ইস্টনের ব্যবস্থাজ্ঞাপক বিশ্লেষণ: আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ব্যবস্থাজ্ঞাপক দৃষ্টিভঙ্গীর মধ্যে ইস্টনের উপকরণ উপপাদ বিশ্লেষণ (input output analysis) বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয়। ইস্টন রাজনীতিক জীবন প্রক্রিয়া ও তার স্বরূপ উদ্ঘাটনের ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছেন। এবং এ ক্ষেত্রে তিনি বৈজ্ঞানিক অনুধাবন পদ্ধতি প্রয়োগের ব্যাপারে যত্নবান হয়েছেন। ইস্টন তাঁর অনুসৃত পদ্ধতিকে নিজেই ‘ব্যবস্থাজ্ঞাপক বিশ্লেষণ’ (System Analysis) হিসাবে অভিহিত করেছেন। সাম্প্রতিককালের এই মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর একটি সাড়া-জাগান বিখ্যাত গ্রন্থ হল The Political System । গ্রন্থটি ১৯৫৩ সালে প্রকাশিত হয়। তারপর আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় বা রাজনীতিক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে একটি নতুন বিশ্লেষণ-পদ্ধতি প্রবর্তিত হয়। একে উপকরণ-উপপাদ বিশ্লেষণ বলা হয়। ডেভিড ইস্টনের এই বিশ্লেষণধারা অধিকতর সমৃদ্ধ হয় ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত তাঁর অন্য দুটি গ্রন্থের মাধ্যমে। এ দুটি গ্রন্থ হল : A Framework for Political Analysis ও A System Analysis of Political Life। ইস্টন তাঁর এই বিশ্লেষণ-পদ্ধতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উপাদান সংগ্রহের ব্যাপারে কার্ল ডয়েশ্চ (Karl Deutsch)-এর যোগাযোগ বিজ্ঞান (Communication Science)-এর সাহায্য গ্রহণ করেছেন।

অভিজ্ঞতাবাদী বিশ্লেষণ পদ্ধতি ও তত্ত্ব: ইস্টনের মতানুসারে রাজনীতিক ব্যবস্থার কার্যপ্রক্রিয়া, আচরণ ও আনুষঙ্গিক বিষয় বিশ্লেষণের জন্য একটি ধারণাগত কাঠামো (conceptual framework) বা তাত্ত্বিক কাঠামো (theoritical framework) গড়ে তোলা দরকার। একটি তাত্ত্বিক কাঠামো ছাড়া রাজনীতিক ব্যবস্থার জীবন-প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করা যায় না। এই তত্ত্বের সাহায্যে গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিক উপাদানগুলিকে সনাক্ত করা যাবে। রাজনীতিক কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে তাত্ত্বিক কাঠামোর গুরুত্বের কথা বলতে গিয়ে ইস্টন বলেছেন যে, যে-কোন পরিণত বৈজ্ঞানিক জ্ঞানই হল তাত্ত্বিক। রাজনীতিক তত্ত্বকে ইস্টন একটি ‘প্রতীকী ব্যবস্থা’ (symbolic system) হিসাবে প্রতিপন্ন করেছেন। এই ব্যবস্থার সাহায্যে সুনির্দিষ্ট বা অভিজ্ঞতাবাদী (concrete or empirical) রাজনীতিক ব্যবস্থা অনুধাবন করা যাবে। তাই ইস্টনের বিশ্লেষণ পদ্ধতি এবং তাঁর তত্ত্ব হল অভিজ্ঞতাবাদী (empirical)। তাঁর মতানুসারে অভিজ্ঞতাবাদী তত্ত্ব (empirical theory) ছাড়া রাজনীতিক জীবনের বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা অসম্ভব।

সাধারণ বা সার্বজনীন ব্যবস্থাজ্ঞাপক তত্ত্ব: ইস্টনের এই অভিজ্ঞতাবাদী তত্ত্ব হল সার্বজনীন বা সাধারণ ব্যবস্থাজ্ঞাপক তত্ত্ব (general system theory)। ইস্টন তাঁর এই তত্ত্বকে রাষ্ট্রনীতির একত্রীভূত বা সুসংহত তত্ত্ব (unified theory of politics) বলেও অভিহিত করেছেন। ইস্টনের মতানুসারে এমন একটি বিশ্লেষণ পদ্ধতি গড়ে তোলা দরকার যার সাহায্যে সকল রকম রাজনীতিক ব্যবস্থা বিশ্লেষণ করা সম্ভব হবে। ইস্টন তাঁর এই সাধারণ ব্যবস্থাজ্ঞাপক তত্ত্বের তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক উভয় দিকের উপর জোর দিয়েছেন। ইস্টনের অভিজ্ঞতাবাদী তত্ত্বটি হল সার্বজনীন বা সাধারণ ব্যবস্থাজ্ঞাপক তত্ত্ব। এই তত্ত্বটিকে দুটি অর্থে সার্বজনীন বা সাধারণ তত্ত্ব (general theory) বলা হয়: (১) ইস্টনের এই তত্ত্বের সাহায্যে জাতীয় রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষণ এবং বিভিন্ন রাজনীতিক ব্যবস্থার তুলনামূলক বিচার-বিশ্লেষণ সম্ভব। ইস্টন রাষ্ট্রনীতির আলোচনার একটি একত্রীভূত বা সুসংহত তত্ত্বের (unified theory) কথা বলেছেন। তিনি জাতীয় রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষণের জন্য একই রকম বিশ্লেষণ পদ্ধতির কথা বলেছেন। তিনি এ ক্ষেত্রে পৃথক পদ্ধতির বিরোধী ছিলেন। তাঁর মতানুসারে জাতীয় রাজনীতি হল একটি ব্যবস্থা, অনুরূপভাবে আর্ন্তজাতিক রাজনীতিও হল একটি ব্যবস্থা। একটি সুসংহত তত্ত্বের সাহায্যে উভয়ের বিশ্লেষণ সম্ভব। (২) ইস্টনের আরও অভিমত হল যে সকল রাজনীতিক ব্যবস্থার সাধারণ সমস্যাদির পর্যালোচনা করাই হল রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মূল দায়িত্ব। ইস্টন তাঁর A System Analysis of Political Life শীর্ষক গ্রন্থে তাঁর সাধারণ তত্ত্ব (general theory) সম্পর্কে বলেছেন : “…a type of causal theory that differs from singular generalisations and partial theories by virtue of its presumed application to the whole of a field of enquiry…. It would not be confined to any special aspect of a political system.”

রাজনীতিক ব্যবস্থার ধারণা

মিথস্ক্রিয়ার সমষ্টি: ডেভিড ইস্টনের অভিজ্ঞতাবাদী ব্যবস্থাজ্ঞাপক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে রাজনীতিক ব্যবস্থার ধারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই কারণে রাজনীতিক ব্যবস্থা সম্পর্কিত ইস্টনের ধারণা ব্যাখ্যা করা দরকার। ইস্টনের মতানুসারে সমাজের কোন ব্যবস্থাকেই পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করা বা বিচ্ছিন্ন রাখা যায় না। রাজনীতিক ব্যবস্থা সম্পূর্ণ একটি বিচ্ছিন্ন ব্যবস্থা নয় এবং সকলের সঙ্গে সম্পর্ক রহিত নয়। অন্যান্য সামাজিক ব্যবস্থার সঙ্গে এর সাদৃশ্য আছে। এই কারণে এদের মধ্যে আদান-প্রদান অর্থাৎ পারস্পরিক প্রতিক্রিয়া বা মিথষ্ক্রিয়া (Interaction) ঘটে। ইস্টনের মতে ব্যবস্থার (system) একক (unit) হল এই মিথষ্ক্রিয়া। রাজনীতিক ব্যবস্থা হল কতকগুলি মিথষ্ক্রিয়ার সমষ্টি। সামগ্রিক সামাজিক আচরণ থেকে এই সমস্ত মিথষ্ক্রিয়া আসে। এদের মাধ্যমে সমাজের মূল্যসমূহ বরাদ্দীকৃত হয়। ইস্টনের নিজের কথায়: “A Political system is a set of interactions abstracted from the totality of social behaviour through which values are allocated for a society.” ইস্টনের মতানুসারে রাজনীতিক ব্যবস্থা হল সেই সমস্ত মিথষ্ক্রিয়া যার মাধ্যমে কোন সমাজে কর্তৃত্বসম্পন্নভাবে মূল্য বরাদ্দ হয়। অর্থাৎ রাজনীতিক ব্যবস্থাকে মিথষ্ক্রিয়া বলা হয়েছে, যার মাধ্যমে কর্তৃত্বসম্পন্ন উপায়ে মূল্য বণ্টিত হয়।

আচরণের ব্যবস্থা: আবার সমাজে মূল্যের কর্তৃত্বসম্পন্ন বরাদ্দের সঙ্গে যে আচরণ যুক্ত সেই আচরণকে নিয়ে রাজনীতিক ব্যবস্থা গঠিত হয়। অর্থাৎ আচরণের ব্যবস্থা হিসাবেও রাজনীতিক ব্যবস্থাকে ব্যাখ্যা করা হয়। তবে এই আচরণ সমাজবদ্ধ মানুষের সামগ্রিক আচরণ নয়, এ হল তার একটি অংশমাত্র। ইস্টন তাঁর A Framework for Political Analysis শীর্ষক গ্রন্থে রাজনীতিক ব্যবস্থাকে বলেছেন : “…the most inclusive system of behaviour in a society for the authoritative allocation of values.” অর্থাৎ মূল্যের কর্তৃত্বসম্পন্ন বরাদ্দের জন্য কোন সমাজের সর্বাধিক ব্যাপক আচরণের ব্যবস্থাই হল রাজনীতিক ব্যবস্থা। ইস্টনের মতানুসারে মূল্যের কর্তৃত্বসম্পন্ন বরাদ্দ হল সকল সমাজের জন্য নূন্যতম পূর্বশর্ত। মিথস্ক্রিয়ার দ্বারা রাজনীতিক ব্যবস্থার সীমা স্থিরীকৃত হয়। সমাজে মূল্যের কর্তৃত্বসম্পন্ন বরাদ্দের সঙ্গে এই মিথষ্ক্রিয়া সরাসরি যুক্ত।

কর্তৃত্বসম্পন্ন বরাদ্দ: অপরাপর সামাজিক মিথষ্ক্রিয়া থেকে রাজনীতিক মিথষ্ক্রিয়াকে আলাদা করা সম্ভব। সমাজের জন্য কর্তৃত্বসম্পন্ন বরাদ্দের সঙ্গে রাজনীতিক মিথষ্ক্রিয়া যুক্ত। সমাজে মূল্যের কর্তৃত্বসম্পন্ন বণ্টনের ভিত্তিতে রাজনীতিক মিথষ্ক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়ে থাকে। কোন রাজনীতিক ব্যবস্থায় বরাদ্দকে বিভিন্ন কারণে সদস্যরা বাধ্যতামূলক বা কর্তৃত্বসম্পন্ন বলে বিবেচনা করে। এই সমস্ত কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বলপ্রয়োগের আশংকা, কঠোর মনস্তাত্ত্বিক নিষেধাজ্ঞা, ঐতিহ্য, আইনের প্রতি আনুগত্য, বৈধতার মানসিকতা, ব্যক্তিগত স্বার্থ প্রভৃতি। তিনভাবে কর্তৃত্বসম্পন্ন বরাদ্দ বস্তু বা মূল্য বণ্টন করে থাকে। এই তিনটি উপায় বা পদ্ধতি হল : 

  • (ক) একজনকে মূল্য প্রদান ও অন্যকে বঞ্চিত করা, 

  • (খ) কোন ব্যক্তির বস্তু বা মূল্য প্রাপ্তির পথে বাধা প্রদান এবং 

  • (গ) নিজস্ব মালিকানাধীন মূল্যবান বস্তু থেকে কোন ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা।

স্ব-নিয়ন্ত্রিত ও প্রতিবেদনশীল: রাজনীতিক ব্যবস্থাকে ইস্টন একটি উন্মুক্ত ব্যবস্থা (open system) হিসাবে প্রতিপন্ন করেছেন। রাজনীতিক ব্যবস্থা বাইরের প্রভাব থেকে নিজেকে আলাদা করতে বা পৃথক রাখতে সক্ষম হয় না। বাইরের প্রভাবের কাছে রাজনীতিক ব্যবস্থা উন্মুক্ত। তাই তার পরিবেশের প্রভাবে রাজনীতিক ব্যবস্থা সাড়া দেয় এবং পরিবেশের দ্বারা প্রভাবিত হয়। রাজনীতিক ব্যবস্থা তার পরিবেশের সঙ্গে সতত সামঞ্জস্য বজায় রেখে চলে। এই কারণে এই ব্যবস্থাকে সঙ্গতিসাধনকারী ব্যবস্থা হিসাবে অভিহিত করা হয়। অন্যান্য ব্যবস্থার সঙ্গে সাদৃশ্য থাকলে রাজনীতিক ব্যবস্থার উপর বাইরের প্রভাব পড়বেই। তবে তার পরিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে রাজনীতিক ব্যবস্থা সামঞ্জস্য সাধন করতে পারে। তার পরিবেশের পরিবর্তন ঘটলে রাজনীতিক ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন ঘটে। তার ফলে আগেকার ভারসাম্য পরিবর্তিত হয়। এই কারণে ইস্টনের মতে রাজনীতিক ব্যবস্থা হল স্ব-নিয়ন্ত্রিত (self-regulating) এবং প্রতিবেদনশীল (responding)। রাজনীতিক ব্যবস্থার উপর যখন পরিবেশের পরিবর্তনের কথা বলা হয় তখন অন্যান্য সামাজিক ব্যবস্থার পরিবর্তনকেই বোঝানো হয়।

পরিবেশ: তার পরিবেশের সঙ্গে রাজনীতিক ব্যবস্থার সম্পর্ক প্রসঙ্গেও ইস্টন আলোচনা করেছেন। রাজনীতিক ব্যবস্থার পরিবেশ বলতে কি বোঝায় তা আলোচনা করা দরকার। রাজনীতিক ব্যবস্থার বাইরে সকল সমাজেই অন্যান্য অনেক ব্যবস্থা বর্তমান। এই সমস্ত ব্যবস্থাকে সমাজের উপ-ব্যবস্থা হিসাবে অভিহিত করা যায়। রাজনীতিক ব্যবস্থার পরিবেশ এই সমস্ত উপ-ব্যবস্থার সমন্বয়ে গঠিত হয়। আবার পরিবেশ কথাটি সামাজিক ও ভৌত উভয় অর্থেই ব্যবহার করা হয়। স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য রাজনীতিক ব্যবস্থাকে পরিবেশের নেতিবাচক প্রভাব বা অন্য কোন ধরনের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে হয়। কোন একটি রাজনীতিক ব্যবস্থার সামর্থ্য সম্পর্কে ধারণা লাভের জন্য দেখতে হয় যে, সংশ্লিষ্ট রাজনীতিক ব্যবস্থা কিভাবে পরিবেশের প্রভাবের মোকাবিলা করছে বা কাটিয়ে উঠছে। এদিক থেকে বিচার করলে পরিবেশের গুরুত্ব অপরিসীম। এই পরিবেশকে ইস্টন দু’ভাগে ভাগ করেছেন। প্রকৃতিগত বিচারে এই বিভাগ করা হয়েছে। একটি হল আন্তঃ-সামাজিক (inter-societal) এবং অপরটি হল বহিঃ-সামাজিক (extra-societal) । রাজনীতিক ব্যবস্থা সমাজের ভিতরে বর্তমান থাকে। সংশ্লিষ্ঠ সমাজের মধ্যেই অন্যান্য সামাজিক উপ ব্যবস্থাও থাকে। সমাজের এই সমস্ত উপ-ব্যবস্থার সমন্বয়ের ফলে পরিবেশের প্রথম দিকটি বা আন্তঃ সামাজিক দিকটি গড়ে উঠে। অর্থাৎ রাজনীতিক ব্যবস্থা যে বিশেষ সমাজে অবস্থিত, পরিবেশের আন্তঃ সামাজিক ব্যবস্থাসমূহ সংশ্লিষ্ট সমাজেরই অন্তর্ভূক্ত। আচরণ, ধারণা, দৃষ্টিভঙ্গী ইত্যাদিকে আন্তঃ-সামাজিক ব্যবস্থাসমূহের মধ্যে যুক্ত করা যায়। আবার সংশ্লিষ্ট সমাজ ব্যতীত অপরাপর উপ-ব্যবস্থার সমন্বয়ের মাধ্যমে যে পরিবেশের সৃষ্টি হয় তা হল বাহ্যিক সামাজিক পরিবেশ। অর্থাৎ নির্দিষ্ট একটি রাজনীতিক ব্যবস্থারবাইরে বহিঃ-সামাজিক ব্যবস্থাগুলি বর্তমান থাকে। ইস্টনের মতানুসারে বহিঃ-সামাজিক ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত হল আন্তর্জাতিক স্তরের রাজনীতিক, সাংস্কৃতিক, আর্থিক প্রভৃতি ব্যবস্থাসমূহ। এই দু’ধরণের পরিবেশই রাজনীতিক ব্যবস্থার অস্তিত্ব সংরক্ষণে সাহায্য করে।

উপ-ব্যবস্থা ও মিথস্ক্রিয়া: ইস্টনের মতানুসারে রাজনীতিক ব্যবস্থা হল একটি একক। কিন্তু এর মধ্যেই বহু উপ-ব্যবস্থা বর্তমান। এই সমস্ত উপ-ব্যবস্থাগুলিকে ইস্টন আধা-রাজনীতিক (para-political) বলেছেন। এই সমস্ত উপ-ব্যবস্থার মধ্যে প্রায়ই নানা রকম পারস্পরিক প্রতিক্রিয়া বা মিথস্ক্রিয়া (interaction) ঘটে। রাজনীতিক ব্যবস্থার ভিতরে থেকে বিভিন্ন সংগঠন নিজ নিজ স্বার্থসিদ্ধির ব্যাপারে সক্রিয় থাকে। যেমন রাজনীতিক ব্যবস্থার মধ্যে বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠী থাকে। এই সমস্ত স্বার্থগোষ্ঠী সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে এবং নানাভাবে রাজনীতিক পরিমণ্ডলকে প্রভাবিত করে।

চাহিদা ও সমর্থনকে নিয়ে উপকরণ কাঠামো গঠিত হয়: রাজনীতিক ব্যবস্থার উপর পরিবেশের প্রভাব অপরিসীম। যৌগিক বস্তুর ন্যায় এই রাজনীতিক ব্যবস্থা গঠিত হয় বিভিন্ন উপাদানের সংমিশ্রণে। যেমন, বিভিন্ন রাজনীতিক দল ও চাপ সৃষ্টিকারী সংস্থা, প্রশাসনিক সংস্থাসমূহ প্রভৃতি। এই উপাদানগুলির মধ্যে কিছু চাহিদা-উপাদান (demand inputs) বা চাপ বা প্রভাব (influence) সৃষ্টিকারী উপাদান উপস্থিত থাকে। রাজনীতিক ব্যবস্থার পরিবেশ থেকে চাহিদা (demand)-র সৃষ্টি হয় এবং সমর্থন (supports) পাওয়া যায়। এগুলিই হল উপকরণ (input)। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা দরকার যে ইস্টন যে উপকরণ ও উপপাদ নিয়ে গঠিত রাজনীতিক ব্যবস্থাকে একটি যান্ত্রিক কাঠামো হিসাবে প্রতিপন্ন করেছেন। তিনি বলেছেন: “The political system can be seen basically as an input-output mechanism….a political system is just a means whereby certain kinds of inputs are converted into outputs.”

চাহিদা চাপ ও সমর্থন চাপ: আগেই বলা হয়েছে যে রাজনীতিক ব্যবস্থা হল একটি মুক্ত ব্যবস্থা (open system)। তাই রাজনীতিক ব্যবস্থাকে পরিবেশ থেকে আসা বিভিন্ন চাপের সম্মুখীন হতে হয়। এই চাপকে ইস্টন ‘stress’ বলেছেন। এই চাপকে ইস্টন দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন। এই দুটি ভাগ হল : (১) চাহিদা সম্পর্কিত চাপ (demand stress) এবং (২) সমর্থন সম্পর্কিত চাপ (support stress)। এই উভয় ধরনের চাপকে নিয়ে তৈরী হয় উপকরণ-কাঠামো (imput-structure)। রাজনীতিক কর্তৃপক্ষের কাছে বিভিন্ন দাবী পেশ করা হয়। রাজনীতিক ব্যবস্থা কাঠামো বা পদ্ধতির মাধ্যমে সেই সমস্ত দাবিকে সমর্থনও করা হয়। এই নিয়ে গঠিত হয় উপকরণ কাঠামো।

সুতরাং উপকরণ কাঠামোর মধ্যে চাহিদার চাপ (demand stress) এবং সমর্থনের চাপ (support stress) বর্তমান থাকে। ইস্টনের মতানুসারে চাহিদা চাপ হল ‘মূল্যের কর্তৃত্বসম্পন্ন বরাদ্দ’ (authoritative allocation of value) হওয়া উচিত কিনা এ বিষয়ে ব্যক্ত মতামত। কর্তৃত্বসম্পন্ন বরাদ্দের কাজে যাঁরা নিযুক্ত চাহিদা তাঁদের নির্দেশ দেয়। এই চাহিদা ব্যাপকও হতে পারে, আবার সংকীর্ণও হতে পারে। যাইহোক ইস্টনের মতানুসারে চাহিদার চাপ এবং সমর্থনের চাপ সম্পর্কযুক্ত। রাজনীতিক ব্যবস্থার ভিতর থেকে বহু ও বিভিন্ন চাহিদার চাপ আসে। এই সমস্ত চাহিদার চাপ পূরণ করার ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গৃহীত না হলে সমর্থনের চাপ আসে। অর্থাৎ রাজনীতিক ব্যবস্থার চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হলে সমর্থনের চাপ সৃষ্টি হয়। সমর্থন চাপের অধীনে সকল রাজনীতিক ব্যবস্থাকেই থাকতে হয়।

তিনটি দিক থেকে সমর্থন আসে: চাহিদা বাহ্যিক পরিবেশ থেকে সৃষ্টি হতে পারে। আবার রাজনীতিক ব্যবস্থার ভিতর থেকেও উদ্ভূত হতে পারে। যেমন, শিল্পপতি শ্রেণী উৎপাদন শুল্ক কমানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারে। উপকরণ বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্যে চাহিদা ছাড়াও রাজনীতিক ব্যবস্থার প্রতি সমর্থন (supports) বর্তমান থাকে। বল (A. R. Ball) বলেছেন: “Inputs are the demands and supprots from the various enviornments, and these are converted into output, i.e. authoritative decisions.” সমর্থন ছাড়া কোন রাজনীতিক ব্যবস্থার অস্তিত্ব রক্ষা অসম্ভব। রাজনীতিক ব্যবস্থার প্রতি সমর্থনের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় বর্তমান। (১) রাজনীতিক সম্প্রদায় (The Political Community): এই রকম গোষ্ঠী শান্তিপূর্ণ উপায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ্ধতি সমর্থন করে। (২) শাসনব্যবস্থা (The Regime): অর্থাৎ শাসনতান্ত্রিক কাঠামো, পদ্ধতি, রীতিনীতি, আদর্শ ব্যবস্থা উপকরণ অর্থাৎ চাহিদা ও সমর্থনকে উপপাদ বা উৎপন্নে পরিণত করে। রাজনীতিক সিদ্ধান্ত ও নীতিসমূহকে উপপাদ বা উৎপন্ন বলে।

রাজনীতিক ব্যবস্থার সংকট: ইস্টনের মতানুসারে বিভিন্ন দিক থেকে রাজনীতি ব্যবস্থার সংকট সৃষ্টি হতে পারে। পরিবেশ থেকে সংকটের উদ্ভব হতে পারে। রাজনীতিক ব্যবস্থার ভিতরেই সংকটের সৃষ্টি হতে পারে। আবার দাবির জন্য বা সমর্থনের অভাবের জন্য রাজনীতিক সংকট দেখা দিতে পারে। রাজনীতিক ব্যবস্থায় দু’ভাগে সংকট সৃষ্টি হতে পারে। (১) সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিশেষত রাজনীতিক ক্ষেত্রে প্রভাবশালীদের দাবি রাজনীতিক কর্তৃপক্ষ পূরণ করতে না পারলে বা রাজী না হলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এবং এই ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ থেকে রাজনীতিক ব্যবস্থায় সংকটের সৃষ্টি হতে পারে। (২) বহু ও বিভিন্ন দাবি রাজনীতিক কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করা হয়। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দাবিগুলি বাছাই করতে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বিলম্ব হয়। এই কারণেও সংকটের সৃষ্টি হতে পারে। রাজনীতিক ব্যবস্থায় চাহিদার মত সমর্থন থেকেও অনেক সময় সংকট সৃষ্টি হতে পারে। রাজনীতিক ব্যবস্থার প্রতি সমর্থন হ্রাস পেলে সংকট দেখা দেয়। রাজনীতিক ব্যবস্থার সংকট দূরীকরণের পন্থা-পদ্ধতি সম্পর্কেও ইস্টন আলোচনা করেছেন। অর্থাৎ রাজনীতিক ব্যবস্থার চাহিদা ও সমর্থনকেই উপকরণ বলে। এই সমস্ত উপাদানগুলি রাষ্ট্রনৈতিক ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে থাকে।

উপপাদ: রাজনীতিক ব্যবস্থা উপকরণ অর্থাৎ চাহিদা ও সমর্থনকে উপপাদে (output) পরিণত করে। উপপাদ বলতে সিদ্ধান্ত ও কাজকর্ম (decisions and actions)-কে বোঝায়। রাজনীতিক ব্যবস্থার উপর চাহিদার চাপ ও সমর্থনের চাপ সৃষ্টি হলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার দরকার হয়। এইভাবে চাহিদার চাপ ও সমর্থনের চাপ সিদ্ধান্ত ও কাজকর্মে বা উপপাদে পরিণত হয়। অর্থাৎ উপপাদ হল মূল্যের কর্তৃত্বসম্পন্ন বরাদ্দ (authoritative allocation of value)। রাজনীতক ব্যবস্থার দিক থেকে যে সমস্ত সিদ্ধান্ত, কাজকর্ম বা ফলাফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তাদেরকেই ইস্টন উপপাদ হিসাবে প্রতিপন্ন করেছেন। চাহিদাসমূহ নানাভাবে বাছাই ও শোষিত হয়ে উপপাদে পরিণত হয়। এর উদ্দেশ্য হল সমাজের শক্তি সম্পদকে বিশেষ প্রয়োজনে ব্যবহার করা। এই কারণে কর্তৃপক্ষকে শক্তি-সম্পদের বরাদ্দ ও বিনিয়োগ সম্পর্কিত বিষয়াদির সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। তাই উপপাদে সৃষ্টিকর্তা হিসাবে কর্তৃপক্ষের কথা বলা যায়। কর্তৃপক্ষ বা ক্ষমতাসীন ব্যক্তিবর্গ উপপাদের মাধ্যমে নির্দেশ জারি ও নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে। এই কারণে, ইস্টনের মতানুসারে, উপপাদ হল এক ধরনের রাজনীতিক আচরণ।

রাজনীতিক ব্যবস্থার সামর্থ্য: ইস্টনের অভিমত অনুসারে উপকরণ ও উপপাদের মধ্যে ভারসাম্য থাকলে রাজনীতিক ব্যবস্থা একটি স্থায়ী অবস্থায় উপনীত হয়। রাজনীতিক ব্যবস্থার স্থায়িত্ব ও অস্তিত্ব চাহিদা নিয়ন্ত্রণের সামর্থ্য ও সাফল্যের উপর নির্ভরশীল। ডেভিজ ও লিউইস (Davies & Lewis) তাঁদের Models of Political System CG: “Political system can be said to be in a steady state…which depends on some proper balance between inputs and outputs.” প্রত্যেক রাজনীতিক ব্যবস্থার চাহিদা চাপ ও সমর্থন চাপ পূরণ করার ব্যাপারে একটা সামর্থ্য থাকে। এই সামর্থ্য সীমাহীন নয়। ইস্টন বলেছেন: “Every political system must have some finite capacity with respect to the number of demands it can accept for processing into decisions….” এই কারণে সকল চাহিদা পূরণ করা যায় না। কিছু চাহিদা অপূর্ণ থেকে যায়। রাজনীতিক ব্যবস্থার মধ্যে সামর্থ্যের বাইরে চাহিদার চাপ সৃষ্টি হলে তাকে বলে চাহিদা-উপকরণ-এর অতিরিক্ত বোঝা (demand input overload)। এই অতিরিক্ত বোঝা যদি মাত্রাতিরিক্ত হয়ে পড়ে, সেক্ষেত্রে রাজনীতিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা থাকে। চাহিদার চাপের সঙ্গে সমর্থনের চাপ অতিমাত্রায় বেড়ে গেলে এ রকম আশঙ্কার সৃষ্টি হয়।

তথ্য ও অভিজ্ঞতা প্রেরক পথ: রাজনীতিক সিদ্ধান্ত বা উপপাদ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। প্রতিক্রিয়ার ফল পুনঃ প্রেরিত (Feed back Machanism) হয় এবং নতুন উপকরণের সৃষ্টি হয়। এই ঘটনা চক্রাকারে ঘটতে থাকে। এই ‘ফিডব্যাক মেকানিজম’ বা ‘তথ্য ও অভিজ্ঞতা প্রেরক পথ’ হল একটি ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে অতীতের কার্যকলাপের দ্বারা ভবিষ্যতের ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সাধারণতঃ তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে এই তথ্য ও অভিজ্ঞতা প্রেরক পথ ব্যবহৃত হয়। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে উপকরণ ও উপপাদের মধ্যে সমতা বজায় থাকে। এই সমতার ভিত্তিতে রাজনীতিক ব্যবস্থার স্থায়িত্ব আসে।

ফিডব্যাক লুপ: ইস্টনের ব্যাখ্যা অনুসারে উপপাদগুলি আবার উপকরণে পরিণত হয়। এইভাবে উপপাদের উপকরণে এবং উপকরণের উপপাদে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়াটিকে ইস্টন বলেছেন ‘feedback loop’। এই ফিডব্যাক লুপ প্রক্রিয়াটি অবিরত চলতে থাকে। এই প্রক্রিয়া তথ্যাদি সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত বা উপপাদ ও তার প্রতিক্রিয়া বা ফলাফলের মাধ্যমে রাজনীতিক ব্যবস্থায় সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রেরিত তথ্যাদি সনাক্ত করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট তথ্যাদির ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় কার্যকলাপ নির্ধারণ করা হয়। ‘ফিডব্যাক লুপ’ হল এক গুচ্ছ প্রক্রিয়া। এর মধ্যে থাকে তথ্যসমূহ, সংশ্লিষ্ট উপপাদসমূহ এবং তাদের ফলাফলসমূহ। ইস্টন বলেছেন: edback loop will identify the set of processes, composed of information and related outputs and their consequences, that enables a system of control and regulate the disturbances….” উপপাদ ও উপকরণের পরস্পরের রূপান্তর সম্পর্কিত তথ্যসমূহ ফিডব্যাক লুপ প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হয়। এই প্রক্রিয়া রাজনীতিক ব্যবস্থা এবং সামগ্রিকভাবে পরিবেশ সম্পর্কিত চিন্তাধারাকে আলোড়িত করে। এই প্রক্রিয়া রাজনীতিক ব্যবস্থাকে পরিচালিত করে তথা নেতৃত্ব প্রদান করে। রাজনীতিক ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন ব্যক্তিবর্গ বা কর্তৃপক্ষ উদ্ভুত চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে উপপাদ সৃষ্টি করেই সন্তুষ্ট থাকেন না। উপপাদের প্রতিক্রিয়া বা ফলাফল তাঁদের জানতে হয়। এই কারণে ফিডব্যাক লুপ প্রক্রিয়া রাজনীতিক ব্যবস্থার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কযুক্ত। ইস্টনের মতানুসারে মানবসমাজের ফিডব্যাক প্রক্রিয়া জটিল প্রকৃতির। এই জটিল প্রকৃতির ফিডব্যাক প্রক্রিয়ার কাজকর্মের পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক এবং অতীততের অভিজ্ঞতা অনুসারে এই প্রক্রিয়ার কাজকর্ম সম্পাদিত হয়। ইস্টনের মতানুসারে এই প্রক্রিয়া হল সাম্প্রতিককালের প্রাধান্যকারী এবং সর্বাধিক উন্নতমানের এক বৌদ্ধিক আবিষ্কার। তিনি বলেছেন: “The dominant and most fertile intellectual innovation of our own age has been of that information feedback.”

চাপ হ্রাস বা সংকট নির্ধারণ: চাহিদার পরিমাণ অতিমাত্রায় অধিক হলে বা সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ার ফলে সমর্থন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেলে রাজনীতিক ব্যবস্থার উপর চাপ বাড়ে এবং সংকটের সৃষ্টি হয়। ইস্টন (D. Easton) এই চাপ হ্রাস বা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে কয়েকটি পদ্ধতির কথা বলেছেন।

  • কাঠামোগত পদ্ধতি: রাজনীতিক দল, স্বার্থগোষ্ঠী, জনমত গঠনের বিভিন্ন মাধ্যম প্রভৃতির সাহায্যে দাবিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। প্রত্যেক রাজনীতিক ব্যবস্থায় বহু গোষ্ঠী ও কাঠামো বর্তমান। তারাই রাজনীতিক কর্তৃপক্ষের কাছে বিভিন্ন দাবি পেশ করে। তারাই ঝাড়াই বাছাই করে ঠিক করে বিভিন্ন দাবির মধ্যে কোন্ কোন্ দাবি রাজনীতিক কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করা হবে।

  • রূপান্তর পদ্ধতি: আইন ও শাসন-বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ উপকরণ রূপান্তরিত করার সময় বা দলগুলিকে উপপাদে পরিণত করার সময় চাপ বা চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

  • যোগাযোগ পদ্ধতি: অর্থাৎ যোগাযোগ মাধ্যম সম্প্রসারণের দ্বারা দাবির সংখ্যা হ্রাস করা যায়।

  • সাংস্কৃতিক পদ্ধতি: রাজনীতিক ব্যবস্থায় ব্যক্তিকে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক নিষেধাজ্ঞা মান্য করতে হয়। এই সব নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে রাজনীতিক কর্তৃপক্ষের কাছে দাবির সংখ্যা হ্রাস করা যায়। কর্তৃত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ফলশ্রুতি হিসাবে যদি অসন্তুষ্টি অত্যাধিক বৃদ্ধি পায়, তাহলে রাজনীতিক ব্যবস্থায় সংকট সৃষ্টি হয়। কাঠামো ও পদ্ধতির পরিবর্তন করে রাজনীতিক ব্যবস্থা এই রকম অবস্থায় সামঞ্জস্য বজায় রাখে।

আবার রাজনীতিক ব্যবস্থার প্রতি সমর্থনের অভাবজনিত সংকট নিবারণের জন্য কতকগুলি ব্যবস্থার কথা বলা হয়। (১) রাজনীতিক কর্তৃপক্ষ দাবি পূরণ করতে না পারলে সমর্থন হ্রাস পায়। এই কারণে নানা ভাবে দাবিকে নিয়ন্ত্রণ করা চেষ্টা করা হয় (২) সংকট সৃষ্টি হলে রাজনীতিক ব্যবস্থা কাঠামো ও পদ্ধতির পরিবর্তন করে অস্তিত্ব বজায় রাখে। নতুন সাংবিধানিক ব্যবস্থার মাধ্যমে রাজনীতিক ব্যবস্থা নিজের রূপান্তরের (Self-transformation) দ্বারা এই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। (৩) কোন সাংবিধানিক বিধানের বিরুদ্ধে বিরোধিতাজনিত সংকট নিবারণের জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হয়। (৪) রাজনীতিক ব্যবস্থার প্রতি অনুকূল মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গী গড়ে তোলার জন্য মতাদর্শগত রাজনীতিক শিক্ষা (political indoctrination) ও রাজনীতিক সামাজিকীকরণের (political socialisation) ব্যবস্থা করা হয়।

ডেভিড ইস্টন প্রকৃতপক্ষে অন্যান্য বিজ্ঞানের কলাকৌশল প্রয়োগের দ্বারা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অনুশীলনকে অধিকতর বিজ্ঞানসম্মত ও সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন। তিনি রাষ্ট্রনৈতিক ব্যবস্থা বিশ্লেষণের উদ্দেশ্যে একটি সুসংহত তাত্ত্বিক ব্যবস্থা গঠনের চেষ্টা করেছেন। রাষ্ট্রনৈতিক ক্ষেত্রে কি ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে এবং কিভাবে তার সমাধান সম্ভব তাও তিনি বিস্তৃতভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।

সমালোচনা (Criticism): আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনার ক্ষেত্রে ইস্টনের ব্যবস্থাজ্ঞাপক তত্ত্ব বিপুল আলোড়নের সৃষ্টি করেছে। কিন্তু এই তত্ত্ব সমালোচকদের আক্রমণ এড়াতে পারেনি। বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গীর পরিপ্রেক্ষিতে এই তত্ত্বের সমালোচনা করা হয়।

(১) বিভিন্ন রাজনীতিক ব্যবস্থার সমস্যা ভিন্ন ভিন্ন। ইস্টনের এই তত্ত্ব অতিমাত্রায় জটিল। তাছাড়া, এর প্রয়োগক্ষেত্রও সীমাবদ্ধ। কারণ ইস্টন একটি সাধারণ তত্ত্বের সাহায্যে বিভিন্ন রাষ্ট্রনৈতিক ব্যবস্থার সাধারণ সমস্যা বিশ্লেষণের কথা বলেছেন। কিন্তু সকল রাষ্ট্রনৈতিক ব্যবস্থার সমস্যার স্বরূপ অভিন্ন হতে পারে না। কারণ রাজনীতিক ব্যবস্থার সমস্যা সামাজিক, অর্থনৈতিক অন্যান্য বহুবিধ বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। তাই সকল দেশের রাজনীতিক ব্যবস্থার সাধারণ সমস্যার কোন নির্দিষ্ট চরিত্র চিত্রিত করা যায় না। সকল দেশের রাজনীতিক ব্যবস্থার সাধারণ সমস্যাসমূহ চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে তিনি একটি সাধারণ তত্ত্ব গঠন করতে উদ্যোগী হয়েছেন। কিন্তু এই উদ্যোগ সফল হতে পারে না।

(২) ইস্টনের তত্ত্ব কোন মৌলিক মতবাদের সন্ধান দেয় না। লিপসন বলেছেন: “System analysis is not so original in what it has to say.” প্লেটো, এ্যারিস্টটল প্রমুখ প্রাচীন গ্রীক দার্শনিকের রচনায়ও এই ধরনের বিশ্লেষণ পদ্ধতি পরিলক্ষিত হয়। তা ছাড়া, এই তত্ত্ব মূলতঃ জীববিজ্ঞানীদের সৃষ্টি।

(৩) রাজনীতিক পরিবর্তন ব্যাখ্যা করা যায় না। ইস্টনের তত্ত্ব আরও একটি কারণে সীমাবদ্ধ। এর দ্বারা রাষ্ট্রনৈতিক পরিবর্তনকে পুরোপুরি বিশ্লেষণ করা অসম্ভব। কারণ তত্ত্বটি এই পরিবর্তনের মৌলিক কোন কারণ নির্দেশ করতে পারেনি। আমূল রাজনীতিক পরিবর্তনের কারণ ইস্টন ব্যাখ্যা করতে পারেন নি। 

(৪) সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনীতিক প্রভৃতি যে সকল কারণে রাষ্ট্রনৈতিক ক্ষেত্রে সংকটের সৃষ্টি হতে পারে, এই তত্ত্বে তাও যথাযথভাবে ব্যাখ্যা করা হয়নি। সংকট নিরসনের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থ সামাজির ব্যবস্থাদির কথাও বিস্তারিতভাবে বলা হয়নি।

(৫) রাষ্ট্রনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে এই অক্ষমতার জন্য তত্ত্বটির বিরুদ্ধে রক্ষণশীলতার অভিযোগও আনা হয়। রাষ্ট্রনৈতিক ক্ষেত্রে কখন কিভাবে সংকট সৃষ্টি হতে পারে এবং কিভাবে সংকট নিরসন করে স্থিতাবস্থা বজায় রাখা যায়, ইস্টন কেবল সেই ব্যাপারেই উৎসাহ দেখিয়েছেন। রাজনীতিক ব্যবস্থার অস্তিত্ব সংরক্ষণই হল তাঁর আসল লক্ষ্য। মাকসবাদী সমালোচকদের মতানুসারে ইস্টনের ব্যবস্থাজ্ঞাপক বিশ্লেষণধারা পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে সংরক্ষণ করতে চায়। শাখনাজারভ (G. Kh. Shakhnazarov) কর্তৃক সম্পাদিত Contemporary Political Science in the U.S.A and Western Europe শীর্ষক গ্রন্থে চিরিকিন (V. Y. Chirkin) মন্তব্য করেছেন : “To preserve the system is Easton’s foremost idea which…menas providing recipes for adapting the capitalist establishment to changing conditions.’ ইস্টন মার্কিন পুঁজিবাদী ব্যবস্থার স্বার্থের অনুকূলেই রাজনীতিক ব্যবস্থার বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন।

(৬) সকল রাষ্ট্রনৈতিক ব্যবস্থা একইরকম হয় না। সমাজ-সংস্কৃতি, অর্থনীতি এবং আরও বহুবিধ কারণে রাষ্ট্রনৈতিক ব্যবস্থা বিভিন্ন ধরনের হওয়াই স্বাভাবিক। এ রকম বিভিন্ন রাষ্ট্রনৈতিক ব্যবস্থা গুণাগুণের ভিত্তিতে তুলনামূলক মূল্যায়ন এই তত্ত্বের দ্বারা সম্ভবপর নয়। অথচ এ ধরনের তুলনামূলক আলোচনার গুরুত্ব ও তাৎপর্যকে অস্বীকার করা যায় না। 

(৭) ডেভিড ইস্টন সাধারণ তত্ত্বে উপনীত হওয়ার উদ্দেশ্যে বিমূর্ত ধারণার উপর অত্যাধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এর ফলে তাঁর মতবাদ তত্ত্বসর্বস্ব ও যান্ত্রিক হয়ে পড়েছে। ওয়াসবি (S. L. Wasby): “Easton has received criticism for the abstract nature of his concepts.” সমালোচকদের মতানুসারে জনসাধারণের রাজনীতিক আচার-আচরণ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে এই দৃষ্টিভঙ্গীর উপযোগিতা নেই বললেই চলে। একটি ধারণাগত কাঠামো (conceptual framework)-র সাহায্যে ইস্টন একটি সাধারণ তত্ত্ব গঠন করতে চেয়েছেন। কিন্তু রাজনীতিক ব্যবস্থার আলোচনা ইস্টনের হাতে একটি বিমূর্ত ব্যবস্থায় (abstract system) পরিণতি লাভ করেছে।

(৮) রাষ্ট্রনৈতিক পরিবেশ বা ব্যবস্থা (system) যে সকল সামাজিক উপ-ব্যবস্থা (sub-system) নিয়ে গঠিত, তাদের পারস্পরিক ক্ষমতার তুলনামূলক আলোচনা এই তত্ত্বে অনুপস্থিত। এই দৃষ্টিভঙ্গী পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত সামাজিক উপ-ব্যবস্থার ভূমিকার সঠিক বিচার বিশ্লেষণ করতে পারেনি। পরিবার, রাজনীতিক দল, স্বার্থগোষ্ঠী প্রভৃতি সামাজিক উপব্যবস্থাগুলিও ব্যবস্থামূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কার্যকর করার ক্ষেত্রে ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে। পরিবার, রাজনীতিক দল, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি ব্যবস্থাও বাধ্যতামূলক প্রকৃতির বহু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং প্রয়োগ করে। সুতরাং বাধ্যতামূলক সিদ্ধান্ত ও প্রয়োগ কেবল রাজনীতির বিষয়বস্তু হতে পারে না।

(৯) অ্যালান বল সাধারণভাবে এই তত্ত্বের সমর্থক হিসাবে পরিচিত। তবে সমালোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন যে, মতবাদটি রাজনীতিক ক্ষমতা সংক্রান্ত ধারণার সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। তিনি বলেছেন: “The approach has been variously criticised for failing to adequately cater for concepts such as political power.”

(১০) ইস্টন উপকরণ ও উপপাদের আলোচনার উপর অত্যাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন; কিন্তু রাজনীতিক কাঠামো ও তার সমস্যাদি সম্পর্কিত আলোচনাকে কার্যতঃ উপেক্ষা করেছেন। তার ফলে মতবাদটি সংকীর্ণ ও সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।

(১১) ইস্টন পরিমাপ, পরিসংখ্যান প্রভৃতি ভৌত বিজ্ঞানের পদ্ধতির উপর পুরোপুরি নির্ভর করেছেন। তিনি একটি অভিজ্ঞতাবাদী তত্ত্ব (empirical theory) গঠন করতে চেয়েছেন। কিন্তু সামাজিক বিজ্ঞান হিসাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনা এভাবে যথার্থ ও সম্পূর্ণ হয় না। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সুষ্ঠু আলোচনার জন্য ঐতিহাসিক পদ্ধতি সমেত আরও অন্যান্য পদ্ধতি অনুসরণ করা দরকার। কিন্তু ইস্টন ঐতিহাসিক পদ্ধতির বিরোধী।

(১২) আপাত বিচারে মনে হয় যে ইস্টনের আলোচনার বিষয়বস্তু হল ব্যক্তি ও তার আচরণ। আসলে ইস্টনের কাছে মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির মিথস্ক্রিয়া (interaction)। তাঁর অভিমত অনুসারে ব্যক্তিবর্গের মধ্যে মিথষ্ক্রিয়া পুরোপুরি অন্য শক্তির প্রভাবে পরিচালিত হয়। ব্যক্তির আচরণ তার সহজাত প্রেরণার দ্বারাও যে প্রভাবিত হয় তা ইস্টন উপেক্ষা করেছেন। ব্যক্তির স্বতন্ত্র সত্ত্বাকে তিনি স্বীকৃতি দেননি। 

(১৩) রাজনীতিকে ইস্টন বস্তু বা মূল্যের কর্তৃত্বসম্পন্ন বরাদ্দ (authoritative allocation of value) হিসাবে দেখিয়েছেন। কার্যক্ষেত্রে সমাজের যে-কোন স্তরে এ রকম কর্তৃত্বসম্পন্ন বরাদ্দ বা বণ্টনের ব্যবস্থা থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে এই সমস্ত ব্যবস্থা থেকে রাজনীতিক ব্যবস্থাকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। বস্তুতঃ অন্যান্য প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে রাজনীতিক প্রতিক্রিয়ার পার্থক্য ইস্টন বিশেষভাবে ব্যাখ্যা করেননি।

মূল্যায়ন: মার্কসবাদী সমালোচকদের মতানুসারে ইস্টনের ব্যবস্থাজ্ঞাপক বিশ্লেষণধারা রাজনীতিক জীবনের বাস্তববাদী বিশ্লেষণের পক্ষে উপযোগী নয়। এ হল এক আনুষ্ঠানিক মডেল বা বিমূর্ত অনুধাবন পদ্ধতি। ইস্টন ও মার্কিন অনুগামীরা ইতিহাসকে উপেক্ষা করে রাজনীতিক ব্যবস্থার পর্যালোচনা করেছেন। তাই এই বিশ্লেষণধারা সামাজিক, রাজনীতিক ও ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার উপর আলোকপাত করতে পারেনি। মার্কসবাদীদের মতানুসারে ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে শ্রেণী সম্পর্কের আলোচনাকে বাদ দিয়ে রাজনীতিক ব্যবস্থা, রাজনীতিক কর্তৃপক্ষ, মূল্যের কর্তৃত্বসম্পন্ন বরাদ্দ প্রভৃতি বিষয়াদির আলোচনা অর্থহীন।

বিভিন্ন বিরূপ সমালোচনা সত্ত্বেও আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অনুশীলনকে অধিকতর বিজ্ঞানসম্মত ও সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে ইস্টনের এই মৌলিক প্রয়াস নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য। ইস্টনের ব্যবস্থাজ্ঞাপক বিশ্লেষণধারা বিশেষভাবে ব্যাপক। এর মধ্যে ছোটখাট বহু মডেল এসে গেছে। আধুনিককালের রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে ইস্টনই প্রথম একটি ব্যাপক তাত্ত্বিক কাঠামো গড়ে তুলেছেন এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনাকে ঐতিহ্যগত দৃষ্টিভঙ্গীর আওতা থেকে মুক্তি দিয়েছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের জন্য তিনি একটি সার্বজনীন বা সাধারণ তত্ত্ব (general theory) প্রস্তুত করেছেন। এই তত্ত্বের সাহায্যে তুলনামূলক রাজনীতিক বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। তা ছাড়া আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ইস্টনের উপকরণ উপপাদ বিশ্লেষণ (Input Output Analysis)-এর তাৎপর্যকে অস্বীকার করা যায় না। সর্বোপরি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় রাষ্ট্রের পরিবর্তে রাজনীতিক ব্যবস্থার উপর গুরুত্ব আরোপ করে ইস্টন একটি বড় কাজ করেছেন। প্রকৃত প্রস্তাবে ডেভিড ইস্টনের ব্যবস্থাজ্ঞাপক বিশ্লেষণ-ধারা হল আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এক আলোড়ন সৃষ্টিকারী অনুধাবন পদ্ধতি।