বিচার বিভাগ সভ্য রাষ্ট্র ব্যবস্থার অপরিহার্য অঙ্গ:
মানুষের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য তার ব্যক্তিত্ব বিকাশের উপর নির্ভরশীল। ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য কতকগুলি অধিকার ভোগ আবশ্যক। রাষ্ট্র আইনের মাধ্যমে অধিকারগুলি স্বীকার ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে। অধিকার সংরক্ষণের এই দায়িত্ব বস্তুতপক্ষে বিচার বিভাগই সম্পাদন করে। আইনের ব্যাখ্যা, বিবাদ-বিসংবাদের মীমাংসা, অধিকারগুলি বাস্তবে কার্যকর করা প্রভৃতি গুরু দায়িত্ব বিচার-বিভাগকেই পালন করতে হয়। তাই বিচার বিভাগ ছাড়া সভ্য সমাজ জীবনের কথা ভাবা যায় না। প্রকৃতপক্ষে, বিচার-বিভাগকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রের অস্তিত্বের কথা কল্পনারও অতীত।
লর্ড ব্রাইসের মতানুসারে সরকারের উৎকর্ষ বিচারব্যবস্থার উৎকর্ষের উপর নির্ভরশীল। তাঁর অভিমত হল: “There is no better test of the excellence of government than the efficiency of its judicial system.” ল্যাস্কিও অনুরূপ ধারণা পোষণ করেন। ডা. গার্নারের মতে, -বিভাগের অস্তিত্ব ব্যতিরেকে সভ্য রাষ্ট্রের কল্পনা করা যায় না’ (‘…. civilised state without judicial organs is hardly conceivable.”)। ব্রাইস আরও বলেন যে, ন্যায় বিচারের দীপশিখাটি অন্ধকারের মধ্যে নিভে গেলে কি ভীষণ সেই অন্ধকার। তাঁর কথায়: “If the lamp of justice goes out in darkness, how great is the darkness.”
বিচার-বিভাগের গুরুত্ব:
বিচার-বিভাগ হল সরকারের তৃতীয় অঙ্গ। এই বিচার-বিভাগ আধুনিক শাসনব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। সরকারের সঙ্গে ব্যক্তির, ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তি এবং অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানের যে সকল বিরোধের সৃষ্টি হয় তার ন্যায়সঙ্গত মীমাংসার জন্য বিচার-বিভাগের অস্তিত্ব অপরিহার্য। তা ছাড়া সাম্য, স্বাধীনতা, অধিকার প্রভৃতি রাষ্ট্রনীতিক অধিকার সংরক্ষণের জন্যও প্রয়োজন একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থার। নির্ভীক ও নিরপেক্ষ হতে পারলেই বিচার বিভাগ তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারে। স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা বর্তমান বিচারব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। বেন্থাম বলেছেন: “The administration of justice by the state must be regarded as a permanent and essential element of civilisation….”
রাজনীতিক ব্যবস্থার সঙ্গে বিচার-বিভাগের যোগাযোগ:
বিভিন্ন মাধ্যমের সাহায্যে রাষ্ট্র ক্ষমতা প্রযুক্ত হয়। বিচার বিভাগ হল এ ক্ষেত্রে অন্যতম একটি মাধ্যম। প্রকৃত প্রস্তাবে রাজনীতিক ব্যবস্থার সঙ্গে বিচার-বিভাগ ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কযুক্ত। রাজনীতিক দিক থেকে বিচার-বিভাগ নিরপেক্ষ হতে পারে না। বিচারব্যবস্থার কাঠামো, উদ্দেশ্য ও পদ্ধতি রাষ্ট্রব্যবস্থার উদ্দেশ্যের পরিপ্রেক্ষিতে নির্ধারিত হয়ে থাকে। তাই রাষ্ট্রব্যবস্থার লক্ষ্য এবং বিচারব্যবস্থার লক্ষ্য সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। প্রত্যেক রাজনীতিক ব্যবস্থায় নির্দিষ্ট ধরনের আর্থ-সামাজিক ও রাজনীতিক ব্যবস্থা বর্তমান থাকে। তদনুসারে বিচারব্যবস্থার কাঠামোকে বিন্যস্ত করা হয়। এই কারণে বিচারব্যবস্থা নির্দিষ্ট ধরনের আর্থ-সামাজিক ও রাজনীতিক ব্যবস্থার প্রতীক হিসাবে প্রতীয়মান হয়। বলা হয় যে, বিচার-বিভাগ রাজনীতিক ব্যবস্থা-নিরপেক্ষ হতে পারে না। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিচার বিভাগকে সমগ্র রাজনীতিক ব্যবস্থার একটি অপরিহার্য অঙ্গ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বলের মতানুসারে বিচারপতি ও আদালত হল সামগ্রিকভাবে প্রচলিত রাজনীতিক পদ্ধতির একটি বিশিষ্ট অংশবিশেষ। রাজনীতিক প্রভাবমুক্তভাবে বিচারকরা বিচার ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন না। সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিক ব্যবস্থায় বিচার-বিভাগের নিরপেক্ষ ভূমিকার উপর মোটেই গুরুত্ব আরোপ করা হয় না। বস্তুত সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ন্যায়বিচারের ধারণাই একেবারে আলাদা। এই সমাজব্যবস্থার উদ্দেশ্য হল উৎপাদন ব্যবস্থার উপর সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা, পুঁজিবাদী উৎপাদন সম্পর্কের অবসান এবং মানুষের দ্বারা মানুষের যাবতীয় শোষণের ধ্বংস সাধন। এই উদ্দেশ্য সাধনের উদ্যোগে সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় বিচার-বিভাগও হল একটি মাধ্যম।
আদালত এবং রাজনীতিক প্রক্রিয়া
রাজনীতিক প্রক্রিয়া ও বিচার বিভাগের মধ্যে সম্পর্ক প্রসঙ্গে মতানৈক্য:
রাজনীতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিচার বিভাগের সম্পর্কের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে পরস্পর-বিরোধী দ্বিবিধ দৃষ্টিভঙ্গি বা মতামতের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। এ প্রসঙ্গে একটি মত হল যে বিচার-বিভাগ রাজনীতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক রহিত। রাজনীতিক প্রক্রিয়া ও বিচার বিভাগের মধ্যে পরিপূর্ণ স্বাতন্ত্র্য পরিলক্ষিত হয়। বিচার-বিভাগের উপর কোন রকম রাজনীতিক প্রভাব থাকে না। রাজনীতিক প্রক্রিয়া ও বিচার বিভাগের মধ্যে সম্পর্ক প্রসঙ্গে এই ধারণা উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিলক্ষিত হয়। এ হল এই প্রসঙ্গে সাবেকি ধারণা। এ বিষয়ে দ্বিতীয় দৃষ্টিভঙ্গিটি সম্পূর্ণ বিপরীত। এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে বলা হয় যে রাজনীতিক প্রক্রিয়া ও বিচার ব্যবস্থা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এবং পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। উভয়ের মধ্যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার সম্পর্ক পরিলক্ষিত হয়। রাজনীতিক প্রক্রিয়ার অন্যতম অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হল বিচার-বিভাগ। অর্থাৎ রাজনীতিক প্রক্রিয়া থেকে বিচার-বিভাগ বিচ্ছিন্ন বা সম্পর্ক-রহিত নয়। এ হল বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি বা ধারণা।
রাজনীতিক ব্যবস্থায় কাঠামোগুলির মধ্যে স্বাতন্ত্র্য কৃত্রিমতাপূর্ণ:
উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সাবেকি ধারণার পরিপ্রেক্ষিতে বলা হয় যে আইনের ব্যাখ্যা করাই হল বিচার বিভাগের মূল কাজ। এবং এই কারণে বিভিন্ন রাজনীতিক কাঠামো (political structure)-র মধ্যে স্বাতন্ত্র্য রক্ষার কথা বলা হয়। উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনীতিক কাজকর্ম বিশেষ প্রকৃতির হয়ে থাকে। তাই এই ধরনের রাজনীতিক ব্যবস্থায় কাঠামোসমূহের মধ্যে স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার কথা বলা হয়। বলের অভিমত অনুসারে রাজনীতিক ব্যবস্থার কাঠামোগুলির মধ্যে স্বাতন্ত্র্য সম্পাদন সহজসাধ্য হলেও কৃত্রিমতাপূর্ণ হয়ে পড়ে। Modern Politics and Government শীর্ষক গ্রন্থে বল বলেছেন: “It is sometimes convenient to separate different political structures but this separation can be artificial, and it is often dictated by political patterns found in liberal democratic systems.” আধুনিক রাজনীতিক ব্যবস্থায় বিচার বিভাগের কার্যাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের অভিমত হল যে, আইন প্রণয়ন এবং আইনের ব্যাখ্যা ও আইনের প্রয়োগ এই সমস্ত কাজকর্মের মধ্যে কড়াকড়িভাবে সীমারেখা টানা বা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব নয়। সুতরাং আধুনিক রাজনীতিক ব্যবস্থায় বিচার-বিভাগের ভূমিকা প্রসঙ্গেও এই বক্তব্য পুরোপুরি প্রযোজ্য। দেশের প্রচলিত রাজনীতিক প্রক্রিয়া থেকে বিচার-বিভাগকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না। বল বলেছেন: “…in a discussion of the courts in modern political systems, it is impossible rigidly to distinguish between interpreting rules and making them, between rulemaking and rule adjudication.”
বিচারক ও আদালত রাজনীতিক প্রক্রিয়ার অংশ:
অ্যালান বলের অভিমত অনুসারে আধুনিক বিভিন্ন রাজনীতিক ব্যবস্থায় প্রশাসনিক আদালত ও প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল (administration courts and administrative tribunals)-এর সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে প্রশাসনিক ও বিচার বিভাগীয় কাঠামোর মধ্যে পার্থক্যের সীমারেখা ক্রমশ অস্পষ্ট হয়ে পড়েছে। সমগ্র আইনব্যবস্থা সম্পর্কে এ কথা আজ সাধারণভাবে সত্য যে, সমগ্র রাজনীতিক প্রক্রিয়ার তাৎপর্যপূর্ণ অংশ হল বিচারক ও আদালত। বল বলেছেন: “ Judges and courts of law are significant aspects of the total political process and a distorted view of that process would result if there were too crude a separation of functions.”
মার্কিন সুপ্রীম কোর্ট একটি রাজনীতিক প্রতিষ্ঠান:
বল এ প্রসঙ্গে রবার্ট ডালের অভিমত উদ্ধৃত করেছেন। রবার্ট ডালের অভিমত অনুসারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রীম কোর্টকে নিছক একটি আইনী প্রতিষ্ঠান হিসাবে প্রতিপন্ন করা ঠিক নয়। তা যদি করা হয়, তা হলে তা হবে মার্কিন রাজনীতিক ব্যবস্থায় সুপ্রীম কোর্টের তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকার অবমূল্যায়নের সামিল। কার্যক্ষেত্রে মার্কিন সুপ্রীম কোর্ট হল একটি রাজনীতিক প্রতিষ্ঠানও বটে। জাতীয় নীতির বিভিন্ন বিতর্কিত প্রশ্নে মার্কিন সুপ্রীম কোর্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। নাগরিক অধিকার, রাষ্ট্রপতি, কংগ্রেস প্রভৃতি সম্পর্কিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিক প্রশ্নে মার্কিন সুপ্রীম কোর্ট সিদ্ধান্তমূলক ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৫০ থেকে ১৯৬০ এই দশক জুড়ে মার্কিন সুপ্রীম কোর্টের এই ভূমিকা স্পষ্টত প্রতীয়মান হয়। বল বলেছেন: “The American Supreme Court has been the pacesetter in the 1950s and 1960s on important political questions such as civil rights, with the presidency and the Congress alternating between periods of inaction and reluctant following of political lead established by the Court in such controversial areas.”
বিচারব্যবস্থার প্রক্রিয়া রাজনীতিমুক্ত নয়:
তবে বল এও বলেছেন যে মার্কিন সুপ্রীম কোর্টের মত সকল আদালতের রাজনীতিক স্বাধীনতা নেই। এ ক্ষেত্রে মার্কিন আদালত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের (পূর্বতন) আদলতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য বর্তমান। সোভিয়েত ইউনিয়নে আদালতের রায়ের থেকে দলীয় নীতির উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হত। তবে বলের অভিমত হল যে রাজনীতিক জগৎ থেকে বিচারব্যবস্থার প্রক্রিয়া বিচ্ছিন্ন নয়। আইনগত কাঠামো, রাজনীতিক সংস্কৃতি এবং বিচারপতিদের সামাজিক ও রাজনীতিক মূল্যবোধের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়। বল বলেছেন: “But it is important to recognise that legal adjudication is not a process for removed from the world of politics, and that there is an interplay between the legal structure, the political culture and the political and social values of the judges, which all bring the legal system firmly into the arena of choice, priorities and conflict.”
বিচারব্যবস্থা রাজনীতিক প্রক্রিয়ার অংশ—দুটি কারণ:
বিচারব্যবস্থা হল রাজনীতিক প্রক্রিয়ার অংশবিশেষ। বল এ ক্ষেত্রে দু’টি মূল কারণের উপর বিশেষ জোর দিয়েছেন। (১) সাধারণত উদারনীতিক গণতান্ত্রিক মতবাদে অমিত শক্তিধর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ থেকে নাগরিকদের নিরাপত্তা রক্ষার প্রয়োজনীয়তার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এই উদ্দেশ্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার-বিভাগীয় প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা, বিচার-বিভাগের স্বাধীনতা বৃদ্ধি এবং বিচার-বিভাগীয় সিদ্ধান্তের উপর আস্থা ও মর্যাদা বৃদ্ধির ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করা হয়। অ্যালান বলের অভিমত অনুসারে এ হল আধা-অলীক (semi-fiction) ধারণা। এবং এই ধারণা বহু রাজনীতিক ব্যবস্থার স্থায়িত্বের প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য হিসাবে বিবেচিত হয়। এই কারণে কোন কান উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রশাসনিক আদালত ও আধা-বিচার-বিভাগীয় প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের প্রসারের পরিপ্রেক্ষিতে আশংকা ও অসন্তুষ্টি প্রকাশ করা হয়। বল বলেছেন: “This is why there is disquiet in some liberal democratic regimes over the growth of administrative courts quasi-administrative tribunals.” (২) আবার এই কারণে ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতির উপর জোর দেওয়া হয়। এর পিছনে দ্বিবিধ উদ্দেশ্য বর্তমান। এই দ্বিবিধ উদ্দেশ্য হল সরকারের হাতে মাত্রাতিরিক্ত রাজনীতিক ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন আটকান এবং অতি-গণতন্ত্র (excess of democracy) বা সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। বলের অভিমত অনুসারে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির উপর জোর দেওয়া হয় না। এখানে দলকেই জনগণের ইচ্ছার প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং আদালতকে মনে করা হয় জনগণের সেবক। সুতরাং এ ক্ষেত্রে এমন সিদ্ধান্ত স্বাভাবিক যে আদালতগুলি দলীয় নির্দেশের নিয়ন্ত্রণাধীন। তবে এই দলীয় নির্দেশ সব সময় সুস্পষ্টভাবে আসে না।
বিচারকদের মূল্যবোধ ও সামাজিক চাপ:
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্টত প্রতিপন্ন হয় যে গণতান্ত্রিক এবং সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে আইনগত ব্যবস্থার ব্যাপারে পার্থক্য বর্তমান। এবং এই পার্থক্যের পরিপ্রেক্ষিতে এই দুটি রাজনীতিক ব্যবস্থায় আদালতের ভূমিকার ক্ষেত্রে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। তবে এর থেকে এ কথা বলা যায় না যে উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আদালত রাজনীতিক প্রক্রিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে ট্রেড ইউনিয়নের ব্যাপারে ব্রিটিশ আদালতের দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে দুটি মামলার উল্লেখ করা হয়েছে। এই দুটি মামলা হল: Taff Vale decision of 1901 3 ‘Rookes V. Barnard of 1964। অর্থাৎ ট্রেড ইউনিয়ন সম্পর্কিত মামলায় প্রচলিত আইন ব্যাখ্যার ব্যাপারে ব্রিটিশ আদালতের বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। এই বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গির উৎস হল বিচারপতিদের ব্যক্তিগত মূল্যবোধ বা সামাজিক মূল্যবোধ অথবা উভয়ই। মামলা পরিচালনার সময় আইন ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে বিচারপতিদের ভূমিকাকে নৈর্ব্যক্তিক বলা যায় না। তাঁরা সামাজিক-রাজনীতিক মূল্যবোধ ও চাপকে অস্বীকার করতে পারেন না।
রাজনীতিক প্রক্রিয়ায় বিচার-বিভাগের ভূমিকা
অ্যালান বল রাজনীতিক প্রক্রিয়ায় বিচার-বিভাগের ভূমিকা বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। এবং এ ক্ষেত্রে চারটি বিষয়ের উপর আলোকপাত করেছেন। এই চারটি বিষয় হল:
-
(১) আইনের প্রকৃতি এবং রাজনীতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তার সম্পর্ক (“the nature of law, and its relationship to political decision making.”);
-
(২) আদালতসমূহের সাংগঠনিক কাঠামো এবং বিচারপতিদের বাছাই (“the structure of the courts and the selection of personal.”);
-
(৩) আদালতসমূহের কার্যাবলী এবং বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণের স্বরূপ (“functions of the courts and the nature of the external controls.”;
-
(8) আইনগত প্রক্রিয়ার সঙ্গে নাগরিকদের সম্পর্ক (“the relation of the citizen to the legal process.”)।
Leave a comment