সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ভারতবর্ষ গল্পের শেষদিকে বুড়ির মৃতদেহের অধিকার নিয়ে সশস্ত্র হিন্দু ও মুসলমান গ্রামবাসীদের মধ্যে যখন রক্তক্ষয়ী দাঙ্গার পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখনই বুড়ির দীর্ঘনিদ্রা ভঙ্গ হয়। বাঁশের মাচায় শায়িত বুড়ি হঠাৎ নড়ে উঠে বসতে চেষ্টা করে। দু-পক্ষের মারমুখী জনতা এবং চৌকিদার বিস্ময়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকে। বুড়ি এরপর ক্রমে দাঁড়িয়ে পড়ে। তার দু-দিকের দু-দলের ভিড় দেখে তার মুখ ব্যাজার হয়ে যায়। সেই ব্যাজার মুখেই তারপর ফ্যাক ফ্যাক করে হেসে ওঠে সে। চৌকিদারের “বুড়িমা! তুমি মরনি।”- এই বিস্ময়সূচক প্রশ্ন শুনে এরপর সে শতগুষ্টিসহ চৌকিদারেরই মরণ কামনা করে। সমবেত জনতাও যখন চিৎকার করে একই কথা বলতে থাকে তখন বুড়ি তাদের ‘মুখপােড়া’ বলে গালি দিয়ে শাপশাপান্ত করে। বুড়ি হিন্দু না মুসলমান—এ কথা এরপর একজন জিজ্ঞাসা করলে প্রচণ্ড রেগে গিয়ে বুড়ি জনতাকে জানায় যে, তারা তাদের চোখের মাথা খেয়েছে। ‘নরকখেকো’, ‘শকুনচোখাে’ ইত্যাদি গালাগাল সহযােগে সে জনতাকে জানায় যে, তারা বুড়িকে দেখে তার ধর্মপরিচয় যেহেতু বুঝতে পারছে না, তাই বুড়ি তাদের সবার চোখ গেলে দেবে। জনতাকে দূর হতেও বলে সে। কথাগুলাে বলে বুড়ি নড়বড় করতে করতে সেখান থেকে বেরােলে জনতা সরে গিয়ে তাকে পথ করে দেয়। দিনের শেষ রােদুরে দূরের দিকে ক্রমে অস্পষ্ট হয়ে যায় বুড়ি। এভাবেই দীর্ঘনিদ্রা-থেকে-জেগে ওঠা বুড়ি দু-সম্প্রদায়ের মারমুখী জনতাকে শান্ত করেছিল।