মক এপিক

তুচ্ছ বা লঘু বিষয় নিয়ে মহাকাব্যের সমুন্নত, গম্ভীর রীতির অনুকরণে বিশেষ ধরনের ব্যঙ্গবিদ্রূপাত্মক গদ্যপদ্যরচনা, আরও সুনির্দিষ্টভাবে, বিশেষ ধরনের পদ্যছন্দবদ্ধ রচনাকে ব্যঙ্গাত্মক মহাকাব্য (Mock Epic বা Mock Heroic) বলা হয়।

মক এপিক কাব্য কখন সচেতনভাবেই ব্যঙ্গবিদ্রূপের উদ্দেশ্যে মহাকাব্যিক রচনাশৈলী, ধ্রুপদী গঠন (classical structure), বীরোচিত কার্যকলাপ, মন্ত্রাদি উচ্চারণপূর্বক মিনতিপূর্ণভাবে আহ্বান (Invocation), উৎসর্গ, দৈবী হস্তক্ষেপ, মহাকাব্যীয় উপমা (Epic Simile), সর্গবিভাগ ও যুদ্ধ ইত্যাদি মহাকাব্যের প্রচলিত সর্বজনগ্রাহ্য প্রকরণ অনুকরণ করেন।

জন ড্রাইডেনের (১৬৩১-১৭০0) Mac Flecknoe ব্যঙ্গ ও হাস্যরসাত্মক মহাকাব্য। আয়র্ল্যান্ডের একজন ধর্মযাজক রিচার্ড ফ্রেকনো সম্পূর্ণরূপে কবিত্বশক্তিবর্জিত হলেও নিজেকে একজন বড় কবি বলে মনে করতেন। তাঁকে উপহাস করার জন্যই ড্রাইডেন এই কাব্যটি রচনা করেন। আলেকজান্ডার পোপ-এর (১৬৮৮-১৭৪৪) The Rape of the Lock, The Dunciad মক এপিকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।

লর্ড পিটার কুমারী অ্যারাবেলা ফার নামক একজন সুন্দরী তরুণীর একগুচ্ছ চুল কেটে নেওয়ায় দুটি পরিবারের মধ্যে বিরোধ বাঁধে, তখন পারিবারিক বিবাদের নিষ্পত্তির জন্য পোপ প্রথমোক্ত মহাকাব্যধর্মী ব্যঙ্গাত্মক কাব্যটি রচনা করেন। হেলেনকে কেন্দ্র করে গ্রীক ও ট্রোজানদের বিরোধকে কবি ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে অনুকরণ করেছেন। পোপ এই রচনায় অষ্টাদশ শতাব্দীর অভিজাত বংশীয়া তরুণীদের তাসখেলা, নস্যি নেওয়া প্রভৃতি বিভিন্ন অভ্যাস ও দুর্বলতাকে ব্যঙ্গ করেছেন। পোপ The Dunciad-এ তাঁর বহু-পরিচিত সাহিত্যিককে ডান্স বা মূর্খ বলে সম্বোধন করে তাঁদের উদ্দেশ্যে ব্যঙ্গের তীব্র বিষাক্ত তীর নিক্ষেপ করেছেন। যে সাহিত্যিকদের তিনি মূর্খ বলেছেন, তাদের মধ্যে টিবল্ড, রিচার্ড বেন্টলি ও কলি সিবার বিশেষ উল্লেখযোগ্য। টিবল্ড কোনও এক সময়ে বলেছিলেন যে পোপ শেক্সপীয়রের নাটকের সম্পাদনার কাজ করার অযোগ্য। সেইজন্য সিবারকে এই কাব্যে মূর্খদের রাজা করে দেওয়া হয়েছে।

মধুসূদনের ‘মেঘনাদবধ কাব্য’কে ব্যঙ্গ করার উদ্দেশ্যে রচিত জগদ্বন্ধু ভদ্রের ‘ছুছুন্দরীবধ কাব্য’ (১৮৬৮) ও ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ভারত উদ্ধার’ মক-এপিক কাব্য। প্যারডি বা ব্যঙ্গানুকৃতিমূলক অনুকরণ, স্যাটায়ার বা বুদ্ধিদীপ্ত বিদ্রূপ হিউমার বা বিশুদ্ধ হাস্যরসের মিশ্রণে ‘ভারত-উদ্ধার’ (১২৮৪ সাল) সত্যই উপভোগ্য রচনা। প্রথম সর্গে পাই প্রস্তাবনা ও সরস্বতীর স্তব, দ্বিতীয় সর্গে সংকল্প, নায়ক বিপিনকৃয় ও তার বন্ধু কামিনীকুমার অবিলম্বে ভারত-উদ্ধারে কৃতসংকল্প, তৃতীয় সর্গে মন্ত্রণা, চতুর্থ সর্গে উদ্যোগ, পঞ্চম সর্গে ভারত-উদ্দ্ধার, বিপিনের পূর্ব-পরামর্শমত সুয়েজ খালে ছাতুর বস্তা ফেলে বন্ধ করা হল, তাতে খালের জলে শুষ্ক, ইংরেজদের পলায়নের পথ বন্ধ ; বঙ্গবীরেরা কেউ বঁটি হাতে, কেউ বা পিচকারিতে বালিগোলা জল নিয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হল, সেই জল ইংরেজ সৈন্যদের চোখে ছুড়ে দেওয়া হতে থাকলে তারা ভীত সন্ত্রস্ত হল, চিৎপুরের খাল-ধার থেকে কেল্লা পর্যন্ত সুড়ঙ্গ কেটে তাঁর মধ্যে লঙ্কার বস্তার ও বাজারের সব পটকা ভরে রাখা হয়েছিল, এবার তাতে আগুন দেওয়া হল, তার ফলে :

প্রবল লঙ্কার ধুম প্রবেশি অরাতি

নাসারন্ধ্রে গালে, খক খক্ থকে

কাসাইল শত্ৰুদলে, ফ্যাচফ্যাচ ফ্যাচে। 

হাঁচাইল ভয়ংকর, কাতরিল সবে।

অমিত্রাক্ষর ছন্দের এই ব্যঙ্গাত্মক অনুসরণে ইন্দ্রনাথ তাঁর ‘ভারত উদ্ধারে’ সে যুগের রাজনৈতিক আন্দোলনের হাস্যকর দিক ফুটিয়ে তুলেছেন।


ভক্তিমূলক গীতিকবিতা

ভক্তিমূলক বা ভক্তিরসাশ্রিত গীতিকবিতার উপজীব্য ধর্ম বা ভক্তিভাব। বিদ্যাপতির প্রার্থনা পদ, গোবিন্দদাস কবিরাজ ও অন্যান্য কবিদের চৈতন্যবন্দনা পদ, রামপ্রসাদ, কমলাকান্ত প্রভৃতি কবিদের শাক্তপদাবলী, অক্ষয়কুমার বড়ালের ‘কোথা তুমি’, রবীন্দ্রনাথের ‘গীতাঞ্জলি’র অন্তর্ভুক্ত কবিতাগুচ্ছ ভক্তিমূলক গীতিকবিতার উদাহরণ। ইংরেজীতে এই শ্রেণীর কবিতাকে ‘Devotional Poems’ বলা হয়।

কার্ডিনাল নিউম্যানের Lead Kindly Light, ব্রাউনিং-এর Soul ভক্তিমূলক গীতিকবিতা। ধর্মবোধাশ্রিত আধ্যাত্মিক চেতনা, ঈশ্বরভক্তি কবিহৃদয়ের আবেগকে উদ্দীপিত করে তুলতে পারে, সেই আবেগ উৎকৃষ্ট গীতিকবিতার রস ও রূপে পরিণত হতে পারে। সপ্তদশ শতাব্দীর বিখ্যাত কবি ডানের (Donne) জীবন তাঁর স্ত্রী বিয়োগের পর যখন মরুভূমির মত শুষ্ক হয়ে উঠেছিল, তখন ঈশ্বরের ভালবাসা করুণাধারায় নেমে আসে। ডানের Holy Sonnets ও Corona-র কবিতাগুলি ঈশ্বরভক্তিতে সমুজ্জ্বল। যে অশান্তি ও অবিশ্বাস তাঁর জীবনকে রিক্ত করে তুলেছিল তা দূর হয়ে গেল, প্রশান্তি ও বিশ্বাসের অমৃতধারায় স্নান করে কবি স্নিগ্ধ শুচি হয়ে উঠলেন তাঁর জীবনের ছায়াঘন অপরাহ্নে। এই শতাব্দীরই কবি জর্জ হার্বার্টের কবিতাগুলিতে ধর্মের প্রতি ঐকান্তিক অনুরাগের প্রকাশ মর্মস্পর্শী কোনও কোনও কবিতায় দেখা যায় তিনি ঈশ্বরের সঙ্গে সংলাপরত। সপ্তদশ শতাব্দীর আর এক কবি রিচার্ড ক্রুশ-এর গীতিকবিতার সুরমাধুর্য এবং ঈশ্বরকে পাওয়ার সুস্পষ্ট স্বীকৃতিও আমাদের হৃদয়কে আকর্ষণ করে। এই যুগের অন্যতম বিশিষ্ট কবি– হেনরি ভন (Henry Vaughan) চিন্তার গভীরতায়, আবেগের তীব্রতায় ও আধ্যাত্মিক অকপটতায় বিস্ময়কর কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন, তিনি শিশু ও প্রকৃতির মধ্যে ঈশ্বরের প্রকাশ লক্ষ্য করেছিলেন।

বিদ্যাপতি তাঁর প্রার্থনা পদে যখন কৃষ্ণের কাছে মিনতি করে বলেন :

দেই তুলসী তিল    এ দেহ সমর্পিলু ।

দয়া জানু ছোড়বি মোয়।

তখন কবির আত্মনিবেদনের এই ভক্তিনম্র সুর আমাদের হৃদয়কে গভীরভাবে স্পর্শ করে। রামপ্রসাদের এই পদে মহামায়ার আশ্রয়ে কবির কালকে উপেক্ষা করার শক্তি ও আশ্বাস লাভের অনুভূতির প্রকাশ ও আন্তরিক ও চিত্তস্পর্শী :

মন কেন রে ভাবিস এত– 

যেমন মাতৃহীন বালকের মত।

ভবে এসে ভাবছ বসে কালের ভয়ে হয়ে ভীত।

ওরে কালের কাল মহাকাল সেকাল মায়ের পদানত।।

রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘গীতাঞ্জলি’র ‘প্রণতি’ শীর্ষক কবিতায় ঈশ্বর যে দীনদরিদ্রদের মধ্যেই বিরাজমান, তাঁর এই উপলব্ধিকে প্রকাশ করেছেনঃ

যেথায় থাকে সবার অধম দীনের হতে দীন 

সেইখানে ত চরণ তোমার রাজে

সবার পিছে সবার নীচে

সবহারাদের মাঝে।

আধুনিক মানবিক চেতনার পটভূমিতে কবির এই ঈশ্বরোপলব্ধি গীতিকবিতার সুরমাধুর্যে ও আবেগ গভীরতায় আমাদের মুগ্ধ ও আকৃষ্ট করে, ভক্তিমূলক গীতিকবিতার এই আধুনিক রূপ সত্যই উল্লেখযোগ্য।


স্বদেশপ্রেমমূলক গীতিকবিতা

যে গীতিকবিতায় কবির স্বদেশপ্রেম অভিব্যক্ত হয়, তাকে স্বদেশপ্রেমমূলক গীতিকবিতা বলা হয়ে থাকে। এই জাতীয় গীতিকবিতায় দেশের প্রাচীন ঐতিহ্যের প্রতি অনুরাগ, দেশাত্মবোধের পরিপোষক অতীতকালের বীরদের কীর্তিকলাপের শ্রদ্ধা ও মমতাপূর্ণ স্মৃতিচারণা, কিংবা দেশের দুর্গতিতে ক্ষোভবেদনা প্রভৃতি প্রকাশ করে কবিরা স্বদেশবাসীদের হৃদয়কে স্বাজাত্যবোধে অনুপ্রাণিত করে তুলতে চেষ্টা করেন। অষ্টাদশ শতাব্দীর কবি বার্নসের (Robert Burns) নিবাস ছিল স্কটল্যান্ডের আশা-আকাঙ্ক্ষার জাগ্রত প্রতীক। Scos Wha Hae কবিতায় কবি স্কটল্যান্ডের জাতীয়তার বিগ্রহ রবার্ট ব্রুসের বিজয়ের কাহিনী বর্ণনা করেছেন, কবিতাটি কবির দেশাত্মবোধের আবেগদীপ্ত। Does Houghty Gaul Invasion Threat-এ বার্নস দেশবাসীদের দেশোদ্ধারের উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।

রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মিনী উপাখ্যানে’ মুরের Glories of Brien the Brave এবং From Life Without Freedom কবিতার অনুসরণে রচিত ‘ক্ষত্রিয়দিগের প্রতি রাজার উৎসাহ বাক্য’ অংশে আমরা প্রথম দেশাত্মবোধের উদ্দীপনার গীতিকবিতাসুলভ প্রকাশ পাই :

স্বাধীনতা হীনতায়    কে বাঁচিয়ে চায় হে

কে বাঁচিতে চায়?

দাসত্ব শৃঙ্খল বল    কে পরিবে পায় হে, 

কে পরিবে পায়?

হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতাগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা সমাদৃত ‘ভারত সঙ্গীত দেশপ্রেমের এমন উচ্চাশাপূর্ণ ও উত্তেজনাময় প্রকাশ খুব কম কবিতায়ই পাওয়া যায়। স্বদেশবাসীদের দাস মনোভাবের প্রতি কবির এই ধিক্কারের পশ্চাতে পরাধীনতার জন্য তাঁর হৃদয়ের ক্ষোভজ্বালাকে আমরা অনুভব করি :

হয়েছে শশ্মান এ ভারতভূমি। 

কারে উচ্চৈঃস্বরে ডাকিতেছি আমি?

গোলামের জাতি শিখেছে গোলামি,

আর কি ভারত সজীব আছে?

‘ভারত সঙ্গীত’ জাতীয় আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করেছিল।

অক্ষয়কুমার বড়ালের ‘বঙ্গভূমি’, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘ভারতবর্ষ’, বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বন্দেমাতরম’ সঙ্গীত, রবীন্দ্রনাথের ‘ভারততীর্থ’ ইত্যাদি কবিতাও স্বদেশপ্রেমমূলক গীতিকবিতার উদাহরণ।


স্তোত্র-কবিতা

ইংরেজিতে যা ওড (Ode) নামে পরিচিত, তা-ই বাঙলায় স্তোত্র কবিতারূপে অভিহিত। Ode শব্দটি এসেছে গ্রীক aei dein থেকে, যার অর্থ গান করা, মন্ত্রোচ্চারণ করা। আধুনিক কালে স্তোত্র-কবিতা বলতে বোঝায় অত্যন্ত আনুষ্ঠানিক (formal), কোনও উপলক্ষ্যে রচিত, অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ গীতিকবিতার এক সুসঙ্গত রূপ।

একজন শাসকের জন্মদিন, অভিষেক, শেষকৃত্য, কোনও স্মারকবস্তু বা জনসেবামূলক কাজের প্রতিষ্ঠা বা উৎসর্গ ইত্যাদি উপলক্ষ্যে সাধারণের উদ্দেশ্যে ভাষণের মাধ্যমরূপে কবিতার এই রূপটি ব্যবহৃত হয়। আধুনিক স্তোত্র কবিতায় গ্রীক হোরেশিয়ান ওড়ের চিন্তাশীলতা বা দার্শনিকতার বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে পিন্ডারিক ওডের উপলক্ষ্য ও প্রাধান্যের মিশ্রণ লক্ষ্য করা যায়।

পিন্ডারের (খ্রিস্টপূর্ব ৫২২-৪৪২) ওড গ্রীক নাটকের কোরাসের সঙ্গীত ও নৃত্যের জন্য পরিকল্পিত হয়েছিল। সঙ্গীত ও নৃত্যের প্রয়োজনে তার মধ্যে Strophe (turn), Antistrophe (counter turn) ও Epode (তৃতীয় বিভাগ after song) এই তিনটি বিভাগ থাকত। ল্যাটিন সাহিত্যের হোরেশিয়ান ওড ব্যক্তিগত রচনা স্তবকে বিভক্ত, উপলক্ষ্য-কেন্দ্রিক নয়, সাধারণ বিষয়-কেন্দ্রিক। পরবর্তী স্তোত্র কবিতা পুরোপুরিভাবে ধ্রুপদী স্তোত্র কবিতাকে অনুসরণ করেনি। মিল্টনের On the Morning of Christ’s Nativity, গ্রে-র The Bard, কোলরিজের Dejection: An Ode, ওয়ার্ডস্ওয়ার্থের Ode On Intimations of Immortality, শেলীর Ode to the West Wind, কীটসের Ode on a Grecian Urn, Ode to a Nightingale, Ode to Autumn প্রভৃতি বিখ্যাত স্তোত্র-কবিতা।

বাঙলার স্তোত্রকবিতার উদাহরণ অক্ষয়কুমার বড়ালের নারীস্তুতিমূলক কয়েকটি কবিতা ও মানব বন্দনা’, সুরেন্দ্রনাথ মজুমদারের ‘মাতৃস্তুতি’, সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘নমস্কার’, রবীন্দ্রনাথের ‘বর্ষশেষ’, মোহিতলাল মজুমদারের ‘নারীস্তোত্র’ প্রভৃতি।

গৃহগতপ্রাণ বাঙালির জীবনে ও মানসে স্বাভাবিকভাবেই নারীর প্রভাব ও গুরুত্ব সর্বাধিক, সেইজন্যই বাঙালি কবিদের স্তোত্র কবিতার প্রধান বিষয় নারীবন্দনা। নারীবন্দনা দেবেন্দ্রনাথ সেনের কবিতায় বারবার কবিহৃদয়ের যে ঐকান্তিক আবেগে উদগীত হয়েছে, এই অংশে তার উদাহরণ মেলে –

জানি আমি নারি, তুমি কবি-বিধাতার

শ্রেষ্ঠকাব্য: সুকোমল কাস্ত পদাবলী ;

ছন্দো-বন্ধে, অনুপ্রাসে মরি কি ঝংকার।

শ্যামের মুরলী সম শব্দের কাকলী।

সুরেন্দ্রনাথ মজুমদারের কবিতায় নারীস্ত্রোত্রই প্রধান, তাঁর ‘মহিমা’ কাব্যের অবতরণিকা অংশে নারীস্তুতির এই দৃপ্ত আবেগ লক্ষ্য করি :

নারী-মুখ সংসারের সুষমার সার,

শ্রেষ্ঠ গতি নারীর গমন,

জ্যোতির প্রধান লোল আঁখি ললনার আত্মা-নট-নৃত্য-নিকেতন।

নারী বাক্য গীত জানি,

নারী কাব্য অনুমানি

সকরুণ লীলা বিধাতার,

মর্তে মূর্তিমতী মায়া অঙ্গ ললনার।

অক্ষয়কুমার বড়ালও এভাবে নারী বন্দনা করেছেন :

নারী! তুমি বিধাতার স্ফূর্তি,  কাব্যের কোমলমূর্তি,

শুষ্ক জড়-জগতের নিত্য-নব ছলা,

উপচয়ে দশহস্তা,    অপচয়ে ছিন্নমস্তা

মায়াবন্ধা মায়াময়ী সংসার-বিহবলা।

মোহিতলাল মজুমদার তাঁর ‘নারীস্তোত্র’ কবিতাটিতে নারীকে কামরূপিণী, মৃন্ময়ী ও চিন্ময়ীরূপে বন্দনা করেছেন :

স্বচ্ছন্দ-শ্বৈরিণী ও যে, নিত্য শুদ্ধা—কহে সতী, নহে সে অসতী।

শোকগীতি

শোকগীতি (Elegy) উদ্ভূত হয়েছে গ্রীক elegeia থেকে, যার অর্থ শোক করা। কোনও ব্যক্তির মৃত্যু অথবা জীবনের করুণ ট্র্যাজিক দিক সম্পর্কে কবির চিন্তাকে কেন্দ্র করে শোকগীতি রচিত হয় এবং কবি তাঁর শোকাবেগ প্রকাশ করতে গিয়ে কোনও শাশ্বত নীতির অনুধ্যানে সান্ত্বনা খুঁজে পান। গ্রীক সাহিত্যে অবশ্য শোক, যুদ্ধ, প্রেম রাজনৈতিক বিদ্রূপ ইত্যাদি যে কোনও বিষয় নিয়ে রচিত বিশেষ রীতিবদ্ধ কবিতাকে ‘Elegy’ বলা হয়।

পরবর্তীকালে Elegy শোকগীতিতে পরিণত হয়। ব্যক্তির মৃত্যুজনিত শোক ছাড়াও কোনও শহরের পতন, জাতীয় বিপর্যয়, অতীতে খ্যাতনামা ব্যক্তিদের স্মৃতিচারণা ইত্যাদি বিষয় নিয়েও শোকগীতি রচিত হয়েছে।

গ্রে-র Elegy Written in a Country Churchyard (1750), আমেরিকান কবি হুইটম্যানের When Lilacs Lost in the Dooryyard Bloomed, পোপের Elegy on the Death of an Unfortunate Lady, টেনিসনের In Memorium (1850) অডেনের In Memory of W. B Yeats ইত্যাদি বিখ্যাত শোকগীতিকবিতা।

গ্রে-র Elegy অবশ্য কোনও ব্যক্তির মৃত্যু উপলক্ষে রচিত নয়, তার উপজীব্য উপেক্ষিত দীন দরিদ্র মানুষদের জীবনের ব্যর্থতার মর্মন্তুদ ইতিহাস। শোকানুভূতির আস্তরিকতার এই জাতীয় কবিতার উৎকর্ষের মানদন্ড, কোনও কোনও রচনায় কবির ব্যক্তিগত বেদনা সর্বমানবের বেদনার রূপ নেয়, সেই রচনা সর্বজনীনতার মর্যাদা লাভ করে।

বাঙলা ভাষায় শোকগীতিকবিতার উদাহরণ বিহারীলালের ‘বন্ধুবিয়োগ’, অক্ষয়কুমার বড়ালের স্ত্রীর বিয়োগ উপলক্ষে রচিত ‘এষা’, রবীন্দ্রনাথের স্ত্রীর মৃত্যুর পর রচিত ‘স্মরণ’, নজরুল ইসলামের দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জুনের মৃত্যু উপলক্ষে রচিত ‘চিত্তনামা’। ‘পূরবী কাব্যগ্রন্থে সংকলিত ‘সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত’ শীর্ষক কবিতায় রবীন্দ্রনাথ তাঁর অনুজ ও শিষ্য-কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের অকালবিয়োগে তার হৃদয়ের শোক প্রকাশ করেছেন :

আজও যারা জন্মে নাই তব দেশে, 

দেখে নাই যাহারা তোমারে, তুমি তাদের উদ্দেশে 

দেখার অতীত রূপে আপনারে করে গেলে দান 

দূরকালে। তাহাদের কাছে তুমি নিত্য-গাওয়া গান 

মূর্তিহীন। কিন্তু, যারা পেয়েছিল প্রত্যক্ষ তোমায় 

অনুক্ষণ, তারা যা হারালো তার সন্ধান কোথায়, 

কোথায় সান্ত্বনা।

কোনও কোনও কবি তাঁর বন্ধু বা আত্মীয়ের বিয়োগ উপলক্ষে রাখালের উক্তির মাধ্যমে নিজের শোকানুভূতিকে প্রকাশ করেন এবং তার জন্য উপযুক্ত রাখালিয়া পরিবেশও গড়ে তোলেন। এই জাতীয় শোকগীতিকে রাখালিয়া শোকগীতি (Pastoral elegy) বলা হয়।

মিল্টনের বন্ধুর মৃত্যু-উপলক্ষে রচিত Lycidas এই জাতীয় কবিতা, এই কবিতাই ইংরেজি কাব্যসাহিত্যে শোকগীতি প্রবর্তন করে। শেলীর কীট্স্-এর মৃত্যু উপলক্ষে রচিত Adonais, আর্নল্ডের Thyrsis, বাঙলায় কালিদাস রায়ের ‘কৃষাণীর ব্যথা’, যতীন্দ্রনাথ সেনের ‘চাষার ঘরে’ এই জাতীয় শোকগীতির উদাহরণ। গ্রীক কবি বিয়ন ও মস্কাস কর্তৃক অনুপ্রাণিত Adonais কবিতাটিতে শেলী তাঁর সহমর্মী বন্ধু কীটসের অকালমৃত্যুতে শুধু শোক প্রকাশ করেন নি, জীবন ও মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনেও প্রয়াসী হয়েছেন। বাহ্যত কবিতাটির বিষয়বস্তু কীটস হলেও শেলী নিজের ব্যর্থতা ও গ্লানি সম্বন্ধেই বেশী বলেছেন।


কাহিনীকাব্য

সাধারণত কাহিনীকাব্য (Narrative Poetry) বলতে আমরা এমন অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ কাব্য বুঝি যার মধ্য দিয়ে আনুপূর্বিক ধারাবাহিকতার কোন গল্প বা কাহিনী বিবৃত করা হয়। মহাকাব্য (Epic) কিংবা গাথাকাব্য (Ballad)-এর মধ্যেও আমরা আদি-মধ্য-অন্ত্যসংবলিত কাহিনীকে পরিবেশিত হতে দেখি, সুতরাং ব্যাপক দৃষ্টিতে দেখতে গেলে তাদেরও কাহিনী কাব্যের অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। তবে মহাকাব্য ও গাথাকাব্যের স্বাতন্ত্র্য সাধারণ কাহিনীমূলক কাব্যের তুলনায় এত সুস্পষ্ট যে তাদের স্বতন্ত্র শ্রেণীভুক্ত করাই বাঞ্ছনীয়। অবশ্য সব সময় তাদের মধ্যে পার্থক্যের সীমারেখা টানাও কঠিন। প্রেম, রোমাল, কোনও ঐতিহাসিক ঘটনা, কোনও বীরের কার্যকলাপ, ধর্ম ইত্যাদি বহু বিষয় নিয়েই কাহিনীকাব্য রচিত হতে পারে। Virgil-এর Aeneid ও Ovid-এর Metamorphoses-কে রোমের অগাস্টান যুগের সর্বাপেক্ষা প্রভাববিস্তারকারী কাহিনী কাব্য বলা হয়।

ইংল্যান্ডের মধ্যযুগের William Langland এর The Vision of Piers Plowman রূপক কবিতারূপেও বিবেচ্য। এই সময়ের Chaucer-এর Conterbury Tales-এর বাস্তবতা ইংরেজি কাব্যসাহিত্যে অবিস্মরণীয় হয়ে রয়েছে। তাঁর Troilus and Criseyde রোমান্সমূলক কাহিনীকাব্য। রেনেসাঁস যুগের ইতালির কবি Ariosto Orlando এবং Tasso-র Jerusalem Delivered বিখ্যাত মহাকাব্যধর্মী আখ্যান কাব্য। কাহিনীকাব্য বা আখ্যান কবিতায় অষ্টাদশ শতাব্দীর ইংরেজ কবি Robert Burns ও ঊনবিংশ শতাব্দীর কবি Walter Scott বিশেষ বিখ্যাত। তাঁদের রচনায় ব্যালাড বা গীতিকবিতার প্রভাব সুস্পষ্ট। Walter Scott-এর The Lay of the Last Minstrel ও The Lady of the Lake Byron এর Don Juan & Childe Harold’s Pilgrimage ঊনবিংশ শতাব্দীর বাঙালি কবি ও পাঠকদের বিপুলভাবে প্রভাবিত করেছিল। Coleridge- এর The Rime of the Ancient Mariner একটি বিখ্যাত কাহিনী কবিতা। শেলী, কীটস ও টেনিসনও কয়েকটি কাহিনীকাব্য ও কবিতা রচনা করেছিলেন।

ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাঙলা ভাষায় প্রথম আধুনিক কাহিনীকাব্য রচনা করেছিলেন রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ‘পদ্মিনী উপাখ্যান’, ‘কর্মদেবী’, ‘শূরসুন্দরী’ ও ‘কাশ্মি কাবেরী’ বিষয়বস্তু রাজপুত-ইতিহাস ও উড়িষ্যার ধর্মমূলক কিংবদন্তী থেকে সংগৃহীত। রোমান্টিক দেশপ্রেমের আদর্শে এই কাহিনীকাব্যগুলি অনুপ্রাণিত।

হেমচন্দ্ৰ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বীরবাহু কাব্য’ স্বদেশপ্রীতির প্রকাশ হিসেবেই উল্লেখযোগ্য। নবীনচন্দ্রের ‘রঙ্গমতী’ স্কটের আদর্শে রচিত আখ্যায়িকা কাব্য। এই কাব্যের কাহিনী ঐতিহাসিক নয়, কাল্পনিক। বর্ণনায় দৈর্ঘ্যে ও আড়ম্বরময় বাহুল্যে আখ্যায়িকা যথাযথভাবে পরিস্ফুট হতে পারে নি। অক্ষয়চন্দ্র চৌধুরীর ‘উদাসিনী’ কাহিনীকাব্যটি পার্নেলের The Hermit রোমান্টিক প্রেম ও মিলনের কাহিনী। এই রচনাটি বঙ্গদর্শনে প্রশংসিত হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের ‘কথা ও কাহিনী’তে কয়েকটি দীর্ঘ আখ্যায়িকা-কবিতা সংকলিত হয়েছে, এই কবিতাগুলি আমাদের সামনে কাহিনীর কাব্যরূপের এক অপূর্ব রস-সৌন্দর্যের সন্ধান দেয়।

ডঃ শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় যথার্থই বলেছেন : ‘কথা ও কাহিনী’তে কবির প্রেমাতুর কল্পনা, বরণীয় বিষয়-গৌরব, দেশের ঐতিহ্য-কীর্তির উদাত্ত প্রশস্তি ও দৃঢ় ও দ্রুতগামী আখ্যানবস্তুর সংযোগে এক নূতন ওজস্বিতা, পৌরুষদৃপ্ত, রসাবেদন লাভ করিয়াছে। কবির গীতিপ্রাণতা এখানে সংঘর্ষময় আখ্যায়িকার বস্তুরস ও গতিবেগের সহিত যুক্ত হইয়া উহার অভ্যস্ত স্বপ্নবিভোরতার পরিবর্তে এক সতেজ প্রাণোচ্ছলতায় স্পন্দিত হইয়াছে।” রবীন্দ্রোত্তর যুগের কবিরা কাহিনীকাব্যের প্রতি আকৃষ্ট হন নি।

রূপক কবিতা

রূপক কবিতায় (Allegorical Poetry) কোনও গল্প বা কাহিনীর মধ্য দিয়ে কোনও বিশেষ অর্থের ইঙ্গিত দেওয়া হয়। ‘Allegory’ শব্দটি এসেছে গ্রীক allos (অন্য) এবং agoreucin (বলা) থেকে, তাতেই কোথায়, রূপকের মধ্যে একটি কাহিনী এবং তার অন্তরালে অন্য একটি অর্থের কাঠামো প্রচ্ছন্ন থাকে। রূপক কবিতা আধ্যাত্মিক বা ধর্মমূলক, রাষ্ট্রনৈতিক, সামাজিক ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে।

এলিজাবেথীয় যুগের কবি Edmund Spenser-এর Faerie Queene ইংরেজি ভাষায় সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত রূপক কাব্য। কাব্যটির বহিরঙ্গে পাই প্রাচীন কালের রাজা আর্থারের কাহিনী, কিন্তু আসলে সেটি রানী এলিজাবেথের প্রশস্তি ও দেশাত্মবোধের রূপক। Faerie Queene-র পরীরানী গ্লোবিয়ানাই রানী এলিজাবেথ, আর্থার রানীর প্রিয়পাত্র লিস্টার। তার অন্তরালে পাই ইংল্যাণ্ডের নৈতিক জীবন, চরিত্রগুলি পবিত্রতা, সংযম, সদাচার, মৈত্রী, সৌজন্য প্রভৃতি আদর্শ গুণাবলীর প্রতীক। এই রূপক-কাব্যে রূপকের বিভিন্ন ধারা সম্মিলিত, ঐতিহাসিক রাষ্ট্রনৈতিক রূপকে পাই রানী এলিজাবেথের দরবার ও সভাসদদের পরিচয় এবং রাষ্ট্রের নানাবিধ সমস্যা, ধর্মীয় রূপকে ইংল্যান্ডের চার্চের সঙ্গে রোমের চার্চের সংগ্রাম এবং নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে চার্চের সংগ্রাম। ইটালির কবি দাস্তের Divina Commedia পৃথিবী বিখ্যাত ধর্মীয় রূপক কাব্য।

সপ্তদশ শতাব্দীর কবি ড্রাইডেনের Absalom and Achitophel রাজনৈতিক রূপক-ব্যঙ্গকাব্য। কাব্যটির বাইরের অর্থগত কাঠামোয় সন্নিবিষ্ট হয়েছে বাইবেলের রাজা ডেভিডের বিরুদ্ধে এসিটোফেলের কুমন্ত্রণায় রাজপুত্র সরল যুবক এ্যাবসালোমের বিদ্রোহ, তার অন্তর্নিহিত রূপকায়িত অর্থ হল হুইগ দলের অন্যতম নেতা আর্ল অব স্যাফস্বারীর রাজা দ্বিতীয় চার্লসের অবৈধ সন্তান ডিউক অব মনমাউথকে রাজার রোমান ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বী ভাই দ্বিতীয় জেমসের পরিবর্তে রাজ্যের উত্তরাধিকারী করার গোপন ষড়যন্ত্র।

হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ছায়াময়ী’ দান্তের Divina Commedia অবলম্বনে রচিত রূপক কাব্য, এই রচনায় কাব্যধর্ম ও রূপকধর্মের সাদৃশ্য প্রদর্শনের প্রয়াস কাব্যরসগত সার্থকতা লাভ করেনি। তাঁর ‘আশাকানন’ সাঙ্গরূপক কাব্য, কবির নিজের উক্তি অনুযায়ী, মানবজাতির প্রকৃতিগত প্রবৃত্তিসমূহ প্রত্যক্ষীভূত করাই এই কাব্যের উদ্দেশ্য। কিন্তু এই রচনাটিও বৈশিষ্ট্যবর্জিত। রবীন্দ্রনাথের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘স্বপ্নপ্রয়াণ’ স্পেন্সারের Faerie Queene আদর্শে রচিত রূপক কাব্য। কবির স্বপ্নরাজ্যে যাত্রা, নানা বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে কল্পনা-সুন্দরীর সঙ্গে কবির মিলনের তত্ত্বটি এই রচনায় রূপকায়িত হয়েছে।

কাব্যটির রোমান্টিক সৌন্দর্য সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথের এই উক্তি স্মরণীয় : ‘স্বপ্নপ্রয়াণ যেন একটা রূপকের অপরূপ রাজপ্রাসাদ। তাহার কত রকমের কক্ষ, গবাক্ষ, চিত্র, মূর্তি ও কারুনৈপুণ্য। তাহার মহলগুলি বিচিত্র। তাহার চারিদিকের বাগানবাড়িতে কতক্রীড়াশৈল, কত ফোয়ারা, কত নিকুঞ্জ, কত লতাবিতান। ইহার মধ্যে কেবল ভাবের প্রাচুর্য নহে, রচনার বিপুল বিচিত্রতা আছে। সেই যে একটি বড় জিনিষকে তাঁহার কলেবরে সম্পূর্ণ করিয়া গড়িয়া তুলিবার শক্তি, সেটিও সহজ নহে।”

তবে দ্বিজেন্দ্রনাথের দার্শনিকতার প্রতি ঝোঁক এবং শিল্পকর্ম সম্পর্কে অবহেলা ও ঔদাসীন্য ‘স্বপ্নপ্রয়াণ’কে পরিপূর্ণভাবে সার্থক হতে দেয় নি। এই রচনাটি আধ্যাত্মিক রূপকের উদাহরণ। মধুসূদনের ‘যশের মন্দির’ রূপক কবিতা, যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘ভারতী’ রাষ্ট্রনৈতিক এবং মোহিতলাল মজুমদারের ‘আহ্বান’ সামাজিক রূপক কবিতা।