সূচনা: ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিম রােমান সাম্রাজ্যের পতনের পরবর্তীকালে বর্বর জাতিগুলির আক্রমণজনিত অস্থিরতা কাটিয়ে উঠে খ্রিস্টীয় নবম শতক থেকে ইউরোপের আর্থসামাজিক কাঠামােয় যথেষ্ট পরিবর্তন ঘটতে থাকে।

একাদশ শতকের পর থেকে ইউরােপে দ্রুত নগরের প্রসার ঘটতে থাকে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নগরগুলি ক্লমে সামন্তপ্রভুদের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়ে স্বায়ত্তশাসন লাভ করতে থাকে।

[1] অনৈতিক করের বিরোধিতা: সামন্তপ্রভুরা নিজেদের অধীনস্থ অঞ্চলের নগরগুলির বাসিন্দাদের ওপর বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কর চাপাত। নগরের বাসিন্দারা এই অনৈতিক কর দিতে অস্বীকার করে সামন্তপ্রভুর বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরােধ গড়ে তুলেছিল। নগরগুলি এভাবে সামন্তপ্রভুর অধীনতা থেকে ছিন্ন হতে থাকে।

[2] প্রতিরােধ: সামন্তপ্রভু, তার বাহিনী ও বহিরাগত আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকরী প্রতিরােধ গড়ে তুলতে নগরগুলির চারিদিকে প্রাচীর তৈরি এবং খাল খনন করা হয়। নগরের বাসিন্দারা নিজেরা অস্ত্র ব্যবহার করে এবং বাইরে থেকে ভাড়াটে সৈন্য এনে সামন্তপ্রভু বা অন্য বহিরাগত শক্তির আক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকরী প্রতিরােধ গড়ে তােলে।

[3] নির্বাচিত পৌর বাের্ড: শহরের ধনী বণিক ও কারিগররা সুশাসনের তাগিদে নিজেদের মধ্যে থেকে ‘টাউন কাউন্সিল বা পৌর বাের্ড গঠন করত। এই বাের্ডের নির্বাচিত সদস্যরা নিজেরাই নিজেদের শহরের শাসন পরিচালনা করত। এই পৌর বাের্ডের অধীনে প্রশাসন পরিচালনা নগরের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ছিল।

[4] নগরজোট: শক্তিশালী রাজা বা সামন্তপ্রভুর মােকাবিলা করতে অনেক সময় অভিন্ন স্বার্থসম্পন্ন নিকটবর্তী বিভিন্ন নগরগুলি ঐক্যবদ্ধ হয়ে ‘লিগ নামে নগরজোট গড়ে তুলত। ভেরােনা লিগ”, ‘লম্বার্ড লিগ, ‘হানসিয়াটিক লিগ প্রভৃতি ছিল এরকম কয়েকটি নগরজোট যেগুলি পরাক্রমশালী শাসকদের দক্ষতার সঙ্গে মােকাবিলা করেছিল।

[5] স্বাধীনতার সনদ: নগরের বাসিন্দারা বিভিন্ন সময়ে সংগ্রাম, অর্থসাহায্য বা অন্য কোনো সহায়তা দিয়ে রাজা বা সামন্তপ্রভুদের কাছ থেকে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার আদায় করত। ইংল্যান্ডের লন্ডন, অক্সফোর্ড, কেব্রিজ, ফ্রান্ডার্সের বুজ ও গেন্ট, জার্মানির কোলােন, মাইঞ্জ ইত্যাদি নগর এই জাতীয় অধিকার আদায় করেছিল।

[6] প্রতিপক্ষের দ্বন্দ্ব: নগরের বাসিন্দারা অনেক সময় প্রতিপক্ষরাজা, সামন্তপ্রভু ও গির্জার বিরােধকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করত। অনেক ক্ষেত্রে শত্রুর শত্রুর সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করে রাজা, সামন্তপ্রভু ও গির্জার আধিপত্য প্রতিহত করত। এভাবে নগরের বাসিন্দারা নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করত।

উপসংহার: স্বায়ত্তশাসনের অধিকার লাভ করলেও এবং নির্বাচিত টাউন কাউন্সিল” দ্বারা শাসিত হলেও নগরগুলি কিন্তু সঠিক অর্থে গণতান্ত্রিক ছিল না। কারণ শুধু নগরের বণিক ও ধনী কারিগররাই ‘টাউন কাউন্সিল’-এ নির্বাচিত হওয়ার অধিকার ভােগ করতেন।নগরের সাধারণ মানুষের এ অধিকার একেবারেই ছিল না।