প্রশ্নঃ শাস্তিপূর্ণ অবরোধ কাকে বলে? যুদ্ধকালীন অবরোধ এবং শাস্তিপূর্ণ অবরোধের পার্থক্য কি? কখন অবরোধে পরিসমাপ্তি ঘটে?

ভূমিকাঃ কোন দাবী আদায়ের একটি বিশেষ ব্যবস্থা হলো অবরোধ। এটি কখনো বৈধ আবার কখনো অবৈধ হিসেবে গণ্য হয়। কোন রাষ্ট্র অন্যায় করলে তার বিরুদ্ধে অবরোধ করা যায় । কিন্তু অন্যায় না করলে কোন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবরোধ করা যায় না। এরূপ করলে বেআইনী অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

শান্তিপূর্ণ অবরোধ (Pacific Blocked) কাকে বলেঃ শান্তিকালীন সময়ে কোন রাষ্ট্র যদি আন্তর্জাতিক নীতি লংঘন করে তাহলে সেই রাষ্ট্রের উপকূল সাময়িকভাবে বন্ধ করে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ রাখাকে শান্তিপূর্ণ অবরোধ বলে।

এই ধরনের অবরোধ দ্বারা মূলতঃ ব্যবসা-বাণিজ্যে বা আমদানি-রপ্তানীতে বাধা সৃষ্টি করে আন্তর্জাতিক নীতি লংঘনকারী রাষ্ট্রকে শর্ত পালনে বাধ্য করা হয়।

আন্তর্জাতিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য এটি একটি বিশেষ পন্থা।

যুদ্ধকালীন অবরোধ এবং শাস্তিপূর্ণ অবরোধের পার্থক্যঃ যুদ্ধকালীন অবরোধ এবং শাস্তিপূর্ণ অবরোধের পার্থক্য নিম্নে দেয়া হলো- 

পার্থক্যের বিষয়

যুদ্ধকালীন অবরোধ 

শাস্তিপূর্ণ অবরোধ

(১) সংজ্ঞাগত পার্থক্য : 

যুদ্ধের সময় কোন জাহাজের আগমন বা প্রস্থান বন্ধ করার জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করাকে অবরোধ বলে।

শান্তিকালীন সময়ে কোন রাষ্ট্র যদি আন্তর্জাতিক নীতি লংঘন করে তাহলে সেই রাষ্ট্রের উপকূল সাময়িকভাবে বন্ধ করে ব্যবসা- বাণিজ্য বন্ধ রাখাকে শান্তিপূর্ণ অবরোধ বলে।

(২) প্রতিশব্দগত পার্থক্য :

যুদ্ধকালীন ইংরেজিতে অবরোধকে Wartime Blocked বলে৷

শান্তিপূর্ণ অবরোধকে ইংরেজিতে Pacific Blocked বলে।

(৩) স্বীকৃতগত পার্থক্য : 

জাতিসংঘ সনদ দ্বারা যুদ্ধকালীন 

অবরোধ স্বীকৃত নয়।

জাতিসংঘ সনদ দ্বারা শান্তিকালীন অবরোধ স্বীকৃত।

(৪) শক্তিপ্রয়োগগত পাৰ্থক্য : 

যুদ্ধকালীন অবরোধের সময় শক্তি প্রয়োগের নির্দিষ্ট কোন সীমারেখা নেই।

শান্তিকালীন অবরোধের সময় শক্তি প্রয়োগের নির্দিষ্ট সীমারেখা আছে।

(৫) প্রকৃতিগত পার্থক্য : 

এটি সামরিক অনুগামী একটি ঘটনা।

এটি সামরিক অভিযানের অনুগামী ঘটনা নয়। এটি সাধারণত ব্যবসা-বাণিজ্যে বাধা সৃষ্টি করার জন্য করা হয়।

(৬) প্রয়োগগত পার্থক্য : 

অভিযানের যুদ্ধকালীন অবরোধ শত্রু রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ঘোষণা করা হয়। 

শান্তিকালীন অবরোধ যে কোন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ঘোষণা করা হতে 

পারে।

কখন অবরোধে পরিসমাপ্তি ঘটেঃ নিম্নের অবস্থায় অবরোধের পরিসমাপ্তি ঘটে-

(১) যুদ্ধ শেষে : কোন যুদ্ধ শেষ হলে অবরোধের পরিসমাপ্তি হয়।

(২) অবরোধ তুলে নেওয়া হলে : অবরোধ তুলে নেওয়া হলে অবরোধের পরিসমাপ্তি হয়। 

(৩) অবরোধকারীর বিজয় হলে : যে রাষ্ট্র বা পক্ষ অবরোধ সৃষ্টি করে সেই রাষ্ট্র বা পক্ষ যুদ্ধে বিজয় লাভ করলে অবরোধের পরিসমাপ্তি হয়।

(৪) এলাকা ছেড়ে চলে গেলে : অবরোধে নিয়োজিত জাহাজ এবং সৈন্য যদি অবরোধ এলাকা ছেড়ে চলে যায় তাহলে অবরোধের পরিসমাপ্তি হয় ।

(৫) প্রতিপক্ষ দখল করলে : অবরোধ অঞ্চল যদি প্রতিপক্ষ দখল করে নেয় তাহলে অবরোধের পরিসমাপ্তি হয়।

(৬) জোর করে ভেঙ্গে দিলে : কোন রাষ্ট্র যদি জোর করে অবরোধ ভেঙ্গে দেয় তাহালে অবরোধের পরিসমাপ্তি হয়।

উপসংহারঃ অবরোধ নিরসনের পন্থা দু’টি। শান্তিপূর্ণ উপায়ে এবং বাধ্যতামূলকভাবে। দু’টি পদ্ধতিই আইনসম্মত হলেও শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবরোধ নিরসন করা হলে তা পরস্পর রাষ্ট্রসমূহের জন্য অধিকতর কল্যাণজনক হয়।