উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সমাপ্তি’ গল্পে মৃন্ময়ী তার বাবার অত্যন্ত আদরের কন্যা, তাই তার দুরন্তপনার শেষ নেই। মৃন্ময়ী দেখতে শ্যামবর্ণ, ছোটো কোঁকড়া চুল পিঠ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। মস্ত মস্ত কালো দুটি চোখে লজ্জা নেই, ভয় নেই, না আছে হাবভাবলীলার লেশমাত্র। গ্রামের সকল সমবয়সি মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে অথচ শুধু বাদ আছে মৃন্ময়ী তাই তার মাকে অনেক নিন্দা ও কটু কথাও শুনতে হয়। এদিকে মৃন্ময়ী ছিল অত্যন্ত চঞ্চল। গ্রামের পুরুষ লোকেরা তাকে স্নেহভরে পাগলী ডাকে। আর গ্রামের নারীরা তার উচ্ছৃঙ্খলতায় অতিষ্ঠ থাকে। ‘সমাপ্তি’ গল্পের মৃন্ময়ী নামটি সার্থক, মাটি ও প্রকৃতির সঙ্গে সে এমনভাবে মিশে আছে যে অপূর্বর প্রণয়ের দিকে তাকানোর সুযোগ সে পায়নি। গল্পের নায়ক শ্রীযুক্ত বাবু অপূর্বকৃষ্ণ রায়। সে উচ্চশিক্ষিত কলকাতা থেকে বি.এ. পাস করে আইন বিষয়ে পড়াশুনা করে। গ্রামে বেড়াতে এসে সে পাত্রীর জন্য নির্বাচন করে এমন একজনকে- যার পরিচয় গ্রামের মানুষের কাছে ‘পাগলী’ এবং গ্রামের যত রাখাল তার খেলার সাথি। সমবয়সি মেয়েদের প্রতি তার অবজ্ঞার শেষ নেই। ‘শিশুরাজ্যে এ মেয়েটি একটি ছোটোখাটো বর্গির উপদ্রব বলিলেই চলে।’ অপূর্ব যেদিন বাড়িতে। আসে সেদিন সে কাদায় পড়ে গেলে মৃন্ময়ী উচ্চ হাস্যধ্বনিতে ভেঙে পড়ে এবং মেয়ে দেখতে গেলে সেখান থেকে অপূর্বর বার্নিশ করা নতুন জুতা জোড়াটি চুরি করে। তারপরে অপূর্ব পছন্দ করে মৃন্ময়ীকে। পাড়ার সব মানুষ অপূর্বর এ পছন্দকে অপূর্ব পছন্দ বলে নামকরণ করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অপূর্বর মা এ বিয়েতে বেঁকে বসে, তবে পুত্রের একান্ত আগ্রহের কাছে তিনি হার মেনে ছেলেকে মৃন্ময়ীর সাথেই বিয়ে দেন। বিয়ের প্রথম দিকে মুনায়ীর মধ্যে কোনো পরিবর্তন বিয়ে দেন। বিয়ের প্রথম দিকে মুনায়ীর মধ্যে কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যায়নি। কিন্তু অপূর্ব তাঁকে রেখে কলকাতায় আইন পড়তে গেলে – সে অপূর্বকে খুব বেশি মনে করে। সে তার স্বামী অপূর্বকে বাড়িতে আসার জন্য পত্র লেখে। পরিশেষে মৃনায়ী শাশুড়ির সাথে কলকাতায় গেলে সেখানে অপূর্বর সাথে দেখা এবং তার অসমাপ্ত চুম্বনকে এখানে পরিপূর্ণ করে তোলে। এককথায় প্রথম দিককার কিশোর মৃন্ময়ী – গল্পের শেষে আদর্শ নারীর প্রতীক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।