বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি (বৃষ্টিপাত, জলপ্রবাহ, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ, সমুদ্রতরঙ্গ প্রভৃতি) ও মানুষের অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ ও কার্যাবলির ফলে মাটির পৃষ্ঠস্তরের হালকা ও অসংবদ্ধ অংশ ক্ষয়প্রাপ্ত, অপসারিত ও নগ্নীভূত হয় এবং মাটির উর্বরতাসহ স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য দ্রুত হ্রাস পায়। একে মৃত্তিকা ক্ষয় বলে।
কর্দমাক্ত ক্ষয় : বৃষ্টির কণা সরাসরি মৃত্তিকার উপরিভাগে পড়লে তার কণাসমষ্টি ভেঙে গিয়ে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম মৃত্তিকা কণায় পরিণত হয়, এই প্রক্রিয়াকে কর্দমাক্ত ক্ষয় (Splash Erosion) বলে। কর্দমাক্ত ক্ষয়ের ফলে মৃত্তিকার উপরিস্তরে সূক্ষ্ম মৃত্তিকা কণার মধ্যবর্তী ছিদ্রগুলি বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে বৃষ্টির জল মৃত্তিকার গভীরে পৌঁছােতে পারে না এবং মৃত্তিকার উপরিভাগের কণাগুলি বৃষ্টির জলের সঙ্গে অন্যত্র পরিবাহিত হয়ে যায়।
চাঁদের ক্ষয় : প্রবল বৃষ্টির জলে ভূমির ঢাল বরাবর জমির ওপরের পাতলা মাটিস্তর চাদরের মতাে সরে যায়। একে চাদর ক্ষয় (Sheet Erosion) বলে। এই প্রক্রিয়ায় মৃত্তিকা স্তরের পুরুত্ব (Thickness) ক্রমশ কমতে থাকে। এই পদ্ধতিতে মৃত্তিকা ক্ষয় বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে ঘটতে থাকে এবং মৃত্তিকার উর্বরতা হ্রাস পায়।
নালি ক্ষয় : বৃষ্টির জলের আঘাতে মাটিতে সরু লম্বা অগভীর গর্ত সৃষ্টি হয়। একে রিল বলে। ক্রমাগত বৃষ্টির জলে রিলগুলি গভীরতর ও লম্বা হয়ে সৃষ্ট নালি বরাবর মাটি ধুয়ে যায়। একে নালিক্ষয় বা Rill Erosion বলে। এই ধরনের মৃত্তিকার ক্ষয় নির্দিষ্ট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকে। বিশেষ করে শুষ্ক অঞ্চলে হঠাৎ করে প্রবল বৃষ্টিপাত হলে তীব্র জলস্রোতের প্রবাহে ভূমিভাগে অসংখ্য নালির সৃষ্টি হয়। নালি ক্ষয়যুক্ত অঞ্চলে মাটি বন্ধুর ও কৃষিকাজের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে।
খাত ক্ষয় : উদ্ভিদবিহীন উন্মুক্ত ও ঢালু জমিতে বৃষ্টির জল দ্বারা নালি ক্ষয় আরও তীব্রতর হলে তা ধীরে ধীরে খাত ক্ষয়ে (Gully Erosion) পরিণত হয়। প্রবল বৃষ্টির জলের আঘাতে নালিগুলি পরস্পর পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে অধিকতর ঘনবিন্যাস রচনা করে। এরপর মাটি ক্রমাগত ধুয়ে আরও গভীর ছােটো ছােটো খাত বা গর্ত সৃষ্টি করে। এই ধরনের খাত বরাবর মৃত্তিকার ক্ষয় পরিলক্ষিত হয়।
Leave a comment