অথবা, বাউলদের অসাম্প্রদায়িক চেতনার পরিচয় দাও

উত্তর : হিন্দু ও মুসলিম সংস্কৃতির মিশ্রণে গড়ে উঠেছে বাউল সংস্কৃতি। বাউলগানে জাতিধর্মনির্বিশেষে সকল মানুষের মিলন প্রয়াস লক্ষণীয়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বঙ্গদেশে যে নবজাগরণ ঘটেছিল তারই প্রেক্ষাপটে বাংলায় বাউল মতবাদের উন্মেষ। সামাজিক শোষণ, অবিচার, বৈষম্য এবং ধর্মীয় অধিকার বঞ্চিত মানুষের জন্য একটি শাস্ত্রাচারহীন বাউল ধর্মমতের আবির্ভাব ঘটে। বাউলরা শাস্ত্রের অনুশাসনকে প্রত্যাখ্যান করেছে একটি সুন্দর জীবন বোধের জন্য।

বাউলরা মানুষে মানুষে ভেদাভেদ দেখে দুঃখ পেয়েছে। তাই ব্যাকুল হয়ে খুঁজে বেরিয়েছে এ বেদনার অবসানে। তারা জাত কুল সম্প্রদায়কে দূরে সরিয়ে ধর্মকে হৃদয়ের সহজ সত্যের আলোকে চিনতে চেষ্টা করেছে। তাদের আদর্শ প্রেমপ্রীতির আদর্শ। তাই হিন্দু-মুসলমান বলে কোনো ভেদাভেদ তাদের মধ্যে ছিল না। মন্দির মসজিদের বাইরে তারা মুক্তি খুঁজেছে, যে মুক্তির পথ সর্ব মানুষের কল্যাণ ও ভালোবাসায় স্নাত।

মানবতাবাদী যুক্তিবুদ্ধি আন্দোলনের প্রাণপুরুষ লালন শাহের গানে ধর্ম সমন্বয়, আচার সর্বস্ব ধর্মীয় অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধতা, মানব মহিমাবোধ, জাতিভেদ, ছুঁৎমার্গের প্রতি ঘৃণা, অসাম্প্রদায়িক মনোভাব ইত্যাদি প্রতিফলিত হয়েছে।

বাউল সম্প্রদায় প্রচলিত সব আনুষ্ঠানিক ধর্মকেই অস্বীকার করেছে। তারা বেদ বিরোধী। বৈদিক ধর্মকে বাউলরা তাঁদের সাধনার পরিপন্থি ও অন্তরায় বিবেচনা করেন। বেদ, বাইবেল, কুরআন-সকল ধর্মগ্রন্থই তাদের কাছে সমান। সাম্প্রদায়িকতার সংকীর্ণ প্রাচীরকে তারা ভেঙে ফেলেছে। তাদের বিশ্বাস ঈশ্বর ভজনালয়ে নয় মানুষের মধ্যেই পাওয়া যায়। এভাবে বাউল সম্প্রদায়ের মধ্যে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।