প্রশ্নঃ সমাজবিজ্ঞান ও নীতিবিদ্যা কি? নীতিবিদ্যা পাঠের প্রয়ােজনীয়তা আলােচনা কর।

অথবা, সমাজবিজ্ঞান ও নীতিবিদ্যা সম্পর্ক আলােচনা কর এবং নীতিবিদ্যা পাঠের উপকারিতা ব্যাখ্যা কর।

ভূমিকাঃ নীতিবিজ্ঞান একটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান। যা একটি আদর্শের আলােকে সমাজে বসবাসকারী মানুষের আচরণের নৈতিক মূল্য বিচার করে। নৈতিক সূত্র বিশ্বাস ও অনুশীলনের তাত্ত্বিক আলােচনা করে। অপরদিকে, সমাজবিজ্ঞান সমাজ সংগঠন ও তার ক্রমবিকাশ এবং এই ক্রমবিকাশের সাথে জড়িত মানুষের আচার-ব্যবহার, রীতি নীতির বর্ণনামূলক বিজ্ঞান। ফরাসি দার্শনিক অগাস্ট কোতের দ্বারা প্রণীত ‘Sociology’ শব্দটি সমাজ ও সামাজিক সম্পর্ক সম্বন্ধীয় আলােচনার ইঙ্গিত দেয়। সমাজবিদ্যা সামাজিক ক্ষেেত্র ও প্রতিষ্ঠান নিয়ে জড়িত বলে- প্রথা, আচার-ব্যবহার, ধর্ম অর্থনৈতিক জীবন, রাষ্ট্রীয় সংগঠন ইত্যাদি সব রকমের মানব সংঘ ও প্রতিষ্ঠান নিয়ে আলােচনা করে।

নীতিবিদ্যার সংজ্ঞাঃ নীতিবিজ্ঞানের ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘Ethics’ যা গ্রিক শব্দ ‘Ethica’ হতে উদ্ভূত হয়েছে। ‘Ethica’ শব্দের অর্থ হলাে রীতিনীতি বা আচার-আচরণ ইত্যাদি। এসব শব্দের তাৎপর্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নীতিবিদ্যাকে আচরণ সম্পৰ্কীয় বিজ্ঞান বলা হয়।

সুতরাং নীতিবিজ্ঞান নৈতিক আদর্শের মানদণ্ডের ভিত্তিতে সমাজের মানুষের আচরণের মূল্যায়ন করে থাকে। নীতি বিজ্ঞান সম্পর্কে বিভিন্ন চিন্তাবিদ বিভিন্ন মতবাদ দিয়েছেন।

ম্যাকেঞ্জি নীতিবিজ্ঞানের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে বলেন, “আচরণের ন্যায় বা ভালাে নিয়ে যে আলােচনা করা হয় তাকে নীতিবিদ্যা বলে। এ বিদ্যা আচরণ সম্পৰ্কীয় সাধারণ মতবাদ এবং এ বিদ্যা ন্যায় বা অন্যায় ও ভালাে বা মন্দ প্রবন্দতার পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের ক্রিয়াবলি আলােচনা করে।”

[Jhon S. Mackenzie, A Manual of Ethics, (1964),P.1]

নীতিবিজ্ঞানের সংজ্ঞায় উইলিয়াম লিলি বলেন যে, “নীতিবিদ্যা হচ্ছে সমাজে বসবাসকারী মানুষের আচরণ সম্পৰ্কীয় এমন একটা আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান, যা এই আচরণকে ন্যায় বা অন্যায়, ভালাে বা মন্দ বা অন্য কোনাে একই ধরনের পন্থায় বিচার করে।”

[William Lillie, An Introduction to Ethics London, 1966.]

সুতরাং উল্লিখিত সংজ্ঞাগুলাের আলােকে বলা যায় যে, নীতিবিদ্যা আচরণ সম্পৰ্কীয় বিজ্ঞান।

সমাজবিজ্ঞানঃ সমাজবিজ্ঞান সমাজ সংগঠন ও তার ক্রমবিকাশ এবং ক্রমবিকাশের সাথে জড়িত মানুষের আচার-ব্যবহার, প্রথা, ধর্ম অর্থনৈতিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন ইত্যাদি সবরকমের মানব সঙ্গ ও প্রতিষ্ঠান নিয়ে আলােচনা করে।

Leslie Stephen বলেন, “সমাজবিদ্যা ঐ সব বিদ্যার জন্য একটা সাধারণ পদ যেসব বিদ্যা মানব সমাজের অভ্যাস, আচার-আচরণ, প্রথা ও প্রতিষ্ঠানের আদিম অবস্থা থেকে সভ্য অবস্থার ক্রমবিকাশের সব স্তরের আলােচনা করে। এবং একই সময়ে এক আকার বা রূপ থেকে অন্য আকারে এগুলাের বর্তমান অবস্থায় স্তর থেকে স্তরে কিভাবে উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ হয়েছিল, তাও আবিষ্কার করতে চেষ্টা করে।

নীতিবিদ্যাঃ সমাজবিজ্ঞানের সম্পর্ক ও নীতিবিজ্ঞানের সাথে সমাজবিজ্ঞানের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। নৈতিকতা সম্বন্ধীয় সিদ্ধান্ত ব্যক্তি গ্রহণ করার পর কঠোর আত্মসংযমের মাধ্যমে নিজের জীবনে একবার বাস্তবায়িত করতে পারলেই তা পরবর্তী জীবনে অভ্যাস ও স্বভাবে পরিণত হয়। সমাজে বসবাস করতে গিয়ে সামাজিক রীতিনীতি যেমন ব্যক্তির আচরণকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রিত করে তেমনি ব্যক্তির নৈতিক আচরণ ও অনেক সামাজিক প্রথাকে কেবল নিয়ন্ত্রণ করেন না। বরং সামাজিক কুপ্রথাকে পরিবর্তিতও করে থাকে। এ দিক থেকে দেখা যায় নীতিবিদ্যার সাথে সমাজবিদ্যার সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।

নীতিবিদ্যা ও সমাজবিজ্ঞানের সাদৃশ্যঃ

১. নৈতিকতার বিকাশে সমাজের প্রয়ােজনীয়তাঃ নীতিবিদ্যা সমাজে বসবাসকারী মানুষের আচরণ সম্পৰ্কীয়বিজ্ঞান। নৈতিকতার বিকাশের জন্য সমাজের যথেষ্ট প্রয়ােজনীয়তা আছে। সমাজবিহীন ব্যক্তির ক্ষেত্রে নৈতিক ও মন বাধ্যবাধকতার প্রশ্ন অর্থহীন হয়ে পড়ে। কেননা, নৈতিকতা সম্পর্কীয় সমস্যা সমাজবদ্ধ ব্যক্তির ক্ষেত্রেই প্রযােজ্য।

২. নীতিবিদ্যা ও সমাজবিদ্যা ওতপ্রােতভাবে জড়িতঃ একজন মানুষের আচার-আচরণকে তার সামাজিক পরিবেশ। থেকে আলাদা করে বিচার করা যায় না। মানুষ সামাজিক জীব। সমাজের মধ্যেই তার নৈতিক ও মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠে। সমাজে প্রচলিত ভালাে-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় প্রভৃতি লৌকিক ধারণা থেকেই ব্যক্তির মধ্যে তার নৈতিক ও মানসিক ভাব জাগে। মানুষের ব্যক্তিগত কল্যাণ সমাজের কল্যাণের সাথে জড়িত। ব্যক্তির নৈতিক উন্নতির উপর সমাজের নৈতিক উন্নতি নির্ভরশীল।

৩. নীতিবিজ্ঞান সমাজবিজ্ঞানের তথ্যের উপর নির্ভরশীলঃ সমাজবিজ্ঞান থেকে নীতিবিদ্যা তার উপাদান সংগ্রহ করে। সমাজবিজ্ঞান মানুষের আচরণ, অভ্যাস ও রীতিনীতির বর্ণনা দেয়। মানুষের আচরণ কিরূপ হওয়া উচিত তা নির্ণয় করাই নীতিবিদ্যার কাজ। আবার সমাজবিজ্ঞান মানুষের আচরণের স্বরূপ বর্ণনা করে। তাই নীতিবিদ্যা সমাজবিজ্ঞানের ওপর নির্ভরশীল।

৪. সমাজবিজ্ঞান নীতিবিদ্যার উপর নির্ভরশীলঃ নীতিবিদ্যা যেমন সমাজবিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল, তেমনি সমাজবিদ্যা নীতিবিদ্যার উপর নির্ভরশীল। সমাজ কিরূপ উন্নতি সাধিত হয়েছে তা নির্ণয় করার জন্য সমাজবিজ্ঞান। সমাজের বিভিন্ন বিষয় বিচার করে দেখতে চায়। এ বিচারের জন্য নৈতিক আদর্শের প্রয়ােজন হয়। নীতিবিদ্যা সমাজবিজ্ঞানকে এ নৈতিক আদর্শ সরবরাহ করে।

৫. নৈতিক আচরণ সামাজিক প্রথাকে নিয়ন্ত্রণ করেঃ সমাজে বসবাস করতে গিয়ে সামাজিক আদর্শ। যেমন ব্যক্তির আচরণকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করে, তেমনি ব্যক্তির নৈতিক আচরণও অনেক সামাজিক প্রথাকে নিয়ন্ত্রিত করে। বিচারের জন্য নৈতিক আদর্শের প্রয়ােজন হয়। এ ছাড়া নৈতিক আচরণ সামাজিক কুপ্রথাকে পরিবর্তিত করে থাকে। এ দিক থেকে নীতিবিদ্যার সাথে সমাজবিজ্ঞানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান।

নীতিবিদ্যা ও সমাজবিজ্ঞানের বৈসাদৃশ্যঃ

১. সমাজবিজ্ঞান বিষয়নিষ্ঠ কিন্তু নীতিবিদ্যা আদর্শনিষ্ঠঃ সমাজবিজ্ঞান সমাজের উৎপত্তি, গঠন, ক্রমবিকাশ প্রভৃতি সম্পর্কে আলােচনা করে। বিভিন্ন সামাজিক রীতিনীতি, আচার-ব্যবহার, অনুষ্ঠান প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অতীতে যে পরিবর্তন ঘটেছে এবং সেগুলাে বর্তমানে যে অবস্থায় আছে সমাজবিজ্ঞান সেগুলাে বর্ণনা করে। আর নীতিবিদ্যা এগুলাের মূল্য নির্ধারণ করে।

২. বিষয়গত পার্থক্যঃ সমাজবিজ্ঞান সমাজের অন্তর্ভুক্ত প্রথা, অভ্যাস, রীতি-নীতি ও আচার-ব্যবহার আলােচনা করে বলে সমাজবিজ্ঞান বিষয়গত বিজ্ঞান। পক্ষান্তরে, নীতিবিদ্যা অধিকতর রূপে ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ ক্রিয়াবলি নিয়ে জড়িত। বলে তা বিষয়ীগত বিজ্ঞান।

৩. সমাজবিজ্ঞান সমষ্টিগত আচরণ আর নীতিবিদ্যা ব্যক্তিগতঃ সমাজবিজ্ঞানের প্রধান আলােচ্য বিষয়বস্তু সমাজে বসবাসকারী মানুষের সমষ্টিগত আচরণ। পক্ষান্তরে, নীতিবিদ্যার প্রধান আলােচ্য বিষয়বস্তু হচ্ছে ব্যক্তিগত আচরণ|

৪. সমাজবিজ্ঞান অধিক ব্যক্তি নিরপেক্ষঃ সমাজবিজ্ঞান নীতিবিদ্যার তুলনায় অধিক ব্যক্তি নিরপেক্ষ। সমাজবিজ্ঞান সমাজের রীতি-নীতি, আচার-ব্যবহার, ক্রিয়াকর্ম, অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি মূর্ত বিষয় নিয়ে আলােচনা করে। কিন্তু নীতিবিদ্যা মানুষের অন্তরের উদ্দেশ্য, অভিপ্রায় এবং প্রবণতা নিয়ে আলােচনা করে।

৫. আলােচনার পদ্ধতি এক নয়ঃ সমাজবিজ্ঞান বিষয়নিষ্ঠ বিজ্ঞান হওয়ায় এর আলােচনার পদ্ধতি হলাে বৈজ্ঞানিক আরােহণমূলক পদ্ধতি। কিন্তু নীতিবিদ্যা আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলে এর আদর্শকে গঠন করতে গিয়ে বিষয়নিষ্ঠ বিজ্ঞানের মত বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগার ও পরীক্ষণ পদ্ধতি প্রয়ােগ করে না।

নীতিবিদ্যা পাঠের প্রয়ােজনীয়তাঃ

১. নীতিবােধের লৌকিক ধারণার অসঙ্গতি দূর করেঃ নীতিবিদ্যা পাঠের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। নৈতিক আদর্শের বিজ্ঞান হিসেবে নীতিবিদ্যা ন্যায়-অন্যায়, ভালােমন্দ ও সৎ-অসৎ প্রভৃতি নিয়ে আলােচনা করে। সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে। নীতিবিদ্যা এসব ত্রুটি-বিচ্যুতির সমালােচনা করে এগুলাের। অসারতা প্রদর্শন করে।

২. বিভিন্ন নৈতিক মতবাদ সম্পর্কে জ্ঞানার্জনঃ নীতিবিদ্যার আলোচনা বিভিন্ন নীতিবিদ নৈতিকতা নিরূপণের জন্য। একটা যুক্তিসম্মত মানদণ্ড বের করার চেষ্টা করেন। আর নৈতিকতা নিরূপণের জন্য যদিও নীতিবিদরা একটা সার্বিক মানদণ্ড বের করতে অসমর্থ হন ফলে আদর্শনিষ্ঠ নীতিবিদ্যার বিভিন্ন মতবাদের উদ্ভব হয়। সেগুলাের গুরুত্ব মানব জীবনের পরীক্ষার ক্ষেত্রে কোনাে অংশে কম নয়।

৩. নৈতিক অবক্ষয় রােধ করেঃ বিজ্ঞান সমালােচনামূলক এটি লৌকিক মতবাদের সমালােচনা করে এদের ভুলভ্রান্তি নির্দেশ করে। ফলে নৈতিক মতবাদসমূহ ভেঙ্গে টুকরাে টুকরাে হয়ে যায়। নীতিবিজ্ঞান এটি অপেক্ষা কম করে না। কতকগুলাে সুবিদিত পার্থক্য, কতকগুলাে ক্ষীণমান বিধি-নিষেধ পরিত্যক্ত হয়। এটিকে নীতিবিদ্যার ধ্বংসাত্মক দিক বলা হয়। আর সুখী ও সুস্থ জীবন গড়ে তুলতে পারলেই সমাজে নৈতিক মূল্যবােধের অক্ষয় বােধ সম্ভব।

৪. মানুষের নৈতিক অন্তর্দৃষ্টি জন্মায়ঃ নীতিবিদ্যা নৈতিক আদর্শের স্বরূপ নির্ধারণ করে আমাদের আচরণের ভালাে-মন্দ, উচিত-অনুচিত প্রদর্শন করে। নীতিবিদ্যা পাঠে আমরা নৈতিক জীবন-যাপনের জন্য প্রয়ােজনীয় অন্তর্দৃষ্টি লাভ করতে পারি। জ্ঞান আমাদেরকে ন্যায়-অন্যায়, ভালাে-মন্দ, ধর্ম-অধর্মের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণের অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। কাজেই নীতিবিদ্যা পাঠে মানুষের নৈতিক অন্তর্দৃষ্টি জন্মে।

৫. সমাজ জীবন গঠনে নীতিবিদ্যাঃ নীতিবিদ্যার তাত্ত্বিক আলােচনা করতে গিয়ে ব্যক্তির মধ্যে নৈতিকতা সম্পর্কীয় যুক্তি সম্মত ধারণাগুলাের কোনাে না কোনােভাবে প্রভাব পড়ে। ফলে ব্যক্তির সুস্থ জীবন গঠন করতে অনেকাংশে সাহায্য করে বলে নীতিবিদ্যার সমাজ জীবনের যথেষ্ট প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে।

৬. সুস্থ জীবন-যাপনে নীতিবিদ্যাঃ নীতিবিদ্যা পাঠের জন্য বুদ্ধিসম্মত সামর্থ্য ও নৈতিক অন্তর্দৃষ্টি বিশেষভাবে প্রয়ােজনীয় হয়ে পড়ে। নীতিবিদ্যা পাঠের ক্ষেত্রে বিষয়গত, বুদ্ধিসম্মত সামর্থ্য, নৈতিক অন্তর্দৃষ্টি নৈতিক পরীক্ষা ও নৈতিক সিদ্ধান্ত অপরিহার্য শর্ত হিসেবে কাজ করে থাকে বলে নীতিবিদ্যা পাঠের মাধ্যমে ব্যক্তির মধ্যে এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলির প্রভাব পড়ে। ফলে নীতিবিদ্যার পঠন-পাঠন ব্যক্তির সুস্থ জীবন গঠন করতে অনেকাংশে সাহায্য করে।

৭. সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রেঃ সামাজিক, রাজনৈতিক ধর্মীয় রীতিনীতি ও আচার-ব্যবহারের মধ্যকার অসঙ্গতি দর করতে গিয়ে নীতিবিদ্যা পঠন-পাঠন ব্যক্তির নৈতিক আচরণ গঠনে যথেষ্ট সাহায্য করে। তাছাড়া অর্থনৈতিক বৰ শিক্ষাব্যবস্থা আইন ব্যবস্থাসহ মানব সমাজের জন্য বিভিন্ন প্রয়ােজনীয় ক্ষেত্রে নীতিবিদ্যার যথেষ্ট মূল্য রয়েছে।

৮. নীতিবিদ্যা দৃষ্টিভঙ্গিকে উদার করেঃ বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে পথ নির্দেশ করাই নীতিবিদ্যার প্রধান উপযােগিতা নয়। পরন্ত সাধারণত নৈতিক ব্যাপার সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে উদার করে।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, নীতিবিদ্যা ও সামাজবিজ্ঞানের মধ্যে উপরােক্ত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও উভয় বিজ্ঞানই পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। নীতিবিদ্যা ও সমাজবিজ্ঞান যদিও দুটি স্বতন্ত্র বিদ্যা, তবুও এদের মধ্যে সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ। নীতিবিদ্যা পঠন-পাঠনের মূল্য অন্যান্য বিদ্যার মত তাৎক্ষণিক বা প্রত্যক্ষভাবে আমাদের ব্যবহারিক জীবনে কোনাে প্রভাব বিস্তার করতে না পারলেও এর যে-কোনাে পরােক্ষ মূল্য নেই তা বলা যায় না। বস্তুত, মানবকুলের সুস্থ সমাজ জীবন-যাপনের জন্য নীতিবিদ্যার তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানের গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না।