ওয়াল্টার স্কট-এর উপন্যাসের দুটি বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।
রোমান্টিক যুগের শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক হলেন স্যার ওয়াল্টার স্কট (১৭৭১-১৮৩২ খ্রিঃ)। তিনি প্রথম দিকে গাথাকাব্য রচনা করতেন। পরবর্তীকালে ঐতিহাসিক উপন্যাসের জনক হিসেবে ইংরেজি সাহিত্যের জগতে প্রতিষ্ঠিত হন। তাঁর উপন্যাসের মধ্যে কতকগুলি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। তার মধ্যে দুটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল ইতিহাসপ্রাণতা ও রোমান্টিকতা। উপন্যাসে তিনি মধ্যযুগীয় যে ঐতিহাসিক চিত্র অঙ্কন করেছেন তা কেবলমাত্র প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণাভিত্তিক নয়—তার মধ্যে অন্তরের জারণ স্পষ্ট অনুভূত। ইতিহাসপ্রাণতার আড়ালে সেখানে মানুষ ও মানুষের জীবনযাত্রা চাপা পড়ে যায়নি। বস্তুত তাঁর ঐতিহাসিক উপন্যাস প্রাচীন তথ্যের সঙ্গে আধুনিক কল্পনা ও মানবতাবোধের মিশ্রণে জাত। তাই ইতিহাসপ্রাণতার মধ্যেও যে বৈশিষ্ট্যটি তাঁর রচনায় সবিশেষ মূল্য পেয়েছে তা হল, প্রাণাবেগ সমর্থিত বিশ্বাসযোগ্যতা, জীবনবাদের কল্পনাপুষ্ট অথচ সুনিশ্চিত প্রত্যয়। তাঁর ইতিহাস-পরিধি দ্বাদশ থেকে অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত ব্যাপী প্রসারিত কিন্তু এই কালসীমার প্রেক্ষাপটে তিনি রচনা করেছেন আত্মিক সহমর্মিতায়। ফলে অতীতের বাস্তব জীবনে রোমান্টিকতা যে অবিচ্ছেদ ছিল তা প্রতিপাদিত হয়েছে স্কটের উপন্যাসসমূহে। বাংলা সাহিত্যে বঙ্কিমচন্দ্রের ‘চন্দ্রশেখর’, ‘আনন্দমঠ’, ‘কপালকুণ্ডলা’ প্রভৃতি উপন্যাসে স্কটের রচনার ছায়াপাত লক্ষ্য ও অনুভব করা যায়।
স্কটের সাহিত্য জীবনের সূচনা পর্ব কী রকম ছিল?
ইংরেজি সাহিত্যে রোমান্টিক যুগের অন্যতম স্তম্ভ স্কট, প্রথম সার্থক ঔপন্যাসিক হিসেবে খ্যাতিলাভ করলেও, সাহিত্য ক্ষেত্রে তাঁর আবির্ভাব কবি হিসেবে। প্রথম দিকে তিনি গাথাকাব্য রচনা করতেন। কিন্তু গাথাকাব্য রচনায় বায়রনের খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা দেখে তিনি উপন্যাস রচনায় নিয়োজিত হন। স্কটের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থের নাম হল, The Ministrelsy of the Scottish Border”. The Lay of the Last Minstrel’, “Marmion’ ও ‘The Lady of the Lake’ প্রভৃতি। রোমান্টিক যুগের প্রথম সারির কবি না হলেও স্কটের কবি জীবনের একটা স্বতন্ত্র ভূমিকা ছিল। জার্মান কবিতার অনুবাদ দিয়ে কবি-জীবনের সূচনা হয়েছিল, এর পরেই স্বদেশ স্কটল্যান্ড হল তার কবিতার বিষয়। তাঁর কবিতার মধ্যে মধ্যযুগীয় হাওয়া, বীরত্বগাথা এবং সেই সঙ্গে কল্পনাবিলাস সার্থকভাবেই এসেছে। তাঁর কবিতার গীতিময়তা ও ব্যালাডধর্মী আবহ আজও ইংরেজি কবিতার স্মরণীয় ঐশ্বর্য।
‘দ্য হার্ট অব মিডলোথিয়ান’ (The Heart of Midlothean) উপন্যাসটি করে প্রকাশিত হয়? উপন্যাসটির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উপন্যাসটির প্রকাশকাল ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে। এডিনবরার পুরানো কারাগারের নাম ‘দ্য হার্ট অব মিডলোথিয়ান’। এই নাম থেকেই স্কট এই উপন্যাসটির নামকরণ করেন। ঘটনাস্থল ইংল্যান্ড।
১৭৩৬ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত পটুয়াস দাঙ্গার কথা দিয়েই কাহিনী শুরু হয়। নগররক্ষী বাহিনীর প্রধান ক্যাপ্টেন জন পর্টুয়াস যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই উইলসন নামে এক দস্যুর ফাঁসী দেখতে সমাগত জনতার ওপর তার রক্ষীবাহিনীকে গুলি ছুঁড়তে আদেশ দেয় এবং নিজেও গুলি ছোঁড়ে। বিচারে তার প্রাণদণ্ডের আদেশ হয়, কিন্তু পরে ক্ষমা লাভ করে। উইলসনের সহযোগী রবার্টসনের নেতৃত্বে একদল ক্রোধোন্মত্ত জনতা সেই কারাগার ভেঙে পটুয়াসকে বের করে নিয়ে আসে এবং তাকে দড়িতে ঝুলিয়ে দেয়। এই ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে এবং এফিডিনসের এক সত্য ঘটনাও স্কট যুক্ত করে দেন উপন্যাসের কাহিনীর বুননে। রবার্টসন, প্রকৃত নাম জর্জ স্টানটোন ছিল এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের বেপরোয়া যুবক, এফিডিনসের প্রেমিক। এফিডিনস শিশুহত্যার দায়ে ওই কারাগারে বন্দী ছিল। ওই কারাগার ভাঙার পরিকল্পনার পেছনে রবার্টসনের আর একটা উদ্দেশ্য ছিল এবং তা হচ্ছে এফিডিনসকে মুক্ত করা। কিন্তু এফি এভাবে পালাতে অস্বীকার করে। এফির বিচার হয়। এফির সংবোন জেনি এফির মুক্তির স্বার্থে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে অস্বীকার করে। বিচারে এফির প্রাণদণ্ডের আদেশ হয়। হাঁটতে হাঁটতে জেনি লন্ডনে গিয়ে উপস্থিত হয় এবং আরগিলের ডিউকের সহায়তায় রানী ক্যারোলিনের সাক্ষাৎ লাভ করে। জেনি তার ঐকান্তিকতা ও মর্যাদাপূর্ণ ব্যবহারে রানীকে সন্তুষ্ট করে বোন এফির জন্য রাজকীয় ক্ষমা লাভ করে। ডিউকের অনুগ্রহে জেনি তার প্রেমিক প্রেসবিটারিয়ন মন্ত্রী বুঝেন বাটুলারকে বিয়ে করতে সম্মত হয়, জেনির পিতা ডিউকের জমিদারীতে একটা ভাল পদেও নিযুক্ত হন। এফিও তার প্রিয়তমকে বিয়ে করে হয় লেডি স্টানটোন। এর পর জানা যায় যে শিশুহত্যার দায়ে সে অভিযুক্ত হয়েছিল সে প্রকৃতপক্ষে জীবিত। এক অপ্রকৃতিস্থ মহিলা কর্তৃক শিশুটি অপহূত হয় এবং দস্যুদলের হাতে পড়ে। জেনির স্বামী স্যার জর্জ স্টানটোন তার খোঁজ পাওয়া পুত্রটিকে উদ্ধারের চেষ্টায় আকস্মিকভাবেই ওই দস্যুদলের কাছে এসে উপস্থিত হয় এবং এক খণ্ডযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এক দস্যুর হাতে নিহত হয়। ওই দস্যু আর কেউ নয়, সে তারই হারিয়ে যাওয়া ছেলে। ঘটনা বর্ণনায় রয়েছে নাটকীয়তা এবং আকস্মিকতা।
Leave a comment