প্রশ্নঃ মধ্যযুগের বৈষ্ণব পদাবলী সাহিত্য সম্বন্ধে একটি নিবন্ধ রচনা কর।

অথবা, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে পদাবলী সাহিত্যের গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।

অথবা, মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে বৈষ্ণব পদাবলীর প্রধান কবিদের অবদান আলোচনা কর।

অথবা, মধ্যযুগের বৈষ্ণব পদাবলী ধারার পরিচয় প্রসঙ্গে এ ধারার কয়েকজন শ্রেষ্ঠ কবির অবস্থা মূল্যায়ন কর।

অথবা, মধ্যযুগের বৈষ্ণব সাহিত্যের একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লেখ।

অথবা, “মধ্যযুগের বাংলা কাব্যে বৈষ্ণব ধারা একটি অভিনব সংযোজন”- আলোচনা কর।

অথবা, মধ্যযুগের বৈষ্ণব সাহিত্যের বিভিন্ন ধারার বিবরণ দাও।

অথবা, বৈষ্ণব পদাবলী কী? বৈষ্ণব পদাবলীর প্রধান প্রধান কবিদের পরিচয় দাও।

উত্তরঃ বৈষ্ণব সাহিত্য বাঙালির প্রাণের সাহিত্য। রাধাকৃষ্ণের প্রেমের মোড়কে এদেশের মানব-মানবীর চিরন্তন প্রেমপ্রীতি, মিলন-বিরহ এবং হৃদয়ের সুকুমার অনুভূতিসমূহের বিচিত্র চিত্রকে বৈষ্ণব সাহিত্যিকরা তুলে ধরেছেন। মানব-হৃদয়ের তৃষ্ণা ও আর্তি, তৃপ্তি ও প্রশান্তি এ সাহিত্যে পাশাপাশি দীপ্তিমান। বৈষ্ণব সাহিত্যের অনুকরণে আমরা হৃদয়ের আর্তি প্রকাশ করি। মধ্যযুগে বিভিন্ন কবির হাতে রাধাকৃষ্ণের প্রেমের আড়ালে জীবাত্মা ও পরমাত্মার মিলনলীলাকে প্রাধান্য দিয়েই রচিত হয়েছে বৈষ্ণব সাহিত্য। যা বিষয় ও শিল্পগুণে সমুন্নত বলেই মধ্যযুগের সীমানা পেরিয়ে আধুনিক যুগে বাংলা ভাষাভাষী এমনকি বিশ্ব সাহিত্যের দরবারেও নন্দিত। বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের ইতিহাস যে গতানুগতিকতার ধূলিধূসর পথ ছেড়ে প্রেম, সৌন্দর্য ও অধ্যাত্মলোকের আলোকতীর্থে যাত্রা করেছে, তার প্রধান কারণ বৈষ্ণব সাহিত্য। বৈষ্ণব সাহিত্য কেবল সাহিত্যের একটি শাখা নয়— এটি একটি যুগও বটে। বৈষ্ণব সাহিত্যের ধন ও ধ্বনির প্রভাব মধুসূদন– রবীন্দ্রনাথকে পর্যন্ত প্রভাবিত করেছিল। এ সাহিত্য রোমান্টিক ও ভক্তি সাধনার সমন্বয়ে গঠিত।

চৈতন্যের জন্মের পূর্ব থেকে এ পর্যন্ত শত শত কবি রাধাকৃষ্ণের প্রেমকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার পদ রচনা করেছেন, যারা বৈষ্ণব পদাবলীর পদকর্তা হিসেবে পরিচিত। তবে এদের মধ্যে চৈতন্য-পূর্ববর্তী চণ্ডীদাস ও বিদ্যাপতি এবং চৈতন্য-পরবর্তী জ্ঞানদাস ও গোবিন্দ দাস এই চার কবির পদের মাধুর্য শিল্প-সৌকর্যে বৈষ্ণব সাহিত্য আমাদের কাছে নন্দিত হয়েছে।

চণ্ডীদাসঃ চণ্ডীদাস সমস্যা স্মরণে রেখেই আমরা পদাবলীর রচয়িতা চণ্ডীদাসের কথা বলব। যিনি পদাবলীর মাধ্যমে যুগ যুগ ধরে বাঙালি হৃদয়কে সীমাহীন রসাপ্লুত রেখেছেন, যার মরণেও শান্তি নেই, স্বস্তি নেই। চণ্ডীদাস বিরহের কবি, আত্মনিবেদনের কবি। তাঁর পদগুলোতে পরিণত নারীহৃদয়ের অনাবিল প্রেমের পরিচয় পাওয়া যায়। চণ্ডীদাস গভীরতা ও তন্ময়তা নিয়ে যোগমগ্না রাধিকাকে এঁকেছেন। তার হাতে বৈরাগীর একতারা, সুর যেমন উদাস তেমনি মর্মস্পর্শী। চণ্ডীদাস দুঃখের কবি, সহ্যের কবি। সুখের মধ্যে তার ভয়—দুহু কোরে দুহু কাঁদে বিচ্ছেদ ভাবিয়া। দুঃখের প্রতি তার অনুরাগ। বিরহের পদগুলোতে চণ্ডীদাসের সফলতা। সহজ-সরল নিরলঙ্কার ভাষায় বিরহের, বেদনার, আত্মনিবেদনের পদ রচনা করে আমাদের ঘরের মানুষ হয়ে উঠেছেন। চণ্ডীদাসের কাছে প্রেমই জগৎ। 

(ক) রাধার কি হৈল অন্তরে ব্যথা।

(খ) আমার বধূয়া আন বাড়ি যায় আমারই আঙ্গিনা দিয়া।

(গ) কলঙ্কী বলিয়া ডাকে সব লোকে

তাহাতে নাহিক দুঃখ।

তোমার লাগিয়া কলঙ্কের হার

গলায় পরিতে সুখ।

(ঘ) জীবনে মরণে

জনমে জনমে

প্রাণনাথ হইও তুমি।

এ শুধু প্রেমের কবিতা নয়, বরং ভোগবতী উপলব্ধি। প্রেমাশ্রিত ভক্তিসাহিত্যে চণ্ডীদাসের তুলনা নেই। চণ্ডীদাসের ভাষা ভঙ্গিমা, ছন্দ প্রকরণ, বাক্রীতি সাদাসিধে ও সরল।

১. কানুর পিরীতি চন্দনের রীতি ঘষিতে সৌরভময়।

২. ক্ষুরের উপর রাধার বসতি নড়িতে কাটিয়ে দেহ।

৩. বণিক জনার করাত যেমন দুদিকে কাটিয়ে যায়।

-প্রভৃতি উক্তি ক্ল্যাসিক রোমান্টিক। সবটা ব্যক্ত হয় নি, আভাসে ইঙ্গিতে, অপার্থিব লাবণ্যে, অশরীরী ব্যঞ্জনায় অতৃপ্ত আবেগে তার পদ ঋদ্ধ।

বিদ্যাপতিঃ বৈষ্ণব পদাবলীর অন্যতম কবি বিদ্যাপতি একচ্ছত্র বাংলা না লিখেও বাঙালির অন্তরে ঠাঁই করে নিয়েছেন। তার বৈষ্ণব পদ রচিত তারই মাতৃভাষা মৈথিলী ভাষায়। তিনি মিথিলার রাজকবি। চতুর্দশ শতাব্দীর শেষভাগে তার জন্ম। তার বৈষ্ণব পদগুলোতে পরবর্তীতে অনেক বাংলা শব্দ প্রবেশ করায় নতুন এক ভাষার উদ্ভব হয়েছে যা ব্রজবুলি নামে খ্যাত। রাধাকৃষ্ণ বিষয়ক পদ তার পাঁচশতেরও বেশি। তিনি জয়দেবের গীত গোবিন্দ দ্বারা প্রভাবিত। ফলে তিনি রাধাকে মর্ত্য জীবনের ভোগবতী করে তুলেছেন। রাধার প্রেমঘন চাঞ্চল্য, দেহজ কামনার লাবণ্য উৎসার, সুখ-দুঃখ বিরহ-মিলনের উচ্ছলতা এমন চমৎকার ফুটে উঠেছে যে, কবির সূক্ষ্ম মনস্তত্ত্ব জ্ঞান এবং শিল্পবোধের উচ্চ প্রশংসা করতে হয়।

তার রাধা মিলনে যেমন অপরূপ, বিরহেও তেমনি বেদনা বিষণ্ণ—

(ক) লাখ লাখ যুগ হিয়ে হিয়ে রাখলু 

তবু হিয় জুড়ন না গেল।

(খ) এ ভরা ভাদর    মাহ ভাদর

শূন্য মন্দির মোর।

বিদ্যাপতি মূলত অভিসারের পদ সৃষ্টিতে, রাধার রূপ বর্ণনায় স্বতঃস্ফূর্ত— 

(অ) কণ্টক গাড়ি কমল-সম পদতল

মঞ্জীর চীর হি ঝাপি।

গাগরী বারি ঢারি করু পিছল

চলতহি অঙ্গুলি চাপি।

(আ) তঁহি পুন মোতিহার তোড়ি ফেলল

কহত টুহার টুটি গেল ৷ 

সবজন এক এক চুনি সঞ্চরু 

শ্যামদরশন ধনি লেন।

রাধার রূপ বর্ণনায় বিদ্যাপতি—

(ক) মধুপ মাতাল উড়ু এ না পারএ

তই অও পসার এ আঁখি।

(খ) কবহু বাঁধয়ে কুচ কবহু বিথারি।

কবহু ঝাঁপয়ে অঙ্গ কবহু উঘারি।

বিদ্যাপতির কবিতা স্বর্ণহার। বিদ্যাপতির গান মুরজবীণাসঙ্গিনী স্ত্রীকণ্ঠগীতি। বিদ্যাপতি আধুনিক দৃষ্টি দিয়ে রাধাকে দেখেছেন— যাহা যাহা নিকসয়ে তনু তনু ভেল।

চৈতন্য-পরবর্তী দুই বিখ্যাত কবিঃ

জ্ঞানদাসঃ চণ্ডীদাসের ভাবশিষ্য জ্ঞানদাস। জ্ঞানদাসের মত প্রথম শ্রেণীর কবি সব যুগেই দুর্লভ। তার জীবনকথার সঠিক কোন তথ্য মেলে না। কাটোয়ার পশ্চিমে কাঁদড়া গ্রামে ব্রাহ্মণ বংশে তার জন্ম। বৈষ্ণব সমাজের নেতৃস্থানীয়া জাহ্নবীদেবীর মন্ত্রশিষ্য ছিলেন। ধারণা করা হয়, তিনি ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যপর্বে বর্তমান ছিলেন। রাধাকৃষ্ণের প্রেমবিষয়ক তার চারশতের অধিক পদ রয়েছে।

ব্রজবুলি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই তিনি পদ লিখেছেন। তবে তার প্রতিভা বাংলা পদেই প্রকাশিত। জ্ঞানদাসের পদে রূপ বর্ণনা, অতৃপ্ত প্রণয়াকাঙ্ক্ষার তীব্র জ্বালা, ব্যাকুলতা, মিলনের উল্লাস, বিরহের আর্তি উচ্চারিত হয়েছে-

রূপ লাগি আঁখি ঝুরে গুণে মন ভোর।

প্রতি অঙ্গ লাগি কান্দে প্রতি অঙ্গ মোর

হিয়ার পরশ লাগি হিয়া মোর কান্দে।

পরাণ পিরীতি লাগি থির নাহি বান্ধে।

জ্ঞানদাস ভাবকে অধিকতর সুন্দর করে প্রকাশ করেছেন। জ্ঞানদাসের রাধার বেদনা আছে কিন্তু মিলনের ব্যাকুলতা, সুরসিকা নায়িকা। কৃষ্ণের রূপ বর্ণনায় তিনি পারঙ্গমতা দেখিয়েছেন—

(অ) কালিয়া বরণখানি চন্দনেতে মাখা।

আমা হৈতে জাতিকুল নাহি গেল রাখা। 

(আ) কি রূপ হেরিনু কালিন্দীকূলে। 

অপরূপ মেঘ কদম্বমূলে 

যথা মেঘ না তথা বহে বারি 

মোর মনে হয় বিজুরী হইয়া। 

রহি জড়াইয়া ও মেঘে যাইয়া। 

রাধারূপঃ 

কমল-বয়ান কনক কাঁতি। 

মুকুতানিকর দশন-পাঁতি – 

অনুরাগঃ

রূপের পাথারে আঁখি ডুবিয়া রহিল 

যৌবনের বনে মন হারাইয়া গেল 

ঘরে যাইতে পথ মোর হইল অফুরান। 

আক্ষেপঃ

সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু

অনলে পুড়িয়া গেল।

সাগর শুকাল মানিক লুকাল

অভাগীর করম দোষে।

গোবিন্দদাস ছাড়া ষোড়শ-সপ্তদশ শতাব্দীতে জ্ঞানদাসের সমতুল্য পদকর্তা আর কেউ ছিল না।

গোবিন্দদাসঃ বিদ্যাপতির ভাবশিষ্য গোবিন্দদাস। গোবিন্দদাসের শ্রেষ্ঠ পদগুলো ব্রজবুলিতে রচিত। বাকমাধুরী, চিত্রকল্প, সঙ্গীতধর্মিতা আজও অনুপম মনে হয়। গোবিন্দদাসের পিতা প্রসিদ্ধ চৈতন্যভক্ত চিরঞ্জীব সেন, মাতামহ বিখ্যাত পণ্ডিত ও শক্তিদামোদর সেন, অগ্রজ রামচন্দ্র বিখ্যাত বৈষ্ণব ছিলেন। ড. বিমানবিহারী মজুমদার গোবিন্দদাসের ৮০০ পদ সম্মিলিত গ্রন্থ সংকলন করেছেন।

গোবিন্দদাসকে দ্বিতীয় বিদ্যাপতি বলা হয়। তার গৌরচন্দ্রিকার বাকমূর্তি ও আবেগ অতুলনীয়। গোবিন্দদাসের পূর্বরাগ, মাথুর, অভিসার পদগুলোর রূপক উপমা সমৃদ্ধ। 

কৃষ্ণরূপঃ

নন্দ-নন্দন চন্দ-চন্দন 

গন্দ-নিন্দিত-অঙ্গ।

জলদ-সুন্দর কম্বু-কন্ধর

নিন্দি সিন্ধুর-ভঙ্গ।

রাধারূপঃ

ঢল ঢল কাঁচা অঙ্গের লাবণি

অবনি বহিয়া যায়।

হাসিয়া হাসিয়া অঙ্গ দোলাইয়া

নাচিয়া নাচিয়া যায়

নয়ান-কটাক্ষে বিষম-বিশিখে

পরাণ বিন্ধিতে চায়।

অনুরাগঃ

কানু অনুরাগে তনুমন মাতাল 

না শুনে ধরম ভয় লেশ।

পদাবলীর আরও কিছু প্রতিভাবান কবিঃ

(ক) চৈতন্যযুগে যদু নন্দন, মাধবদাস, অনন্তদাস প্রমুখ পদকর্তার আবির্ভাব হয়েছিল। এদের কিছু কিছু পদ উল্লেখযোগ্য হলেও জ্ঞানদাস, গোবিন্দদাসের কাছে এরা ম্লান।

(খ) শ্রীনিবাস নরোত্তম শ্যামদাস— সপ্তদশ শতাব্দীর বৈষ্ণব সমাজে এদের পরিচিতি ছিল। এরা তিনজনই কবি প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। শ্রীনিবাস ব্রজবুলিতে লিখতেন। তবে এদের মধ্যে নরোত্তমের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তার প্রার্থনা বিষয়ক পদ শ্রেষ্ঠ। শ্যামানন্দের পদ ‘পদকল্পতরু’তে স্থান পেয়েছে।

(গ) গোবিন্দ আচার্য ও গোবিন্দ চক্রবর্তী নামে দুজন পদকর্তা ছিলেন। গোবিন্দ চক্রবর্তীর পদ গোবিন্দ আচার্যের চেয়ে অধিক পরিচিত। 

(ঘ) রায় শেখরঃ গোবিন্দদাসের সামান্য পরে গোবিন্দদাসের ভাবশিষ্য রায় শেখর ব্রজবুলিতে পদ রচনা করেছেন-

সখি কেমনে দেখাব মুখ

গোপন পিরীতি বেকত করয়ে

এ বড় মরণ দুখ।

(ঙ) রায় বসন্তঃ গোবিন্দদাসের বন্ধু ও নরোত্তম ঠাকুরের শিষ্য রায় বসন্ত ব্রাহ্মণ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর পদের ব্যাখ্যা করে সাহিত্যিক মহলে তাকে পরিচিত করে তোলেন। তার পদ ব্রজবুলিতে লেখা সহজ, সরল এবং সরস।

(চ) কবিরঞ্জন বা ছোট বিদ্যাপতিঃ বিদ্যাপতি ‘কবিরঞ্জন’ ভণিতায় লিখতেন। আরেকজন একই ভণিতায় লিখেছেন। এর পদ বিদ্যাপতির পদের তুলনায় দুর্বল। তাকে ছোট বিদ্যাপতি বলে।

পদাবলীর অপ্রধান কবিঃ 

সপ্তদশ শতাব্দীতে আরও অনেক পদকর্তা নানা ধরনের পদ লিখেছেন। এরা পূর্বতন কবিদের অনুকরণ করেছেন মাত্র ৷

বল্লভ দাস— এর রচনা মধ্যম শ্রেণীর।

রামগোপাল দাস— রস কল্পবল্লীতে এর পদ আছে।

ঘনশ্যাম দাস— গোবিন্দদাসের পৌত্র; ইনি বেশ কটি উৎকৃষ্ট পদ রচনা করেছেন। 

চম্পতি— সপ্তদশ শতকের কবি, দু’চারটি ভাল পদ তার রয়েছে।

জগদানন্দ—  চৈতন্যবিষয়ক কয়েকটি ভাল পদ লিখেছেন।

মুসলিম পদকর্তাঃ রাধাকৃষ্ণের প্রেমবিষয়ক পদ রচনায় বেশ কিছু মুসলিম পদকর্তার নাম পাওয়া যায়। যেমন— কবীর, মুতালিব, তাইয়ুবুর, হোসেন শাহ প্রমুখ। তবে এদের কারও কারও পদে বৈষ্ণব ও সুফিবাদের সংমিশ্রণ ঘটেছে।

পরিশেষে বলা যায় যে, বৈষ্ণব পদাবলী বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। যার শুভযাত্রা মধ্যযুগের চৈতন্য-পূর্ব ও পরবর্তী বেশ কিছু কবির হাতে হলেও বাঙালি মাত্রই বৈষ্ণব পদকর্তা, প্রকাশিত কি অপ্রকাশিত। মাইকেল, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের প্রকাশভঙ্গি ছিল বলে তাদের পদ আমাদের চোখে পড়ে, ওঁদেরই মত শত সহস্র বাঙালি আজও বৈষ্ণব পদ সুধা পান করছে এবং নিত্য নতুন পদ রচনা করছেন— এ ধারা নিরন্তর।