উত্তর: বিদ্যাপতি বাঙালি না হয়েও বাংলা কবিতা রচনা করে বাংলা বৈষ্ণব সাহিত্যে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁর পিতার নাম গণপতি এবং তাঁদের কেলিক উপাধি ছিল ‘ঠাকুর’। তিনি ‘মৈথিলী কোকিল’ ও ‘অভিনব জয়দেব’ হিসেবে পরিচিত। তিনি পঞ্চগৌড়ের অধীশ্বর শিব সিংহের সভাসদ ছিলেন। হরগৌরীর প্রতি তাঁর অকৃত্রিম ভক্তি থাকা সত্ত্বেও রাজমহিষী লছিমার অভিপ্রায় অনুসারেই তিনি ব্রজবুলি ভাষায় রাধা-কৃষ্ণের লীলা বিষয়ক পদ রচনা করেন। রাধা-কৃষ্ণের প্রেম সাগরে ডুব দিয়ে কবির নবজন্ম ঘটে। রাধা চরিত্র পরিকল্পনায় কবি অপূর্ব কবিত্বশক্তির পরিচয় দিয়েছেন। নবোদ্ভিন্ন যৌবনা কিশোরী রাধার বয়ঃসন্ধি থেকে কৃষ্ণবিরহের সুতীব্র আর্তি বর্ণনা বিদ্যাপতির কবিতার উপজীব্য। তাঁর কবিতা সম্পর্কে বঙ্কিমচন্দ্র বলেন : “বিদ্যাপতির কবিতা স্বর্ণহার, বিদ্যাপতির গান মুরজবীণাসঙ্গিনী স্ত্রীকণ্ঠগীতি।” বিদ্যাপতি সহস্রাধিক পদাবলি রচনা করেছিলেন। রাধাকৃষ্ণের উল্লেখ আছে এমন পদের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। তাঁর কবিতায় চৈতন্যোত্তর বৈষ্ণবতত্ত প্রতিফলিত হয়নি। তিনি এই অলৌকিক প্রেমকাহিনিকে মানবিক প্রেমকাহিনি হিসেবে রূপ দিয়েছেন। তিনি পদাবলীতে ধর্মীয় আবেগের চেয়ে রসবোধকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। যেমন-
“হে সখি হামারি দুখের নাহি ওর
এ ভরা বাদর মাহ ভাদর
শূন্য মন্দির মোর।”
বিচিত্রমুখী প্রতিভার অধিকারী বিদ্যাপতি পদাবলী ছাড়াও “কীর্তিলতা”, “পুরুষ পরীক্ষা”, “বিভাসাগর”, “গঙ্গাকাব্যাবলী”, “দানকাব্যাবলী”, “দুর্গাভক্তিতরঙ্গিণী” এবং “কীর্তিপতাকা” সহ অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেন।
Leave a comment