অথবা, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য নাটকীয় রসে সমৃদ্ধ – এ বিষয়ে তোমার মতামত উপস্থাপন কর
উত্তর: ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্য একটি বিচিত্র রচনা। এর রূপ বৈশিষ্ট্যটি সেকালের কাব্যে অদ্বিতীয়। নাটকীয় ঢঙে লেখা বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য নানাভাবে নন্দিত এবং নিন্দিত। কাব্যটির কাহিনির মধ্যেই নাটকীয় বীজ নিহিত। পরকীয়া প্রেমে মূল কাহিনি শুরু যা দ্বন্দ্ব সংঘাতে পরিসমাপ্তি ঘটে। কাব্যটির কাহিনির শুরুতেই সংঘাত, খণ্ড থেকে খণ্ডান্তরে তা ব্যাপকতা পেয়েছে। কাব্যের শুরুতেই রাধার কাছে কৃষ্ণের মূল পরিচয় গোপন করাতেই নাটকীয়তার সূচনা। এরপর রাধার রূপ শুনেই কৃষ্ণের বিয়ের প্রস্তাব এবং রাধার তা প্রত্যাখ্যান; বড়ায়িকে অপমান এভাবেই নাটকীয়তার ধারা পূর্ণতা পায়। এ কাব্যের অধিকাংশ পদ রাধা-কৃষ্ণ বড়াই-এ ত্রয়ী চরিত্রের উক্তি- প্রত্যুক্তির নাট্য সংলাপে রচিত।
নাটকের প্রধান বৈশিষ্ট্য বাস্তবধর্মিতা। আমরা এ কাব্যের শুরু থেকেই গ্রাম্য জীবনের বাস্তব চিত্রের পরিচয়ে পাই। নায়ক- নায়িকার দ্বন্দ্ব, কলহ, কৃষ্ণের প্রেমে রাধার অসম্মতি এবং নানা অনুষঙ্গে রাধার সম্মতিতে কাহিনি আবর্তিত হয়েছে। সুতরাং এ দ্বন্দ্বই হচ্ছে নাটকের প্রাণ। নায়ক-নায়িকার প্রেমের ভাঙা-গড়া অন্তর্দ্বন্দ্বের ইতিবাচক নেতিবাচক সক্রিয়তাই কাহিনির চূড়ান্ত পরিণতি পেয়েছে এ কাব্যে। গঠনের দিক্ষ থেকে এ কাব্যটি, নাট্যগুণ সম্পন্ন। কারণ নাটকের মতোই এ কাব্যের আরম্ভ, ক্রমব্যপ্তি, চূড়ান্ত দ্বন্দ্ব, গ্রন্থিমোচন এবং উপসংহার ঘটেছে। সুতরাং আধুনিকতার ধাঁচে না হলেও মধ্যযুগের প্রেক্ষিতে আমরা এ কাব্যে নাটকীয়তার পরিচয় পাই।
Leave a comment