মধ্যযুগে প্রতিষ্ঠিত হওয়া পৃথিবীর সর্বাধিক শক্তিশালী সাম্রাজ্যগুলির মধ্যে ভারতের মােগল সাম্রাজ্য (১৫২৬-১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ) এবং তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্য (১২৯৯-১৯২২ খ্রিস্টাব্দ) ছিল অন্যতম। বিভিন্ন বিষয়ে এই সাম্রাজ্য দুটির মধ্যে সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। এই সাদৃশ্যগুলি নীচে উল্লেখ করা হল一
মােগল সাম্রাজ্য
-
১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে ইব্রাহিম লােদিকে পরাজিত করে বাবর ভারতে মােগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। তার উত্তরসূরি হুমায়ুন, আকবর, শাহজাহান ও অন্যান্য শাসকগণ একে একে রাজত্ব করেন।
-
মােগল সাম্রাজ্যে ইসলামীয় ও স্থানীয় সংস্কৃতির সমন্বয়ে শাসন কাঠামাে গড়ে উঠেছিল। ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ স্বীকৃত থাকলেও সম্রাটরা ইসলামীয় রীতিনীতির দ্বারা যথেষ্ট প্রভাবিত হতেন। তাঁরা সামাজিক সংগঠন, শাসনব্যবস্থা, শিল্পকলা প্রভৃতি ক্ষেত্রে ইসলামীয় সংস্কৃতির প্রাধান্য প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট ছিলেন। বিচার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এই সাম্রাজ্যের কর্ণধাররা কোরানের আইনের ব্যাখ্যা গ্রহণ করেছিলেন।
-
মােগল শাসনকালে ভারতে বাণিজ্যের অভূতপূর্ব বিকাশ ঘটে। ফলে এসময় মােগল সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটে। আকবরের আমলে এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মােগল সাম্রাজ্যের হীরে, মণিমুক্ত, মশলা, সুতীবস্ত্র, রেশম প্রভৃতির যথেষ্ট চাহিদা ছিল।
-
মােগল সাম্রাজ্যে মহান আকবর (১৫৫৬-১৬০৫ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ শাসক। তার আমলে মােগল সাম্রাজ্য খ্যাতির চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছােয়। শিল্প, স্থাপত্য ও সৃজনশীলতায় মােগল সাম্রাজ্য এসময় খ্যাতি ও গৌরবের চূড়ান্ত সীমায় উপনীত হয়।
-
পশ্চিমদিকে আফগানিস্তান থেকে দক্ষিণদিকে গােদাবরী নদী পর্যন্ত প্রসারিত মােগল সাম্রাজ্যের প্রায় সমগ্র ভারতীয় উপদ্বীপ জুড়ে বিস্তৃতি ঘটেছিল।
-
মােগল আমলে ভারতে শিল্প-স্থাপত্যের ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটেছিল। আগ্রার তাজমহল, ‘দেওয়ান ই-আম’, দেওয়ান ই-খাস’, ‘মতি মসজিদ’, ‘জামি মসজিদ’-সহ বহু স্থাপত্য মােগল যুগের অমর কীর্তি।
অটোমান সাম্রাজ্য
-
অটোমান তুর্কি শাসকরাও ১৪৫৩ থেকে ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলে নিজেদের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিল।
-
অটোমান সাম্রাজ্যেও ইসলামীয় ও স্থানীয় সংস্কৃতির সমন্বয়ে শাসন কাঠামাে গড়ে উঠেছিল। সরকার ও ধর্মের নিয়ন্ত্রক হিসেবে এখানকার সম্রাটরাও ইসলামীয়। রীতিনীতির দ্বারা যথেষ্ট প্রভাবিত হতেন| তারাও সামাজিক সংগঠন, শাসনব্যবস্থা, শিল্পকলা প্রভৃতি ক্ষেত্রে। ইসলামীয় সংস্কৃতির প্রাধান্য প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হয়েছিলেন। মােগল সাম্রাজ্যের মতাে এই সাম্রাজ্যেও বিচার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে কর্ণধাররা কোরানের আইনের ব্যাখ্যা গ্রহণ করেছিলেন।
-
অটোমান তুর্কি সুলতানদের আমলে বাণিজ্যের অভূতপূর্ব অগ্রগতি ঘটে। এই সূত্র ধরে এসময় অটোমান সাম্রাজ্যের যথেষ্ট অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটে। অটোমান সাম্রাজ্যের মৃৎপাত্র, কম্বল, মণিমুক্তা প্রভৃতি বিদেশের বাজারে রপ্তানি হত।
-
অটোমান সুলতান সুলেমান (১৫২০-১৫৬৬ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন এই সাম্রাজ্যের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ শাসক। সুলেমানের আমলে অটোমান সাম্রাজ্য সার্বিক ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাফল্যের স্বাক্ষর রাখে। শিল্প, স্থাপত্য ও অন্যান্য সৃজনশীলতার ক্ষেত্রে অটোমান সুলতান সুলেমানের রাজত্বকাল বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিল।
-
অটোমান সাম্রাজ্যের সীমানাও বহুদূর বিস্তৃত ছিল। দক্ষিণ পূর্ব ইওরােপ, পশ্চিম এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে অটোমান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত ছিল।
-
অটোমান তুর্কি সুলতানদের রাজত্বকালেও তাদের সাম্রাজ্যে শিল্প স্থাপত্যের যথেষ্ট উন্নতি ঘটেছিল। অটোমান সাম্রাজ্যের ইস্তানবুল মসজিদ, মহম্মদ মসজিদ, সুলেমানীয় মসজিদ প্রভৃতি সেখানকার উন্নত শিল্পকীর্তির পরিচয় দেয়।
Leave a comment