ঐতিহ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গির মূল প্রতিপাদ্য বিষয়: ঐতিহ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গির অন্যতম মুখ্য উপাদান হল ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি। ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি ধ্রুপদী রাজনীতিক তত্ত্বের অধ্যয়ন অথবা রাজনীতিক প্রতিষ্ঠান ও আন্দোলনের উদ্ভব ও বিকাশের পরীক্ষার সঙ্গে সংযুক্ত। ধরে নেওয়া হল যে, বিশিষ্ট রাজনীতিক দার্শনিকেরা এমন কিছু রাজনীতিক প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন যার এখনও প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। স্যাবাইন এর মতে রাজনীতিক তত্ত্ব একটি সুনির্দিষ্ট অবস্থার পটভূমিতে প্রদত্ত হয়ে থাকে, ফলে যে সময়, স্থান ও পরিস্থিতিতে সেই তত্ত্বের উদ্ভব হয়েছিল তার পুনর্নির্মাণ তত্ত্বটির অনুধাবনের জন্য প্রয়োজন। তা ছাড়া, যে তত্ত্বের মূল একটি নির্দিষ্ট পরিস্থিতির মধ্যে নিহিত, ভবিষ্যতের পক্ষেও তার তাৎপর্য রয়েছে।

রাজনীতিক জীবনের ধারাবাহিক আলোচনা: ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি সমৃদ্ধ হয়েছে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঐতিহাসিক উভয়ের অবদানের মাধ্যমে। রাজনীতিক জীবনের এক ধারাবাহিক ইতিহাস প্রণয়ন করাই হল এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রবক্তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। মানবজাতির অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ ঘটনা পরস্পরকে এই দৃষ্টিভঙ্গি একই সূত্রে গ্রথিত করে। অর্থাৎ এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে অতীতের পটভূমিতে বর্তমানের আলোচনা করা হয় এবং বর্তমানের পর্যালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ভবিষ্যতের ইঙ্গিতবাহী আলোচনাও করা হয়। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে ভবিষ্যৎ রাজনীতিক জীবনের সমস্যা-সম্ভাবনাও ধরা পড়ে। ঘটনা পরম্পরার মাধ্যমে ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কোন একটি দেশ বা সমাজের সামগ্রিক বা আংশিক ইতিহাস পর্যালোচনা করার চেষ্টা করা হয়।

বর্ণনামূলক: ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি মূলত বর্ণনামূলক। এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে অতীতের উপাদন সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমকালীন রাজনীতিক ঘটনাবলীর ব্যাপারে পরীক্ষাসাপেক্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা বলা হয়। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশিষ্ট রাষ্ট্রনেতাদের জীবনী ও স্মৃতিকথা, সাংবাদিকদের বর্ণনা প্রভৃতিকে তথ্য ও উপাদান হিসাবে গ্রহণ করা হয়। ঐতিহাসিকগণ সংগৃহীত তথ্যাদি বিচার-বিশ্লেষণ করে মৌলিক বিষয়গুলিকে সুসংহতভাবে ব্যক্ত করেন।

রাজনীতিক ঐতিহাসিকদের অনুসন্ধান: রাজনীতিক-ঐতিহাসিক গবেষকরাও রাজনীতিক প্রতিষ্ঠান ও ঘটনাবলীর গতি-প্রকৃতির ঐতিহাসিক অনুসন্ধানে নিজেদের ব্যাপৃত রেখেছেন। তাঁরা বিভিন্ন রাজনীতিক প্রতিষ্ঠানের উৎপত্তি ও বিকাশ, সমাজে তাদের ভূমিকা এবং মানুষের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক অনুসন্ধান ও বর্ণনা করেছেন। ব্রিটিশ রাজনীতিক পর্যালোচনার ক্ষেত্রে আইভর জেনিংস (Ivor Jennings) ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে সংসদীয় ক্যাবিনেট সরকার সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তিনি ঊনবিংশ শতাব্দীর ইতিহাস অনুসন্ধানের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী পদের ক্রমবিকাশ এবং আধুনিক রাজনীতিক দলগুলির উদ্ভব অনুসন্ধান করেছেন। অ্যালান বল এ ধরনের অনুসন্ধানের আরও কয়েকটি উদাহরণ উল্লেখ করেছেন। যেমন, ব্রিটেনের রাজনীতিক দল সম্পর্কে রবার্ট ম্যাকেঞ্জি (Robert Mackenzie)-র কাজ অথবা ব্রিটিশ ক্যাবিনেট ব্যবস্থা সম্পর্কে জে. পি. ম্যাকিনটস (J. P. Mackintosh)-এর কাজ। হেগেল ও কার্ল মার্কস ঐতিহাসিক পদ্ধতি প্রয়োগ করেছেন। হেগেল ইতিহাসের ভাববাদী ব্যাখ্যা করেছেন এবং তিনি ভাববাদের পরিধিকে প্রসারিত করেছেন। কার্ল মার্কস ইতিহাসের বস্তুবাদী ব্যাখ্যা করেছেন এবং রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে এক নতুন দিগন্তের সন্ধান দিয়েছেন।

স্যাবাইনের ধারণা: স্যাবাইন রাষ্ট্রতত্ত্বের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে পর্যালোচনা করেছেন। তিনি রাষ্ট্রতত্ত্বের আলোচনায় ঐতিহাসিক অনুধাবন পদ্ধতি প্রয়োগ করেছেন। তাঁর মতানুসারে ইতিহাসকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রতত্ত্বের আলোচনা অচল। তাঁর অভিমত হল যে অসংখ্য ঘটনা রাজনীতিক পরিমণ্ডলে সংঘটিত হয়। রাষ্ট্রতত্ত্বের উদ্ভব ঘটে এগুলির একটি উল্লেখযোগ্য অংশের ভিত্তিতে। স্যাবাইনের মতে প্রত্যেক রাষ্ট্রতত্ত্বই হল এক-একটি ঘটনা। ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিপ্রেক্ষিতে স্যাবাইন মূলত তিনভাগে রাষ্ট্রতত্ত্বকে বিভক্ত করেছেন। এই তিন ধরনের রাষ্ট্রতত্ত্ব হল: (ক) তথ্য সম্পর্কিত, (খ) হেতু সম্পর্কিত এবং (গ) মূল্যবোধ সম্পর্কিত। বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে রাজনীতিক তত্ত্বের সৃষ্টি হয়। এগুলিকে তথ্যাশ্রয়ী (factual) রাজনীতিক তত্ত্ব বলা হয়। আবার কোন বিশেষ বা একাধিক ঘটনার সম্ভাবনাকে কেন্দ্র করেও রাজনীতিক তত্ত্বের সৃষ্টি হয়। এগুলিকে হেতু সম্পর্কিত (Causal) রাজনীতিক তত্ত্ব বলে। আবার ঔচিত্য-অনৌচিত্যের ভিত্তিতেও রাজনীতিক তত্ত্বের উদ্ভব হয়। এগুলিকে মূল্যবোধ সম্পর্কিত (valuational) রাজনীতিক তত্ত্ব বলা হয়।

অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞানের সহযোগিতার ভিত্তিতে আলোচনা: মানবজীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলীর সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত তথ্যাদি নিয়ে ঐতিহাসিকগণ বিচার-বিশ্লেষণ করেন। বর্তমান শতাব্দীর প্রায় মধ্য ভাগ থেকেই ঐতিহাসিকগণ চলে আসা ঐতিহাসিক পদ্ধতির কাঠামো পরিত্যাগ করেছেন। তার পরিবর্তে অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞানের সহযোগিতা নিয়ে ইতিহাস আলোচনায় উদ্যোগী হয়েছেন। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে রবার্ট পামার-এর Age of Democratic Revolution (1964), ব্যারিংটন ম্যূর-এর Social Origins of Dictatorship and Democracy (1966) প্রভৃতি গ্রন্থের কথা বলা যায়। কার্ল ডয়েটস্ অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞান ও ইতিহাসের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন: “We need history not as a hand-maiden of the social sciences, but as their full-fledged partner, guide and friend.” ল্যাস্কির মতানুসারে ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিজের মূল্যকে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রের ইতিহাসের অভিজ্ঞতার ফলাফলকে সংকলিত করবে। ‘ইতিহাসের ভাববাদী ব্যাখ্যার মাধ্যমে হেগেল ভাববাদের ক্ষেত্রে ব্যাপকতা ও বিস্তৃতি এনেছেন। ইতিহাসের বস্তুবাদী ব্যাখ্যার মাধ্যমে কার্ল মার্কস রাষ্ট্রচিন্তার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছেন।

তথ্যাদির উৎস: তথ্য সংগ্রহের জন্য গবেষকরা বহু উৎসের উপর নির্ভরশীল। এই সকল উৎসের মধ্যে রয়েছে বিশিষ্ট রাজনীতিক ব্যক্তিত্বের জীবনস্মৃতি, আত্মজীবনী, দিনপঞ্জী, সরকারী নথিপত্র, বিশেষ ঘটনা সম্পর্কে সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য ও ভাষা ইত্যাদি। তা ছাড়া তথ্যাদির অন্যান্য উৎসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল লোকগাথা, চিঠিপত্র, বিভিন্ন পাণ্ডুলিপি, বক্তৃতা, বিভিন্ন পরিব্রাজকের লেখা প্রভৃতি। ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গির অনুসরণকারীরা তথ্য সংগ্রহ এবং সংগৃহীত তথ্যের বিচার-বিশ্লেষণের উপর জোর দেন।

সংশ্লেষাত্মক: ঐতিহাসিক বা গবেষক এক সংশ্লেষকের ভূমিকা নিয়ে থাকেন। তিনি তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত বিচারবোধের দ্বারা পরিচালিত হয়ে বহুবিধ আপাতভাবে পরস্পর-বিরোধী তথ্যের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে একটি সুসামঞ্জস্য পূর্ণ রূপ দিয়ে থাকেন। আজকের দিনের বহু রাজনীতিক প্রতিষ্ঠান ও বহু রাজনীতিক ব্যবস্থাকে এই ঐতিহাসিক তথ্যের ভিত্তিতে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।

ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গির এক বিরাট তাৎপর্য সমসাময়িক রাজনীতি এবং তার ভবিষ্যৎ বিকাশ সমস্যার ক্ষেত্রে রয়েছে। এ বিষয়ে মালফার্ড জি. সিবলে (Mulford G. Sibley) বলেছেন: “A full comprehension of political phenomena’ would…embrace on understanding of the way in which men in all ages and cultures have actually formulated and implemented public policy, as well as of the goals which they achieved, though they were achieving or though they ought to achieve.”

সমালোচনা (Criticism): রাজনীতিক ঘটনা, প্রতিষ্ঠান অথবা ধ্রুপদী রাজনীতিক দর্শনের গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গির সীমাবদ্ধতা সম্পর্কেও আলোচনা দরকার।

(১) তথ্য সংগ্রহের সমস্যা: নির্ভরযোগ্য তথ্য ও নথিপত্র খুঁজে বের করা এবং ব্যক্তিগত পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়গুলির অনুসন্ধান করা ঐতিহ্যবাদী রাজনীতিক তত্ত্বের ক্ষেত্রে একটি সমস্যাসঙ্কুল বিষয়। অনেকের মতে এই বিষয়গুলি ঐতিহাসিকের অনুসন্ধানের জন্য ছেড়ে দেওয়া ভাল। এসব বিষয় সম্পর্কে কেন একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আগ্রহ দেখাবেন তার যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর কাজ হল সমসাময়িক রাজনীতিক আচরণ সম্পর্কে পর্যালোচনা করা।

(২) রাজনীতিক কার্যাবলীর সম্পূর্ণ পরিচয় পাওয়া যায় না: অ্যালান বল দেখিয়েছেন যে অতীত সম্পর্কে সংগৃহীত তথ্য-প্রমাণের মধ্যে যথেষ্ট ত্রুটি থেকে যায়। রাজনীতিক ইতিহাস মহৎ ব্যক্তিত্ব বা বিশিষ্ট ঘটনার বিবরণে পরিণত হয়। তার থেকে সকল রাজনীতিক কাজকর্মের একটি সামগ্রিক ধারণা পাওয়া যায় না। রাজনীতিক ইতিহাসের আলোচনার মাধ্যমে কোন একটি দেশ বা জাতির রাজনীতিক কার্যকলাপের সামগ্রিক পরিচয় পাওয়া যায় না। এই আলোচনায় অনেক ফাঁক থেকে যায়। জেনিংস (Ivor Jennings) ঊনবিংশ শতাব্দীর ইতিহাস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ইংল্যাণ্ডের ক্যাবিনেট ও সংসদীয় শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। কিন্তু এই আলোচনা থেকে ইংল্যাণ্ডের রাজনীতিক জীবনের সম্পূর্ণ চিত্র পাওয়া যায় না।

(৩) বিকৃত ও বিষয়ীগত: অতীত সম্পর্কিত অনুসন্ধান গবেষকের ব্যক্তিগত ধারণা, অনুভূতি এবং পক্ষপাতের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। এ ধরনের আলোচনা বিকৃত ও বিষয়ীগত রূপ নিয়ে থাকে। রাজনীতিক ঐতিহাসিকের ব্যক্তিগত ধারণা যদি অতিমাত্রায় প্রভাব বিস্তার করে, তাহলে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অকাম্য জটিলতার সৃষ্টি হবে। এই কারণে পরিবর্তিত সমাজব্যবস্থা ও রাজনীতিক জীবনের পরিপ্রেক্ষিতে সংগৃহীত তথ্যাদির নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করা দরকার।

(৪) অনুসন্ধান পদ্ধতির কাঠামোর অভাব: যে-কোন ঘটনার আর্থ-সামাজিক ও রাজনীতিক হেতু ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের স্বার্থে অনুসন্ধান পদ্ধতির একটি কাঠামো ও নির্দিষ্ট একটি দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা দরকার। কিন্তু তেমন কোন অনুসন্ধান পদ্ধতির কাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাবেকী ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি ব্যর্থ হয়েছে।

(৫) সংকীর্ণ: সাবেকী ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি সংকীর্ণতা দোষে দুষ্ট। রাজনীতিক জীবন ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের উদ্দেশ্যে ব্যাপক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা ঐতিহাসিকদের দিক থেকে বাঞ্ছনীয়। মনে রাখতে হবে যে রাজনীতিক জীবন পর্যালোচনার ক্ষেত্রে যাবতীয় ঐতিহাসিক তথ্য সর্বাংশে প্রাসঙ্গিক বলে বিবেচিত হয় না। রাজনীতিক জীবনের সামগ্রিক আলোচনার ক্ষেত্রে সাবেকী ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি এককভাবে যথেষ্ট নয়। রাজনীতিক জীবনকে আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রভৃতি জীবনধারার বিভিন্ন দিক প্রভাবিত করে।

(৬) সর্বজনস্বীকৃত ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি নেই: প্রকৃত প্রস্তাবে সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত এমন কোন ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গির অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয় না। এর কারণ হল ঐতিহাসিকগণ বা রাষ্ট্রবিজ্ঞানিগণ যে যাঁর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তথ্য সংগ্রহ ও বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেন। তার ফলে সংগৃহীত তথ্য, গৃহীত সিদ্ধান্ত, অনুসৃত পদ্ধতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।

(৭) ঐতিহাসিক পদ্ধতি হল বর্ণনামূলক। অথচ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনা উদ্দেশ্যমূলক। 

(৮) লর্ড ব্রাইসের মতানুসারে ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ উৎসাহব্যঞ্জক, কিন্তু অনেক সময় তা বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে।

মূল্যায়ন (Evaluation): বিভিন্ন সমালোচনা সত্ত্বেও ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ-ধারার গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না।

(ক) ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গির এইসব ত্রুটি সত্ত্বেও এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, সমসাময়িক যুগের রাজনীতিক প্রবণতাগুলি অনুধাবনের জন্য এর যথেষ্ট আবশ্যিকতা রয়েছে।

(খ) তা ছাড়া, ভবিষ্যৎ পরিবর্তনের সম্ভাব্যতা সম্পর্কেও ধারণা করতে এই দৃষ্টিভঙ্গি সাহায্য করে।

(গ) রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিকাশের ধারা যথাযথভাবে অনুধাবন করার জন্য ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিতে অপরিহার্য। 

(ঘ) ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি হল ঐতিহ্যগত দৃষ্টিভঙ্গির একটি স্তম্ভস্বরূপ। এ দিক থেকে এই দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্ব ও তাৎপর্যকে অস্বীকার করা যায় না।

(ঙ) তথ্যাদির নির্বাচন ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে সাবেকী ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গির অতীত ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এখনও এই দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না। রাজনীতিক জীবনের অর্থবহ আলোচনা ও মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্ব আজও অনস্বীকার্য।