[All contracts are agreements but agreements are not Contracts.-Discuss]
উত্তরঃ ১৮৭২ সালের চুক্তি আইনের ২(জ) ধারায় চুক্তির সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে এই মর্মে যে, আইনে বলবৎযোগ্য সম্মতি হচ্ছে চুক্তি। (An agreement enforceable by law is a Contract)। এই সংজ্ঞাটি বিশ্লেষণ করলে নিম্নলিখিত দুটি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়ঃ
(১) সংশ্লিষ্ট পক্ষগণের মধ্যে ঐকমত্য বা সম্মতি থাকতে হবে। ও
(২) এই সম্মতি আইন দ্বারা বলবৎযোগ্য হতে হবে। কাজেই দেখা যায় পক্ষগণের সম্মতি হচ্ছে চুক্তির প্রথম পদক্ষেপ বা ভিত্তি। কিন্তু সম্মতি সৃষ্টির পরে তা আইন দ্বারা বলবৎযোগ্য হতে পারে আবার নাও হতে পারে। যদি আইনে বলবৎযোগ্য হয় তবে উক্ত সম্মতি চুক্তিতে রূপ নেয়, কিন্তু যদি তা আইনে বলবৎ করা না যায় তবে তা সম্মতির পর্যায়ে পড়লেও চুক্তির পর্যায়ে পড়বে না। উদাহরণ স্বরূপ, একজন নাবালক ক উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত তার বাড়িখানা খ এর নিকট ২ লক্ষ টাকায় বিক্রয় করতে রাজী হয় । এক্ষেত্রে ক ও খ এর মধ্যে যে মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাকে শুধু সম্মতি (Agreement) বলা যাবে, চুক্তি বলা যাবে না। কেননা, চুক্তি আইন অনুযায়ী একজন নাবালক এরূপ চুক্তি করতে পারে না। কাজেই আদালতের মাধ্যমে এ সম্মতি কার্যকর করা যাবে না।
চুক্তি আইনের ২(ঙ) ধারায় বলা হয়েছে যে, পরস্পরের মধ্যে প্রতিদান গঠন করতে পারে, এরূপ প্রতিটি প্রতিশ্রুতি এবং প্রতিশ্রুতি গুচ্ছকে সম্মতি বলে। (Every promise and every set of promises forming the consideration for each other. is an agreement). আবার উক্ত আইনের ২(ক) ও (খ) ধারার বিধান অনুযায়ী যখন এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির নিকট কোন কিছু করার বা করা হতে বিরত থাকার প্রস্তাব দেয় এবং অপর ব্যক্তি উক্ত প্রস্তাবে সম্মতি জ্ঞাপন করে তখন তাদের মধ্যে একটা প্রতিশ্রুতির সৃষ্টি হয়। প্রতিশ্রুতি সৃষ্টির পর প্রস্তাবদাতাকে বলা হয় প্রতিশ্রুতিদাতা (Promisor) এবং প্রস্তাব গ্রহণকারীকে বলা হয় প্রতিশ্রুতিগ্রহীতা (Promisee)। চুক্তি আইনের ২ (ঘ) ধারায় প্রতিদানের সংজ্ঞা প্রদানে বলা হয়েছে যে, প্রতিশ্রুতি দাতার ইচ্ছানুযায়ী যখন প্রতিশ্রুতি কোন কাজ করে থাকে কিংবা কাজ করা হতে বিরত থাকে, অথবা কোন কাজ করে, কিংবা কাজ করা হতে বিরত থাকে, অথবা কোন কাজ করার জন্য কিংবা কাজ করা হতে বিরত থাকার জন্য প্রতিশ্রুতি দেয় তখন সে কাজ বা নিবৃত্তি অথবা প্রতিশ্রুতিকে প্রতিদান বলে। যদি এরূপ প্রতিদান আইনে নিষিদ্ধ হয়ে থাকে, কিংবা প্রচলিত আইনের কোন বিধানের পরিপন্থী হয়, কিংবা প্ৰবঞ্চনামূলক হয়, কিংবা অন্যের শরীর বা সম্পত্তির ক্ষতিকারক হয় কিংবা নৈতিকতা বা জননীতির বিরোধী হয় তবে তা অবৈধ (২৩ধারা)। অবৈধ প্রতিদান সম্মতির সৃষ্টি করলেও তা চুক্তির সৃষ্টি করে না।
উক্ত সংজ্ঞাগুলি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, এক পক্ষ কর্তৃক অপর পক্ষকে কোন কাজের বা নিবৃত্তির বা প্রতিশ্রুতির প্রস্তাব দিলে এবং অপর পক্ষ নিঃশর্তভাবে তা গ্রহণ করলে দুই পক্ষের মধ্যে একটা সম্মতি বা একরারের সৃষ্টি হয়।
চুক্তি আইনের ১০ ধারায় বলা হয়েছে যে, একটি সম্মতি তখনই চুক্তির পর্যায়ভুক্ত হবে যখন তা য্যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি দ্বারা, তাদের স্বাধীন সম্মতি ক্রমে, বৈধ প্রতিদান ও উদ্দেশ্যে গঠিত হয় এবং তা কোন আইনে যেনো নিষিদ্ধ না হয়ে থাকে। অতএব চুক্তি গঠনের অন্যতম উপাদান হচ্ছে বৈধ প্রতিদানের সমন্বয়ে গঠিত সম্মতি। এই সম্মতি আইনগত অধিকার ও বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করে না৷ আইনগত অধিকার ও দায়-দায়িত্ব সৃষ্টি করতে হলে নিম্নোক্ত অতিরিক্ত উপাদানগুলির প্রয়োজনঃ
(১) যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিঃ চুক্তি আইনের ১১ ধারা অনুযায়ী একজন সাবালক, সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন এবং অন্য আইনে অযোগ্য নয় এরূপ ব্যক্তি চুক্তি করতে পারে।
(২) স্বাধীন সম্মতিঃ চুক্তি আইনের ১৪ ধারার বিধান অনুযায়ী পক্ষগণের সম্মতিকে স্বাধীন সম্মতি বলা যাবে যখন এই সম্মতি আদায়ে বলপ্রয়োগ, অনুচিত প্রভাব, ভ্রান্তি প্রতারণা ও মিথ্যার উপাদান না থাকে ৷
(৩) বৈধ উদ্দেশ্যঃ চুক্তির উদ্দেশ্য বৈধ হতে হবে। উদ্দেশ্য যদি প্রচলিত আইনের বা জন নীতির পরিপন্থী হয় বা তা নৈতিকতা বিরোধী হয় তবে তা বৈধ হতে পারে না।
(৪) প্রচলিত আইনে নিষিদ্ধ নয়ঃ প্রচলিত আইনে (যেমন দেউলিয়া আইন) এরূপ চুক্তির যেন নিষিদ্ধ না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
এছাড়াও যে সকল চুক্তি আইনের প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে তাকে বৈধ চুক্তি বলা যায় না।
অতএব লক্ষ্য করা যায় যে, চুক্তির প্রথম ও প্রধান বৈধ শর্ত সম্মতি (lawful agreement)। এই সম্মতির সমর্থনে যদি উপরোক্ত উপাদানগুলি বর্তমান থাকে তবে সেই সম্মতি চুক্তিতে রূপ নেয়। উক্ত উপাদানের অবর্তমানে কিংবা ত্রুটিপূর্ণ উপাদানের ক্ষেত্রে (যেমন অবৈধ প্রতিদান বা উদ্দেশ্য) তা বাতিল চুক্তি বা অবৈধ চুক্তি হতে পারে। কিন্তু বাতিল চুক্তি বা অবৈধ চুক্তির কোন আইনগত অস্তিত্ব নেই। এগুলিকে বাতিল সম্মতি বলাই শ্রেয়। তাই সকল সম্মতিই চুক্তি হয় না, যে সকল সম্মতি চুক্তি আইনের নির্দেশ মত হয়ে থাকে সেগুলিই চুক্তি হয়। পক্ষান্তরে, সকল চুক্তির মধ্যেই সম্মতি থাকে, কেননা সম্মতি ছাড়া চুক্তি হতে পারে না। তাই যথাযথভাবে বলা হয় যে, “সকল চুক্তিই সম্মতি, কিন্তু সকল সম্মতিই চুক্তি নয়।’
Leave a comment