অথবা, আধ্যাত্মিক বহুত্ববাদ বলতে কী বােঝ বা আধ্যাত্মিক মােনাবাদ ব্যাখ্যা কর।
ভূমিকাঃ সত্তা ও ঈশ্বরের ধারণা যুগে যুগে মানুষের কাছে বিভিন্নরূপে ধরা পড়ছে। আদিযুগের জড়বাদী ধারণা থেকে বর্তমানে ভাববাদী দর্শনের বিভিন্ন পর্যায়ে সত্তা বা ঈশ্বরকে এক দ্বৈত বা বহু বলে প্রমাণের চেষ্টা করা হয়েছে। যে মতবাদ এক ও দুই সত্তার পরিবর্তে বহু ও বিচিত্রময় নানাবিধ সঙ্গকে বিশ্বজগতের আদি বা মূল উপাদান বলে মনে করে, তাকে বহুত্ববাদ বলে। বহুত্ববাদের মূল কথা, এ বিশ্বজগত নানা রকমের উপাদান দ্বারা পরিপূর্ণ এবং এসব উপাদান স্বতন্ত্র। বহুত্ববাদ পাঁচ প্রকার। এ পাঁচ প্রকারের বহুত্ববাদের মধ্যে আধ্যাত্বিক বহুত্ববাদ অন্যতম।
আধ্যাত্মিক বহুত্ববাদ বা মােনাবাদঃ জার্মানি দার্শনিক লাইবনিজ “মােনাড” তত্ত্বের প্রবর্তক। লাইবনিজের মতে, আমাদের এর পরিদৃশ্যমান জগতের মূলে রয়েছে অসংখ্য চিৎপরমাণু বা মােনাড। এ চিৎপরমাণুর অন্যতম বৈশিষ্ট্য এরা অবিভাজ্য। কিন্তু আধ্যাতিক পরমাণু কখনই অবিভাজ্য হতে পারে না। সুতরাং
আধ্যাত্মিক সত্তাসম্পন্ন চেতন ও সক্রিয় পরমাণু হলাে আদর্শ উপাদান। এ পরমাণুর প্রকতি বিচার করলে দেখা যায় যে, তাদের সাথে গাণিতিক ও জড়বিন্দুর যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। পক্ষান্তরে, চিৎপরমাণু গাণিতিক বিন্দও নয়, জড়বিন্দুও নয়। এগুলাে বিস্তৃতিবিহীন মূর্ত আধ্যাত্মিক বিন্দু। লাইবনিজের মতে, চিৎপরমাণু বিহীন, কিন্তু এগুলাে স্বনির্ভর, সক্রিয় ও আত্মকেন্দ্রিক। জগতের প্রত্যেকটি বস্তুই একটি গবাক্ষবিহীন মােনাড। প্রত্যেকটি চিৎপরমাণুই চেতনাধর্মী। কিন্তু তাদের প্রত্যেকের মধ্যে চৈতন্য সমানভাবে উপস্থিত নেই। বস্তুত, লাইবনিজের মতে ঈশ্বর হলাে সর্বশ্রেষ্ঠ চিৎপরমাণু যার অবস্থান অন্য সব চিৎপরমাণু থেকে ওপরে। একই সাথে তিনি সমস্ত চিৎপরমাণুগুলাের মধ্যে একটা পূর্ব প্রতিষ্ঠিত শৃঙ্খলা স্বীকার করেছেন।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, এ পরিদৃশ্যমান জগতের মূলে রয়েছে অসংখ্য চিৎপরমাণু। পরমাণুগুলাে হলাে ঈশ্বর। তিনি সব পরমাণুগুলাের মধ্যে একটা ঐক্য স্থাপন করেন এবং সকল ঈশ্বর বা মােনাড়দের মধ্যে একটা সম্পর্ক স্বীকার করেন। সুতরাং লাইবনিজের মােনাড তত্ত্বের ভিত্তিতে জগত এক পরম ঐক্যে পরিণত হয়েছে।
Leave a comment