প্রশ্নঃ বাংলাদেশে পৌরনীতি ও সুশাসন পাঠের গুরুত্ব আলোচনা কর।

ভূমিকাঃ পৌরনীতি ও সুশাসন পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম। যা কিছু নাগরিক জীবনকে স্পর্শ করে, তার প্রায় সকল দিক নিয়েই পৌরনীতি আলোচনা করে। পৌরনীতি ও সুশাসন হচ্ছে জ্ঞানের মূল্যবান শাখা।

বাংলাদেশে পৌরনীতি ও সুশাসন পাঠের গুরুত্ব (Significance of the Study of Civics and Good Governance in Bangladesh): স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ আমাদের মাতৃভূমি। নিম্নোক্ত কারণগুলোর জন্য বাংলাদেশে পৌরনীতি ও সুশাসন পাঠের গুরুত্ব অপরিসীমঃ

১. দেশকে ভালোবাসার শিক্ষাঃ এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। স্বাধীনতা অর্জন করা যত কঠিন তার থেকে স্বাধীনতা রক্ষা করা আরও বেশি কঠিন। আমাদের কষ্টার্জিত এই স্বাধীনতাকে রক্ষা ও অর্থবহ করার জন্য প্রয়োজন স্বদেশপ্রেম। পৌরনীতি ও সুশাসনের শিক্ষা দেশকে ভালোবাসতে শেখায়।

২. জাতীয় ইতিহাস জানাঃ আমাদের রয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলনের এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। এ ইতিহাস আমাদের বংশধরদেরকে জানতে হবে। কেননা যে জাতি নিজস্ব জাতীয় সংগ্রামের ইতিহাস জানে না কিংবা ভুলে যায়, সে জাতি কখনো উন্নত ও সুসংহত হতে পারে না। পৌরনীতি ও সুশাসন আমাদের জাতীয়, রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক ইতিহাস এবং স্বাধীনতা অর্জনের সঠিক ইতিহাস জানতে সাহায্য করে।

৩. জাতীয় সমস্যা ও এর সমাধানের পথনির্দেশঃ অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল সমস্ত নাগরিকের নিকট উপভোগ্য করে তোলার জন্য প্রয়োজন জাতীয় সংহতি অর্জন এবং রাজনৈতিক উন্নয়নের সংকটসমূহ কাটিয়ে ওঠা। পৌরনীতি ও সুশাসন জাতীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের পথে বিদ্যমান সমস্যাগুলো সম্পর্কে আলোচনা করে এবং তা থেকে মুক্তির পথ নির্দেশ করে।

৪. রাষ্ট্রীয় মূলনীতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভঃ প্রত্যেক জাতি ও রাষ্ট্রেরই কতগুলো জাতীয় বা রাষ্ট্রীয় মূলনীতি থাকে। আমাদের সংবিধানে চারটি রাষ্ট্রীয় মূলনীতি রয়েছে। এগুলো হলো বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্ম নিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র। এগুলো প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালিত হয়েছিল। এ মূলনীতিগুলো হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলভিত্তি। পৌরনীতি ও সুশাসন এসব রাষ্ট্রীয় মূলনীতি সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে।

৫. রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধিঃ পৌরনীতি ও সুশাসন বাংলাদেশি নাগরিকদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। পৌরনীতির শিক্ষা আমাদেরকে সোনার বাংলার সোনার মানুষ হবার শিক্ষা দেয়।

৬. সুনাগরিকতার শিক্ষালাভঃ সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার গঠন ও পরিচালনা এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজন মেধা, প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সচেতন সুনাগরিক। পৌরনীতি ও সুশাসনের শিক্ষা এরূপ সচেতন ও সুনাগরিক হতে সাহায্য করে।

৭. গণতান্ত্রিক চেতনা সৃষ্টিঃ গণতন্ত্র হলো জনগণের শাসন। জনগণ সচেতন হলে, অধিকার ও কর্তব্যবোধ সম্পর্কে সচেতন হলে, সহনশীল হলে গণতন্ত্র সফল হয়। পৌরনীতি ও সুশাসন আমাদের মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৮. সংবিধান সম্পর্কে জানা যায়ঃ আমাদের সংবিধান প্রণীত হয়েছে ১৯৭২ সালে। আমাদের রাষ্ট্রপরিচালনার বিধি- বিধান এই সংবিধানে লেখা রয়েছে। পৌরনীতি ও সুশাসন পাঠের মাধ্যমে আমরা আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার বিধি-বিধান, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের সংগঠন ও কার্যাবলি সম্পর্কে জানতে পারি।

৯. উদার দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনঃ পৌরনীতি ও সুশাসন পাঠের ফলে বাংলাদেশের নাগরিকগণ অন্ধ, গোড়ামি ও সংকীর্ণতা ত্যাগ করে উদার দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী হতে পারে।

১০. সঠিক ইতিহাস জানতে সাহায্যঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের প্রকৃত ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে হলে পৌরনীতি ও সুশাসন পাঠ করতে হবে।

১১. সুশাসন প্রতিষ্ঠাঃ পৌরনীতির জ্ঞান সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করে। সুশাসন কী, সুশাসনের বৈশিষ্ট্য কী কী, কীভাবে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যায়, কীভাবে সুশাসন প্রতিষ্ঠার বাধাগুলো অপসারণ করা যায় তা পৌরনীতি পাঠের ফলে জানা যায়।

উপসংহারঃ সুতরাং সুখী ও সমৃদ্ধিশালী সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হলে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকেরই উচিত পৌরনীতি ও সুশাসন পাঠ করা।