মুসলিম প্রভাবিত যুগকে মধ্যযুগ বা ইসলামীয় সভ্যতার যুগ বলে।
ইসলামীয় শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থীর নৈতিক এবং জাগতিক জীবনের মান উন্নয়ন করা।
ইসলামীয় শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য ছিল ইসলাম ধর্মের আদর্শ এবং পবিত্র কোরানের নির্দেশ অনুযায়ী চরিত্রবান ও ধার্মিক মানুষ সৃষ্টি করা।
মুসলিম বা ইসলামীয় শিক্ষাব্যবস্থায় প্রাথমিক শিক্ষার জন্য মক্তব এবং উচ্চশিক্ষার জন্য মাদ্রাসা গড়ে তােলা হয়েছিল।
ইসলামীয় শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষার পাঠক্রমে কোরান, মহম্মদের বাণী, ইসলামীয় ইতিহাস ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত ছিল।
ইসলামীয় শিক্ষাব্যবস্থায় পাঠক্রমে কোরান ও মহম্মদের বাণী ছাড়া আরবি, সাহিত্য, ব্যাকরণ, ইতিহাস, দর্শন, গণিত, ভূগােল, অর্থনীতি, রাজনীতি প্রভৃতি বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল।
ইসলামীয় শিক্ষার প্রসারের জন্য মক্তব ও মাদ্রাসার খরচ বহনে প্রধান পৃষ্ঠপােষকতা করতেন মুসলিম শাসকগণ।
মুসলিম শিক্ষাব্যবস্থায় বিদ্যারম্ভ সূচিত হত বিসমিল্লাহ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।
মুসলিম শিক্ষায় ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর ছিল। মৌলবি এবং মিয়াজি যারা শিক্ষাদান কর্মে নিয়ােজিত থাকতেন, তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল ছাত্রদের বৈষয়িক ও মানসিক উন্নয়ন ঘটানাে। অন্যদিকে ছাত্ররাও শিক্ষকদের খুবই শ্রদ্ধা করত।
মধ্যযুগের শিক্ষার পর্যায়কে দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা- সুলতানি আমলের শিক্ষা এবং বাদশাহি আমলের শিক্ষা।
মুসলিম শিক্ষায় মাদ্রাসার পাঠক্রমের বিষয়গুলিকে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা হত- ইলাহি, রিয়াজি এবং তাবিকি।
মধ্যযুগে হিন্দু শিক্ষাব্যবস্থায় বিশেষ প্রতিভাবান ছাত্ররা সার্বভৌম, উপাধ্যায়, মহামহােপাধ্যায়, দ্বিবেদী, ত্রিবেদী ইত্যাদি উপাধি লাভ করত।
ইসলামীয় শিক্ষাব্যবস্থার দুটি শিক্ষাকেন্দ্রগুলি ছিল—মক্তব ও মাদ্রাসা।
মধ্যযুগের কয়েকজন শিক্ষিতা মহীয়সী মুসলমান নারী হলেন—চঁ।দ সুলতানা, বানুবেগম, নূরজাহান, মুমতাজ জাহানারা, উল্লেসা, সুলতানা রিজিয়া প্রভৃতি।
মধ্যযুগে বিশ্ববিদ্যালয়ের খুবই অভাব ছিল। হিন্দুরা তেমনভাবে শিক্ষার সুযােগ পেত না। মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত মুসলমানরাই শিক্ষার সুযােগ পেত।
মধ্যযুগে মাদ্রাসায় মাতৃভাষাকে অবহেলা করা হত মাতৃভাষার পরিবর্তে ফারসি এবং আরবি ভাষাচ্চা করা হত।
ইসলামীয় শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের ‘সামরিক শিক্ষা দেওয়া হত। প্রধানত হিন্দু রাজাদের ওপর কর্তৃত্ব করার জন্য সামরিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক ছিল।
মুসলিম যুগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবসময়েই বিশৃঙ্খলা লেগে থাকত। শিক্ষার্থীদের দৈহিক শাস্তিপ্রদানের ব্যবস্থা ছিল।
মক্তবে ছাত্ররা ইউসুফ ও জুলেখা, লায়লা-মজনু, সিকন্দরনামা প্রভৃতি কাব্যকথা অধ্যয়ন করতেন।
ইসলামীয় শিক্ষাব্যবস্থায় প্রাথমিক শিক্ষার প্রতিষ্ঠানকে মক্তব বলা হয়। মক্তবে জ্ঞানী এবং দক্ষ শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতেন।
মক্তবে সাধারণত কোনাে লিখিত বই অনুসরণ করা হত না।
শিশুর বয়স সাত বছর হলে মক্তবে তাকে বর্ণমালার সঙ্গে পরিচিত করানাে হত।
মক্তবের শিক্ষাপদ্ধতি ছিল মৌখিক।
মাদ্রাসা দিনে দুবার বসত। সকাল থেকে দুপুর এবং বিকেল থেকে রাত্রি অবধি।
মাদ্রাসার শিক্ষা পদ্ধতি ছিল মৌখিক। শিক্ষকগণ বক্তৃতা পদ্ধতি অনুসরণ করতেন। শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য পৃথক পৃথকভাবে শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল।
মাদ্রাসায় ধর্ম, তর্কশাস্ত্র, দর্শন ইত্যাদি বিষয় পঠনপাঠনে সংশ্লেষণী ও আরােহী পদ্ধতি ব্যবহৃত হত।
মধ্যযুগীয় শিক্ষাব্যবস্থায় কোনাে শিক্ষাক্রমের জন্য কোনাে নির্দিষ্ট সময়সীমা ছিল না। ছাত্রদের মেধার উপর নির্ভর করে পাঠ সমাপন হত। সাধারণভাবে কোনো ছাত্রের উচ্চশিক্ষার জন্য ১৫-১৬ বছর প্রয়ােজন হত।
মুসলিম শিক্ষায় মাদ্রাসার পাঠক্রমে ধর্মতত্ত্ব সম্পর্কে আলােচনাকে বলা হয় ইলাহি।
মুসলিম শিক্ষায় মাদ্রাসার পাঠক্রমে ‘রিয়াজি’ বিভাগে গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, সংগীত এবং চিকিৎসাশাস্ত্র বিষয়ে জ্ঞানদান করা হয়।
মুসলিম শিক্ষায় মাদ্রাসার পাঠক্রমে প্রকৃতিবিজ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞানকে বলা হত তাবিকি।
সাধারণভাবে কোনাে পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকলেও বিশেষ বিষয়ের দক্ষতা ওই বিষয় শিক্ষকের প্রশংসার দ্বারা নির্ণীত হত। মাঝে মাঝে ছাত্রদের মধ্যে বিতর্ক, আলােচনাসভা অনুষ্ঠিত হত।
ইসলামীয় শিক্ষায় ছাত্রদের শিক্ষা শেষে তিন ধরনের ডিগ্রি দেওয়া হত। এগুলি হল—“আলিম’, ‘ফাজিল’ এবং কাবিল।
ইসলামীয় শিক্ষায় যে সকল ছাত্র ধর্মের ক্ষেত্রে বিশেষ জ্ঞান অর্জন করত, তাদের আলিম উপাধি প্রদান করা হত।
ইসলামীয় শিক্ষায় যে সকল শিক্ষার্থী যুক্তি শিক্ষায় বিশেষ জ্ঞান অর্জন করত, তাদের ফাজিল উপাধি দেওয়া হত।
ইসলামীয় শিক্ষায় যেসব শিক্ষার্থী সাহিত্যে বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করত, তাদের ‘কাবিল’ উপাধি প্রদান করা হত।
ইসলামিকশিক্ষাব্যবস্থায়উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান ছিল মাদ্রাসা।
Leave a comment