দূরদর্শী মুয়াবিয়া অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন।

৫. খারেজীদের উদ্ভবঃ দুমাতুল জান্দালের প্রহসনমূলক মীমাংসায় ক্ষিপ্ত হয়ে আলী (রা)-এর সমর্থক বারাে হাজার লােক তার দল ত্যাগ করে। ইসলামে এরাই খারেজী নামে পরিচিত। ৬৬১ খ্রিস্টাব্দে এদের দলের আবদুর রহমান ইবনে মুলসিম খলিফা হযরত আলী (রা)-কে হত্যা করলে মুয়াবিয়া (রা) নিজেকে খলিফা ঘােষণা দেন।

৬. রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠাঃ হযরত আলী (রা)-এর শাহাদাতের পর ক্ষমতার চাবিকাঠি হলেন মুয়াবিয়া (রা)। ক্ষমতা দখলের সাথে সাথে ইসলামী রাষ্ট্রের খেলাফত বিলুপ্ত হয়ে সূচনা হলাে রাজতন্ত্রের।

৭. বায়তুল মাল ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণতঃ পবিত্র খেলাফত অবসানের সাথে সাথে বায়তুল মাল রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিতদের ব্যক্তিগত ধনভাণ্ডারে পরিণত হয়।

৮. সিরিয়ার প্রাধান্য বৃদ্ধিঃ সিফফিনের যুদ্ধের ফলে কেন্দ্রীয় রাজধানী স্থানান্তরিত হওয়ায় মুসলিম বিশ্বে সিরিয়ার প্রাধান্য উত্তরােত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে।

৯. অসংখ্য মুসলমানের প্রাণনাশঃ হযরত আলী (রা) ও মুয়াবিয়া (রা)-এর মধ্যকার সংঘর্ষে অসংখ্য মুসলমানের প্রাণনাশ এবং ইসলামের ঐক্য, সংহতি ও সৌভ্রাতৃত্বের আদর্শবােধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

১০. কুরআন হাদীসের অবমাননাঃ ঐতিহাসিক হিট্টি বলেন, এ যুদ্ধের ফলে কুরআন হাদীস অবমাননার প্রবণতা শুরু হয়।

১১. সুদূরপ্রসারী তাৎপর্যঃ আলী ও মুয়াবিয়ার সংঘর্ষের ফলাফল ছিল অত্যন্ত সুদূর প্রসারী ও তাৎপর্যবহ। বিশেষত সংঘর্ষের পরবর্তীকালে আলী (রা)-এর সামরিক ও রাজনৈতিক দুর্বলতা প্রকাশ পেলে বিভিন্নস্থানে বিদ্রোহ বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। মুয়াবিয়ার প্রতিনিধি আমর মিসর দখল করে নেয়। সর্বোপরি এর সামগ্রিক ফলাফল মুসলিম সাম্রাজ্যের জন্য মঙ্গলজনক ছিল না।

মুয়াবিয়ার (রা) সাফল্য ও আলী (রা)-এর ব্যর্থতার কারণঃ

১. কূটনৈতিক দুরভিসন্ধিঃ দুমাতুল জান্দালের কূটনৈতিক দুরভিসন্ধি হযরত আলী (রা)-এর ব্যর্থতার মূল কারণ।

২. উষ্ট্রের যুদ্ধের মর্মান্তিক ঘটনাঃ উষ্ট্রের যুদ্ধে বিশিষ্ট সাহাবী হযরত তালহা ও যুবায়েরের শাহাদাত খেলাফত অনুসারীদের ব্যর্থতার কারণ বলে প্রতিভাত হয়।

৩. সিরিয়ায় মুয়াবিয়ার জনপ্রিয়তাঃ মুয়াবিয়া (রা) দীর্ঘ বিশ বছরকাল ধরে সিরিয়ায় শাসনকার্য পরিচালনা করেন। ফলে তিনি সেখানে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।

৪. খারেজী সম্প্রদায়ের উৎপত্তিঃ ঐতিহাসিক যুহরী বলেন, খারেজীদের উৎপত্তি হযরত আলী (রা)-এর অবস্থান দুর্বল করে তােলে। ফলে মুয়াবিয়া (রা) সাফল্য লাভ করেন।

৫. রাজধানী স্থানান্তরঃ ইসলামী রাষ্ট্রের রাজধানী মদিনা থেকে কুফায় স্থানান্তর হযরত আলী (রা)-এর সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না বলে ঐতিহাসিকদের অনেকে মনে করেন।

৬. মুয়াবিয়ার বিচক্ষণতাঃ হযরত আলী (রা) অপেক্ষা মুয়াবিয়া (রা) ছিলেন অধিক বিচক্ষণ কূটনীতিক ও প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ। অন্যদিকে হযরত আলী (রা) ছিলেন সহজ সরল প্রকৃতির মানুষ। ফলে মুয়াবিয়ার রাজনৈতিক বিচক্ষণতার কাছে আলী (রা) পরাস্ত হন।

৭. অন্যান্যঃ এছাড়া হযরত আলী (রা) অপেক্ষা হযরত মুয়াবিয়া (রা) ছিলেন বিচক্ষণ সমরকুশলী ও বিজেতা। তাই হযরত আলী (রা) মুয়াবিয়া (রা)-এর বিচক্ষণতার মােকাবিলায় ব্যর্থ হন।

উপসংহারঃ সিফফিনের যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে এক কলঙ্কময় অধ্যায়ের সূচনা করে। এ যুদ্ধ ইসলামী খেলাফতের গৌরবােজ্জ্বল ঐতিহ্য ম্লান করে দেয়।