আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১০০০০ অব্দ থেকে শুরু করে আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৮০০০ অব্দ পর্যন্ত সময়কাল মধ্য পাথরের যুগ নামে পরিচিত। অর্থাৎ পুরাতন পাথরের যুগ ও নতুন পাথরের যুগের অন্তর্বর্তীকালীন সময়কাল হল মধ্য পাথরের যুগ| এ যুগের মানব সংস্কৃতির তেমন উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য দেখা যায় না৷

[1] জীবিকা: মানুষ খাদ্যসংগ্রহ এবং শিকার করেই জীবিকা চালাত। তবে এই পর্বে পশুশিকারের তুলনায় বিভিন্ন ধরনের ফলমূল, শামুক-ঝিনুক, মধু, মৎস্য প্রভৃতি সংগ্রহের ওপর অধিক গুরুত্ব আরােপিত হয়। জলাভূমি বেড়ে যাওয়ায় মানুষ তার খাদ্য তালিকায় অনেক বেশি পরিমাণে মাছ, শামুক, ঝিনুক প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত করে।

[2] হাতিয়ার: পূর্ব প্রচলিত হাতিয়ারগুলি এসময়ে আকারে আরও ছােটো হয়, কিন্তু উন্নত রূপ পায়। পাশাপাশি এসময়ে প্রধান অস্ত্র হিসেবে তিরধনুকের ব্যবহার শুরু হয়।

[3] গুহাচিত্র: মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষ গুহাচিত্র অঙ্কনে পারদর্শিতা দেখায়। বিভিন্ন ধরনের হাতিয়ার, হরিণের শিং ও মাথা এবং মৎস্য শিকারের দৃশ্য ছিল তাদের গুহাচিত্রের উপজীব্য বিষয়। অনেকটা জ্যামিতিক নকশার ঢং-এ তারা গুহাচিত্রগুলি আঁকত। এইসব গুহাচিত্রগুলি ছিল ত্রিকোণ ও চতুষ্কোণ বিশিষ্ট এবং বৃত্তাকার। সুইডেনের কয়েকটি গুহায় মৎস্য শিকারের ওপর এই ধরনের কিছু জ্যামিতিক নকশা চিত্র মিলেছে।

লুইস হেনরি মরগ্যান তার ‘Ancient Society’ গ্রন্থে আদিম মানবসমাজের ক্রমবিকাশের ধাপকে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেন মানবসমাজের ক্রমবিকাশের তিনটি ধাপ রয়েছে। যথা— [1] বন্যদশা (Savagery), [2] বর্বরদশা (Barbarism), [3] সভ্যদশা (Civilisation)।

[1] বন্যদশা: আদিম মানব জীবিকার খোঁজে যখন বনে বনে ঘুরে বেড়াত সেই সময় থেকেই বন্যদশার সূচনা ঘটে। মরগ্যানের ধারণায় বন্যদশার তিনটি ধাপ রয়েছে। যথা-

  • মধ্য বন্যদশা: এই দশায় মানুষ আগুন সম্পর্কে ধারণা লাভ করে। তারা মৎস্য শিকার করতে শেখে। এই পর্বে মানুষের প্রধান জীবিকা ছিল পশুশিকার। এই পর্যায়ে পাথরের তৈরি হাতিয়ারগুলি ছিল অমসৃণ।

[2] বর্বরদশা: বর্বরদশার আবার তিনটি স্তর রয়েছে।

  • আদি বর্বরদশা: এই পর্বে মানুষ শিকার করেই মূলত জীবিকা চালাত। শিকারের তাগিদে তারা এসময়ে সংঘবদ্ধ হয়। পাশাপাশি তারা আগুনের ব্যবহার করতে শেখে।

  • অন্ত বর্বরদশা: এই পর্যায়ে ধ্বনি সংকেত লিপির উদ্ভব ঘটে। মানুষ তার উচ্চারিত ধ্বনিকে এক-একটি বর্ণ হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে। এই পর্যায়ে মানুষের যাযাবর জীবনের অবসান ঘটে। কৃষিকাজের ওপর নির্ভর করে মানুষ স্থায়ী বসতি জীবনে প্রবেশ করে।

[3] সভ্যদশা: মানবসমাজের ক্রমবিকাশের শেষ ধাপ হল সভ্যদশা। আধুনিক মানুষ এই পর্যায়ভুক্ত। কৃষি থেকে শিল্পে উত্তরণের মধ্যে দিয়ে এই পর্বে মানুষ আধুনিক হয়েছে। এই পর্বে নগরের পত্তন হয় ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।