রাজনীতিক দলের ঐতিহাসিক পটভূমি
দল-ব্যবস্থা বর্তমান প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনব্যবস্থায় একটি অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য। এবং কার্যত রাজনীতিক দলের সাহায্যেই শাসনকার্য পরিচালিত হয়। এই দলীয় রাজনীতির উদ্ভব অপেক্ষাকৃত সাম্প্রতিককালের ঘটনা। জন ব্লণ্ডেল (John Blondel)-এর মতানুসারে দল-ব্যবস্থার আলোচনা এখনও প্রাথমিক পর্যায়েই থেকে গেছে। গণতন্ত্রের সঙ্গে রাজনীতিক দলের উৎপত্তি হলেও দল-ব্যবস্থা সম্পর্কিত আলোচনা বেশী দিনের নয়। প্রাচীনকালে গ্রীস ও রোমে বিভিন্ন বংশ ও গোষ্ঠী রাজনীতিক দলের ভূমিকা গ্রহণ করত। মধ্যযুগে সেই কর্তৃত্ব অভিজাত সম্প্রদায়, পুরোহিত সম্প্রদায়, বণিকশ্রেণী প্রভৃতি সমসাময়িক প্রভাবশালী সম্প্রদায়ের হস্তগত হয়। প্রাচীনকালে গ্রীক নগর রাষ্ট্রে বা রোমের নগর জীবনে অথবা সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীতে শিল্পসমাজে রাজনীতিক দলের উপযোগিতা অনুভূত হয়নি। প্রকৃত প্রস্তাবে রাজনীতিক দলের উদ্ভব ও বিকাশের বিষয়টি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিকাশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। তবে আধুনিক অর্থে রাজনীতিক দলের সৃষ্টি হয় সপ্তদশ শতাব্দীতে ইংল্যাণ্ডে। রানী প্রথম এলিজাবেথের রাজত্বকালে হুইগ (Whig) ও টোরী (Tory)—এই দুটি দলের সৃষ্টি হয়। আধুনিক অর্থে রাজনীতিক দল একটি রাজনীতিক প্রতিষ্ঠান বা যন্ত্র। নির্বাচনে জয়লাভ এবং সরকারি ক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্যে, উপায় হিসাবে রাজনীতিক দল সংগঠিত করা হয়। এই উদ্দেশ্যে রাজনীতিক দলের আবির্ভাব ঘটেছে ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে। বর্তমানে রাজনীতিক দলব্যবস্থা কার্যত একটি সর্বজনীন ব্যবস্থা। কেবলমাত্র একনায়তান্ত্রিক ও সামরিক শাসনের কথা বাদ দিলে বাদবাকি দুনিয়ার সর্বত্রই রাজনীতিক দলের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। আর বর্তমানে দলব্যবস্থা হল গণতন্ত্রের প্রাণস্বরূপ। রাজনীতিক দল সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মতভাবে আলোচনা শুরু হয়েছে বর্তমান শতাব্দীর পঞ্চম দশক থেকে। রাজনীতিক দল নিয়ে যে শাস্ত্র আলোচনা করে তা ‘Stasiology’ নামে পরিচিত। এই শব্দটির সৃষ্টি হয়েছে ‘stasis’ নামক একটি গ্রীক শব্দ থেকে। এই ‘স্ট্যাসিস’ (stasis) শব্দের অর্থ হল বিরোধিতার মনোভাব। যাইহোক বর্তমান দল-ব্যবস্থা হল গণতন্ত্রের প্রাণস্বরূপ।
রাজনীতিক দলের অপরিহার্যতা অনস্বীকার্য
এখন অধিকাংশ দেশেই প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পরিলক্ষিত হয়। এই ধরনের রাজনীতিক ব্যবস্থায় রাজনীতিক দলের অস্তিত্ব অপরিহার্য। এ বিষয়ে দ্বি-মতের অবকাশ নেই। বিভিন্ন ধরনের রাজনীতিক ব্যবস্থায় আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন ধরনের। এই কারণে বিভিন্ন দেশে রাজনীতিক দল-ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়। Modern Politics and Government শীর্ষক গ্রন্থে অ্যালান বল বলেছেন: “Political parties exist in differing forms in various political systems, and while not essential to the political process, it is difficult to imagine the political consequences of their absence in the vast majority of states.” আধুনিক রাজনীতিক ক্রিয়াকর্ম সম্পাদনের ক্ষেত্রে রাজনীতিক দলের ভূমিকা অপরিহার্য এবং এই ভূমিকার মৌলিকত্ব ও তাৎপর্য সর্বজনস্বীকৃত। আধুনিক রাজনীতির একটি বৃহৎ সাংগঠনিক নীতি হল রাজনীতিক দল। রাজনীতিক দল একদিকে হল গণতন্ত্রের একটি বৃহৎ হাতিয়ার; আবার অন্যদিকে এই দলই হল স্বৈরাচার ও পীড়নের অন্যতম উৎস। প্রকৃতি বা ভূমিকাগত বিচারে যাইহোক না কেন, সরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠী ও স্বার্থসমূহের মধ্যে এবং রাষ্ট্র ও নাগরিক সমাজের মধ্যে অর্থবহ সংযোগ হল রাজনীতিক দল।
যাইহোক যে-কোন রাষ্ট্রে রাজনীতিক দল হল বিদ্যমান রাজনীতিক কাঠামোর একটি অংশ। তাই রাজনীতিক ব্যবস্থার অস্তিত্ব পরিবর্তনের সঙ্গে রাজনীতিক দল ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কযুক্ত। উদারনীতিক ও সমাজতান্ত্রিক নির্বিশেষে সাম্প্রতিককালে রাজনীতিক জীবনের একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে রাজনীতিক দলের কার্যকলাপ সম্প্রসারিত।
ভূমিকার গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা সত্ত্বেও রাজনীতিক দল ও দলব্যবস্থা বর্তমানে ক্রমবর্ধমানভাবে বিরূপ সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছে। দলব্যবস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ বহু ও বিভিন্ন। আধুনিক কালের সমাজব্যবস্থায় ব্যক্তিবর্গের আশা-আকাঙ্খায় নতুনত্ব ও বৈচিত্র্য ব্যাপক। এ সবের গ্রন্থীবদ্ধকরণের ব্যাপারে রাজনীতিক দলের ভূমিকা আশাপ্রদ নয়। এখনকার জটিল সমাজব্যবস্থায় মানুষজদের সমস্যাদিও গুরুতর প্রকৃতির। এ সবের সমাধানের ব্যাপারেও রাজনীতিক দলের উদ্যোগ-আয়োজন অশানুরূপ নয়।
রাজনীতিক দলের সংজ্ঞা
রাজনীতিক দলের সংজ্ঞায় বার্ক, বার্কার, ম্যাকাইভার, মেরিয়াম:
বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রাজনীতিক দলের বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন। বেশ কিছু সংখ্যক ব্যক্তি যদি রাষ্ট্রের সামাজিক, রাজনীতিক প্রভৃতি বিশেষ সমস্যা সংক্রান্ত কতকগুলি মূল বিষয়ে সমমতাবলম্বী হয় এবং মতাদর্শের মূলগত ঐক্যের ভিত্তিতে দেশের উন্নতি বিধানের জন্য শাসন পরিচালনার উদ্দেশ্যে সংঘবদ্ধভাবে প্রচারকার্য চালিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকারী ক্ষমতা দখল করতে চেষ্টা করে তবে সেই সংঘবদ্ধ ব্যক্তিদের রাজনীতিক দল বলে। এডমণ্ড বার্ক (Edmund Burke) বলেছেন: ‘কতকগুলি নির্দিষ্ট নীতির ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থ সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে সম্মিলিত জনসমষ্টিকে রাজনীতিক দল বলা হয়। তাঁর কথায়: “Party is a body of men united for promoting, by their joint endeavours the national interest upon some particu lar principle in which they are all agreed.” বার্কার (Barker) ও অনুরূপ মত পোষণ করেন। তাঁর মতানুসারে, ‘বিভিন্ন মতবাদের দ্বারা পরিচালিত হলেও সকল রাজনীতিক দলই জাতীয় স্বার্থের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে সমগ্র জাতির সাধারণ স্বার্থ সম্পর্কিত বিষয়ে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণের দ্বারা নির্বাচকমণ্ডলীর সমর্থন পেতে সচেষ্ট হয়। Principle of Social and Political Theories শীর্ষক গ্রন্থে বার্কার বলেছেন: “A party is a particular body of opinion (otherwise it would not be a party), which is none the less concerned with the general national interest and which forms, and presents to the choice of the electorate a programme of general national scope and width.” রাজনীতিক দলের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে ম্যাকাইভার বলেন যে, নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে কোন সংঘবদ্ধ জনসমাজ বৈধ উপায়ে শাসন ক্ষমতা দখল করতে চেষ্টা করলে তাকে রাজনীতিক দল বলে। তিনি বলেছেন: “We may define a political party as an association organised in support of some principle or policy which by constitutional means endeavours to make the determinant Government.” Power and Society শীর্ষক গ্রন্থে মেরিয়াম (Charles Merriam) স্বার্থের দিক থেকে রাজনীতিক দলের সংজ্ঞা দিয়েছেন। তাঁর অভিমত অনুসারে রাজনীতিক দলের বিস্তৃত ভিত্তি হল ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থ, সাধারণত গোষ্ঠীগত স্বার্থসমূহ। সরকারের রাজনীতিক প্রক্রিয়া পদ্ধতির মাধ্যমে এই স্বার্থের কাজকর্ম পরিচালিত হয়। এই সমস্ত স্বার্থ বিশেষ ধরনের সামাজিক নিয়ন্ত্রণে পরিণত হতে চায়।
রাজনীতিক দলের আলোচনায় লাসওয়েল, নিউম্যান, সুলন্জ ও দ্যুভারজার:
আধুনিক লেখকদের মধ্যে লাসওয়েল (Laswell)-এর মতানুসারে, রাজনীতিক দল হল এমন একটি সংগঠন যা নির্বাচনের কর্মসূচী স্থির করে এবং প্রার্থী দাঁড় করায়। নিউম্যান (Franz Neumann) বলেন যে, “রাজনীতিক দল হল রাজনীতিকভাবে সচেতন মানবসমাজের একটি নির্দিষ্ট অংশের এমন এক সক্রিয় সংগঠন যা স্বতন্ত্র মতাদর্শে বিশ্বাসী অপরাপর রাজনীতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে জনসমর্থন আদায়ের মাধ্যমে সরকারী ক্ষমতা অধিকারের চেষ্টা করে।” The Democratic and the Authoritarian State গ্রন্থে ফ্রানজ্ নিউম্যান বলেছেন: “…most important instrument for the translation for social power is the political party.” সুল (E. B. Schulz)-এর অভিমত অনুসারে, “ব্যক্তিবর্গের বা নির্দিষ্ট স্বার্থগোষ্ঠীর একটি স্থায়ী ও সুসংহত সংগঠনই হল রাজনীতিক দল, যার লক্ষ্য হল সদস্যদের সরকারী ক্ষমতায় আসীন করে বাঞ্ছিত নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবে রূপায়ণ”। Political Parties the organisation and Activity in the Modern State শীর্ষক গ্রন্থে মরিস দ্যুভারজার (Maurice Duverger) এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, ‘রাজনীতিক দল হল নির্দিষ্ট কাঠামোযুক্ত একটি সংঘ।’ তিনি বলেছেন: “A Party is a community with a particular structure.”
অ্যালান বল প্রদত্ত সংজ্ঞা সহজ ও সরল। বলের মতানুসারে কোন জনসংগঠন এককভাবে বা অন্যান্য দলের সঙ্গে একযোগে রাজনীতিক ক্ষমতা দখল করতে এবং তা বজায় রাখতে সচেষ্ট হলে তাকে রাজনীতিক দল বলে। তিনি Modern Politics and Government শীর্ষক গ্রন্থে বলেছেন: “Political party may be principally defined by their common aim. They seek political power either singly or in co-operation with other political parties.” বল আরও বলেছেন: “As Joseph Schumpeter has observed: ‘The first and foremost aim of each political party is to prevail over the others in order to get into power to stay in it.’ It is this goal of attaining political power that distinguishes political parties from other groups in the political system….” কার্টার এবং হার্জ (G. M. Carter and J. H. Herz) ও ক্ষমতার দৃষ্টিকোণ থেকে রাজনীতিক দলের সংজ্ঞা নির্দেশ করেছেন। তাঁদের অভিমত অনুসারে রাজনীতিক দল হল রাজনীতিক ক্ষমতা লাভের একটি মাধ্যম বিশেষ। ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর রাজনীতিক ক্ষমতা অর্জনের উপায় হিসাবে দল কাজ করে। ক্ষমতা দখলের উদ্যোগ সফল হলে সেই রাজনীতিক ক্ষমতা তারা প্রয়োগ করে।
উপরিউক্ত সংজ্ঞাসমূহ বিচার-বিশ্লেষণ করে সহজভাবে বলা যেতে পারে যে, রাজনীতিক দল বলতে একই রাজনীতিক আদর্শে বিশ্বাসী এমন একদল নাগরিককে বোঝায় যারা সংঘবদ্ধ হয়ে রাজনীতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য শাসনতান্ত্রিক উপায়ে সরকার দখল করার চেষ্টা করে।
রাজনীতিক দলের আলোচনায় মার্কসীয় ধারণা:
মার্কসবাদী চিন্তাবিদ্গণ ভিন্নভাবে রাজনীতিক দলের আলোচনা করেন। মার্কসবাদীদের অভিমত অনুসারে রাজনীতিক দল হল একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় রাজনীতিক কাঠামো। দলের আর্থ-সামাজিক ও শ্রেণীগত চরিত্র এবং তার মতাদর্শের উপর মার্কসবাদীরা গুরুত্ব আরোপ করেন। তাঁদের মতানুসারে আর্থনীতিক স্বার্থের ভিত্তিতেই শ্রেণী-সংগ্রামের সৃষ্টি হয়। শ্রেণী-বিভক্ত সমাজে আর্থনীতিক স্বার্থের ভিত্তিতেই শ্রেণী-স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য রাজনীতিক দলের উৎপত্তি ও প্রতিষ্ঠা হয়। শ্ৰেণী-সংগ্রামের পরিপ্রেক্ষিতে লেনিন (V.I. Lenin) রাজনীতিক দলের সংজ্ঞা দিয়েছেন। তাঁর অভিমত অনুসারে শ্রেণীসমূহের রাজনীতিক সংগ্রামের সর্বাধিক উদ্দেশ্যযুক্ত সব থেকে ব্যাপক ও সুনির্দিষ্ট প্রকাশ হল রাজনীতিক দলের সংগ্রাম। তিনি বলেছেন: “The most purposeful, most comprehensive and specific expression of the political struggle of classes is the struggle of parties.” শ্রেণীগত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে রাজনীতিক দল হল একটি শ্রেণীর সচেতন অংশের রাজনীতিক সংগঠন। বৈষম্যমূলক সমাজ-ব্যবস্থায় বিভিন্ন শ্রেণী ও স্বার্থ বর্তমান থাকে। এই কারণে এই ধরনের সমাজব্যবস্থায় দলের সৃষ্টি হয়। তবে সমাজতান্ত্রিক সমাজে শ্রেণী বৈষম্য বা শ্রেণী-শোষণ থাকে না। এখানে সর্বহারা শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষার জন্য একটি মাত্র রাজনীতিক দলের অস্তিত্বই যথেষ্ট। এই একমাত্র দলটি হল কমিউনিস্ট দল।
চক্রীদল: সুতরাং জাতীয় স্বার্থে উদ্বুদ্ধ এবং জাতীয় স্বার্থ সাধনে ব্রতী দলই রাজনীতিক দল হিসাবে গণ্য হতে পারে। এর ব্যত্যয় ঘটলে তাকে চক্রীদল (faction) বলে। দেশের সাধারণ স্বার্থের পরিবর্তে সংকীর্ণ ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থ সিদ্ধির জন্য সম্মিলিত ব্যক্তিদের চক্রীদল বা উপদলীয় চক্র বলা হয়। আবার রাজনীতিক দল হিসাবে গঠিত হওয়ার পর তা চক্রীদলে রূপান্তরিত হতে পারে। যদি বৃহত্তর স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে সেই দল সংকীর্ণ নীতির দ্বারা প্ররোচিত হয় এবং সংকীর্ণ স্বার্থ সাধনে প্রবৃত্ত হয় তাহলে তা চক্রীদলে রূপান্তরিত হয়। তা ছাড়া, বড় বড় রাজনীতিক দলে উপদলীয় চক্র বাসা বাঁধতে পারে।
রাজনীতিক দলের বৈশিষ্ট্য
উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতিক দলের কতকগুলি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়।
(১) সম মতাদর্শে অনুপ্রাণিত, ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত ব্যক্তিদের নিয়ে রাজনীতিক দল গঠিত হয়। তবে বিস্তারিত কার্যক্রম প্রসঙ্গে দলের সদস্যদের মধ্যে মতভেদ থাকতে পারে। কিন্তু মতাদর্শের মূলগত ঐক্য বর্তমান থাকে।
(২) প্রত্যেক রাজনীতিক দলের নির্দিষ্ট কর্মসূচী থাকে। এই কর্মসূচীকে বাস্তবে রূপায়িত করার জন্য দলগুলি নিয়মতান্ত্রিক এবং সংবিধানসম্মত পদ্ধতিতে অগ্রসর হয়।
(৩) রাজনীতিক দল মাত্রেই জাতীয় স্বার্থের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়। প্রত্যেক দল সমগ্র জাতির সাধারণ স্বার্থসাধনে আত্মনিয়োগ করে। অন্যথায় তা চক্রীদলে পরিণত হয়।
(৪) দেশ ও দেশবাসীর সমসাময়িক সমস্যাদি সম্পর্কে অবিরত আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দলমাত্রেই নিজ মতাদর্শের অনুকূলে জনমত গঠনের চেষ্টা করে।
(৫) প্রত্যেক রাজনীতিক দলের চূড়ান্ত লক্ষ্য হল জনসমর্থনের ভিত্তিতে নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করা এবং শাসনকার্য পরিচালনার মাধ্যমে দলীয় আদর্শ ও উদ্দেশ্যকে কার্যকর করা। এই কারণে কোন বিশেষ সামাজিক, আর্থনীতিক বা অন্য কোন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য যে সব সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়, সেগুলিকে রাজনীতিক দল বলা হয় না। যোসেফ স্যুমপিটার (Joseph Schumpeter) বলেছেন: “The first and foremost aim of each political party is to prevail over the others in order to get into power or to stay in it.”
(৬) কেবল নাগরিকগণই রাজনীতিক দল গঠন করতে পারেন; বিদেশীগণ পারেন না। জাতি, ধর্ম, আর্থনীতিক স্বার্থ এবং কর্মপন্থার বিভিন্নতা হেতু বিভিন্ন রাজনীতিক দলের সৃষ্টি হয়ে থাকে।
Leave a comment