‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’
উত্তর : বাউলদের কাছে মানবজীবনের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ তারা মনে করেন, অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার পর মানবজন্ম ঘটে। তাছাড়া পৃথিবীতে যত সৃষ্টি আছে তার মধ্যে মানুষ শ্রেষ্ঠ। তাই বাউলদের ধারণা সৃষ্টি-জগতের সকল প্রাণীসহ ফেরেশতারা বা দেব-দেবীরা পর্যন্ত মানবভজনা করে। বাউলরা তাই ধর্মের নীতিকথা তুলে মানুষে মানুষে বিভেদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। বাউলদের গানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা নানাভাবে ব্যক্ত হয়েছে। ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী প্রভৃতি বিভাজনের পরিবর্তে বাউলদের নিকট মানবধর্ম বড়ো ধর্ম। বাউল সম্প্রদায়ের প্রচারিত সংগীতগুলোয় বাঙালি জাতির নিজস্ব অসাম্প্রদায়িক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। বাঙালির নৃতাত্ত্বিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এরা প্রাচীনকালে নিরীহ এবং উদার মানবতাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। জগতে মানুষের চেয়ে বড়ো কিছু নেই। এই মানুষকে দেবতারাও ভজন করে:
“এমন মানব-জনম আর কি হবে। মন যা করো ত্বরায় করো এই ভবে।। অনন্তরূপ সৃষ্টি করলেন সাঁই, শুনি মানবের উত্তম নাই, দেব-দেবতাগণ করে আরাধন জন্ম নিতে মানবে।”
সুতরাং পরিশুদ্ধ মানুষ হতে হলে মানুষকে ভালোবাসতে হবে। মানুষকে ভালোবাসার মধ্যেই নিহিত রয়েছে ঈশ্বরপ্রেম। তাই বাউল কবির আহ্বান “মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি”। দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ঝেড়ে ফেলে মানুষকে আপন করে নিতে পারলেই মানব জনম সার্থক হবে। মানবজীবনে নেমে আসবে স্বর্গীয় প্রশান্তি।
Leave a comment