সামাজিক বিকাশের সঙ্গে সংগতি রেখে শিক্ষার রূপকে তিনটি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা—Informal Education বা প্রথাবর্জিত বা অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা, Non-formal Education বা প্রথাবহির্ভূত শিক্ষা এবং Formal Education বা নিয়ন্ত্রিত বা প্রথাগত শিক্ষা।
সাধারণভাবে বিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রিত পরিবেশের বাইরে কোনাে রকম পূর্বনির্ধারিত রীতিনীতি বা অনুষ্ঠান ছাড়াই শিক্ষার্থীরা যে ধরনের শিক্ষা লাভ করে, তাকে অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা বলে।বিভিন্ন শিক্ষাবিদ বিভিন্নভাবে অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার সংজ্ঞা নিরূপণ করেছেন—
-
শিক্ষাবিদ কুম্বস্ (Coombs) এর মত, অনিয়িন্ত্রত শিক্ষা হল এমনই এক শিক্ষা যা সর্বদা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ঘটে।
-
শিক্ষাবিদ জে. পি. নায়েক (J. P. Naik) – এর মতে, সমাজজীবনে বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে যা কিছু শেখা যায়, তা-ই হল অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা।
(১) নিয়ন্ত্রণহীনতা: অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল—এই শিক্ষায় কোনাে রকম প্রথাগত নিয়ন্ত্রণ থাকে না। শিক্ষার প্রধান চারটি উপাদানের শিক্ষার্থীই কেবল এই শিক্ষায় প্রাধান্য পায় এবং বাকি তিনটি উপাদানের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয় না।
(২) প্রাসঙ্গিক জ্ঞান অর্জনে সহায়তায়: এই ধরনের শিক্ষায় শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিষয় সম্বন্ধে প্রাসঙ্গিক জ্ঞান লাভ করে। এতে শিক্ষার্থী নিজের ইচ্ছা ও প্রয়ােজনমতাে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে।
(৩) শিক্ষকনির্ভর না হওয়া: অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় নির্দিষ্ট কোনাে শিক্ষক নিযুক্ত থাকে না। শিক্ষার্থী পরিবেশ, পরিবার এবং সামাজিক সংস্থা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে।
(৪) কৃত্রিমতাহীন স্বাভাবিকতা: অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা সম্পূর্ণ কৃত্রিমতাহীন শিক্ষা। এখানে শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক উপায়ে বিভিন্ন উৎস বা মাধ্যম থেকে শিক্ষালাভ করে।
(৫) নির্দিষ্ট পাঠক্রমের অনুপস্থিতি: অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা ব্যবস্থায় নির্দিষ্ট কোনাে পাঠক্রম অনুসরণ করা হয় না এবং কোনাে বিষয়ও (subject) নির্দিষ্ট থাকে না৷
(৬) চার দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকা: এই ধরনের শিক্ষায় শিক্ষার্থী যে-কোনাে স্থান থেকে, যে-কোনাে সময়ে এই শিক্ষা লাভ করতে পারে।
(৭) পূর্বপরিকল্পিত ও পূর্বনির্ধারিত না হওয়া: এই শিক্ষা- ব্যবস্থায় কোনাে কিছুই পূর্বপরিকল্পিত বা পূর্বনির্ধারিত থাকে না।
(৮) নির্দিষ্ট পাঠ্যপুস্তক না থাকা: এই ধরনের শিক্ষায় যেহেতু কোনাে পাঠক্রম নেই, তাই এতে নির্দিষ্ট কোনাে পাঠ্যপুস্তকও থাকে না।
(৯) পর্যবেক্ষণ, অনুশীলন ও অনুকরণ-নির্ভরতা: এই শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থী নিজে বাড়ির বা বাইরের পরিবেশের কোনাে উপাদানকে পর্যবেক্ষণ করে এবং তা অনুশীলনের মাধ্যমে নিজে নিজেই শেখে।
(১০) নির্দিষ্ট শিক্ষান্তর ও বয়স না থাকা: অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় নির্দিষ্ট শ্রেণি বা শিক্ষান্তর থাকে না এবং এই শিক্ষাগ্রহণের জন্য কোনাে নির্দিষ্ট বয়সসীমা নেই।
(১১) বাধ্যবাধকতাহীন ও স্বল্পব্য্সসম্পন্ন: অনিয়্রিত শিক্ষার কোনাে বাধ্যবাধকতা নেই। ব্যয় খুব অল্প, প্রায় নেই বললেই হয়।
(১২) শংসাপত্রের প্রয়ােজনহীনতা: যেহেতু এই শিক্ষা-ব্যবস্থায় নির্দিষ্ট সময়ের পর কোনাে মূল্যায়ন হয় না তাই শংসাপত্র প্রদানের কোনাে প্রশ্ন ওঠে না।
অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষাব্যবস্থায় যেহেতু কোনো পাঠক্রম নেই, নিয়মশৃঙ্খলা বা কোনাে পরিকল্পনার ব্যবস্থা নেই এবং কোনাে বিদ্যালয়ও নেই, তাই এতে মূল্যায়নের কোনাে সুযােগও নেই। শিক্ষার্থী সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে আপন ইচ্ছানুসারে শিক্ষালাভ করে। এটি এক সম্পূর্ণ স্বতঃস্ফুর্ত শিক্ষাব্যবস্থা।
Leave a comment