এই পদ্ধতি তাপোৎপাদী বিক্রিয়া চিহ্নিত করে।


তাপউৎপাদী বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে লা-শাতেলিয়ের নীতির ব্যাখ্যা :
 


একটি তাপউৎপাদী বিক্রিয়া যেমনঃ অ্যামোনিয়া উৎপাদন বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে, 


N₂+3H₂ —–>2NH₃ ; ΔH= – 92kj 

অ্যামোনিয়া উৎপাদনের বিক্রিয়াটিতে ΔH এর মান নেগেটিভ হওয়ায় বিক্রিয়াটি তাপউৎপাদী বিক্রিয়া। তাপউৎপাদী বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে লা-শাতেলিয়ার নীতি অনুযায়ী বিক্রিয়া হতে তাপ অপসারণ করলে বিক্রিয়াটি সামনের দিকে অগ্রসর হয়। 

অর্থাৎ উৎপাদের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। আবার বিক্রিয়াটিতে তাপ দিলে বিক্রিয়াটি পেছনের দিকে অগ্রসর হয় অর্থাৎ উৎপাদ ভেঙ্গে গিয়ে বিক্রিয়কের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এতে উৎপাদের পরিমাণ হ্রাস পায়।


তাপহারী বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে লা-শাতেলিয়ের নীতির ব্যাখ্যাঃ


N₂+O₂ —–>2NO ; ΔH= + 180 kj


বিক্রিয়াটিতে ΔH এর মান ধনাত্মক হওয়ায় বিক্রিয়াটি তাপহারী। তাপহারী বিক্রিয়ায় লা-শাতেলিয়ের নীতি অনুযায়ী বিক্রিয়াটিতে তাপ দিলে বিক্রিয়াটি সামনের দিকে অগ্রসর হয়। 

অর্থাৎ কিছু বিক্রিয়ক যুক্ত হয়ে উৎপাদের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। 

আবার তাপহারী বিক্রিয়া হতে তাপ অপসারণ করলে বিক্রিয়াটি পিছনের দিকে অগ্রসর হয়। 

অর্থাৎ উৎপাদের পরিমাণ হ্রাস পায়।


 

লা-শাতেলিয়ে নীতি অনুযায়ী কোন বিক্রিয়াতে চাপের প্রভাব এর ব্যাখ্যা নিম্নরূপ :


লা-শাতেলিয়ে নীতি অনুসারে কোন বিক্রিয়ায় চাপের প্রভাব ব্যাখ্যা করতে হলে, বিক্রিয়কের মোট মোল সংখ্যা ও উৎপাদের মোট মোল সংখ্যা হিসাব করতে হবে। কিন্তু বিক্রিয়াটি তাপউৎপাদী  কিংবা তাপহারী কিনা তা বিবেচ্য বিষয় নয়।


তিন পদ্ধতিতে লা-শাতেলিয়ের নীতি অনুযায়ী কোন বিক্রিয়ায় চাপের প্রভাব ব্যাখ্যা করা যায়।


১.


N₂+3H₂——>2NH₃ ; ΔH= – 92kj


বিক্রিয়াটিতে বিক্রিয়কের মোট মোল সংখ্যা 
=1 + 3 = 4 

এবং উৎপাদের মোট মোল সংখ্যা

= 2. 

অর্থাৎ বিক্রিয়াটি মোল সংখ্যা হ্রাসের মাধ্যমে ঘটেছে। বিক্রিয়াটিতে উৎপাদের মোল সংখ্যা কম হওয়ায় বিক্রিয়ক থেকে উৎপাদে অনুর সংখ্যা বেশি। কাজেই বিক্রিয়াটিতে চাপ প্রয়োগ করলে লা-শাতেলিয়ের নীতি অনুযায়ী বিক্রিয়াটি সামনের দিকে অগ্রসর হবে। 

অর্থাৎ উৎপাদের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। 

আবার, যদি বিক্রিয়াটি হতে চাপ অপসারণ করা হয় তবে  বিক্রিয়াটি পিছনের দিকে অগ্রসর হবে। অর্থাৎ উৎপাদের পরিমাণ হ্রাস পাবে।


২.   PCl₅   ———-> PCl₃ + Cl₂


বিক্রিয়াটিতে বিক্রিয়কের মোল সংখ্যা = 1 

এবং উৎপাদের সংখ্যা = 1+1 =2. 

অর্থাৎ বিক্রিয়াটি মোল সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে ঘটেছে। বিক্রিয়াটিতে বিক্রিয়কের থেকে উৎপাদে অনুর সংখ্যা বেশি। এই বিক্রিয়ায় লা-শাতেলিয়ে নীতি অনুযায়ী চাপ প্রয়োগ করলে বিক্রিয়াটি পেছনের দিকে অগ্রসর হবে। 

অর্থাৎ উৎপাদের পরিমাণ হ্রাস পাবে। কিন্তু বিক্রিয়াটি হতে চাপ অপসারণ করলে বিক্রিয়াটি সামনের দিকে অগ্রসর হবে। 

অর্থাৎ উৎপাদের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।


৩.       H₂ + I₂ ——–> 2HI


বিক্রিয়াটিতে বিক্রিয়কের মোল সংখ্যা =1+1=2 

এবং উৎপাদের মোল সংখ্যা=2. অর্থাৎ বিক্রিয়ক ও উৎপাদের মোল সংখ্যা সমান। এক্ষেত্রে বিক্রিয়ক ও উৎপাদের অণুর সংখ্যাও সমান। যেহেতু বিক্রিয়াটিতে বিক্রিয়ক ও উৎপাদের মোল সংখ্যা সমান সেহেতু লা-শাতেলিয়ে নীতি অনুযায়ী বিক্রিয়াটিতে কোন চাপের প্রভাব নেই।


চাপের ক্ষেত্রে লা-শাতেলিয়ে নীতি অনুযায়ী কোন বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক বা উৎপাদের ক্ষেত্রে যার মোল সংখ্যা কম চাপ দিলে বিক্রিয়াটি সেই দিকে অগ্রসর হয়। 

যেমনঃ উৎপাদের মোল সংখ্যা কম হলে চাপ দিলে বিক্রিয়াটি উৎপাদের দিকে অগ্রসর হয়। 

আবার বিক্রিয়কের মোল সংখ্যা কম হলে চাপ দিলে বিক্রিয়কের দিকে অগ্রসর হয়।

লা-শাতেলিয়ে নীতি অনুযায়ী কোন উভমুখী বিক্রিয়াতে ঘনমাত্রার প্রভাব ব্যাখ্যা নিম্নরূপঃ


কোন একটি উভমুখী বিক্রিয়া সাম্যবস্থায় থাকাকালে বিক্রিয়াটির ঘনমাত্রার পরিবর্তন করলে বিক্রিয়াটির সাম্যবস্থাও পরিবর্তিত হয়। 

যেমনঃ উৎপাদের ঘনমাত্রা হ্রাস করলে বিক্রিয়াটি উৎপাদের দিকে অর্থাৎ সামনের দিকে অগ্রসর হবে। উৎপাদের ঘনমাত্রা দুই ভাবে হ্রাস করা যায়। 

১. বিক্রিয়া থেকে কিছু উৎপাদকে সরিয়ে নিলে, 

২.বিক্রিয়াতে নতুন করে কিছু বিক্রিয়ক যোগ করে। 

আবার, উভমুখী বিক্রিয়ায় বিক্রিয়কের ঘনমাত্রা হ্রাস করলে বিক্রিয়াটি পেছনের দিকে অগ্রসর হবে। অর্থাৎ বিক্রিয়কের পরিমান বৃদ্ধি পাবে এবং উৎপাদের পরিমাণ হ্রাস পাবে। বিক্রিয়কের ঘনমাত্রাও দুই ভাবে কমানো যায় 


 ১. বিক্রিয়া হতে কিছু বিক্রিয়ক অপসারণ করে,


 ২. বিক্রিয়াতে নতুন করে কিছু উৎপাদ যোগ করলে।