আজকের চীন হল গণ-প্রজাতন্ত্রী এবং একটি শক্তিশালী সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এই চীনের স্রষ্টা মাও জেদং (Mao Zedong)। তিনি বলেছেন: “The Chinese people is also a people with a glorious revolutionary tradition and a splendid historical heritage.” সাম্রাজ্যবাদী ও সামন্ততান্ত্রিক শাসন শোষণের বিরুদ্ধে জনগণের গণ-আন্দোলনের সুদীর্ঘ সংগ্রামী ইতিহাস এবং মাও-এর বিচক্ষণ নেতৃত্ব এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৪৯ সালের ১লা অক্টোবর কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে চীনে গণ-প্রজাতন্ত্রী সরকারের সভাপতি হন মাও।
১৯৪০ সালে প্রকাশিত তাঁর বিখ্যাত On New Democracy শীর্ষক এক নিবন্ধে মাও চীনের বিপ্লবের প্রকৃতি, লক্ষ্য ও তাৎপর্য সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন। প্রকৃত প্রস্তাবে মাও মার্কসবাদ লেনিনবাদ-এর মতাদর্শের ভিত্তিতে এবং চীনের বাস্তব অবস্থার পর্যালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে চীনের গণ বিপ্লবকে অভীষ্ট লক্ষ্যে পরিচালিত করেছেন।
বিপ্লবের লক্ষ্য সম্পর্কে মাও:
মাও জনগণের বৈপ্লবিক চেতনা এবং বাস্তববাদী ও দায়িত্বশীল মনোভাবের উপর গুরুত্ব আরোপ করে চীনের বিপ্লবকে দেশ ও দেশবাসীর সার্থক পরিণতির দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তিনি এই বিপ্লবকে কেবলমাত্র রাজনীতিক ও আর্থনীতিক দিক থেকে দেখেননি। বিপ্লবের সাংস্কৃতির লক্ষ্যের উপরও গুরুত্ব আরোপ করেছেন। রাজনীতিক ও আর্থনীতিক শাসন-শোষণের অবসানের সঙ্গে সঙ্গে চীনের জনগণকে এক নতুন সংস্কৃতির প্রগতিশীল পরিমণ্ডলের সন্ধান দেওয়াও এই বিপ্লবের লক্ষ্য। মাও বলেছেন: “…Communists have struggled not only for the Political and Economic revolution in China, but also for the cultural revolution all aiming at the construction of a new society and a new Country for the chinese people, in which not only a new system of politics and economy but also a new culture will prevail.”
নয়া-গণতান্ত্রিক বিপ্লব:
১৯১৯ সালের ৪ঠা মে-র আন্দোলনের সময় থেকেই চীনের বিপ্লবের ইতিহাসে এক নতুন পর্যায়ের সূত্রপাত হয়। একে বলা হয় ‘নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব’। ১৯১৯ সালের ৪ঠা মে-র আন্দোলনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক বিপ্লবের এই ধারাটি প্রতিপন্ন হয়। এই আন্দোলনের পরবর্তী পর্যায়ে শ্রমিক কৃষকের নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক বিপ্লব সংগঠিত হতে থাকে। জাতীয় বুর্জোয়ারা শ্রমিক-কৃষক শ্রেণীকে অনুসরণ করে। এই আন্দোলন সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা, সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে পরিচালিত হতে থাকে। তা ছাড়া এই নতুন পর্যায়ের আন্দোলনের মাধ্যমে নতুন সাংস্কৃতিক বিপ্লবেরও সূত্রপাত ঘটে। হ্যাং স্যুইন (Hang Suying) মন্তব্য করেছেন: “The 4th May Movement was as much a cultural as a political movement; it was anti-confucianist, anti-feudalism, anti-imperialist.” ১৯৪৯ সালে গণ-প্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠিত হয়। তার আগে পর্যন্ত বিপ্লবের এই ধারা অব্যাহত ছিল। ১৯২১ সালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর কমিউনিস্ট পার্টির পরিচালনায় শ্রমিক কৃষকের মৈত্রী এবং বুর্জোয়াদের সহযোগিতায় চীনের বিপ্লবের এই পর্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটে। আধা-সামন্ততান্ত্রিক ও আধা-ঔপনিবেশিক সমাজব্যবস্থা এবং সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার অন্তবর্তী একটা উত্তরণশীল পর্যায় হল নয়া-গণতান্ত্রিক বিপ্লব। এ হল এক নতুন গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের উদ্দেশ্যে শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে পরিচালিত বিপ্লব।
নয়া-গণতান্ত্রিক বিপ্লবের স্বরূপ:
মাও-এর মতানুসারে ঐতিহাসিক বৈশিষ্ট্যগত বিচারে চীনের বিপ্লব দু’টি পর্যায়ে বিভক্ত। এই দু’টি পর্যায় হল গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র। তাঁর On New Democracy প্রবন্ধে মাও বলেছেন: “The historical characteristics of the China Revolution is that it is divided into two steps that of democracy and that of socialism.” বিপ্লবের গণতান্ত্রিক পর্যায়টি হল এক বিশেষ এবং নতুন ধরনের গণতন্ত্র (New Democracy)। এ হল চৈনিক ধাঁচের বিশেষ গণতন্ত্র। এ কোন সাধারণ গণতন্ত্র নয়। মাও-এর কথায় “The democracy of the first step is not democracy in its general sense, but a new special type of a Chinese style, the New Democracy.” নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবে কমিউনিস্ট পার্টির পরিচালনায় শ্রমিক শ্রেণী নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করে। এই বিপ্লবে শ্রমিক, কৃষক, পাতি-বুর্জোয়া এবং জাতীয় বুর্জোয়ার মধ্যে সহযোগিতার ভূমিকা বর্তমান থাকে। নয়া গণতন্ত্রে জনগণের গণতান্ত্রিক একনায়কতন্ত্র (People’s Democratic Dictatorship) প্রতিষ্ঠিত হয়। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সংগঠনের জন্য নয়া-গণতান্ত্রিক বিপ্লব প্রয়োজন। এই বিপ্লব সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক স্তর হিসাবে কাজ করে। মাও বলেছেন: “A new democratic revolution is a revolution of the broad masses of the people led by the proletariat and directed against imperialism and feudalism. China must go through revolution before she can go forward to a socialist revolution, otherwise it is impossible.”
নয়া গণতন্ত্রে জনগণের গণতান্ত্রিক একনায়কত্ব:
চীনের নয়া-গণতান্ত্রিক বিপ্লবের সঙ্গে ইউরোপ আমেরিকার বুর্জোয়া বিপ্লবের বা পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বহারা শ্রেণীর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মিল নেই। ইউরোপ ও মার্কিন বিপ্লবের মাধ্যমে বুর্জোয়া ও একনায়কত্বের অধীন পুঁজিবাদী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে সর্বহারা শ্রেণীর একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু চীনের নয়া-গণতন্ত্রে জনগণের গণতান্ত্রিক একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। চীনের আধা-সামন্ততান্ত্রিক ও আধা-ঔপনিবেশিক সমাজব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এ হল এক নতুন ধরনের একনায়কত্ব। নয়া-গণতন্ত্রে ‘জনগণের গণতান্ত্রিক একনায়কত্ব’ (People’s Democratic Dictatorship)-এর ধারণা মাও বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। মাও-এর মতানুসারে শ্রমিক-কৃষক, শহরের পাতি-বুর্জোয়া এবং জাতীয় বুর্জোয়ারাই হল নয়া-গণতন্ত্রের জনগণ। এদের একনায়কত্বই হল নয়া গণতন্ত্রে জনগণের একনায়কত্ব। জনগণের জন্য গণতন্ত্র এবং প্রতিক্রিয়াশীলদের জন্য ‘দমনমূলক ব্যবস্থা’—এই দু’–এর সমাহারই হল জনগণের গণতান্ত্রিক একনায়কত্ব মাও বলেছেন: “The combination of these two aspects, democracy for the people and dictatorship over the reactionaries, is the People’s Democratic Dictatorship.”.
নয়া-গণতান্ত্রিক অর্থনীতি:
মাও নয়া-গণতন্ত্রের আর্থনীতিক বৈশিষ্ট্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। সান ইয়াৎ সেন ১৯২৪ সালে কুয়োমিনতাং-এর আর্থিক ক্ষেত্রে নীতি ও লক্ষ্য ঘোষণা করেন। কমিউনিস্ট পার্টি গণ-বিপ্লবের প্রাথমিক পর্বে সেই নীতি ও উদ্দেশ্য গ্রহণ করে। নয়া-গণতান্ত্রিক বিপ্লবে বৃহৎ একচেটিয়া প্রতিষ্ঠানগুলির জাতীয়করণের কথা বলা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল ব্যক্তিগত পুঁজি যেন জনগণের জীবনযাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে। তাই যে সমস্ত পুঁজি জনগণের জীবনযাত্রাকে পরিচালনা করে না। তার উপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়নি। জাতীয় অর্থনীতির মূল ভিত্তি হবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগ। নয়া-গণতন্ত্রের অর্থনীতি পুঁজির নিয়ন্ত্রণ এবং ভূমিস্বত্বের সমতার পথে পরিচালিত হবে। সমাজতান্ত্রিক উপাদান ও বৈশিষ্ট্যের উপর গুরুত্ব আরোপিত হবে। সমবায়ভিত্তিক উদ্যোগসমূহও সমাজতান্ত্রিক নীতির অনুগামী হবে। মুষ্টিমেয়ের একচেটিয়া অধিকার চীনের আর্থনীতিক কাঠামোতে স্বীকার করা হবে না। গ্রামাঞ্চলে সামস্ততান্ত্রিক সম্পর্কের অবসান ঘটবে। প্রকৃত চাষীকেই জমি বণ্টন করা হবে। তবে চীনের অর্থনীতি অনগ্রসর। তাই এই স্তরে সকল ব্যক্তিগত মালিকানার বিলোপ সাধনের নীতি গ্রহণ করা হয়নি।
নয়া-গণতন্ত্রের সংস্কৃতি:
মাও-এর বক্তব্য অনুসারে গণ-বিপ্লবের উদ্দেশ্যের মধ্যে রাষ্ট্রব্যবস্থা ও অর্থনীতির সঙ্গে গণ-সংস্কৃতিও অন্তর্ভুক্ত। গণ-বিপ্লবের শক্তিশালী হাতিয়ার হল সাংস্কৃতিক বিপ্লব। মাও বলেছেন: “Revolutionary culture is a powerful revolutionary weapon of the people.” চীনে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের সঙ্গে সঙ্গে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পরিবর্তনের সূত্রপাত ঘটে। এই সাংস্কৃতিক বিপ্লব হল মতাদর্শগত বিচারে রাজনীতিক ও আর্থনীতিক বিপ্লবের প্রতিফলন। নয়া গণতন্ত্রে জনগণের স্বার্থে সাংস্কৃতিক আন্দোলন পরিচালিত হয়। নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবে বিজ্ঞানসম্মত জাতীয় এবং গণ-সংস্কৃতির কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়। এই সংস্কৃতি সবরকম সামস্ততান্ত্রিক এবং কুসংস্কারমূলক ধারণার পরিপন্থী। নয়া গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির মূল কথা হল সাম্রাজ্যবাদী ও সামন্ততান্ত্রিক শাসন-শোষণের বিরোধিতা এবং চীনের জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও জাতিগত বৈশিষ্ট্যের সংরক্ষণ। সর্বহারার নেতৃত্বে জনগণের ব্যাপক অংশের দ্বারা এই সাংস্কৃতিক বিপ্লব পরিচালিত হবে। মাও বলেছেন: “The culture of New Democracy is the anti imperialist, anti-feudal culture of the mass and the people that led by proletariat.”
সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা:
বর্তমানে চীন ‘নয়া গণতন্ত্র’ থেকে ‘সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে’ রূপান্তরিত হয়েছে। মাও বলেছিলেন যে চীনের বৈপ্লবিক ইতিহাসের দু’টি পর্ব হল গণতান্ত্রিক পর্ব এবং সমাজতান্ত্রিক পর্ব। বিপ্লবের এই দ্বিতীয় পর্ব অর্থাৎ সমাজতান্ত্রিক পর্বের উদ্দেশ্য ছিল বিপ্লবের গতিকে দ্রুততর করা এবং সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলা। চীনে বর্তমানে জনগণের প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ হল চীনের সর্বহারা শ্রেণীর এক সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্র দেশের শ্রমজীবী মানুষের নেতৃত্বে ও শ্রমজীবী মানুষের সহযোগিতায় পরিচালিত হয়।
চীনের গণ-বিপ্লব সম্পাদিত হয়েছে চীনের বিপ্লবী জনগণের দ্বারা। এই বিপ্লব পরিচালিত হয় মাও জে দঙ ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে। মানবসমাজের বিবর্তনের ধারায় এই বিপ্লব যথেষ্ট তাৎপর্যবাহী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে সংঘটিত বিশ্ব-ঘটনাবলীর মধ্যে চীনের বিপ্লব সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে দ্বি-মতের অবকাশ নেই। কারণ এই বিপ্লবের প্রভাব-প্রতিক্রিয়া কেবলমাত্র চীনের আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। এর দ্বারা অন্যান্য দেশের মুক্তি আন্দোলন এবং সামগ্রিকভাবে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছে এবং এই প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। এই বিপ্লবের প্রকৃতি, আশু ও চূড়ান্ত লক্ষ্য, বিশ্ববিপ্লবী প্রক্রিয়া প্রভৃতি দিক থেকে এই বিপ্লবের তাৎপর্যকে পর্যালোচনা করা দরকার।
(১) নতুন ধরনের বিপ্লব: চীনা বিপ্লব হল এক নতুন ধরনের বিপ্লব। আধুনিক বিশ্ব ইতিহাসের দু’টি যুগান্তকারী বিপ্লব হল ফরাসী বিপ্লব ও রুশ বিপ্লব। ফরাসী বিপ্লবকে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব এবং ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবকে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব হিসাবে গণ্য করা হয়। কিন্তু চীনের গণবিপ্লব প্রথাগত অর্থে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব বা সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব নয়। চীনের গণবিপ্লব এক নতুন ধরনের বিপ্লব, যদিও এই দুই ধরনের বিপ্লবের সঙ্গে চীনা বিপ্লবের সাদৃশ্য পুরোপুরি অনুপস্থিত নয়। মাও জে-দং-এর কথায় এটা হল নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব। তাঁর বক্তব্য অনুসারে পরিধিগত দিক থেকে এটা এক ধরনের বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক বিপ্লব। কারণ, এর লক্ষ্য বুর্জোয়া সম্পত্তি ব্যবস্থার বিলোপ ঘটানো নয়। এর আশু লক্ষ্য হল কেবলমাত্র সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদের ধ্বংসসাধন। কিন্তু একই সাথে মনে রাখা প্রয়োজন যে, এ পুরানো ধরনের বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব নয়। এটা হল এক নতুন ধরনের গণতান্ত্রিক বিপ্লব যার চূড়ান্ত লক্ষ্য হল সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা।
(২) বিশ্বসমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের অংশ: চীনের গণবিপ্লব সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ধারাকে সমৃদ্ধতর করেছে। আশু লক্ষ্যের বিচারে রুশ বিপ্লবের সঙ্গে চীনা গণবিপ্লবের পার্থক্য আছে। কিন্তু চূড়ান্ত লক্ষ্যের দিক থেকে উভয় বিপ্লবের মধ্যে মৌল সাদৃশ্য বর্তমান। এ দিক থেকে বলা যায় যে, চীনের গণ-বিপ্লব রুশ বিপ্লবের ধারাকেই সমৃদ্ধতর ও বিস্তৃততর করেছে। চীনের গণ-বিপ্লবের এই তাৎপর্যের আর একটি দিক আছে। বলা হয় যে, চীনের বিপ্লব বিশ্ব-সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবেরই অংশ। চীনের বিপ্লবের এই তাৎপর্য সম্পর্কে মাও বলেছেন, “The new-democratic revolution is part of the world proletarian-socialist revolution for it resolutely opposes imperialism, ite international capitalism.” এই বিপ্লবের ফলে পৃথিবীর একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিশ্ব পুঁজিবাদের অবসান ঘটেছে এবং পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে পুঁজিবাদের ক্ষয়িষ্ণু রূপটি প্রকট হয়ে উঠেছে। চীনের এই বিপ্লব বিশ্বসমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের একটি অংশ। মাও-এর মতানুসারে চীনের বিপ্লব শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে সর্বহারার সমাজতান্ত্রিক বিশ্ববিপ্লবের অংশ। মাও বলেছেন: “It is no longer a part of the old bourgeois or capitalist world revolution, but a part of the new world revolution-the proletariat socialist revolution.”
(৩) সমাজতান্ত্রিক সমাজে উত্তরণের একটি ক্ষণস্থায়ী স্তর: চীনের গণ-বিপ্লব বিশ্বের এক বিরাট সংখ্যক মানুষকে সাম্রাজ্যবাদী ও সামন্ততান্ত্রিক শোষণ থেকে মুক্ত করেছে। এই নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের আশু লক্ষ্যই ছিল সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদের অবসান ঘটানো। একদিকে এই বিপ্লব দুই শোষণ ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়েছে। অন্যদিকে সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করেছে। চীনের গণ-বিপ্লব আধা সামন্ততান্ত্রিক ও আধা-ঔপনিবেশিক স্তর থেকে সমাজতান্ত্রিক সমাজে উত্তরণের এক ক্ষণস্থায়ী স্তর বিশেষ। এই নতুন ধারণাটি মার্কসীয় চিন্তা-ভাণ্ডারে সংযোজিত হয়েছে। এই স্তরে দেশ জনগণতান্ত্রিক একনায়কত্বের দ্বারা পরিচালিত হয়।
(৪) মার্কসবাদের প্রায়োগিক মূল্য প্রমাণিত হয়েছে: রুশ বিপ্লবের পর চীনের বিপ্লব মার্কসবাদের কার্যকারিতাকে বলিষ্ঠ প্রভাবে প্রমাণ করেছে। এতে প্রমাণিত হয় যে মার্কসবাদ একটা বদ্ধ-ধারণার সমষ্টিমাত্র নয়। এ হল কর্মের নির্দেশ। এও প্রমাণিত হল যে মার্কসবাদ ইউরোপীয় দর্শন মাত্র নয়। এর সার্বজনীন প্রয়োগ-যোগ্যতা আছে। এও প্রমাণিত হল যে মার্কসবাদ কর্তৃক আবিষ্কৃত সমাজ পরিবর্তনের সাধারণ নিয়মগুলি বিশ্বের সকল সমাজের ব্যাখ্যা ও পরিবর্তনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কোন শোষিত জাতির মুক্তির ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করতে পারে একমাত্র মার্কসবাদ-লেনিনবাদ। মার্কসবাদ-লেনিনবাদের বৈজ্ঞানিক ভিত্তির যথার্থতা চীনের গণ-বিপ্লবের মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে প্রতিপন্ন হয়েছে।
(৫) মার্কসবাদের সৃজনশীল ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ: চীনের গণ-বিপ্লব মার্কসবাদের সৃজনশীলতা ব্যাখ্যা ও প্রয়োজনীয়তার গুরুত্বকে তুলে ধরেছে। মার্কসবাদে সমাজ বিবর্তনের সাধারণ নিয়মের পাশাপাশি জাতীয় বৈশিষ্ট্যের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। মাও-এর নেতৃত্বাধীন চীনের কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদকে বন্ধ ধারণার সমষ্টি হিসাবে গ্রহণ করেন নি। ফলে এই দল রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ছাঁচটি অন্ধভাবে অনুকরণের চেষ্টা করেনি। এই দলও মাও চৈনিক সমাজের বিশেষত্বটি উপলব্ধি করেছেন। তাঁরা চীন বিপ্লবের পরিপ্রেক্ষিতের সঙ্গে রুশ বিপ্লবের পরিপ্রেক্ষিতটির পার্থক্য যথার্থভাবে অনুধাবন করেছেন। এই উপলব্ধি ও অনুধাবনের ভিত্তিতেই চীনের গণ-বিপ্লবের রণকৌশল ও রণনীতি গড়ে তোলা হয়েছে। মার্কসবাদের এই সৃজনশীল প্রয়োগ ও ব্যাখ্যার ফলেই চীনের বিপ্লব সাফল্য লাভ করেছে।
(৬) সর্বহারা শ্রেণীর প্রাধান্যমূলক ভূমিকা: চীনের বিপ্লব বর্তমান পৃথিবীতে মানবসমাজে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধনের জন্য সর্বহারা শ্রেণীর রাজনীতিক চেতনা, সংগঠন ও সংগঠিত প্রয়াসের গুরুত্বকে তুলে ধরেছে। এই বিপ্লব প্রমাণ করেছে যে, বিপ্লব একটি সচেতন, সংগঠিত প্রয়াস। এর জন্য দরকার হয় বিপ্লবী কর্মকাণ্ড, দক্ষতা ও দৃঢ় সংকল্পের। এ-সব কিছু সম্ভব হতে পারে সর্বহারা শ্রেণীর অগ্রগামী বাহিনীর মাধ্যমে এদের নিয়ে গঠিত হয় কমিউনিস্ট পার্টি। আজকের বিশ্বে বুর্জোয়া শ্রেণীর বৈপ্লবিক ভূমিকা সম্পূর্ণভাবে নিঃশেষিত। এই কারণে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের নেতৃত্ব একমাত্র সর্বহারা শ্রেণীই দিতে পারে। অন্য কোন শ্রেণী নয়। চীনের ১৯১৯ সালের ৪ঠা মে-র আন্দোলনের পর বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের নেতৃত্ব ক্রমশ সর্বহারা শ্রেণীর হাতে আসে। চীনের বুর্জোয়া শ্রেণীর নেতৃত্ব সাফল্যের সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদী শোষণ-বঞ্চনার মোকাবিলা করতে পারে নি। চীনের বিপ্লবের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্ব ছাড়া বিপ্লবের মাধ্যমে সাফল্য অর্জন অসম্ভব। মাও বলেছেন: “The entire history of revolution proves that without the leadership of the working class revolution fails and that with the leadership of the working class revolution triumphs.”
(৭) কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বের অপরিহার্যতা: সর্বহারা শ্রেণীর রাজনীতিক সংগঠন হিসাবে কেবল কমিউনিস্ট পার্টি যে শোষণভিত্তিক সমাজের অবসান ঘটাতে পারে, তা চীনের গণ-বিপ্লবের অভিজ্ঞতায় প্রমাণিত হয়েছে। কমিউনিস্ট দলই বিপ্লবী শক্তিসমূহের নেতৃত্ব দিতে পারে। অন্য রাজনীতিক দলগুলি আপসকামী অথবা বৈপ্লবিক প্রক্রিয়ার অগ্রগতির একটা পর্যায়ে রক্ষণশীল হয়ে উঠে। চীনের গণ-বিপ্লবের সফল পরিণতির অন্যতম চাবিকাঠি হল চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সার্থক ভূমিকা। বিপ্লবী শক্তির নেতা হিসাবে কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকার গুরুত্ব চীনের বিপ্লবের মাধ্যমে প্রতিপন্ন হয়েছে। পার্টি মার্কসবাদ লেনিনবাদকে সৃজনশীল পথে প্রয়োগ করেছে। পার্টি তত্ত্ব ও প্রয়োগের মধ্যে ঐক্যসাধনের মাধ্যমে বিপ্লবকে সাফল্যের সঙ্গে পরিচালিত করেছে। পার্টি গ্রামাঞ্চলে বিপ্লবী সংগঠন গড়ে তুলেছে, সর্বহারা শ্রেণীকে সংগঠিত করেছে, শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে রাজনীতিক সচেতনতা সৃষ্টি করেছে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি যথার্থ সংগ্রামের মাধ্যমে গণ-বিপ্লবকে সফল করে শোষণমুক্ত গণতান্ত্রিক সমাজ গঠন করেছে। চীনে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের সাফল্যের পর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সার্থকতা এসেছে কমিউনিস্ট পার্টির দায়িত্বশীল মহান ভূমিকার মাধ্যমে। মাও বলেছেন: “Except for the Communist Party, none of the political parties, bourgeois or petty-bourgeois, is equal to the task of leading China’s two great revolutions, democratic and socialist, to their complete realization.”
(৮) তিনটি গণনীতি: তিনটি মৌল গণনীতি ঘোষণার মাধ্যমে চীনের গণ-বিপ্লবের আর একটি তাৎপর্য প্রতিপন্ন হয়েছে। ডাঃ সান ইয়াৎ সেন কুয়োমিনতাং দলের জন্য তিনটি মূল নীতি বা লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেগুলিকে গণ-বিপ্লবের তিনটি মৌল নীতি হিসাবে স্বীকার করা হয়। এই তিনটি গণনীতি হলঃ
-
(ক) সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে মৈত্রী,
-
(খ) কমিউনিস্টদের সঙ্গে সহযোগিতা এবং
-
(গ) কৃষক শ্রমিকের স্বার্থ সংরক্ষণ।
সাম্রাজ্যবাদী ও সামন্ততান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে বৈপ্লবিক সাফল্যের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের সহযোগিতা অপরিহার্য। সোভিয়েত ইউনিয়নের সাহায্য ছাড়া সাম্রাজ্যবাদ এবং সামন্ততন্ত্র বিরোধী সংগ্রামে সাফল্য সুদূরপরাহত। মাও বলেছেন: “Without the help of the Soviet Union final victory is beyond imagination.” আবার বিপ্লবের অন্যতম মৌল নীতি হিসাবে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সহযোগিতার কথা হয়েছে। বিপ্লবের সাফল্যের স্বার্থে কমিউনিস্ট পার্টির সহযোগিতাও অপরিহার্য। চীনের জনগণ কমিউনিস্ট পার্টির মতাদর্শ ও কর্মসূচীকে সর্বান্তকরণে গ্রহণ করেছে। তা ছাড়া বিপ্লবের তৃতীয় গণনীতি হল চীনের জাতীয় সমস্যা। কৃষক-শ্রমিকের স্বার্থকে অবহেলা করলে চীনের বিপ্লব সফল হতে পারে না।
(৯) এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলির পরিবর্তনের ক্ষেত্রে চীনা বিপ্লবের উপযোগিতা: চীনের গণ বিপ্লব এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক দেশের নিপীড়িত জনগণের কাছে বিপ্লবের অনুকরণীয় আদর্শ বা মডেল হয়ে উঠেছে। এই সমস্ত দেশের সঙ্গে প্রাকৃ-বিপ্লবকালীন চীন সমাজের ব্যাপক সাদৃশ্য বর্তমান। এই সব দেশগুলির অধিকাংশ আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা মূলত চীনের মতই আধা-সামস্ততান্ত্রিক। আবার এইসব দেশ বহুদিন ধরে ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে ছিল। ফলে, এইসব দেশের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে চীনের বিপ্লবের ধাঁচটি অনুসরণের উপযোগিতা রয়েছে। এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলির বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে চীন-বিপ্লবের উপযোগিতা অনস্বীকার্য। সাম্রাজ্যবাদী এবং প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির পরাক্রম সত্ত্বেও দুর্বার গণ-আন্দোলনের কাছে তার পরাজয় অনিবার্য—এ কথা চীনের বিপ্লবের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। এইভাবে চীনের বিপ্লব দুনিয়ার শোষিত মানুষের কাছে এক অমুল্য প্রেরণা হিসাবে প্রতিপন্ন হয়েছে।
(১০) বলপ্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা প্রমাণিত: চীনের বিপ্লব বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে হিংসার অনিবার্য আবির্ভাবের প্রশ্নটিকে সামনে হাজির করেছে। বিপ্লব এক দীর্ঘায়িত প্রক্রিয়া। এর উঠা-নামা, আঁক বাঁক আছে। কাজেই কোন বিশেষ পর্যায়ে হিংসা বা বলপ্রয়োগকে পরিহার করা সম্ভব হলেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন প্রক্রিয়া থেকে বলপ্রয়োগকে সম্পূর্ণ দূরে রাখা যায় না। শাসক শ্রেণীর আগ্রাসী বলপ্রয়োগকে প্রতিরোধ করার জন্যই বিপ্লবে বলপ্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এই সত্য চীন বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
(১১) আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: পরিশেষে বলা যায় যে, গণ-প্রজাতন্ত্রী চীনের গণ-বিপ্লবের আন্তর্জাতিক প্রভাব-প্রতিক্রিয়াও তাৎপর্যপূর্ণ। (ক) চীনের বিপ্লব বিশ্বের রাজনীতিক মানচিত্রে পরিবর্তন এনেছে। এই বিপ্লব বিশ্ব রাজনীতিকে দারুণভাবে নাড়া দিয়েছে এবং বিশ্বের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনকে জোরদার করেছে। চীনের গণ-বিপ্লবের মাধ্যমে বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ শোষিত মানুষ সাম্রাজ্যবাদী শোষণের শিকল ছিঁড়ে অর্জন করেছে জাতীয় মুক্তি। তার ফলে বিশ্বরাজনীতির প্রকৃতি ও ভারসাম্য বদলে গেছে। আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স প্রভৃতি সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি বিশ্বরাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত ছিল। বিশাল আয়তন বিশিষ্ট ও জনবহুল গণ-চীনে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলশ্রুতি হিসাবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাজনীতির ভরকেন্দ্রের মৌলিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। (খ) গণ-চীনে গণ-বিপ্লবের সাফল্যের ফলে সাম্রাজ্যবাদ সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির অন্তর্নিহিত দুর্বলতা প্রকট হয়ে পড়ে। দেশের অধিবাসীদের সামগ্রিক জনশক্তির কাছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি যে কাগুজে বাঘ স্বরূপ তা স্পষ্টত প্রতীয়মান হয়। গণশক্তির জয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রমাণিত হয়েছে যে শ্রমজীবী মানুষের জয় এবং বুর্জোয়াদের পতন অনিবার্য। (গ) চীনের গণ-বিপ্লবের সাফল্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠিত হয় নয়া-অর্থনীতি ও নয়া-রাজনীতি। এবং আর্থনীতিক ও রাজনীতিক ক্ষেত্রে নয়া ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে সৃষ্টি হয় এক নয়া সংস্কৃতির। বিশ্ব-সমাজতান্ত্রিক সংস্কৃতির অংশ হিসাবে এই নয়া-সংস্কৃতির আত্মপ্রকাশ ঘটে। মাও মন্তব্য করেছেন: “The first imperialist World War and the victorious socialist October Revolution changed that historical direction of the world.”
Leave a comment