বিকাশ হল এমন একটি প্রক্রিয়া যা ব্যক্তির ক্ষমতার সূচনা এবং বৃদ্ধি ঘটায় এবং ব্যক্তিকে উৎকর্ষের সঙ্গে কাজ করতে সাহায্য করে।

বিকাশ প্রক্রিয়াটি একদিকে যেমন জটিল অন্যদিকে তেমনি বৈচিত্র্যময়। এই প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল一

(১) পরিণমনের ফল: শৈশবকাল থেকে বয়ঃসন্ধিক্ষণ পর্যন্ত ব্যক্তির দৈহিক পরিবর্তন তার জিনের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়। এই স্বতঃস্ফূর্ত পরিবর্তন পরিণমন ঘটায় যা বিকাশকে সম্ভব করে তােলে।

(২) মিথস্ক্রিয়ার ফল: ব্যক্তি এবং তার পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার ফলেই বিকাশ ঘটে।

(৩) ধারাবাহিক প্রক্রিয়া: মানবশিশু একমাস বয়সে মাথা তােলার চেষ্টা করে। আবার বসতে পারার পর হামাগুড়ি দেওয়ার চেষ্টা করে। এরপর সে দাঁড়াতে শেখে। তারপর ক্রমশ হাঁটতে এবং ছুটতে শেখে। এই ধরনের ধারাবাহিকতা বিশ্বের প্রায় সব শিশুর ক্ষেত্রেই দেখা যায়।

(৪) নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া: মনােবিদদের মতে, বিকাশ হল নিরবচ্ছিন্ন গতিশীল পরিবর্তনের একটি প্রক্রিয়া। মাতৃগর্ভ থেকে আমৃত্যু বিকাশ ঘটে চলে।

(৫) ব্যক্তিগত প্রক্রিয়া: প্রত্যেক শিশুর দৈহিক, মানসিক, প্রাক্ষোভিক প্রভৃতি বিকাশের ক্ষেত্রে স্বাতন্ত্র্য পরিলক্ষিত হয়। বিকাশের হারের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পার্থক্য বর্তমান।

(৬) নিম্নাভিমুখী প্রক্রিয়া: বিকাশ ওপর থেকে নীচের দিকে ঘটে। অর্থাৎ মস্তিষ্ক, ঘাড়, হাত, পা—এইভাবে ওপর থেকে নীচের দিকে পরপর বিকাশ ঘটে। বিকাশমূলক বিজ্ঞানে একে Cephaulo Caudal বলে।

(৭) সম্পর্কযুক্ত প্রক্রিয়া: ব্যক্তির বিভিন্ন বিকাশগুলি পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত।ব্যক্তির দৈহিক বিকাশ, মানসিক বিকাশ, সামাজিক বিকাশ, প্রাক্ষোভিক বিকাশ পৃথকভাবে ঘটে না। এগুলি পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল।

(৮) কেন্দ্র থেকে পরিধি অভিমুখী প্রক্রিয়া: বিকাশ কেন্দ্র থেকে পরিধির দিকে ঘটে। শিশু কোনাে কিছু ধরার জন্য প্রথম অবস্থায় সমগ্র বা ব্যবহার করে। পরে সে হাত এবং আঙুল ব্যবহার করে, একে বলে Box Digital।

(৯) বাইল্যটিারলি থেকে ইউনিল্যটিারাল (উভয় হাত-পা থেকে নির্দিষ্ট দুতি-পা) প্রক্রিয়া: সদ্যোজাত শিশু দুই হাত-পা একইভাবে ব্যবহার করতে পারে। দুই বা আড়াই বছর বয়স থেকে শিশু কোনাে একটি হাত-পা বেশি ব্যবহার করে।

এই সমস্ত বৈশিষ্ট্যের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, শিশুর বিকাশে উপযুক্ত পরিবেশ রচনা করা প্রয়ােজন এবং বিকাশগত বৈশিষ্ট্যের প্রতি নজর দিয়ে শিক্ষার পরিকল্পনা স্থির করা উচিত।