সুপারমুন (Supermoon)
সুপারমুন (Supermoon) | Image: Collected

“সুপার মুন” শব্দদ্বয়ের সাথে আমরা অনেকেই হয়তো পরিচিত। চাঁদ প্রেমীদের কাছে সুপার মুন আরও বেশি আবেদন নিয়ে আসে। অনেকের হয়তো এমন হয়ে থাকবে যে কোন এক রাতে আকাশে মস্ত চাঁদ দেখে থমকে গিয়েছেন, মনে মনে হয়তো ভেবেছেন যে চাঁদ আজ এত বড় দেখাচ্ছে কেন! হতেও পারে নিজের অজান্তেই উপভোগ করেছেন সুপার মুনের সৌন্দর্য। সে যাই হোক, আজকে এ বিষয়ে আমরা জেনে নেব বিস্তারিত ভাবে। দেখে নেব কি এই “সুপার মুন” আর কেনই বা এটি ঘটে থাকে।

সুপারমুন (Supermoon) কি?

ভরা পূর্ণিমা রাতে চাঁদ এর সম্পূর্ণ অর্ধাংশ আলোকিত থাকে। তাই পৃথিবী থেকে আমরা অন্যান্য সময়ের চেয়ে চাঁদ কে বেশ বড় ও উজ্জ্বল দেখে থাকি। এই পূর্ণিমা চাঁদেরই আরেকটি ডাকনাম হল সুপারমুন (Supermoon)। তাহলে পার্থক্য কোথায়? পার্থক্য হল এর আকারে ও উজ্জ্বলতায়।

সুপারমুন সাধারণ পূর্ণিমা চাঁদের চেয়ে আকারে তূলনামূলক বড় হয়ে থাকে। চাঁদ যখন পৃথিবী থেকে নিকটতম দুরত্বে থাকে তখন পৃথিবী থেকে চাদের আকার সাধারণ সময়ের তূলনায় বড় লাগে। অর্থাৎ পূর্ণিমার চাঁদটি যখন পৃথিবীর নিকটতম দুরত্বে অবস্থান করে তখন তাকে সুপারমুন বলে। উল্ল্যেখ্য, এখানে চাঁদ দুটি শর্ত পূরণ করে। প্রথমত, চাঁদটি হতে হবে ভরা পূর্ণিমার চাঁদ-অর্থ্যাৎ সম্পূর্ণ উজ্জ্বল অর্ধাংশ পৃথিবীর নির্দিষ্ট স্থান থেকে দৃশ্যমান হতে হবে এবং দ্বিতীয়ত, চাঁদের অবস্থান হতে হবে পৃথিবী থেকে তার কক্ষপথের নিকটতম দুরত্বে। গত ২০ বছরে ৭৯ বার সুপারমুন হয়েছে, গড়ে যা প্রায় প্রতি তিন মাসে একবার।

সুপারমুন (Supermoon) কেন ঘটে?

পৃথিবীর চারপাশে চাঁদ একটি উপবৃত্তাকার কক্ষপথে আবর্তন করে, সোজা কথায় ডিম্বাকৃতির কক্ষপথে, খানিকটা যেমন নিচের ছবিতে দেখানো হয়েছে।

চাঁদের উপবৃত্তাকার কক্ষপথ

দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে পৃথিবী থেকে চাঁদের কক্ষপথের দূরত্ব সব জায়গায় সমান নয়, কোথাও কম এবং কোথাও বেশি। এখন চাঁদ যখন পৃথিবী থেকে কম দুরত্বে অবস্থান করে তখন পূর্ণিমা চাঁদ টি অবশ্যই পৃথিবী থেকে আরো বেশি বড় দেখাবে। আর যেহেতু দুরত্ব কম থাকে তাই চাঁদের উজ্জ্বলতাও বেশি চোখে পড়ে। সহজ কথায় বলা যায় যে আপনি যখন দূর থেকে কোন বস্তু দেখেন তখন তা ছোট এবং অস্পষ্ট থাকে, বস্তুটি ধীরে ধীরে কাছে আসতে থাকলে তা বড় এবং স্পষ্ট দেখা যায়। সুপারমুনও একই রকম। একই চাঁদ শুধু তার অবস্থানের জন্য অধিক উজ্জ্বল এবং আকারে বড় দেখে থাকি আমরা। এরকম অবস্থানে চাঁদ অন্যান্য পূর্ণিমা চাদের তুলনায় প্রায় ১৪% পর্যন্ত বেশি বড় দেখা যায় এবং ৩০% পর্যন্ত বেশি উজ্জ্বল হয়ে থাকে।

সুপারমুনের প্রভাব

আমরা জানি চাঁদের আকর্ষণে জোয়ার ভাটা হয়ে থাকে। চাঁদ পৃথিবীর যত নিকটে থাকবে পৃথিবী ও চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ বল তত বেশি হবে। যেহেতু সুওয়ারমুনের সময় চাঁদ ও পৃথিবীর দুরত্ব কমে যায়, তাই পৃথিবী ও চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ বলও বেড়ে যায়। ফলে জোয়ার ভাটারও উচ্চতার তারতম্য হয়ে থাকে।

সুপারমুনের সময় নিয়মিত জোয়ারের তুলনায় জোয়ারের উচ্চতা ২ ইঞ্চি পর্যন্ত বাড়তে পারে। যদিও এই সামান্য পরিবর্তন সমুদ্রপৃষ্ঠের উপর তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পারে না।

আবার মানুষের মাঝে কিছু জনপ্রিয় বিশ্বাস রয়েছে যে সুপারমুন মানুষের মুডের উপর প্রভাব ফেলে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল এর কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। ১৯৮০-এর দশকে এবং ২০১১ সালের দুই গবেষণায় দেখা গেছে যে সুপারমুন মানসিক স্বাস্থ্য বা মানসিক আচরণের উপর কোন প্রতিকূল প্রভাব ফেলে না। আপনি সহজে বিশ্রাম নিতে পারেন কিংবা সুপারমুনের সময় আপনার বাড়ির বাইরেও থাকতে পারেন।