রচনা বাংলাদেশের ফুটবল

ভূমিকাঃ 

ফুটবল বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় খেলা। কয়েক দশক আগেও বাংলাদেশের গ্রামে, গঞ্জে, শহরে সর্বত্র ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতো। এর প্রতি মানুষের আগ্রহের মাত্রা বোঝা যায় বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু হলে। তখন দেশের বিভিন্ন জায়গায় চূড়ান্ত পর্বে উন্নীত দেশগুলোর পতাকা উড়তে দেখা যায়। অনেকের গায়ে দেখা যায় পছন্দের দলের জার্সি। ফুটবলের প্রতি এ দেশের মানুষের ভালোবাসা ক্রমে এই খেলার প্রতি তাদের আগ্রহ আরও বাড়িয়ে তুলছে। ছড়ায় ছড়ায় বলা যায়-
ফুটবল গুডবল বলে ভাই লোকেরে
কেউ হারে কেউ জেতে কেউ কাঁদে শোকেরে।
শোক পেয়ে তবু দেখে বয়ে যায় বেলারে
কাজ ফেলে দিন-রাত তবু দেখে খেলারে ।

আধুনিক ফুটবলের ইতিহাস

প্রতি দলে এগারো জন করে দুটি দলে ভাগ হয়ে ফুটবল খেলতে হয়। একটি বায়ুপূর্ণ চামড়ার বলকে হাত ও বাহু ছাড়া শরীরের যেকোনো অংশ দিয়ে প্রতিপক্ষের গোলপোস্টের মধ্যে প্রবেশ করাতে হয়। পৃথিবীতে ফুটবল ধরনের বেশ কয়েকটি খেলা প্রচলিত আছে। যেমন, রাগবি অনেকটা ফুটবল খেলার মতো। তবে এখন ফুটবলের যে রূপটি দেখা যায়, তা ১৮৬৩ সালে প্রবর্তিত। মূলত এ সময়ে ইংল্যান্ডে ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হয় এবং তারা ফুটবল খেলার কতকগুলো নিয়ম জারি করে।
এই নতুন নিয়মের ফুটবল খেলা দ্রুত অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এজন্য ইংল্যান্ডকে আধুনিক ফুটবলের জনক বলা হয়। ইংল্যান্ডের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক প্রবর্তিত হওয়ায় ফুটবলের আরেক নাম ‘অ্যাসোসিয়েশন ফুটবল’ আমেরিকায় একে বলা হয় ‘সসার’ বা ‘সকার’। এটিকে অ্যাসোসিয়েশন শব্দের বিকৃত রূপ বলে মনে করা হয়। রাগবি ফুটবল কেবল রাগবি নামে অধিক পরিচিত হওয়ায় অ্যাসোসিয়েশন ফুটবল শুধু ‘ফুটবল’ নামে জনপ্রিয়তা লাভ করে।
বাংলাদেশে ফুটবল বলতে অ্যাসোসিয়েশন ফুটবলকেই বোঝায়। ফুটবল বিশ্বজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে উনিশ শতকের গোড়ার দিকে। ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দে ২১শে মে প্যারিসে গঠিত হয় ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনালে ডি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (ফিফা)। সংস্থাটি প্রথম বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজন করে ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে। প্রথম বিশ্বকাপ আসরে শিরোপা অর্জন করে উরুগুয়ে। বর্তমানে ফিফার সদস্য সংখ্যা ২১১।

বাংলাদেশে ফুটবলের যাত্রা

ব্রিটিশদের মাধ্যমে সর্বপ্রথম ভারতীয় উপমহাদেশে ফুটবল খেলার আগমন হয়। এরপর বিভিন্ন মানুষ যেমন ইংরেজ বণিক, খেলোয়াড় ও সৈনিকরা ফুটবল খেলত। এ সকল লোকদের মধ্যে দিয়েই উপমহাদেশে ফুটবল খেলা এত পরিচিতি লাভ করে। বাংলাদেশে উনিশ শতকের শেষভাগ থেকে ফুটবল বেশ জনপ্রিয়তা পায়।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্ত হওয়ার পর পর ১৯৪৮ সাল থেকে ঢাকা লিগ পাকিস্তানে ফুটবলের মূল আকর্ষণ হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৭১ সালের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে ভিক্টোরিয়া স্পোর্টি ক্লাব, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, ওয়ারি ক্লাব, আবাহনী ক্রীড়াচক্র, শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র প্রভৃতি ক্লাব বাংলাদেশে লিগ খেলাকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে নিয়ে যায়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে বাংলাদেশে ফুটবল একটি নতুন মাত্রায় আবির্ভূত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে বিশ্বকে অবগত করতে তখন গঠিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল’। তারা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে মোট ১৬টি ম্যাচ খেলেছিল। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরপরই ১৯৭২ সালে ঢাকায় ফুটবল লিগ শুরু করে। ১৯৭৩ সাল থেকে শুরু হয় জাতীয় ফুটবল। এক বছর পর থেকেই অর্থাৎ ১৯৭৪ সাল থেকে খুব ফুটবল যাত্রা শুরু করে। ফেডারেশন কাপ শুরু হয় ১৯৮০ সাল থেকে। বর্তমানে বাংলাদেশে নিম্নোক্ত ঘরোয়া টুর্নামেন্টগুলো চালু রয়েছে-
  • বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগঃ এটি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) কর্তৃক আয়োজিত একটি টুর্নামেন্ট। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ শুরু হয় ২০০৭ সালে।
  • বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স লিগঃ এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় শ্রেণির ফুটবল লিগ। ২০১২ সালে এটি যাত্রা করে।
  • ফেডারেশন কাপঃ এটি বাংলাদেশের প্রিমিয়ার নকআউট প্রতিযোগিতা। ১৯৮০ সাল থেকে এটি আয়োজিত হয়।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন

বাংলাদেশ জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট আয়োজন, খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ ও পরিচর্যা, জাতীয় দল গঠন ও নিয়ন্ত্রণ তথা ফুটবলের যাবতীয় উন্নয়নে কাজ করে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭২ সালে। বাফুফে বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল দল ও বাংলাদেশ মহিলা জাতীয় ফুটবল দলকে তত্ত্বাবধান করে।

অন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ ফুটবল

বাফুফে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে এএফসি (এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন), ৯১৭৬ সালে ফিফা (ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনালে ডি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন) ও ১৯৯৭ সালে সাফ (সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন) বাংলাদেশকে সদস্য করে। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল ১৯৭৩ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে। ১৯৮০ সালে ‘এএফসি এশিয়া কাপ টুর্নামেন্টে এবং ১৯৮৬ সালে ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে অংশ নেয়। ফুটবলে বাংলাদেশের গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হয় ২০০৩ সালে। ওই বছরই বাংলাদেশ প্রথম সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়। এছাড়া ২০১৯ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন গোল্ডকাপ-এ চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ।

স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশ একটি ফুটবল দল সংগঠিত হয় এই দলটি স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল নামে পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জন্মতর্জন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স্থানে ফুটবল খেলায় স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলটি অংশ নিয়েছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে যুদ্ধকালীন প্রথম ফুটবল দল এটি।

বাংলাদেশ মহিলা জাতীয় ফুটবল দল

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল কমিটি। বাংলাদেশ মহিলা জাতীয় ফুটবল দল এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের সদস্য। ২০১০ সালের ২৯শে জানুয়ারি দলটি সাউথ এশিয়ান ফেডারেশন গেমস-এ নেপালের বিপক্ষে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে। বাংলাদেশ মহিলা জাতীয় ফুটবল দল ২০১০ সালের সাফ উইমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপে কক্সবাজারে ভুটানের বিপক্ষে ৯-০ ব্যবধানে এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে জয়লাভ করে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক নারী ফুটবল দল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে। এক্ষেত্রে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের মেয়েরা বড়ো ভূমিকা রাখছে। তাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হচ্ছে বাংলাদেশের সব অঞ্চলের মেয়েরা।

বিদেশি লিগে উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড়

আনোয়ার উদ্দিন ইংল্যান্ডের প্রিমিয়ার লিগে খেলতে দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত প্রথম খেলোয়াড়। শাহেদ আহমেদ (স্পোর্টিং বেঙ্গল ইউনাইটেড) সাবেক ওয়াইকম্ব ওয়েল্ডার্স প্লেয়ার।

ফুটবল খেলার মাঠ

স্থানীয় মাঠ ছাড়াও বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি উন্নতমানের ফুটবল মাঠ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম ও বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম, চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম, সিলেট জেলা স্টেডিয়াম, যশোরের শামসুল হুদা স্টেডিয়াম, রাজশাহী জেলা স্টেডিয়াম, শহিদ কামারুজ্জামান স্টেডিয়াম, গোপালগঞ্জের শেখ ফজলুল হক মনি স্টেডিয়াম, ফেনীর শহিদ সালাম স্টেডিয়াম, ময়মনসিংহ জেলার ময়মনসিংহ স্টেডিয়াম উল্লেখ্যযোগ্য।

উপসংহারঃ বাংলাদেশের ফুটবল রচনা

ফুটবল বিশ্বের জনপ্রিয়তম খেলা। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনেও ফুটবলের জনপ্রিয়তা কম নয়। তবে বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের জন্য জাতীয় ফুটবল দল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য নিয়ে আসতে পারেনি। এক সময়ে ঘরোয়া ফুটবল সারা বাংলাদেশে যে উচ্ছ্বাস সৃষ্টি করতে পারত, তাও এখন আবেদন হারিয়েছে। বয়ষভিত্তিক ফুটবল দলগুলো মাঝে মাঝে যে সাফল্য দেখাচ্ছে, তা আবার হারিয়ে যাচ্ছে। ফুটবলে গৌরব ফিরিয়ে আনতে সরকার কার্যকর নীতিমালা, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও পরিচর্যা। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকায়ও সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়ের সন্ধান অব্যাহত রাখা উচিত।
ফুটবল নিয়ে যাতে আজ সারা বিশ্ব,
আমাদের ছেলেগুলো কেন আজও নিঃস্ব?
কোন সালে ওয়ার্ল্ডে কাপে তারা ঘুরে দাঁড়াবে?
আমাদের পতাকাও আনন্দ ছড়াবে।
সূত্রঃ রচনাটি ডঃ হায়াৎ মাহমুদ এবং ডঃ মুহাম্মদ আমীন এর লেখা পুস্তক থেকে সংগৃহীত

ফুটবল খেলা রচনা

(সংকেত: ভূমিকা; ফুটবল খেলার ইতিহাস; বিশ্বব্যাপী ফুটবল খেলার সম্প্রসারণ; মাঠের বর্ণনা ও খেলোয়াড়; ফুটবল খেলার পদ্ধতি; খেলার আইন কানুন; ফুটবল ও বাংলাদেশ; বিশ্ব ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা (ফিফা); ফুটবল বিশ্বকাপ; ফুটবল খেলার উপকারিতা; বিশ্বের শীর্ষ ফুটবল তারকা ও ক্লাবসমূহ; উপসংহার।)
ভূমিকা:
মানব মনের প্রশান্তি ও আনন্দদানের জন্য বর্তমান বিশ্বে যত খেলাধূলা প্রচলিত আছে তাদের মধ্যে ফুটবল খেলা অন্যতম। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হলো ফুটবল। ফুটবল খেলার জন্ম চীনে হলেও জনপ্রিয়তার কারণে এটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতি চার বছর পর পর আয়োজন করা হয় বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা। ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশেই ফুটবল জাতীয় খেলার মর্যাদা লাভ করেছে। আমাদের বাংলাদেশের সর্বত্রই এই খেলার প্রচলন ও জনপ্রিয়তা দেখা যায়।
ফুটবল খেলার ইতিহাস:
ফুটবল একটি সুপ্রাচীন খেলা। সর্বপ্রথম চীন দেশে ফুটবল খেলার জন্ম হয়। ফুটবল খেলা ‘সকার’ নামেও পরিচিত। তবে আধুনিক ফুটবল খেলার প্রচলন ঘটে ইংল্যান্ডে। অতপর খেলাটি খুব দ্রুতই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে।
বিশ্বব্যাপী ফুটবল খেলার সম্প্রসারণ:
ফুটবল আজ শুধু ইউরোপ আমেরিকা নয়, এটি সারা পৃথিবীব্যাপী সম্প্রসারিত হয়েছে। আমাদের স্কুল-কলেজে, মাঠে-ময়দানে, অলিতে গলিতে আজ ফুটবল খেলা হচ্ছে। গ্রাম থেকে শহরে সারাদেশ জুড়ে সবাই ফুটবল নিয়ে মেতে আছে। বর্তমান বিশ্বের এমন কোনো দেশ নেই যেখানে ফুটবল খেলা হয় না। ছোট বড় সবাই ফুটবল খেলা যেমন বুঝতে পারে তেমনি খেলা দেখে বা খেলে গ্রহণ করে অপার আনন্দ। ফুটবলের প্রভাব আজ বিশ্বব্যাপী লক্ষণীয়।
মাঠের বর্ণনা ও খেলোয়াড়:
ফুটবল খেলার জন্য ১০০-১২০ গজ দীর্ঘ এবং ৫০-৫৬ গজ প্রস্থ একটি সমতল মাঠের প্রয়োজন। মাঠের দুই প্রান্তে দু’টি করে গোলপোস্ট থাকে। প্রতিটি গোলপোস্ট এর উচ্চতা ৮ ফুট এবং একটি বার বা খুঁটির অপরটি থেকে ৮ গজ দূরে অবস্থিত। একটি আদর্শ ফুটবলের ওজন সাধারণত ১৪-১৬ আউন্স হয়ে থাকে। ফুটবল খেলার জন্য মোট ২২ জন খেলোয়াড় প্রয়োজন হয়, যারা প্রতি দলে ১১ জন করে বিভক্ত হয়ে খেলে থাকে। খেলা পরিচালনার জন্য একজন প্রধান রেফারি ও তাকে সাহায্যের জন্য দু’ জন লাইন্সম্যান থাকে।
ফুটবল খেলার পদ্ধতি:
খেলার জন্য মাঠের মধ্যস্থলে দুই দল মুখোমুখি অবস্থান করে। রেফারি বাঁশিতে ফুঁ দেওয়ার সাথে সাথে খেলা শুরু হয় এবং প্রত্যেক খেলোয়াড় নিজের অবস্থানে চলে যায়। সাধারণত ১১ জন খেলোয়াড়ের পাঁচ জন সামনের ভাগে দাঁড়ায় যাদেরকে বলে ফরোয়ার্ড, তাদের পিছনে ৩ জন থাকে মিডফিল্ডার বা হাফ ব্যাক, তাদের পিছনে দু’ জন থাকে ডিফেন্স বা ফুল ব্যাক আর গোলবারের সামনে থাকে একজন গোলরক্ষক, যিনি সর্বাঙ্গ দিয়ে বলকে গোল হওয়া থেকে রক্ষা করেন। মাঝের বিরতি ছাড়া ৪৫ মিনিট করে মোট ৯০ মিনিট হলো একটি ফুটবল ম্যাচের ব্যপ্তি।
খেলার আাইন কানুন:
অন্যান্য খেলার ন্যায় ফুটবল খেলার নির্দিষ্ট কতকগুলো আইন-কানুন আছে। এসব নিয়মনীতি সবই ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা কর্তৃক প্রণীত। যেমন প্রথমে বলটি মাঠের মধ্যস্থলে রাখতে হবে। রেফারি বাঁশি বাজানোর সাথে সাথে খেলা শুরু করতে হবে। একমাত্র গোলরক্ষক ছাড়া অন্য কেউ বল হাত দিয়ে ধরতে বা মারতে পারবে না। এ নিয়ম না মানলে হ্যান্ডবল হয় এবং বিপক্ষ দলের দিকে বল ফ্রি কিক মারা হয়। অবৈধভাবে কাউকে লাথি বা ধাক্কা মারা যাবে না, মারলে রেফারি শাস্তি স্বরূপ উক্ত খেলোয়াড়কে লাল বা হলুদ কার্ড দেখিয়ে শাস্তি দেন। লাল কার্ড পেলে ঐ খেলোয়াড় আর খেলতে পারেন না। ১৯৮৪ সাল থেকে এ কার্ড দেখানোর নিয়ম প্রচলিত হয়। এ ছাড়া খেলোয়াড়দের সহজেই চিনতে ১৯৩৫ সাল থেকে জার্সি নাম্বার চালু হয়।
ফুটবল ও বাংলাদেশ:
বিদেশি খেলা হলেও ফুটবল খেলা বাংলাদেশের প্রায় সব শ্রেণি পেশার লোকই বুঝতে সক্ষম বলে এ খেলার জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশ্বকাপ এলেই সারাদেশ জুড়ে শুরু হয় ফুটবল উন্মাদনা। পতাকা টানিয়ে বা সমর্থিত দলের জার্সি গায়ে দিয়ে দলের প্রতি নিজেদের ভালোবাসা প্রকাশ করে বাঙালিরা। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ ফিফার সদস্যপদ লাভ করে। বাংলাদেশ প্রতিবারই বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে অংশ নেয়। যদিও বাংলাদেশ কোনো বারই বিশ্বকাপে অংশ নিতে পারেনি, তথাপি ২০০৩ সালে বাংলাদেশ সাফ গেমস্ এ মালদ্বীপকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। এছাড়া ১৯৯৯, ২০১০ সালে বাংলাদেশ S.A গেম্সে চ্যাম্পিয়ন হয়ে স্বর্ণপদক লাভ করে। জাতীয়ভাবে বাংলাদেশ ফুটবলের অগ্রগতির জন্য ১৯৯৬ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের আয়োজন করে। আবাহনী, ফেনী সকার ক্লাব, শেখ জামাল, মোহামেডান বাংলাদেশের অন্যতম ফুটবল ক্লাব।
বিশ্ব ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা (ফিফা):
বিশ্বব্যাপী ফুটবল খেলার আইন-কানুন প্রচলন ও নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় FIFA (Federation of International Football Association). ২১ মে, ১৯০৪ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে প্রতিষ্ঠা লাভ করে সংস্থাটি। বর্তমানে সুইজারল্যান্ডের জুরিখে এটির সদরদপ্তর। ফিফা এর বর্তমান সভাপতি সেপ ব্লাটার। ফিফার বর্তমান সদস্য ২০৯টি। এ সংস্থা প্রতি ৪ বছর পর পর আয়োজন করে বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা। পুরুষদের ন্যায় নারীদের ফুটবল বিশ্বকাপেরও প্রতিনিধিত্ব করে এ সংস্থা। প্রতিবছর এ সংস্থা বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচন ও দলগত র‌্যাংকিং করে থাকে।
ফুটবল বিশ্বকাপ:
ফুটবল খেলার ইতিহাস দীর্ঘদিনের হলেও বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা প্রথম অনুষ্ঠিত হয় ১৯৩০ সালে উরুগুয়েতে। বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা ফিফার অধীনে প্রতি ৪ বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয়। শুরুতে বিশ্বকাপ ফুটবলের ট্রফির নাম ছিল জুলেরিমে কাপ। ১৯৭৪ সালে এ ট্রফির নাম হয় ফিফা বিশ্বকাপ। ২০১৪ সালে ব্রাজিলে হয়েছে বিশ্বকাপ ফুটবলের ২০তম আসর। এ আসরে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে জার্মানি। তবে বিশ্বকাপ ফুটবলে সবচেয়ে বেশি ৫ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ব্রাজিল। বিশ্বকাপ ফুটবলে সেরা খেলোয়াড়কে গোল্ডেন বল এবং সর্বোচ্চ গোলদাতাকে গোল্ডেন বুট সম্মাননা দেওয়া হয়। বিশ্বকাপ ফুটবলের ২১তম আসর হবে রাশিয়ায় এবং ২০২২ সালের ২২তম আসর হবে কাতারে।
ফুটবল খেলার উপকারিতা:
ফুটবল খেলা শুধু খেলা নয়, এটির মাধ্যমে যেমন আনন্দ-বিনোদন পাওয়া যায়, তেমনি এ খেলার মাধ্যমে শারীরিক ব্যায়ামও হয়ে থাকে। তাছাড়া ফুটবল খেলা আজ বিশ্বব্যাপী বিশাল লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। ইউরোপ আমেরিকার ফুটবল ক্লাবগুলো ফুটবল বাণিজ্যের অন্যতম উদাহরণ। ফুটবল খেলার মাধ্যমে যেমন মানসিক অবসাদ দূর হয় তেমনি এর উত্তেজনা-উপভোগ মনকে আনন্দে ভাসিয়ে দেয়। ফুটবল খেলতে যথেষ্ট ছুটাছুটি ও পরিশ্রম করতে হয় বলে শরীর সর্বদাই ফিট থাকে। খেলার কঠোর আইন-কানুন খেলোয়াড়দের চারিত্রিক ও মানসিক বিকাশে সহায়তা করে। একজন ভালো খেলোয়াড় এটির মাধ্যমে যেমন বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করে তেমনি প্রচুর অর্থেরও মালিক হয়। বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে ধনী ফুটবল খেলোয়াড় আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি।
বিশ্বের শীর্ষ ফুটবল তারকা ও ক্লাবসমূহ:
ফুটবলের জগতে জীবন্ত কিংবদন্তী হলো ফুটবল সম্রাট ব্রাজিলের পেলে। তাছাড়া আর্জেন্টিনার ম্যারাডোনা ফুটবলের রাজপুত্র নামে পরিচিত। এ ছাড়া রোনাল্ডো, মেসি, নেইমার, জিদান বর্তমান ফুটবলের অন্যতম তারকা। বার্সালোনা, রিয়েল মাদ্রিদ, বায়ান মিউনিখ, ডর্টমুন্ড, চেলসি, ম্যানচেষ্টার সিটি প্রভৃতি বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবল ক্লাব। কোপা আমেরিকা, কনফেডারেশন কাপ, এশিয়া কাপ, ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নস্ লীগ, SA গেমস, সাফ গেমস প্রভৃতির মাধ্যমে ফুটবল সারা পৃথিবীতে উন্মাদনা ছড়িয়ে যাচ্ছে।
উপসংহার:
ফুটবল খেলা বিশ্বের কোটি কোটি দর্শকের কাছে এক অনাবিল আনন্দের উৎস। ফুটবল খেলায় থাকে হার-জিত, থাকে আনন্দ-বেদনার অশ্রু। সেই আনন্দ বেদনার ঊর্ধ্বে থাকে মনোরম লড়াই আর নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শন, স্বদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি আর বিজয়ের তীব্র বাসনা। ফুটবল খেলা বিশ্বব্যাপী মানুষের মাঝে প্রীতি-সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি করে। এ জন্যই ফুটবল খেলা সকল খেলাকে ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে।