অথবা, সুরবালা আমার কী না হইতে পারিত। আমার সব চেয়ে অন্তরঙ্গ, আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী, আমার জীবনের সমস্ত সুখ দুঃখভাগিনী হইতে পারিত – বুঝিয়ে দাও
উৎস: আলোচ্য অংশটুকু বাংলা সাহিত্যের সার্থক ছোটো গল্পকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘একরাত্রি’ শীর্ষক ছোটোগল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গ : এক সময় সুরবালাকে অবজ্ঞা করলেও বর্তমানে নায়কের সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে সুরবালার অবস্থান। কিন্তু সে তার নাগালের বাইরে। নায়কের এই আত্মোপলব্ধি আলোচ্য অংশে চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে।
বিশ্লেষণ: সুরবালা ছিল নায়কের খেলার সাথি। তারা এক সাথে পাঠশালায় যেত এবং বউ বউ খেলত। সুরবালাদের বাড়িতে নায়কের বিশেষ কদর ছিল। নায়ককে এবং সুরবালাকে একত্র করে সুরবালার মা আপনা-আপনি বলাবলি করতেন “আহা! দুটিতে বেশ মানায়।” নায়ক ছোটো হলেও কথাটির মানে বুঝত। তাই সে সুরবালার উপর বিশেষ অধিকার ফলাতো। সুরবালা নির্বিবাদে নায়কের সকল অত্যাচার ও উপদ্রব মেনে নিতো। সুরবালার সাথে নায়কের শৈশবের দিনগুলো এমনই মধুময় ছিল। শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে নায়ক চলে আসে কলকাতায়। শহরে এসে লেখাপড়ার পাশাপাশি সে জড়িয়ে পড়ে দেশের কাজে। এ সময় সুরবালার সাথে তার বিয়ের প্রস্তাব করা হলেও সে তা প্রত্যাখ্যান করে। সুরবালার বিয়ে হয়ে যায় নোয়াখালীর সরকারি উকিল রামলোচন রায়ের সাথে। ভাগ্যচক্রে নায়কেরও অবস্থান গড়ে উঠে ঐ একই অঞ্চলে। একদিন রামলোচন রায়ের সাথে গল্প করতে তার বাসায় গেলে নায়ক আবার নতুন করে অনুভব করে সুরবালাকে। কিন্তু সে সুরবালা আজ তার কেউ নয়। সে সুরবালাকে আপন হাতে পর করে দিয়েছে। সে অনুশোচনায় দগ্ধ হতে থাকে। সুরবালা তার সবই হতে পারত; শুধু নিজের খামখেয়ালির জন্য সে আজ তার কেউ নয়।
মন্তব্য: সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তের অভাবে অনেক সময় জীবনে গভীর অনুশোচনা নেমে আসে।
Leave a comment