প্রশ্নঃ বাংলাদেশে লোক প্রশাসনের গুরুত্ব আলোচনা কর (Importance of Public Administration in Bangladesh)।
ভূমিকাঃ বাংলাদেশ এক উন্নয়নশীল দেশ (Developing country)। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে । তাই বাংলাদেশ একটি নবীন রাষ্ট্র 1 আর নবীন রাষ্ট্র হিসেবে এ দেশের প্রশাসন ব্যবস্থায় নানাবিধ সমস্যা বিদ্যমান। এ দেশের উপর ব্রিটিশ ও পশ্চিম পাকিস্তানিরা দীর্ঘদিন ধরে ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণ চালিয়েছে। আর সে কারণেই বাংলাদেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা এখনও অসংগঠিত এবং স্বচ্ছ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে এটি স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, প্রশাসনিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ব্যতিরেকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভবপর নয়। আর প্রশাসনিক ব্যবস্থার উন্নতি নির্ভর করে প্রশাসকদের দক্ষতা, পরিপক্ব অভিজ্ঞতা, ত্যাগ ও কর্মনিষ্ঠার উপর। বর্তমানে তাই প্রশাসন ব্যবস্থাকে নতুন ধাঁচে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এমনি এক অবস্থায় বাংলাদেশে লোক প্রশাসনের গুরুত্ব সমধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
১। প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা অর্জনেঃ প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা অর্জন বাংলাদেশে লোক প্রশাসনের গুরুত্বকে বাড়িয়ে দিয়েছে। অতীতের ঔপনিবেশিক শাসনের বিলুপ্তি ঘটিয়ে বর্তমানে প্ৰশাসন ব্যবস্থাকে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। সমগ্র শাসনব্যবস্থাকে তাই নতুন ধাঁচে ঢেলে নতুন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সুন্দর, সুষ্ঠু এবং অর্থবহ করে তোলা আবশ্যক। আর এর জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন শিক্ষিত জনশক্তি যাদের প্রশাসন সম্পর্কে তত্ত্বগত জ্ঞান রয়েছে। লোক প্রশাসকগণ এ ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। উন্নয়নগামী অভিজ্ঞতা থেকেই এটিই স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, প্রশাসনিক ব্যবস্থার উন্নতি ব্যতিরেকে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্ভবপর নয়। আর প্রশাসনিক ব্যবস্থার উন্নতি নির্ভর করে প্রশাসকের দক্ষতা, পরিপক্ক অভিজ্ঞতা, ত্যাগ ও কর্মনিষ্ঠার উপর।
২। জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতেঃ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র বলে পরিচিত। বাংলাদেশও এ আদর্শে বিশ্বাসী। সে প্রেক্ষিতেই প্রশাসনযন্ত্রকে জনকল্যাণমূলক কাজ যথাঃ জনশিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, গৃহনির্মাণ এবং বেকার সমস্যাসহ নানাবিধ সমস্যার সমাধানে ব্যাপক উদ্যোগ নিতে হচ্ছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রকেও চিরাচরিত পন্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, বিচার কার্য প্রভৃতি সনাতন কায়দায় সম্পন্ন করতে হচ্ছে। দেশকে শিল্পায়িত করা, কৃষিক্ষেত্রে সবুজ বিপ্লব, সুস্থ, সৃজনশীল ও প্রায়োগিক শিক্ষার ব্যবস্থা, জনস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, শিল্প এলাকায় শ্রমিক অসন্তোষ নিরসন, পুঁজি বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণ, অনুকূল বৈদেশিক বাণিজ্য নিশ্চিতকরণ, জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন প্রভৃতি শত সমস্যার চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার জন্যই সরকারকে প্রশাসনিক কার্যের পরিধি বহুগুণে বাড়িয়ে তুলতে হচ্ছে। তাই লোক প্রশাসনের গুরুত্বও বহুগুণে বেড়ে গেছে।
৩। সুষ্ঠু পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্যঃ বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার সম্পূর্ণভাবে জাতীয় পুনর্গঠন কাজে আত্মনিয়োগ করেছে। প্রশাসন ব্যবস্থাকে পুনর্গঠনের নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে সরকারের নতুন কর্মসূচি প্রশাসনকে চারটি স্তরে ভাগ করার কারণে প্রশাসনের গুরুত্ব নতুনভাবে বিবেচিত হচ্ছে। এ ছাড়া স্থানীয় এলাকায় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ ও দায়িত্বের যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন সরকারি কর্মচারীবৃন্দের নিরলস কর্মপ্রচেষ্টা এবং উদ্যোগ। আবার শুধুমাত্র সরকারি উদ্যোগই যথেষ্ট নয়, এ ক্ষেত্রে জনগণের সক্রিয় সহযোগিতাও একান্ত আবশ্যক। তদুপরি সরকার দেশে কতিপয় বৃহৎশিল্পের জাতীয়করণ করেছে। কল-কারখানা, মিল-ফ্যাক্টরী, ব্যাংক-বীমা প্রভৃতি সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে। এ সকল প্রতিষ্ঠানাদির সুষ্ঠু পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের উপর জাতির অর্থনৈতিক উন্নতিও বহুলাংশে নির্ভরশীল । আর সুষ্ঠু পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের ভার সম্পূর্ণরূপে লোক প্রশাসনের উপরেই বর্তানো হয়েছে।
৪। পরিকল্পনা বাস্তবায়নেঃ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশে লোক প্রশাসনের ভূমিকা অপরিসীম। মূলত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব প্রশাসনিক এলিট ও কর্মকর্তাদের উপরই ন্যস্ত রয়েছে। তারা যে কোন গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় বিষয়ে সরকারি নির্দেশে পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এবং তা বাস্তবায়নে যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে লোক প্রশাসকগণ সর্বাপেক্ষা যে বিষয়টির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন, তা হলো সম্পদের উৎস বের করা এবং প্রাপ্ত সম্পদের সুষ্ঠু ও যথাযথ ব্যবহার এবং বিভিন্নমুখী কাজের মধ্যে সমতা আনয়ন করা।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, বর্তমানে বাংলাদেশে লোক প্রশাসনের জনপ্রিয়তা ক্রমেই বেড়েই চলেছে। তাই বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে লোক প্রশাসনের যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা রয়েছে– একথা বলা যায়।
Leave a comment