দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রকৃতি: সম্ভবত রাজনীতিক আলোচনার ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন দৃষ্টিভঙ্গিটি হল দার্শনিক। ওয়াসবি বলেছেন: “Probably the oldest approach to the study of politics is the philosophical.” ওয়াসবি আরও বলেছেন : “The study of science of the truths or principles underlying all knowledge and being (or reality).” দর্শন সম্পর্কে প্রদত্ত এই সংজ্ঞাটি যদি মেনে নেওয়া হয় তবে দেখা যাবে দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি সংকীর্ণ সীমার মধেও আবদ্ধ নয়। বরং মানুষের রাজনীতিক কাজকর্মের সকল দিক এবং সেইসব কাজকর্মের অন্তর্নিহিত নীতি এই দৃষ্টিভঙ্গির অন্তর্গত। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষ প্রকৃত রাজনীতিক কাজকর্মের প্রতি আগ্রহবোধ করেছিল। এর কারণ হল মানুষ অনুসন্ধানের চেষ্টা করেছে যে, কেন তার জীবনযাত্রা আদর্শস্থানীয় নয়। প্লেটো-র ‘রিপাবলিক’ (Republic), হবস-এর ‘লেভিয়াথান’ (Leviathan), বাটলার (Butler)-এর ‘এরিহন’ (Erewhon) প্রভৃতি হল এই ধরনের অনুসন্ধান প্রচেষ্টার ফলশ্রুতি। এইসব রচনার মধ্যে ‘বিশুদ্ধ’ মানবপ্রকৃতি ও আদর্শস্থানীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা অনুসন্ধানের প্রচেষ্টা রয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে দার্শনিক-রাজনীতিক চিন্তাবিদ্গণ মনে করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটা আদর্শ বা নৈতিক দিক আছে। রাজনীতিক দর্শনে রাষ্ট্রের বাস্তব অবস্থার আলোচনার থেকে আদর্শ রাষ্ট্র, তার বৈশিষ্ট্য ও উদ্দেশ্য, আদর্শ রাজনীতিক জীবন প্রভৃতি বিষয়ের আলোচনার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। দার্শনিক আলোচনায় ঔচিত্য-অনৌচিত্যের প্রশ্ন সংযুক্ত থাকে। এই শ্রেণীর চিন্তাবিদ্গণ প্রায় সকলেই ছিলেন ভাববাদী দার্শনিক। একটা অলৌকিক ও ভাববাদী দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে প্রাচীন দার্শনিকগণ রাজনীতিক সমস্যা বিশ্লেষণের প্রয়াসী হয়েছেন। তাঁরা নৈতিকতা ও ধর্মীয় অনুশাসনকে রাজনীতিক জীবনের বিশ্লেষণে প্রয়োগ করার পক্ষপাতী ছিলেন। প্রকৃত প্রস্তাবে এই শ্রেণীর দার্শনিকরা ছিলেন রাজনীতিক ভাববাদের প্রবক্তা। এঁদের মুখ্য লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্র ও রাজনীতিক জীবনের সার্বিক মূল্যবোধ নির্ধারণ করা এবং সেই মূল্যবোধের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্র ও সমাজ, নাগরিক আইন ও অধিকার সম্পর্কিত নিয়ম-নীতি স্থির করা। দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির সমর্থকদের মধ্যে প্লেটো, রুশো, কাণ্ট, হেগেল, ব্রাড্লে, বোসাংকেত প্রভৃতি আদর্শবাদী রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
অবরোহমূলক পদ্ধতি: রাজনীতিক-দার্শনিকগণ বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। পর্যবেক্ষণ ও তুলনামূলক আলোচনার মধ্য দিয়ে তাঁরা রাজনীতিক উপাত্তকে (data) বিশ্লেষণ করেছেন। আবার তাঁদের আদর্শনৈতিক দৃষ্টিকোণের জন্য তাঁদের অনুসৃত পদ্ধতি ছিল দার্শনিক-অবরোহমূলক (deductive method) কাল্পনিক চিন্তা (speculative thought) ও অনুমানের উপর রাজনীতিক দর্শন নির্ভরশীল। কতকগুলি পূর্ব-নির্ধারিত অনুমানকে (prior assumptions) স্বতঃসিদ্ধ বলে রাজনীতিক দর্শনে ধরে নেওয়া হয়। এবং এই পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতিক জীবনকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হয়। রাজনীতিক দার্শনিকেরা যেমন প্লেটো, অ্যারিস্টটল, অথবা চুক্তিবাদী দার্শনিকগণ (হবস্, লক, রুশো) তাঁদের আলোচনা শুরু করেছিলেন একটি পূর্ব-অনুমিত বা পূর্ব গৃহীত ধারণা (apriori assumption) থেকে।
রাষ্ট্রনীতি দর্শনের একটি শাখা: প্লেটো-অ্যারিস্টটল থেকে শুরু করে হেগেলের আমল পর্যন্ত বিভিন্ন চিন্তাবিদ্ দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে রাষ্ট্র ও আনুষঙ্গিক বিভিন্ন সমস্যা ও তার সমাধান সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কতকগুলি মূল নীতি নিয়ে এই শ্রেণীর রাষ্ট্র-দার্শনিকরা আলোচনা করেছেন। রাষ্ট্র সম্পর্কে প্লেটো-অ্যারিস্টটলের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, রাষ্ট্রের প্রকৃতি ও সার্বভৌমিকতা সম্পর্কিত হেগেলের ধারণা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অমূল্য সম্পদ হিসাবে আজও স্বীকৃত। রাষ্ট্রনীতির প্রবক্তা হিসাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে দার্শনিকদের অমূল্য অবদান অনস্বীকার্য। বস্তুত জ্ঞানের অনুসন্ধানই হল দর্শন। এই জ্ঞান দেশ ও কালের সীমার অতীত, বিশ্বজনীন। এই জ্ঞানের চরম লক্ষ্য হল অংশবিশেষের নয়, সমগ্রের জ্ঞান অনুসরণ করা। স্ট্রাউস (Leo Strauss) তাঁর What is Political Philosophy শীর্ষক রচনায় এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন। লিও স্ট্রাউসের এই রচনাটি ‘Gould & Thursby’ সম্পাদিত Contemporary Political Thought গ্রন্থে প্রকাশিত হয়। যাইহোক স্ট্রাউস যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন সেদিক থেকে বিচার করলে রাষ্ট্রনীতি হল দর্শনের একটি বিশেষ শাখা।
এই দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি বাস্তবতা-বর্জিত বা কাল্পনিক নয়: কিন্তু রাষ্ট্র-দার্শনিকদের আলোচনা সম্পূর্ণভাবে সমসাময়িক রাজনীতিক বাস্তবতা-বর্জিত বা তথ্য-বর্জিত ও সম্পূর্ণরূপে কাল্পনিক ছিল না। সমকালীন রাজনীতিতে উদ্ভুত কিছু ব্যবহারিক সমস্যা তাঁদের রচনার পটভূমি রচনা করেছিল। প্লেটো কর্তৃক ‘দার্শনিক রাজা’র (Philosopher King) অনুসন্ধান, হস-এর লেভিয়াথান, অ্যারিস্টটল কর্তৃক দেড়শতাধিক গ্রীকনগর রাষ্ট্রের সংবিধান সংগ্রহ ও তার শ্রেণীবিভাগ, মেকিয়াভেলী প্রদত্ত রাজনীতিক উপদেশ প্রমাণ করে যে রাজনীতিক দার্শনিকেরা সম্পূর্ণভাবে কাল্পনিক আলোচনা করেননি। তেমনি ইংল্যাণ্ডের গৌরবময় বিপ্লব (১৬৮৮)-এর প্রকৃতি পর্যালোচনার ক্ষেত্রে লকের দার্শনিক চিন্তার গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। রুশোর ‘সামাজিক চুক্তি’ (Contract Social) সমকালীন ফরাসী সমাজব্যবস্থার এক পরিচয় বহন করে। প্রকৃতপক্ষে মহৎ রাজনীতিক দর্শনসমূহের উদ্ভব হয়েছিল ব্যবহারিক রাজনীতি থেকে। অর্থাৎ সকল রাষ্ট্র-দার্শনিক কেবল ভাববাদী ছিলেন না। এঁদের সকলকে সমপর্যায়ভুক্ত করা সঠিক নয়। এঁদের অনেকের রচনায় বস্তুবাদী বিশ্লেষণও বর্তমান। এ প্রসঙ্গে উক্ত দার্শনিকদের বাইরে আরও কিছু নাম উল্লেখ করা দরকার। এ প্রসঙ্গে সফিস্ট (Sophists), স্পিনোজা (Spinoza), ফুয়ারব্যাক (Feuerback), মার্কস-এঙ্গেলস লেনিন এবং ডিমোক্রিটাস (Democritus), হেরাক্লিটাস (Heraclitus), পারমেনিডেস (Permenides) প্রমুখ প্রাচীন গ্রীক দার্শনিকের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
সমালোচনা (Criticism): দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি ত্রুটিমুক্ত নয়।
(১) সমস্যার বাস্তব সমাধান অবহেলিত: এর প্রথম ও মূল ত্রুটি হল কিছু বাস্তব সমস্যার বাস্তবসম্মত সমাধানকে অবহেলা করা হয়। তার পরিবর্তে আদর্শগত ও নৈতিক সমাধানের অনুসন্ধান ও রাজনীতির আদর্শগত দিকের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
(২) পক্ষপাতিত্বমূলক যুক্তিদর্শন: এই দৃষ্টিভঙ্গির দ্বিতীয় মুখ্য ত্রুটি হল এর পক্ষপাতিত্ব। রাজনীতিক দর্শনের মহৎ গ্রন্থাবলীর রচয়িতাগণ সমসাময়িক রাজনীতিক সমস্যার বিরুদ্ধ অংশগুলির কোন একটি পক্ষ নিয়েছেন বা সেই অংশের সঙ্গে নিজেকে সনাক্ত করে ফেলেছেন। যেমন, জন লক-এর রচনার পিছনে উদীয়মান মধ্যবর্তী শ্রেণীর দাবিকে ন্যায়সঙ্গত প্রতিপক্ষ করার অথবা হবস্-এর রচনার পিছনে তাঁর যুগের রাজতন্ত্রকে ন্যায়সঙ্গত প্রতিপন্ন করার প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু তাঁদের যুগের সঙ্গে বর্তমান যুগের দূরত্বের কারণে তাঁদের কীর্তিকে দর্শন হিসাবে দেখা হয়; পক্ষপাতমূলক যুক্তিপ্রদর্শন হিসাবে নয়।
(৩) বহু বিষয়ে অতি সরলীকৃত ধারণা: দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির তৃতীয় মুখ্য ত্রুটিটি হল বহু বিষয় সম্পর্কে তাঁদের অতিসরলীকৃত ধারণা। যেমন, মানব প্রকৃতি সম্পর্কে এক সাধারণীকৃত (generalised) ধারণার ভিত্তিতে হবস্ তাঁর সামাজিক চুক্তির তত্ত্বকে গড়ে তুলেছেন। মানুষের প্রকৃতি সম্পর্কে তিনি বলেছেন: “A general inclination of all mankind, a perpetual and restless desire of power after power, that ceaseth only in death.” মেকিয়াভেলী মানুষকে স্বার্থপর ও নীচ বলে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এই ধারণা সর্বাংশে সত্য নয়। অর্থাৎ এঁরা মানব চরিত্রকে বিকৃতভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।
(৪) অবাস্তবতা: দর্শনকেন্দ্রিক আলোচনায় ভাব ও আদর্শের উপর অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়। তার ফলে এই আলোচনা অনেক ক্ষেত্রে অবাস্তব হয়ে দাঁড়ায়। রাষ্ট্রতত্ত্ব বা রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রসঙ্গে প্লেটো অ্যারিস্টটল বা হেগেলের ধারণা বাস্তবের সঙ্গে সম্পর্ক-রহিত। তাঁর কল্পিত আদর্শরাষ্ট্র বাস্তবে সম্ভব কিনা এ বিষয়ে প্লেটো নিজেই সন্দিহান ছিলেন।
(৫) দৃষ্টিবাদ ও ইতিহাসবাদ: আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানে দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্ব হ্রাসের কারণ হিসাবে দুটি বিষয়ের কথা বলেছেন। একটি হল ‘দৃষ্টবাদ’ (positivism) এবং আর একটি হল ‘ইতিহাসবাদ’ ( historicisms)। দৃষ্টবাদে মূল্য বা নীতির উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় না। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বহুলাংশে দৃষ্টবাদের দ্বারা প্রভাবিত। তাই তাঁরা ‘মূল্যমান-নিরপেক্ষ’ (value-free) আলোচনার উপর জোর দেন। আবার আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের ইতিহাস-নির্ভরতারও দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্ব হ্রাসের অন্যতম কারণ হিসাবে কাজ করে।
মূল্যায়ন: দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির সীমাবদ্ধতা আছে। তবুও রাষ্ট্রনৈতিক চিন্তার ইতিহাসে এর অবদানকে অস্বীকার করা যায় না।
(ক) রাজনীতিক দার্শনিকগণ অতীত ও বর্তমান রাজনীতিক চিন্তার মধ্যে সংযোগ সাধন করেছেন এবং ভবিষ্যতের চিন্তার পথকে প্রসারিত করেছেন। মানবজাতির বিভিন্ন প্রাচীন রাজনীতিক প্রতিষ্ঠান ও চিন্তাভাবনার পরিচয় পাওয়া যায় রাজনীতিক দার্শনিকদের আলোচনা থেকে। এঁরাই সমাজবদ্ধ মানুষের সঙ্ঘবদ্ধ রাজনীতিক জীবনের সমস্যাদি সম্পর্কে আলোচনার সূত্রপাত করেছেন। এঁদের রাজনীতিক তত্ত্বসমূহ পরবর্তীকালের আলোচনাকে দৃঢ়ভিত্তিক করেছে।
(খ) এই শ্রেণীর চিন্তাবিদগণ সরকারের তুলনামূলক আলোচনার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছেন। প্লেটো অ্যারিস্টটলের আমল থেকে আরম্ভ করে বর্তমান শতাব্দীর রাষ্ট্র-দার্শনিকরাও বিভিন্ন রাজনীতিক প্রতিষ্ঠানের তুলনামূলক আলোচনা ও মূল্যায়ন করেছেন। এ ধরনের আলোচনার উদ্দেশ্য হল আদর্শ রাষ্ট্রব্যবস্থা ও সরকারী কাঠামো গড়ে তোলার ব্যবস্থা করা। আদর্শ রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনার ক্ষেত্রে রাজনীতিক দার্শনিকগণ উদ্যোগ-আয়োজন গ্রহণ করেছিলেন। আদর্শ রাষ্ট্র গঠনের উদ্যোগ হল মানবজাতির চিরন্তন উদ্যোগ।
(গ) দর্শনকেন্দ্রিক আলোচনায় রাজনীতিকে নৈতিক দর্শন এবং সমাজনীতির একটি অংশ হিসাবে দেখা হয়।
(ঘ) এই আলোচনার মধ্যে মানুষের মৌল রাজনীতিক সমস্যার সমাধান খোঁজার প্রচেষ্টা নিহিত রয়েছে। মানুষের কাজের পিছনে যে ধারণা লুকিয়ে থাকে তাকে পরিস্ফুট করার প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করা যায় না।
(ঙ) রাষ্ট্র-দার্শনিকদের ধ্যান-ধারণায় মূল্যবোধের প্রাধান্যকে অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু মূল্যবোধবিযুক্ত রাজনীতিক আলোচনাও অসম্ভব বিবেচিত হয়। এখনও রাজনীতিক বিচার-বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে মূল্যবোধের প্রয়োগকে সার্বজনীনভাবে স্বীকার করা হয়। দৃষ্টবাদ ও ইতিহাসবাদ কোন সামাজিক বিজ্ঞানের আলোচনায় মূল্য বা নীতির উপর গুরুত্ব আরোপের বিরোধী। কিন্তু লিও স্ট্রাউস-এর অভিমত হল কোন সামাজিক বিজ্ঞান বিশেষতঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না। প্রকৃত প্রস্তাবে মূল্যবোধ ও নৈতিকতা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।
(চ) মানব জাতির জ্ঞান চর্চার বিকাশের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র-দার্শনিকদের উল্লেখযোগ্য অবদান বিরোধ-বিতর্কের ঊর্ধ্বে। দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি সূত্রে প্রাপ্ত চিন্তার সম্পদসমূহ মানুষের জ্ঞানভাণ্ডারকে স্ফীত করেছে।
(ছ) রাষ্ট্র-দার্শনিকগণ কেবল কল্পনাবিলাসী ছিলেন এ অভিযোগ সর্বাংশে সত্য নয়। ওয়াসবি-র মতানুসারে বহু ও বিভিন্ন বাস্তবসমস্যা নিয়েও রাষ্ট্র-দার্শনিকেরা আলোচনা করেছেন।
(জ) এ প্রসঙ্গে ওয়াসবির আর একটি অভিমত প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন আধুনিক অভিজ্ঞতা নির্ভর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বহুলাংশে রাষ্ট্রদর্শনের কাছে ঋণী। সাম্প্রতিককালের রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা দৃষ্টিবাদী এবং বিশেষভাবে অভিজ্ঞতা-নির্ভর। এতদ্সত্ত্বেও তাঁরা রাজনীতিক দার্শনিকদের যুক্তি-তর্ককে একেবারে বাদ দেননি বা দিতে পারেন নি।
(ঝ) সর্বোপরি দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও তাৎপর্যকে অস্বীকার করা যায় না। দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি সুদীর্ঘকাল ধরে রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে সমৃদ্ধশালী করেছে। এ বিষয়ে দ্বি-মতের অবকাশ নেই।
Leave a comment