প্রশ্নঃ উপসর্গের সংজ্ঞা দাও। বাংলা শব্দ গঠনে উপসর্গের ভূমিকা আলোচনা কর।
উপস্থাপনাঃ উপসর্গ বাংলা ব্যাকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাভাষার শব্দসমূহ বিভিন্ন উপায়ে গঠিত হয়ে থাকে। অর্থহীন অব্যয়সূচক কিছু শব্দাংশের সাহায্যে বাংলাভাষার অনেক শব্দ গঠিত হয়েছে। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা উপস্থাপিত হলো-
উপসর্গের সংজ্ঞাঃ উপসর্গ অর্থ উপসৃষ্টি। যেসব অর্থহীন অব্যয়সূচক শব্দাংশ ধাতুর পূর্বে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠনপূর্বক নানা অর্থের সৃষ্টি করে, তাকে উপসর্গ বলে। যেমন- আ+হার = আহার, বি+হার = বিহার। এখানে ‘আ’ ও ‘বি’ উপসর্গ।
১. ড. এনামুল হক উপসর্গের সংজ্ঞায় বলেন, “যে সকল অব্যয় শব্দ কৃদন্ত বা নামপদের পূর্বে বসে শব্দগুলির অর্থের সংকোচন, সম্প্রসার বা অন্য কোনো পরিবর্তন সাধন করে, ঐ সকল অব্যয় শব্দকে বাংলা ভাষায় উপসর্গ বলে।” (ব্যাকরণ মঞ্জরী)
২. ড. রামেশ্বর শ’ বলেন, “শব্দ ও ধাতুর আদিতে যা যোগ হয়, তাকেই বলে উপসর্গ।” (সাধারণ ভাষা বিজ্ঞান ও বাংলাভাষা)
৩. ড. অশোক মুখোপাধ্যায় বলেন, “কিছু অব্যয় আছে যারা ধাতু বা শব্দের আগে যুক্ত হয়ে তাদের অর্থ বদল করে দেয়, এদেরকেই বলা হয় উপসর্গ।” (সংসদ ব্যাকরণ অভিধান)।
বাংলা শব্দ গঠনে উপসর্গের ভূমিকাঃ উপসর্গগুলো নিজে অর্থহীন; কিন্তু যখন এগুলো ধাতু বা শব্দের পূর্বে বসে তখন অর্থযুক্ত হয়। এদের নিজস্ব কোনো অর্থ নেই বলে এরা কখনো পৃথকভাবে ব্যবহার হয় না। শব্দগঠনে অর্থের দিক থেকে বৈচিত্র্য আনাই উপসর্গের কাজ। উপসর্গের প্রভাবে একটি শব্দের যে পরিবর্তন হয় তা হলো-
১. নতুন অর্থবোধক শব্দ তৈরি হয়।
২. শব্দের অর্থের পূর্ণতা সাধিত হয়।
৩. শব্দের অর্থের সম্প্রসারণ ঘটে।
৪. শব্দের অর্থের সংকোচন ঘটে।
৫. শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটে।
উদাহরণঃ ‘কাজ’ একটি শব্দ। এর আগে ‘কু’ বা ‘অ’ অব্যয় যুক্ত করলে হবে কুকাজ বা অকাজ। যার অর্থ নিন্দনীয় কাজ। এখানে অর্থের সংকোচন হয়েছে। ‘পূর্ণ’ শব্দের আগে ‘পরি’ উপসর্গ যোগ করায় হয়েছে ‘পরিপূর্ণ’। এটি ‘পূর্ণ’ শব্দের সম্প্রসারিত রূপ। ‘হার’ শব্দের আগে ‘আ’ যুক্ত করে ‘আহার’ (খাওয়া), ‘প্র’ যুক্ত করে ‘প্রহার’ (মারা) ‘বি’ যুক্ত করে ‘বিহার’ (ভ্রমণ) বিভিন্ন অর্থে নতুন শব্দ তৈরি হয়েছে।
উপসংহারঃ সুতরাং শব্দ গঠনে অর্থের দিক থেকে বৈচিত্র্য আনয়নই উপসর্গের কাজ। এরা শব্দাংশ বা ধাতুর পূর্বে বসে অর্থের পরিবর্তন, সংকোচন, সম্প্রসারণ বা পূর্ণতা সাধন করে।
Leave a comment