অথবা, হবসের সার্বভৌম তত্ত্বের খারাপ দিকগুলি কী কী?
ভূমিকাঃ বৃটেনের যেসকল দার্শনিক তাদের উন্নত চিন্তাধারার সোনালী ফসলে চিন্তা ক্ষেত্রের গোলা ভরেছেন তাদের মধ্যে টমাস হবস্ এক অনন্য প্রতিভা। তার মত এমন সূক্ষ্মজ্ঞান, যুক্তিপূর্ণ বিচারবুদ্ধি ও বাস্তব চিন্তাধারা অতি অল্পসংখ্যক চিন্তানায়কের মধ্যেই মেলে। ষোড়শ শতাব্দীতে তার চিন্তার ক্ষেত্রে বিরাট আলোড়ন সৃষ্টি করে যা রাজনৈতিক চিন্তাধারার কর্মবিকাশের পথ প্রশস্ত করে।
হবসের সার্বভৌম তত্ত্বের খারাপ দিকঃ হবসের সার্বভৌম তত্ত্ব বিভিন্ন সময়ে অপ্রশংসিত বা খারাপ দিকগুলো হলোঃ
(১) একতরফা চুক্তিঃ হবসের সার্বভৌম চুক্তিতে রাজা কোনো ভাবেই অংশগ্রহণ করেন না। ফলে এটি একতরফা চুক্তিতে পরিণত হয়েছে। অথচ জন লক বলেছেন, চুক্তি কখনও একতরফা হতে পারে না। বর্তমানেও আমরা রাষ্ট্রীয় চুক্তিতে লক্ষ্য করি যে চুক্তি সব সময় দ্বিপাক্ষিক অথবা বহুপাক্ষিক হয়ে থাকে।
(২) স্বৈরাচারের নামান্তরঃ হবসের সার্বভৌম চুক্তির ফলে রাজার জনগণের নিকট কোনো জবাবদিহিতা না থাকায় সার্বভৌম শাসক স্বৈরাচারী হয়ে ওঠেন। এভাবে হবস তার সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে তৎকালীন ইংল্যান্ডের স্টুয়ার্ট রাজাদের স্বেচ্ছাচারী শাসনের পক্ষ সমর্থন করেন।
(৩) ব্যক্তি স্বাধীনতার পরিপন্থীঃ হবসের সার্বভৌম তত্ত্বটি চরম রাজতন্ত্রকে সমর্থন করে বলে এটি ব্যক্তি স্বাধীনতার পরিপন্থী। এই তত্ত্বটি জনগণের কোনো অধিকার স্বীকার না করায় এর দ্বারা ব্যক্তি স্বাধীনতা পদদলিত হয়েছে।
(৪) জনগণের ক্ষমতাকে অস্বীকার করাঃ জনগণকে ক্ষমতাহীন ও অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাজার আনুগত্যের শৃঙ্খলে শৃঙ্খলিত করা হয়েছে যা বর্তমান প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় একেবারেই অচল।
(৫) দাসত্বের দলিলঃ হবসের চুক্তির মাধ্যমে যে রাষ্ট্র ও সার্বভৌম শক্তি সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে তা একটি দাসত্বের দলিল। এতে জনগণের মনুষ্যত্বকে অবমাননা করে হবস নিজেই নিজেকে দাসত্বে আবদ্ধ করেছেন।
(৬) বাস্তবতা বিবর্জিতঃ হবস যে সার্বভৌম শক্তি সৃষ্টি করেছেন তা এত অসীম, অবাধ ও অসাধারণ যে বাস্তবে এর কোনো অস্তিত্ব নেই। বর্তমান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এই তত্ত্ব একটি মূল্যহীন মতবাদে পরিণত হয়েছে।
(৭) অগণতান্ত্রিকঃ হবসের সার্বভৌমিকতা তত্ত্বে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার আভাস পাওয়া যায় না। কারণ তার তত্ত্বে বলা হয়েছে যে, জনগণ সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস নয়। কাজেই বলা যায় হবসের সার্বভৌমিকতা তত্ত্ব অগণতান্ত্রিক।
পরিশেষঃ হবস স্বৈরতন্ত্রকে স্বীকার করলেও জনস্বার্থকে অধিক গুরুত্ব প্রদান করেছেন। কেননা ইংল্যান্ডের তৎকালীন বিরাজমান অবস্থা মোকাবিলা করার জন্য হবসের সার্বভৌমিকতা তত্ত্ব বিশেষভাবে উপযোগী ছিল। তাছাড়া হবস সার্বভৌম শক্তির মাধ্যমে অবশ্যই আইন শৃঙ্খলা ও প্রজাগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেয়েছেন।
Leave a comment