ইচ্ছা শক্তি মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে তবে বিশ্ব ইচ্ছা পূরণ দিবস – কেন পালন করা হয় আমরা অনেকেই জানিনা। তাই আমরা যারা বিশ্ব ইচ্ছা পূরণ দিবস – কেন পালন করা হয় জানতে আগ্রহী আমার আজকের পোস্ট তাদের জন্য।
এই পৃথিবীতে সবারই ইচ্ছে আছে সে যেমন ধরনেরই মানুষ হোক না কেন! গরিব হোক আর ধনী হোক প্রত্যেকেরই নিজস্ব একটা ইচ্ছা থাকে যদিও ব্যক্তি ভেদে ইচ্ছা আলাদা হয়। তবে কোন ইচ্ছা শক্তির মর্যাদা কম নয়। নিচে বিশ্ব ইচ্ছা পূরণ দিবস – কেন পালন করা হয় বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
বিশ্ব ইচ্ছা পূরণ দিবস
মাঝে মাঝেই ইচ্ছে জাগে মনে
সাদা মেঘের ভেলায় ভেসে
হারাই দূরের বনে।
কখনো মেঘ বালিকা হই
কালো মেঘের আড়ালে গেলে
দূর পানে চেয়ে উদাস রই।
এই পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের মধ্যেই নিজের ইচ্ছা, স্বপ্ন, আশা, আকাঙ্ক্ষা সবকিছুই থাকে আর এই ইচ্ছা মূলত মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। মানুষকে তার সাফল্যে তার দ্বার প্রান্তে নিয়ে যায় তার ইচ্ছাসক্তি। বলা হয়ে থাকে যার স্বপ্ন নেই সে মৃত মানুষের মত তবে ব্যক্তি ভেদে মানুষের ইচ্ছা এবং চাহিদা ভিন্ন কিন্তু তারপরেও প্রত্যেকের চাহিদার গুরুত্ব সমান। মানুষের ইচ্ছা থাকলেও অনেকের ইচ্ছা হয়তো পূরণ হয় আবার অনেকের ইচ্ছা অপূর্ণই থেকে যায়। মহাত্মা গান্ধী বলেছেন –
” শক্তি কখনো শারীরিক গঠন থেকে আসে না, শক্তি আছে ইচ্ছা শক্তি থেকে”।
এই জগতে অনেক রকমের মানুষ দেখা যায়। কারো কাছে আশা বা স্বপ্ন মরীচিকা মনে হয় আবার কারো কাছে জীবনের অর্থই হচ্ছে তার ইচ্ছা বা আশা। তবে আশা যদিও পরস্পর বিরোধী স্থানে অবস্থান করে কিন্তু দিনশেষে ইচ্ছা শক্তি মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে কারণ মানুষ আশা নিয়ে বেঁচে থাকে। মানুষ স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে তাইতো স্বপ্ন নিয়ে সে বেঁচে থাকে। মানুষের ইচ্ছা শক্তি তাকে হারতে দেয় না, জয়ের পথ দেখায়। মানুষ বুকভরা আশা নিয়েই বেঁচে থাকে। মার্টিন গিনিস বলেছেন –
” স্থান শক্তি হলো একটা বেশীর মত আপনি যত বেশি এটাকে ব্যবহার করবেন এটা ততই শক্তিশালী হবে”।
ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে এসে ও মানুষ তার ইচ্ছা শক্তির জন্যই আবার ঘুরে দাঁড়ায়। একজন রাষ্ট্রনায়ক বা একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি শুধু স্বপ্ন দেখেন তা নয়, একজন সম্বলহীন মানুষ, ক্ষেতের মজুর, খেটে খাওয়া শ্রমিক, রিক্সাওয়ালা এমনকি একজন ভিক্ষুকের চোখেও স্বপ্ন থাকে। তারা প্রত্যেকেই স্বপ্ন দেখে এই পৃথিবীতে পরিবর্তন করার স্বপ্ন। এই পৃথিবীতে মানুষের যেমন সুখ রয়েছে তেমনি পাশে তার দুঃখ ও রয়েছে। জীবন থাকবে জীবনের ভাঙ্গা – গড়া, সুখ-দুঃখ, হাসি – কান্না,
আরো পড়ুনঃ ভালো বাসা দিবস কত তারিখ / ভালোবাসা দিবস কিভাবে আসলো জেনে নিন
বেদনা, হতাশা সবকিছুই থাকবে কিন্তু এর মধ্যেই মানুষ স্বপ্নের জাল বুনতে ভালোবাসে। মানুষের যতক্ষণ নিঃশ্বাস আছে ততক্ষণ সে স্বপ্ন দেখে। মানুষের ইচ্ছা শক্তি তার জীবনের শেষ সম্বল তাই তো নচিকেতা তার গানে গানে বলেছেন – ” যখন সময় থমকে দাঁড়ায়, নিরাশার পাখি দুহাত বাড়ায়, খুঁজে নিয়ে মন নির্জন কোণ কি আর করে তখন, স্বপ্ন স্বপ্ন স্বপ্ন দেখে মন”। এজন্যই হয়তো বলা হয়ে থাকে মানুষের মৌলিক চাহিদা পাঁচটি আর এর বাইরেও যদি কোন চাহিদা থাকতো –
তাহলে হয়তো ইচ্ছা পূরণ চাহিদা হিসেবে যুক্ত হতো। মানুষের কত রকম ইচ্ছা রয়েছে, কত কি করতে ইচ্ছে করে, ভালো লাগে তাই মানুষ যদি ইচ্ছে করে তাহলে সে তার স্বপ্নকে অনেক সময় পূরণ করে নিতে পারে।
ইচ্ছে করে চাঁদ ছুয়ে বানাই বাড়ি
নীল চাদোয়ার আলোয় ভরপুর
সাদা প্যাচানো তার সিঁড়ি।
মোড়ে মোড়ে সাজানো স্বপ্ন দৃশ্য
রুপালি নীল ফুলের বাগানে
যেন অবাক করা এক বিশ্ব।
বিশ্ব ইচ্ছা পূরণ দিবস কেন পালন করা হয়
ইচ্ছা পূরণ কথাটি শুনলেই মনে হয় মানুষের স্বপ্ন পূরণের কথা কিন্তু এই স্বপ্নের মধ্যে রয়েছে এক করুণ কাহিনী। যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসী ক্রিস গ্রেশিয়াস বড় হয়ে পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু যখন তার বয়স সাত ৭ বছর তখন সে লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত হয় যার কারণে তার পুলিশ হওয়ার স্বপ্নটা আর হয়তো কখনোই পূরণ হওয়া সম্ভব হবে না। কিন্তু তার পুলিশ অফিসার হওয়ার খবরটা যুক্তরাষ্ট্রের এ্যারিজোনার স্থানীয় পুলিশ বিভাগ জানতে পারে এবং তারা ঠিক করে ক্রিসকে একদিনের জন্য পুলিশ অফিসার বানাবে এবং তাকে একদিনের জন্য পুলিশ অফিসার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করে।
বিশ্ব ইচ্ছা পূরণ দিবস কবে থেকে শুরু হয়
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার স্থানীয় পুলিশ বিভাগ যেদিন ক্রিস এর স্বপ্ন পূরণ করেন সেই দিনটি ছিল ১৯৮০ সালের ২৯ শে এপ্রিল। এর পরবর্তী সময়ে অর্থাৎ ২০১০ সাল থেকে এই দিনটি বিশ্ব ইচ্ছা পূরণ দিবস বা উইস ডে হিসেবে পালন করা হয়। পরবর্তীতে এই ইচ্ছা পূরণ দিবস টি ধীরে ধীরে সব দেশ জানতে পারে এবং সবাই এই ইচ্ছা পূরণ দিবস পালনের জন্য ” ইচ্ছা পূরণ ফাউন্ডেশন ” গঠন করে যা বর্তমান সময়ে পৃথিবীর অন্যতম সেরা শিশু চ্যারিটি ফাউন্ডেশন হিসেবে পরিচিত।
ইচ্ছা পূরণ দিবস টি বিশ্বের ৪৮ টি দেশ পালন করে থাকে তবে এই দিবসটি মূলত পালন করা হয়ে থাকে বিশ্বের অসুস্থ শিশুদের ইচ্ছা পূরণ করার মাধ্যমে। যেসব শিশুগুলো অসুস্থ অবস্থায় রয়েছে এবং তাদের স্বপ্নগুলো পূরণ হওয়ার আগেই অর্থাৎ মুকুলে ঝরে পড়ে সেই সব শিশুদের ইচ্ছা পূরণের মাধ্যমে এই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান ও ভারত এই বিশ্ব ইচ্ছা পূরণ দিবস পালন করা হয়ে থাকে এবং তারা কার্যক্রম পরিচালনা করে ম্যাক এ উইশ ইন্টারন্যাশনালের।
আরো পড়ুনঃ আন্তর্জাতিক যুব দিবস – কবে পালিত হয় জেনে নিন
তবে বাংলাদেশে যদিও এর ঘোষণা এখনো হয়নি তবে পথ শিশুদের নিয়ে মাঝেমধ্যে ইচ্ছা পূরণের কিছু অনুষ্ঠান পরিলক্ষিত হয়। তবে মানুষ ইচ্ছে করলে তার পাশে থাকা বাচ্চাদের সামান্য কিছু উপহার দিয়ে তাদের চমকে দিতে পারে তখন বোঝা যায় তাদের মুখের হাসিটা কত দামী। ব্যক্তি ভেদে যদিও ইচ্ছা ছোট বড় হতে পারে কিন্তু কোন ইচ্ছারি গুরুত্ব কম নয়, মানুষের ইচ্ছাকে কখনো তুচ্ছ করা ঠিক নয়। তাইতো কবি বলেছেন –
আমার যত চাওয়া হয় যেন পূরণ
মহান প্রভুর নিকট এইটুকু নিবেদন।
Leave a comment