[1] সংজ্ঞা: ১৯৯০-এর দশকে ভারতে কংগ্রেস সরকারের শাসনকালে দেশের অর্থনীতি প্রবল সংকটের মুখে পড়ে। এই সংকটকালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পি.ভি. নরসিমা রাও (১৯৯১-১৯৯৬ খ্রি.) এবং অর্থমন্ত্রী ড. মনমােহন সিংহ ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে ভারতের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আমূল সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করেন। এই কর্মসূচি সাধারণভাবে ‘অর্থনৈতিক উদারীকরণ’ নামে পরিচিত।

[2] নেহরুর উদ্যোগ: প্রেক্ষাপট-স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সমাজতান্ত্রিক আদর্শ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এসব পদক্ষেপের মধ্যে অন্যতম ছিল জাতীয়করণ, ধনীদের আয় ও সম্পদের ওপর করারােপ প্রভৃতি।

[3] নেহরু-পরবর্তী উদ্যোগ: ১৯৭০-এর দশকের শেষদিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মােরারজি দেশাই (১৯৭৭-১৯৭৯ খ্রি.) অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এগুলির মধ্যে অন্যতম হল—পণ্যমূল্য হ্রাস, ক্ষুদ্র শিল্পের প্রসারে উদ্যোগ প্রভৃতি। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে রাজীব গান্ধি (১৯৮৪-১৯৮৯খ্রি.) প্রধানমন্ত্রী হয়ে ভারতের অর্থনৈতিক নীতিতে কিছু সংস্কারের উদ্যোগ নেন। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে শেষপর্যন্ত তাঁকে এই সংস্কার কর্মসূচি থেকে পিছিয়ে আসতে হয়।

  • উদারীকরণ নীতি গ্রহণের কারণ: অর্থনীতিতে আঘাত–১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে ইরাক কুয়েত যুদ্ধসহ বেশকিছু আন্তর্জাতিক ঘটনার ফলে পেট্রোলিয়াম ও পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়। এই আঘাতে ভারতের অর্থনীতি সংকটে পড়ে।

  • দেউলিয়া রাষ্ট্র: উপসাগরীয় অঞ্চলে যুদ্ধজনিত কারণে সেখানে কর্মরত প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার ভারতীয় শ্রমিককে ভারত সরকার নিজের অর্থব্যয়ে দেশে ফিরিয়ে আনে। এই বিপুল সংখ্যক শ্রমিকদের মাধ্যমে যে পরিমাণ বৈদেশিক অর্থ ভারতে আসত তা বন্ধ হয়ে যায়। এই সংকট জনক পরিস্থিতিতে ১৯৯০-এ ভারতের অর্থনীতি দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অবশেষে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার ভারতকে ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে দেউলিয়া রাষ্ট্র বলে ঘােষণা করে। তাই ভারত সরকার দেশের অর্থনৈতিক সংকট দূর করার উদ্দেশ্যে অর্থনৈতিক উদারীকরণ কর্মসূচি গ্রহণ করে।

[4] উদারীকরণ কর্মসূচি:

  • [i] করব্যবস্থার সংস্কার ঘটিয়ে শুল্ক এবং সুদের হার হ্রাস করা হয়। 

  • [ii] বিভিন্ন একচেটিয়া অর্থনৈতিক কাজকর্মের অবসান ঘটানাে হয়। 

  • [iii] ভারতীয় অর্থনীতিতে সরাসরি আন্তর্জাতিক পুঁজি ও বিনিয়ােগের বাজারকে খুলে দেওয়া হয়। 

  • [iv] অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ হ্রাস কার হয়। 

  • [v] অর্থনীতিতে বেসরকারি উদ্যোগকে উৎসাহ দেওয়া হয়। 

  • [vi] মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। 

  • [vii] করব্যবস্থার সংস্কার সাধন করা হয়। 

  • [viii] আণবিক ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্র ছাড়া অন্যান্য সমস্ত উৎপাদনেই বিদেশি পুঁজির অবাধ বিনিয়ােগের সুযােগ সুবিধা প্রদান করা হয়।

[1] বাজার অর্থনীতি: অর্থনৈতিক উদারীকরণ নীতি গ্রহণের ফলে ভারতে মুক্ত বাজার অর্থনীতি গড়ে ওঠে। দেশে বিপুল পরিমাণ বিদেশি বিনিয়ােগ আসে।

[2] জি.ডি.পি.-র হার বৃদ্ধি: উদারীকরণের প্রভাবে ভারতীয় অর্থনীতিতে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ জি.ডি.পি. (Gross Domestic Product)-র হার বৃদ্ধি পায়।

[3] দারিদ্র হ্রাস: দেশের দারিদ্র্যের হার যথেষ্ট হ্রাস পেয়েছে। ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের হিসাব অনুসারে, ভারতের প্রায় ৩০ কোটি মানুষ অতিদারিদ্র্য অবস্থার কবল থেকে মুক্ত হয়।

[4] জীবনযাত্রার মানােন্নয়ন: নাগরিকদের জীবনযাত্রার মানােন্নয়ন ঘটে, সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পায় এবং খাদ্য সুরক্ষা অর্জিত হয়।

অর্থনৈতিক বৃদ্ধি: দ্রুততর অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হারে বিশ্বে ভারত দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে।