শাওয়াল মাস এর ছয়টি রোজা নারী এবং পুরুষ সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত।
আমরা সবাই এই শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা পালন করে থাকি। আর এর
জন্যই  শাওয়াল মাস – এর ছয় ৬ রোজার ফজিলত সম্পর্কে আমাদের জানা
একান্ত প্রয়োজন।

এই শাওয়াল মাসের ছয় ৬টি রোজা পুরো বিশ্বের মুসলিম বিশেষ সোয়াবের আশায়
পালন করে থাকেন। শাওয়াল মাস – এর ছয় ৬ রোজার ফজিলত সম্পর্কে নিচে
বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

 শাওয়াল মাসের রোজার ফজিলত

শাওয়াল আরবি শব্দ। এর অর্থ পূর্ণতা পাওয়া, উঁচু করা, বিজয়ী হওয়া, গৌরব করা
ইত্যাদি।  শাওয়াল মাস হল আরবি বছরের বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী দশম মাস।
রমজান মাসের শেষ হয় শাওয়াল মাসের শুরু দিয়ে। বলা হয় রজব মাস হলো বীজ
বপণের সময়, সাবান মাস হলো গাছ জন্মানোর সময়, আর রমজান মাস হল ফল লাভের সময়। আর
এইসব মাসেরই পূর্ণতা দিতে আসে শাওয়াল মাস।

এই শাওয়াল মাসের প্রথম দিন অর্থাৎ ১ তারিখে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখে মানুষ যে
খুশি হয় তা আর কোন মাসের চাঁদ দেখে হয়তো হয় না। কারণ শাওয়াল মাসের শুরুর দিন
বা ১ তারিখ মুসলিম জাহানের জন্য আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে। ঈদ মানে খুশি ঈদ মানে
আনন্দ।

শাওয়ালের অর্থ ও তাৎপর্য 

শাওয়াল শব্দটি হলো আরবি শব্দ। এর অর্থ হল পূর্ণতো পাওয়া, বিজয়ী হওয়া, উচু
করা, উন্নত করা ইত্যাদি।সাওয়াল মাস হল একটি অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ মাস। আরবি ১২
মাসের কোন মাসের রোজা কে এত গুরুত্ব দেয়া হয়নি যেমনটি দেওয়া হয়েছে এই শাওয়াল
মাসের রোজাকে।পুরো বিশ্বের সমগ্র মুসলিম অধিক পূর্ণতা প্রাপ্তির আশায় এই শাওয়াল
মাসের ছয় ৬ টি রোজা  রেখে থাকেন। তবে শাওয়াল মাসের প্রথম দিন অর্থাৎ এক ১
তারিখ রোজা রাখা নিষেধ বা হারাম।

এই শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা ছাড়াও এই মাস আরেকটি কারণে মর্যাদা পূর্ণ আর তা হল
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাথে মা
আয়েশার বিয়ে হয়েছিল। এই শাওয়াল মাসেই আর এই বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল শাওয়াল
মাসের শুক্রবারে মসজিদুল নববীতে। (সুবহানাল্লাহ)।

হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত এবং হাদিস দ্বারা প্রমাণিত,
শাওয়াল মাসে বিয়ে করা সুন্নত, জামে মসজিদে শুক্রবারে বড় আকদ অনুষ্ঠিত করা
সুন্নত,সাওয়াল মাসের ছয় রোজা বিশেষ সুন্নত”।( সহীহ মুসলিম শরীফ)।

 শাওয়াল মাস – এর ছয় ৬ রোজার ফজিলত

শাওয়াল মাসের ছয়টা রোজার গুরুত্ব অনেক বেশি।আল্লাহতালা যখন তার বান্দার কোন নেক
আমল কবুল করেন তখন তাকে আরেকটি নেক কাজ করার সুযোগ দান  করে থাকেন। শাওয়াল
মাসের ছয় ৬ টি রোজা আমাদের প্রিয় নবী নিজেও রাখতে এবং সাহাবায়ে কেরামদেরও রাতে
নির্দেশ দিতেন।

হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রহমতউল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি রমজানে রোজা রাখবে অতঃপর সাওয়ালের ছয় ৬টি রোজা
পালন করবে সে যেন সারা বছরের রোজা রাখল”। (মুসলিম, ২/ ৮২২)।

সাওবান রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত! রাসুল সালাম বলেছেন, “রমজানের
রোজা ১0 মাসের সমতুল্য, আর শাওয়ালের ছয় রোজা দুই মাসের রোজার সমতুল্য সুতরাং এই
হলো এক বছরের রোজা”। অন্য জায়গায় বর্ণনা এসেছে “যে ব্যক্তি রমজানের রোজা শেষ
করে শাওয়াল মাসের ছয় দিন রোজা রাখবে সেটা তার জন্য পুরো বছর রোজা রাখার
সমতুল্য”।( যে সৎ কাজ নিয়ে এসেছে তার জন্য দশগুণ)। সূরা আনআম, আহমেদ ৫২৮০
দায়েমি ১৭৫০)।

রমজান মাসের ৩০ টি রোজা আর শাওয়াল মাসের ছয় ৬ টি রোজা এই মিলে মোট ৩৬ টি রোজা।
পবিত্র কোরআনে একটি পূর্ণের জন্য ১০ গুণ নেকির কথা উল্লেখ আছে। তাহলে সেই হিসাব
মতে ৩৬ কে ১০ দিয়ে গুণ করা হয় তাহলে হবে ৩৬ গুন ১০ সমান ৩৬0। আর এই হিসাব মতে
৩৬০ অর্থাৎ এক বছর রমজানের ত্রিশটি রোজা সহ শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা পালন করলে
এক বছরের সমান সওয়াব পাওয়া যাবে।

হযরত শাহবান রহমাতুল্লাহ থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এরশাদ
করেছেন, “রমজান মাসের রোজা ১0 মাসের রোজার সমতুল্য, আর শাওয়াল মাসের ছয় ৬ রোজা
দুই মাসের রোজার সমান। সুতরাং এই হল এক বছরের রোজা”।( নাশাহী ২/১৬২)।

পবিত্র কোরআনের সূরা আল আনামের ১৬০ নম্বর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে যে ব্যক্তি একটি
সৎকাজ করল সে ১০ গুণ সওয়াব পাবে আর সেই হিসাব অনুযায়ী যে ব্যক্তির রমজান মাসে
রোজা রাখল এবং শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখল সে এই দুই মিলে ১২ মাসের রোজার সমান
সওয়াব পাবে।

হযরত ওবায়দুল্লাহ রহমতুল্লাহি আনহু বলেন, একদিন রাসূল সাঃ কে জিজ্ঞেস করলাম ! হে
আল্লাহর রাসূল ! আমি কি সারা বছর রোজা রাখতে পারব? রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম
বললেন, তোমার উপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে। কাজে তুমি সারা বছর রোজা না রেখে
রমজানের রোজা রাখো এবং পরবর্তী সাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখ। তাতে সারা বছর রোজা
রাখার সমান সওয়াব পাবে।( তিরমিজি। .১/৫৭)।

পাপের পাহাড় ভাঙ্গরে ভাই পাপের পাহাড় ভাঙ্গ,

পাপের পাহাড় ভাঙতে হলে নফল রোজা রাখো,

সবাই নকল রোজা রাখো।

শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখার নিয়ম

শাওয়াল মাসের ছয় ৬টি রোজা সবারই রাখা উচিত। শাওয়াল মাসের প্রথম দিন অর্থাৎ এক
১ তারিখে ঈদুল ফিতরের দিন ছাড়া বাকি ২৯ দিনে রোজা রাখা যায়। এই রোজা রাখার
নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই। শাওয়াল মাসের দুই ২ তারিখ থেকে একনাগাড়ে ছয় ৬ টি
রোজা পালন করা যায়। এক রোজার মাঝে বিরতি দিয়ে এই রোজা পালন করা যায়।

তাই শাওয়াল মাসের যে কোন দিন রোজা রাখলেই কোরআন এবং হাদিসে রাখলেই কোরআন এবং
হাদিসে বর্ণিত সওয়াব পাওয়া যাবে। তবে অনেকেই মনে করেন শাওয়াল মাসের প্রথম দিকে
রোজা রাখাই উত্তম।

আপনি শাওয়াল মাসের প্রথম দিকে ছয় ৬টা রোজা করে নিলে আবার ১৩-১৪ ও ১৫ তারিখে
রোজা রাখতে পারবেন। আর এতে আপনার আওয়াবীন বীজের রোজাও পালন হয়ে যাবে। মনে
রাখবেন আপনি যে রোজাই পালন করেন না কেন আপনাকে রমজান মাসের ৩০ রোজা আগে পূরণ করতে
হবে।

রমজান মাসের ৩০ রোজা পূরণ করার আগে আপনি যদি ভেবে থাকেন শাওয়াল মাসের ছয় রোজা
পালন করলেই আপনার এক বছরের রোজার সওয়াব পাবেন তাহলে ভুল করবেন। কারণ রমজান মাসের
৩0 রোজা হল খুঁটি আর শাওয়াল মাসের ছয়  ৬ রোজা হলো ওয়াল বা দেয়াল। আর যদি
খুঁটি শক্ত না থাকে তাহলে আপনি দেয়াল তৈরি করতে পারবেন না।

আপনাকে রমজান মাসে ৩০ রোজা পূরণ করতে হবে। তারপর শাওয়াল মাসের ছয়.৬ রোজা
রাখবেন। শাওয়াল মাসের এই ছয় রোজা নারী এবং পুরুষ সবার জন্যই রাখা
গুরুত্বপূর্ণ।

শেষ কথা

রোজা এমন একটি এবাদত যার গুরুত্ব বলে শেষ করা যাবে না। মহান আল্লাহতালা বলেন,
“রোজা আমার জন্য আর এর সোয়াব আমি নিজ হাতে দেব”। আর জান্নাতের একটি দরজা আছে যার
নাম “আর রাইয়ান” আর এই আর রাইয়ান নামক দরজা দিয়ে একমাত্র রোজাদার ব্যক্তি
জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেন। যখন আর রাইয়ান নামক এই দরজা দিয়ে রোজাদারেরা
জান্নাতে প্রবেশ করবেন তখন এই দরজা নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে যাবে।

ফরজ হোক অথবা নফল হোক রোজা পালন করা উচিত। ইসলামী বর্ণিত ছয় প্রকারের রোজা আমরা
জানি। আর তা হল ফরজ, সুন্নত, নফল, ওয়াজিব,  মাকরূহ ও হারাম রোজা। শাওয়াল
মাসের এই ছয় রোজা নারী এবং পুরুষ সবার জন্য পালন করা অতি গুরুত্বপূর্ণ। জান্নাতে
একটি দরজা আছে যার নাম “আর রাইয়ান”।

আর একমাত্র রোজাদার ব্যক্তিরা এই “আর রাইয়ান” নামক দরজা দিয়ে জান্নাতে
প্রবেশ করতে পারবেন। যখন রোজাদার ব্যক্তিরা এই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবেন
তখন এই দরজা নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে যাবে। তাই আসুন আমরা সবাই  শাওয়াল
মাস – এর ছয় ৬ রোজার ফজিলত সম্পর্কে জানি এবং তা পালন করি।