বৃত্তিশিক্ষা বলতে বােঝায় পরিকল্পিতভাবে প্রথাগত শিক্ষা- প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিশুকে ভবিষ্যতের কোনাে বৃত্তির জন্য উপযুক্ত করে তােলা হারবার্ট স্পেনসার বলেন, শিশুকে এমন কতকগুলি সামর্থ্য অর্জনে সাহায্য করতে হবে যা তার ভবিষ্যৎ জীবিকা অর্জনে সহায়ক হয়। মহাত্মা গান্ধির বুনিয়াদি শিক্ষা এবং ডিউই র সক্রিয়তাভিত্তিক শিক্ষায় বৃত্তিশিক্ষা গুরুত্ব পেয়েছে। শিক্ষার বৃত্তিমুখী লক্ষ্য আরও স্পষ্ট হবে যদি এর বৈশিষ্ট্যগুলি ব্যাখ্যা করা যায়। এগুলি হল নিম্নরূপ—
-
বৃত্তিমুখী শিক্ষা স্বনির্ভরতা ও স্বাচ্ছন্দ্য এনে দেয়।
-
বৃত্তিমুখী শিক্ষা মনােবিদ্যার ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। ব্যক্তি কাজ করতে চায়। কাজের মধ্য দিয়ে সে নিজেকে খুঁজে পায়। সে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে এবং পরবর্তী কাজে প্রেরণা পায়।
-
শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ বৃত্তি সম্পর্কে নিশ্চয়তা থাকায় শিক্ষার প্রতি তার আগ্রহ বৃদ্ধি পায় এবং ইতিবাচক মনোভাব গড়ে ওঠে।
-
শিক্ষার বৃত্তিমুখী লক্ষ্য শিক্ষার অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে শিক্ষাকে বিনিয়ােগ বলে বিবেচনা করা হয়। শিক্ষার বৃত্তিমুখী লক্ষ্য এই বিনিয়ােগকে আরও উৎপাদনমুখী করে তুলতে সাহায্য করে।
-
প্রতিবন্ধী, বিশেষ করে মানসিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বৃত্তিমুখী শিক্ষার গুরুত্ব আরও বেশি। এদের অনেকেই পুথিগত শিক্ষাগ্রহণে অসমর্থ তাই সামর্থ্যানুসারে বৃত্তিতে প্রশিক্ষণ দিলে এরা স্বনির্ভর হয়ে উঠতে পারে।
শিক্ষার বৃত্তিমুখী লক্ষ্যের প্রয়ােজনীয়তা থাকলেও এটাই যাতে একমাত্র লক্ষ্য না হয়ে ওঠে সে ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। মানবজীবনের আরও অনেক সূক্ষ্ম দিক আছে যার বিকাশ ব্যতীত পূর্ণ মানুষ হওয়া সম্ভব নয়। অধ্যাপক কে. কে. মুখােপাধ্যায় তাই বলেছেন, “বৃত্তিমুখী শিক্ষার উদ্দেশ্য খুবই সংকীর্ণ। তাই সম্পূর্ণ বৃত্তিমুখী শিক্ষা কখনও আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে কাজ করতে পারে না।”
টেইলরের মতে, সমাজের সদস্য হিসেবে মানুষ যে জ্ঞান, বিশ্বাস, শিল্প, নৈতিক নিয়ম, প্রথা এবং অভ্যাস অর্জন করে, তারই জটিল সমন্বয় হল কৃষ্টি। প্রতিটি সমাজের একটি নিজস্ব ঐতিহ্য আছে। সব পিতামাতা চান তাঁদের সন্তান সমাজের রীতিনীতি, সংস্কৃতি, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ইত্যাদির সঙ্গে পরিচিত হােক এই পরিচিতি শিক্ষার দ্বারা সম্পন্ন হবে—সমাজ এটাই প্রত্যাশা করে। আর এটাই হল শিক্ষার কৃষ্টিমূলক লক্ষ্য। কৃষ্টিমূলক লক্ষ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
-
এই লক্ষ্য শিশুর সামাজিকীকরণের পক্ষে সহায়ক।
-
সমস্ত শিক্ষার্থীর আচরণের মধ্যে সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়, ফলে সামাজিক বিরােধিতার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
-
বংশপরম্পরায় সমাজের আদর্শ, রীতিনীতি, প্রথা ইত্যাদি সঞ্চালিত হয়, যার ফলে সমাজের অনন্যতা বজায় থাকে এবং সমাজ শক্তিশালী হয়।
-
কৃষ্টি ও সংস্কৃতি অত্যন্ত বিস্তৃত। তাই বিদ্যালয়ের সীমিত সময়ের মধ্যে এর শিক্ষাদান সম্ভব নয়।
-
ভারত বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতির দেশ। কোনাে বিশেষ সংস্কৃতির প্রেক্ষিতে শিক্ষাব্যবস্থা রূপ পেলে অন্য সংস্কৃতির সঙ্গে বিরােধ বাধার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।
-
কোনাে বিশেষ সংস্কৃতির প্রতি অন্ধ আনুগত্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিকতা বােধের পরিপন্থী। তাই প্রয়ােজন হল বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য স্থাপন করা।
Leave a comment