প্রশ্নঃ বৈরী সাক্ষী (শত্রু ভাবাপন্ন) বলতে কি বুঝ? কোন পক্ষ তার নিজের সাক্ষীকে জেরা করতে পারে কি? এ ধরনের সাক্ষীর সাক্ষ্যের মূল্যায়ন তুমি কিভাবে করবে?

[What do you mean by a hostile witness? Can a party cross-examine his own witness? How would you assess the value of evidence of such a witness?]

বৈরী সাক্ষী (Hostile witness): মামলার পক্ষগণ তাদের নিজ বক্তব্যের সমর্থনে সাক্ষী উপস্থাপন করেন। স্বাভাবিকভাবেই যে পক্ষ কোন সাক্ষীকে উপস্থাপন করেন সেই পক্ষকে সমর্থন করে সাক্ষ্য প্রদান করে থাকেন। কিন্তু কোন সময় দেখা যায় যে, সেই সাক্ষী তার আহবানকারী পক্ষকে সমর্থন করে তার বিরুদ্ধ পক্ষকে সমর্থন করছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে আহবানকারী পক্ষ সেই সাক্ষীকে বৈরী বলে ঘোষণা করতে পারেন এবং তাকে জেরা করার অনুমতি চাইতে পারেন। ১২ ডি. এল. আর ৫৭৮ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হাইকোর্টের অভিমত হচ্ছে এই যে, সাক্ষী আহবানকারী পক্ষের বিপক্ষে গেলেই তাকে বৈরী বলা যাবে না, কেবলমাত্র যে সাক্ষী আদালতে সত্য প্রকাশ করছে না, এরূপ সাক্ষীকেই বৈরী ঘোষণা করা যায়।

নিজ সাক্ষীকে জেরা করা যায় কিনাঃ নিজ সাক্ষীকে জেরা করার সম্পর্কে বিধান সাক্ষ্য আইনের ১৫৪ ধারায় বর্ণিত হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি সাক্ষী উপস্থিত করেন, তিনি যদি সাক্ষীকে এমন প্রশ্ন করতে চান যা বিরুদ্ধ পক্ষ সাক্ষীকে জেরা করার সময় জিজ্ঞেস করতে পারেন, তবে আদালত তাকে সদ্বিবেচনায় উক্ত ব্যক্তিকে সে প্রশ্ন করার অনুমতি দিতে পারেন।

এখানে ১৪২ ধারার বিধানটি উল্লেখ্য। সেখানে বলা হয়েছে যে, আহবানকারী পক্ষ তার নিজ সাক্ষীকে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করতে পারেন না। কিন্তু সাক্ষী যদি আহবানকারীর বিপক্ষে মনোভাব দেখাতে শুরু করেন তবে ১৪২ ধারার কার্যকারিতা লোপ পায়। সেক্ষেত্রে আদালত তাকে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করার অনুমতি দিতে পারেন অর্থাৎ তাকে জেরা করার অনুমতি দিতে পারেন।

আর পক্ষগণ ইচ্ছা করলেই নিজ সাক্ষীকে জেরা করতে পারেন না, আদালতের অনুমতি নিতে হয়। আদালত যদি অনুভব করেন যে, আহবানকারীর প্রতি সাক্ষীর মনোভাবের পরিবর্তন হয়েছে বা তার আচরণ বিরুদ্ধভাবাপন্ন হয়ে উঠেছে কিংবা কথাবার্তা শত্রুতাসুলভ মনে হচ্ছে তাহলে সেই সাক্ষীকে জেরা করার জন্য আহবানকারী পক্ষকে অনুমতি দিতে পারেন। এছাড়া আদালত যদি অনুভব করেন যে, সাক্ষী পূর্বে যা বলেছিলেন বর্তমানে আহবানকারীর বিপক্ষে তার বিপরীতে কথাবার্তা বলছেন এবং তদ্বারা সত্য চাপা পড়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে তখন আদালত উক্ত সাক্ষীকে জেরা করার জন্য আহবানকারী পক্ষকে অনুমতি দিতে পারেন।

১৫৫ ধারার বিধান মোতাবেক নিজ সাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে নিম্নলিখিত বিশেষ পদ্ধতিতে জেরা করা যায়-

(১) যে সকল ব্যক্তি সাক্ষ্য দিবেন তাদের মতে ঐ সাক্ষী বিশ্বাসের অযোগ্য বলে মনে হলে, তাদের দ্বারা সাক্ষ্য দেয়ায়ে।

(২) সাক্ষীকে ঘুষ দেয়া হয়েছে অথবা ঘুষের প্রস্তাবে সাক্ষী সম্মত হয়েছে অথবা সাক্ষ্য দেয়ার জন্য অন্য কোনরূপ দুর্নীতিমূলক প্রলোভনের প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে, তা প্রমাণ করে;

(৩) তার প্রদত্ত সাক্ষ্যে যে অংশ প্রতিবাদ সাপেক্ষ তা তার পূর্ববর্তী বিবৃতির সাথে সঙ্গতিবিহীন, তা প্রমাণ করে;

(৪) কোন ব্যক্তি যখন বলাৎকার অথবা শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে ফৌজদারীতে সোপর্দ হন, তখন দেখানো যেতে পারে যে, অভিযোগকারিণী সাধারণভাবে দুশ্চরিত্রা বা ভ্রষ্টা।

এই ধারার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, কোন সাক্ষী যদি অপর কোন সাক্ষীকে বিশ্বাসের অযোগ্য বলে ঘোষণা করেন, তবে জবানবন্দীর সময় তিনি তার অনুরূপ বিশ্বাসের কারণ নাও দিতে পারেন। তবে জেরার সময় তাকে উক্ত কারণ জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে।

বৈরী সাক্ষীর সাক্ষ্যের মূল্যায়নঃ বৈরী সাক্ষীর সাক্ষ্যকে খাটো করে দেখার কোন অবকাশ নেই। এটা অন্যান্য সাক্ষ্যের ন্যায়ই গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন মামলার নজীরে বলা হয়েছে যে, বৈরী সাক্ষীর সাক্ষ্যকে মূল্যহীন বলে মনে করার কোন কারণ নেই। ২ ডি এল আর ১৪ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত রায়ে বলা হয়েছে যে, বৈরী ঘোষিত সাক্ষীর সম্পূর্ণ বা আংশিক সাক্ষ্য বা উপস্থিতকারীর স্বপক্ষে প্রদত্ত সাক্ষ্য বা প্রতিপক্ষের পক্ষে প্রদত্ত সাক্ষ্য অগ্রাহ্য করতে হবে এরকম কোন বিধান নেই। ১১ ডি এল আর ৩১৬ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত রায়ে মহামান্য হাইকোর্ট অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, এরূপ সাক্ষীর সম্পূর্ণ বা আংশিক সাক্ষ্য বাদ দেয়া উচিত হবে না বরং উভয় পক্ষের পক্ষে বা বিপক্ষে প্রদত্ত সম্পূর্ণ সাক্ষ্য অন্যান্য সাক্ষীর সাক্ষ্যের মতই মূল্যায়ন করতে হবে। ২১ ডি. এল. আর ৮৪৪ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে যে, সাক্ষী শত্রুঘোষিত হলেই তার প্রদত্ত সাক্ষ্য মিথ্যা হয়ে যায় না।