আধুনিক বাংলা নাটকের বিকাশে পাশ্চাত্য বিশেষকরে ইংরেজি সাহিত্যের ভূমিকা সবিশেষ। উনিশশতকে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে যে নবীন জীবনানুভব শিক্ষিত বাঙালিকে স্পর্শ করেছিল এবং যে নবজাগরণের সূচনা ঘটেছিল, বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে তার অন্যতম প্রকাশ ওই সময়ের প্রহসন; যার যথার্থ পরিণতি- বাংলা নাটক। উনিশ শতকের এক দ্বন্দ্বক্ষুব্ধ পরিবেশে বাংলা নাট্যমঞ্চের বিকাশের ধারাবাহিকতায় জন্ম নিল আধুনিক বাংলা নাটক।
নাটকের উৎপত্তি: সাহিত্যের বাহন হিসেবে গদ্যরীতি উৎকর্ষের পর্যায়ে উন্নত হলে নাটক রচনার সূত্রপাত হয়।
বাংলা নাটকের ইতিহাসের সূচনায় এ বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। এদেশে পূর্ব থেকে প্রচলিত ‘যাত্রার’ মধ্যে এমন লক্ষণ ছিল যার বিবর্তনের মাধ্যমে নাটকের উৎপত্তি হতে পারত। কিন্তু কবিগান, পাঁচালি, টপ্পা, কীর্তন, হাফ তথিড়াই প্রভৃতি কোনোটার ক্রমপরিণতি বলে বাংলা নাটকে গণ্য করা যায় না। সংস্কৃত সাহিত্যেও নাটকের প্রচলন বহুযুগ থেকেই ছিল কিন্তু বাংলা নাটকের উৎপত্তির মূলে সংস্কৃতি নাটকের কোনো প্রভাব নেই। সংস্কৃত নাটক থেকে কিছু সংখ্যক গদ্যানুবাদ ও কাব্যানুবাদ বাংলা নাটক হিসাবে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রচলিত হলেও সেগুলো প্রকৃতপক্ষে বাংলা নাটকরূপে গুরুত্ব লাভ করতে পারেনি।
বাংলা নাটকের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ: ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে একটি পরিচিত সময়। কারণ এ সময় থেকে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের যুগযাত্রাকে চিহ্নিত করা হয়। ইংরেজি শিক্ষা ও সাহিত্যের সংস্পর্শে এসেই বাঙালি মানস আধুনিক জীবন সন্ধানী হয়ে উঠে। যুগের অচলায়তন ভেঙে নবীনের শুভ্র অভ্যুদ্বয়ের পথে যাত্রা হয় সীমাহীন সম্ভাবনার সৃষ্টিশীল গৌরবের পরে। মধ্যযুগে বাংলাসাহিত্যের বাহন ছিল শুধু পদ্য। আধুনিক বাংলা সাহিত্য গদ্যকে তার বাহন করার ফলে বিচিত্রধর্মী সাহিত্য সৃষ্টি করা সহজ নয়। নাটক তেমনি একটি সৃষ্টি। বাংলা নাটকের জন্য অনেক আগেই লক্ষ করা যায়। মধ্যযুগের বহুকাব্যে নাট্যধর্মিতা প্রত্যক্ষ গোচর। এছাড়া পাঁচালি, কথকতা ইত্যাদিও সংলাপধর্মী রচনা অনেক সময় অভিনয়ের মাধ্যমে প্রচার করা হতো। লোকনাট্য বাংলার ঘরে ঘরে আনন্দের ধারা বইয়ে দিত। কিন্তু আধুনিককালে আমরা যাকে নাটক বলি তা মধ্যযুগে ছিল না। আর এ ধরনের নাটক সৃষ্টির চিন্তাচেতনা এদেশবাসীর ছিল না। আধুনিক নাটক সৃষ্টির পিছনে ইংরেজি সাহিত্য ও সভ্যতা সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করেছিল।
এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে প্রথম বাংলা নাটকের অভিনয় হয় ১৭৯৫ সালের ২৭ নভেম্বর তারিখে। হেরোসিম লেবেডেফ, তাঁর ভাষা-শিক্ষক গোলকনাথ দাসের সাহায্যে The Disguise এবং Love is the best Doctor. নামক ইংরেজি থেকে অনুদিত নাটকের পাশ্চাত্য ধাঁচের মঞ্চায়ন করেন। ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দে হিন্দু থিয়েটারে ও ১৮৩৫ সালে শ্যামবাজারের নবীনচন্দ্র বসুর নিজ বাড়িতেও বিলিতি ধরনের রঙ্গমঞ্চের ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়। ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দে প্রসন্নকুমার ঠাকুর হিন্দু থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকে নাট্যশালার প্রসার বাড়তে আরম্ভ করে। এসকল নাট্যশালায় তখন ইংরেজি নাটক অভিনীত হতো। ১৮৩৫ খ্রিষ্টাব্দে নবীনচন্দ্র বসুর বাড়িতে ‘বিদ্যাসুন্দর’ নাটক অভিনীত হয়। খুব সম্ভব ‘বিদ্যাসুন্দরই’ প্রথম অভিনীত বাংলা নাটক। বিদ্যাসুন্দর যথার্থ আধুনিক নাটকের আঙ্গিকে সমৃদ্ধ ছিল না। ইংরেজি নাটকের অনুবাদ দিয়েই বাংলা নাট্যশালাগুলো মুখর হয়ে উঠেছিল।
তবে ১৮৫৭ সালে জানুয়ারি মাসে অনুবাদ নাটকের পরিবর্তে নন্দকুমার রায়ের ‘অভিজ্ঞান শকুন্তলা’ প্রথম বাংলা নাটক হিসেবে অভিনীত হয়। এ পর্যায়ের নাটকের মধ্যে আরও উল্লেখ্য ১৮৫৭ সালে রামজয় বসাকের বাড়িতে অভিনীত রামনারায়ণ তর্করত্নের ‘কুলীনকুলসর্বস্ব’।
বাংলা নাটকের ইতিহাসে অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে পাইকপাড়ার রাজা ঈশ্বরচন্দ্র সিংহ এবং রাজা প্রতাপচন্দ্র সিংহের বেলগাছিয়া বাগান বাড়িতে স্থাপিত নাট্যশালায়। ১৮৫৮ সালে ‘রত্নাবলী’ নাটক দেখতে এসে সদ্য মাদ্রাজফেরত মাইকেল মধুসূদন দত্ত এর মান দেখে অত্যন্ত ব্যথিত হন এবং তার ফলস্বরূপ বাংলা সাহিত্য তাঁর হাত থেকে পেয়ে যায় প্রথম সার্থক – বাংলা নাটক ‘শর্মিষ্ঠা’। মধুসূদনের মেধাস্পর্শে বাংলা নাটকের বিষয়, সংলাপ, আঙ্গিক, মঞ্চায়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটে। নবজাগ্রত বাঙালির প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠা এই নাট্যধারা ‘নব নাটক’ হিসেবে সবিশেষ পরিচিত। মধুসূদন, – দীনবন্ধু এই নব নাটককে করে তুললেন অনেক বেশি রুচিসম্মত ও নান্দনিক। এরই ধারাবাহিকতায় গিরিশচন্দ্র ঘোষ, দ্বিজেন্দ্রলাল রায় প্রমুখ নাট্যকারের আবির্ভাব ঘটে বাংলা নাটকের অঙ্গনে; বিকশিত হতে থাকে বাংলা নাট্যধারা। বাংলা নাট্যসাহিত্যকে মোটামুটি তিনভাগে ভাগ করা যেতে পারে। (ক) উন্মেষ পর্ব (খ) বিকাশ পর্ব (গ) পরিণতি পর্ব।
ক. উন্মেষ পর্ব : এ পর্বে নাট্যকারগণের মধ্যে যোগেন্দ্রচন্দ্র গুপ্ত, তারাচরণ শিকদার, হরচন্দ্র ঘোষ, রামনারায়ণ তর্কালঙ্কার এবং কালীপ্রসন্ন সিংহ উল্লেখযোগ্য। বাংলা মৌলিক নাটকের সূত্রপাত যোগেন্দ্রচন্দ্র গুপ্তের “কীর্তি বিলাস” নাটক রচনার মধ্য দিয়ে। নাটকটির প্রকাশ কাল ১৮৫২ খ্রিষ্টাব্দ।
তারাচরণ শিকদার রচনা করেন ‘ভদ্রার্জুন’। এটি একটি কমেডি নাটক। হরচন্দ্র ঘোষের ‘ভানুমতীর চিত্তবিলাস’ ১৮৫২/৫৩ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশ পায়। নাটকটি শেক্সপীয়ারের ‘মার্চেন্ট অব ভেনিস’ নাটক অবলম্বনে রচিত। তাঁর অন্যান্য নাটকের নাম ‘কৌরব বিয়োগ’, ‘চার মুখ-চিত্তহারা’, ‘রজতগিরি নন্দিনী’।
উন্মেষ পর্বের নাট্যকারদের মধ্যে রামনারায়ণ তর্কালঙ্কনর বিশেষ খ্যাতির অধিকারী ছিলেন। তাঁর রচিত “কুলীনকুল সর্বস্ব” (১৮৫৪) নাটক সম্পূর্ণ মৌলিক রচনা। সমাজ জীবনের পটভূমিতে এ নাটকটি রচিত। বাংলা নাটকে রামনারায়ণ প্রাণ দান করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সামাজিক জীবনের ছবি অঙ্কনে তিনি কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। নাটকের সংলাপ রচনায় লেখক কথ্যরীতির আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাঁর রচিত অন্যান্য নাটক ‘বেনীসংহার’ (১৮৫৬), ‘রত্নাবলী’ (১৮৫৮), ‘নব নাটক’ (১৮৬৬), ‘মালতি মাধব’ (১৮৬৭), ‘রুক্মিণী হরণ’ (১৮৭১), ‘কংসবধ’ (১৮৭৫) ইত্যাদি। তিনি কয়েকটি প্রহসনও লিখেন। যেমন- “যেমন কর্ম তেমন ফল” ‘উভয় সংকট’ এবং ‘চক্ষুদান’। জ্ঞানেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনুপ্রেরণায় রামনারায়ণ রচনা করেন ‘নবনাটক’।
খ. বিকাশ পর্ব: এ পর্বে নাট্যকারদের মধ্যে মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও দীনবন্ধু মিত্রের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত: মধুসূদন বেলগাছিয়া নাট্যশালার সাথে জড়িত ছিলেন। মাইকেল পাশ্চাত্য সাহিত্যের আদর্শে বাংলা নাটকের নতুন দিক নির্দেশনা দেন। তাঁর প্রথম নাটক ‘শর্মিষ্ঠা’ ১৮৫৯ খিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়। তাঁর দ্বিতীয় নাটক ‘পদ্মাবতী’ ১৮৬০।
মধুসূদনের সার্থক নাট্যকীর্তি ‘কৃষ্ণকুমারী’ ঐতিহাসিক পটভূমিকায় রচিত ‘কৃষ্ণকুমারী’ই বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ট্র্যাজেডি নাটক। মধুসূদন প্রহসনও লিখেছিলেন, সমসাময়িককালের বাস্তব আলেখ্য তাঁর প্রহসনে স্থান পেয়েছে। “একেই কি বলে সভ্যতা” প্রহসনে ইয়ং বেঙ্গল দলের উচ্ছৃঙ্খলতার চিত্র আঁকা হয়েছে তা দ্বারা “বুড়ো সালিকের ঘাড়ে রো’তে সমাজের ভণ্ড ব্যক্তিদের চরিত্রহীনতার স্বরূপ ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
দীনবন্ধু মিত্র: দীনবন্ধু মিত্রের প্রথম নাটক ‘নীলদর্পণ’ ১৮৬০ খিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়। নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বাস্তব নগ্নচিত্র এ নাটকে অঙ্কিত হয়েছে। দীনবন্ধুর অন্যান্য নাটক ‘নবীন তপস্বিনী’, ‘লীলাবতী’, ‘কমলে কামিনী’। তাঁর রচিত প্রহসনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘সধবার একাদশী’। এছাড়া ‘বিয়ে পাগলা বুড়ো’ ও ‘জামাই বারিক’ নামে আরও দুটি প্রহসন তিনি লিখেছেন।
গ. পরিণতি পর্ব: এ পর্বের নাট্যকারদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন গিরীশচন্দ্র ঘোষ, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, মনমোহন বসু, ক্ষিরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ, অমৃতলাল বসু, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শচীন্দ্রনাথ সেন, মন্মথ
রায়, মহেন্দ্রগুপ্ত প্রমুখ।
গিরীশচন্দ্র ঘোষ জনপ্রিয় অভিনেতা ছিলেন। তিনি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে নাটক ও প্রহসন লিখেছিলেন। তাঁর মহৎ সৃষ্টি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ এছাড়া ‘মীরকাশিম’ ও ‘ছত্রপতি শিবাজী’ নামে আরও দুটি ঐতিহাসিক নাটকও তিনি লিখেন। তাঁর রচিত পৌরাণিক নাটকগুলোর মধ্যে অকালবোধন, রাবণ বধ, সীতার বনবাস, সীতাহরণ, অভিমন্যুবধ, জনা, পাণ্ডব গৌরব, বিশেষ উল্লেখযোগ্য। সামাজিক নাটকের মধ্যে তাঁর শ্রেষ্ঠ কীর্তি ‘প্রফুল্ল’। এছাড়া তিনি হারানিধি, মায়াবসান, বলিদান প্রভৃতি সামাজিক নাটক লিখেন।
জ্যোতিরিন্দ্রনাথ রচনা করেন পুরু বিক্রম, সরোজিনী, অশ্রুমতি, স্বপ্নময়ী প্রভৃতি নাটক। মনোমোহন বসু বাংলা নাটক রচনায় কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। তিনি সতী, হরিশচন্দ্র নাটক, পার্থ পরাজয় ও রামলীলা রচনা করেন।
ক্ষিরোদ প্রসাদ বিদ্যাবিনোদের বিখ্যাত ঐতিহাসিক নাটক ‘আলমগীর’। এছাড়া তিনি প্রতাপাদিত্য নামে আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক নাটক লিখেন।
অমৃতলাল বসু প্রহসন রচনায় কৃতিত্ব দেখিয়েছেন, তাঁর প্রহসনগুলোর মধ্যে চোরের উপর বাটপারী, বিবাহ বিভ্রাট, রাজবাহাদুর, ডিসমিন, কালাকতিক উল্লেখযোগ্য। তিনি হরিশচন্দ্র, ব্রজলীলা, সতী কি কলঙ্কিনি নামে তিনটি পৌরাণিক নাটক রচনা করেন।
বাংলা নাট্য সাহিত্যিক ইতিহাসে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ছিলেন উজ্জ্বল নক্ষত্র বিশেষ। নাট্য রচনায় দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের শব্দপ্রয়োগ, কুশলতায় অনন্য ও একক। নাটকীয় দ্বন্দু সৃষ্টিতে তিনি ছিলেন যথার্থ শিল্পী। তিনি ঐতিহাসিক সামাজিক এবং পৌরাণিক নাটক রচনায় কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। তাঁর ঐতিহাসিক নাটকগুলোর মধ্যে তারাবাই, রাজা প্রতাপ সিংহ, সাজাহান, মেবারপতন, দুর্গাদাস, সোহরাব রুস্তম, নুরজাহান, চন্দ্রগুপ্ত, সিংহল বিজয় বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
এরপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর নিজস্ব তত্ত্ব ও আঙ্গিকে নিরীক্ষার প্রয়োগ ঘটিয়ে বাংলা নাটকে যোগ করেন বিশ্বমানের স্বাতন্ত্র্য। বিশ শতকের সাহিত্যে অমোঘ প্রভাব বিস্তারকারী দুই বিশ্বযুদ্ধ এসময়ের নাটককে নতুন চিন্তা ও আঙ্গিকে সমৃদ্ধ করে তুলেছিল। এরই সঙ্গে রুশ বিপ্লব, ভারতবর্ষ জুড়ে ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী কর্মকাণ্ড, বিশ্বব্যাপী মার্কসবাদের বিস্তার, তেতাল্লিশের মন্বন্তর, দেশভাগ, শ্রেণিসংগ্রামচেতনা, শ্রেণিবিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা প্রভৃতি বাংলা নাটকে সূচনা করে গণনাট্যের ধারা। বিজন ভট্টাচার্য, উৎপল দত্ত প্রমুখ নাট্যকার এই নতুন ধারার নাটক নিয়ে জনমানুষের কাছে পৌছাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন। এর কাছাকাছি সময়ে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা, পূর্ববাংলার সাধারণ মানুষের ওপর নেমে আসা শোষণ ও বৈষম্য, এই অঞ্চলের নাট্যকারদেরও গণনাট্যের চেতনায় অনুপ্রাণিত করে তোলে। সেইসঙ্গে, পূর্ববাংলায় একের পর এক আন্দোলনের পটভূমি স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই বাংলাদেশের নিজস্ব নাট্যধারা সৃষ্টির উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে দেয়।
বাংলা নাটকের এই সমৃদ্ধ উত্তরাধিকার বহন করে বাংলাদেশেরও একটি নিজস্ব নাট্যধারা ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে। এ
প্রসঙ্গে বাংলাদেশের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নাটকের কথা স্মরণ করা যেতে পারে; যেমন- নুরুল মোমেনের ‘নেমোসিস’, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ‘বহিপীর’, মুনীর চৌধুরীর ‘চিঠি’, আনিস চৌধুরীর ‘মানচিত্র’, সাইদ আহমদের ‘মাইলস্টোন’, ‘কালবেলা’, মমতাজ উদ্দীন আহমদের ‘রাজা অনুস্বারের পালা’, ‘কি চাহ শঙ্খচিল’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘নূরলদীনের সারাজীবন’, জিয়া হায়দারের ‘শুভ্র সুন্দর কল্যাণী আনন্দ’, ‘এলেবেলে’, আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘সুবচন নির্বাসনে’, ‘এখন দুঃসময়’, ‘মেরাজ ফকিরের মা’, মামুনুর রশীদের ‘ওরা কদম আলী’, ‘গিনিপিগ’, সেলিম আল দীনের ‘কীত্তনখোলা’, ‘কেরামতমঙ্গল’, এম এম সোলায়মানের ‘তালপাতার সেপাই’, ‘ইংগিত’ প্রভৃতি।
উপসংহার: উপরিউক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, বাংলা নাটকের শ্রেণিবিভাগ উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ ঘটে মূলত মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও দীনবন্ধু মিত্রের হাতে। কারণ তারা দু’জন বাংলা নাটকের উন্নতির জন্য অক্লান্ত শ্রম দিয়ে গেছেন, শুধু তারা দু’জন নয়, আরো অনেক নাট্যকার বাংলা নাটকের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের ক্ষেত্রে বিশাল অবদান রেখেছেন। তাই বলা যায়, সকল নাট্যকারের সার্বিক সহযোগিতায় বাংলা নাটক একটি সার্থক রূপ লাভ করেছে।
Leave a comment