অথবা, তুমি কী মনে কর ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যে আধ্যাত্মিকতা তুচ্ছ, লৌকিক জীবন প্রাধান্য? তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও

অথবা, সংক্ষেপে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে শ্রীকৃষ্ণের চরিত্র লেখ।

উত্তর: হিন্দুদের ধর্মীয় গ্রন্থ পুরাণ অনুসারে কৃষ্ণ কংস নিধনের জন্য অবতার হিসেবে প্রেরিত। বৈষ্ণব পদাবলীতে রাধা জীবাত্মা এবং কৃষ্ণ পরমাত্মার প্রতীক। কিন্তু বাঙালিদের কাছে। কৃষ্ণ দেবতা হিসেবে পরিচিত হলেও “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” কাব্যে সেভাবে চিত্রিত নয়। এ কাব্যে তাঁর চরিত্রের আধ্যাত্মিকতার প্রলেপ নেই। রাধাকে পাবার জন্য সে সার্বক্ষণিক বিভোর। বড়ায়ির মুখে রাধার রূপের বর্ণনা শুনে সে উন্মাদ। রাধাকে বশ করতে সে রাধার বক্ষে পুষ্পবান নিক্ষেপ করেছে। রক্ত মাংসের দেহ সর্বস্ব রাধা নামক নারীর বিছানায় শোয়ার আকর্ষণে বিভোর হয়েছে কৃষ্ণ। বৃন্দাবনে রাধার সখীদের সাথে কৃষ্ণের আচরণ ভদ্রোচিত নয়। সুতরাং যারা এ কাব্যে আধ্যাত্মিকতা খোঁজেন তারা মরুভূমির মরীচিকার সন্ধানেরই মতো। প্রকৃতপক্ষে এ কাব্যে আধ্যাত্মিকতার আবেদন নেই। প্রেম যেখানে দৈহিক কামনায় সর্বস্ব, রূপজ মোহ আকর্ষণে বিভোর, কামোন্মত্ত, ভোগ- বাসনা যেখানে একান্তই সবকিছু সেখানে দেবত্বের ভিত্তি থাকে না। সুতরাং এ কাব্যে ধর্মীয় কাহিনি ও তার অন্তরালে অবস্থিত ভক্তের মনোজগতের ঈলিতভাব অপেক্ষা এর লৌকিক জগৎ ও মানবিক রূপ পরিবেশনই প্রাধান্য পেয়েছে। সাধারণ পাঠক কৃষ্ণ নেই বলে আর্তনাদ করে না, বরং কৃষ্ণের মাধ্যমে নারী ও প্রেমলোভী সাধারণ মানবকে দেখে তার প্রতি অধিকতর আকর্ষণ অনুভব করে। তাই ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ আধ্যাত্মিক কাব্য নয়, এতে আধ্যাত্মিকতা তুচ্ছ। লৌকিক জীবন, লৌকিক রুচি প্রাধান্য।

অতএব এ কাব্যের ধারাবাহিক বিশ্লেষণে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, এ কাব্যে কৃষ্ণ আছে ঠিকই কিন্তু কোনো কীর্তন নেই অর্থাৎ কৃষ্ণের কোনো গুণ বা প্রশংসা বাক্য এ গ্রন্থে ধ্বনিত হয়নি। বরং অশ্লীল কামকেলির অবাধ বিচরণ, অনাচারী জীবন সংবাদে ভরপুর এ কাব্য গ্রন্থ।