অথবা, বস্তুগত সংস্কৃতি ও অবস্তুগত সংস্কৃতির সংজ্ঞা দাও।
ভূমিকাঃ মানুষের সৃষ্টির সমষ্টিই হলাে সংস্কৃতি। আবার বলা হয়, ‘Culture is the way of life.’ তাই মানুষের বিভিন্ন সৃষ্টি ও জীবনপদ্ধতির ভিন্নতা সংস্কৃতিকে বিভিন্ন অংশে বিভক্ত করেছে। একটি সমাজের জীবন ও জীবনযাপন প্রণালীর সমন্বিত ধরনই সংস্কৃতি। সংস্কৃতির প্রধান দুটি রূপই হলাে বস্তুগত সংস্কৃতি ও অবস্তুগত সংস্কৃতি। মানুষের জীবনের সাথে সংস্কৃতির এ দু’টি ধারা ওতপ্রােতভাবে জড়িত।
বস্তুগত সংস্কৃতির সংজ্ঞাঃ সামাজিকভাবে বসবাস করতে গিয়ে মানুষ তার প্রয়ােজনে যা কিছু সৃষ্টি করেছে তাই হলাে সংস্কৃতি। আর মানুষের জীবনপথের দীর্ঘ পরিক্রমায় যেসব বস্তুগত সামগ্রী সৃষ্টি করেছে তার সমষ্টিই হলাে বস্তুগত সংস্কৃতি। মানুষের বস্তুগত সংস্কৃতি একদিনে সৃষ্টি হয়নি। দীর্ঘদিনের জীবন পরিক্রমায় পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে বস্তুগত সংস্কৃতি গড়ে ওঠেছে। তাই মানুষের সকল বস্তুগত সৃষ্টিই বস্তুগত সংস্কৃতি। যেমন- ঘরবাড়ি, তৈজসপত্র, আসবাবপত্র, উৎপাদন কৌশল, শিল্প-কারখানা, যাতায়াত ব্যবস্থা ইত্যাদি বস্তুগত সংস্কৃতি মানুষের এ বস্তুগত সংস্কৃতি পৃথিবীর অঞ্চল ও সমাজভেদে ভিন্ন রকম। যেমনঃ আমাদের বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা দেখতে পাই এ দেশের অঞ্চলভেদে বস্তুগত সংস্কৃতির ভিন্নতা রয়েছে। এ দেশের শহরাঞ্চলে যেমন পাকা ঘরবাড়ি, শিল্প-কারখানা স্থাপিত হয়েছে, গ্রামে তা হয়নি। আবার গ্রামীণ সমাজের কতক স্থানে টিনের ঘরবাড়ি, কতক স্থানে মাটির কাঁচা বাড়ি লক্ষ্য করা যায়।
অবস্তুগত সংস্কৃতিঃ মানুষ জীবনধারণের বিভিন্ন অবস্থায় তার উদ্দেশ্যসাধনের জন্য যেসব অবস্তুগত সামগ্রী বা উপাদান সৃষ্টি করেছে তার সমষ্টি হলাে অবস্তুগত সংস্কৃতি। সমাজে বসবাস করতে গিয়ে মানুষ আচার-আচরণ, ধ্যান ধারণা, মূল্যবােধ ইত্যাদি অনুকরণ করে। সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় সমাজের সদস্য হিসেবে মানুষ সমাজ থেকে যা কিছু অর্জন করে তাই হলাে অবস্তুগত সংস্কৃতি। যেমন-দক্ষতা, জ্ঞান, আচার, বিশ্বাস, রীতি-নীতি, সঙ্গীত, নৃত্যকলা, চাল-চলন ইত্যাদি অবস্তুগত সংস্কৃতি। বস্তুগত সংস্কৃতির মতাে অবস্তুগত সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও ভিন্নতা দেখাে যায়। এক অঞ্চলের আচার অনুষ্ঠান, প্রথা-বিশ্বাসের সাথে অন্য অঞ্চলের আচার-অনুষ্ঠান ও প্রথা-বিশ্বাসে পার্থক্য রয়েছে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজ-সভ্যতা তার গতির ঘােড়ায় চড়ে এগিয়ে যাচ্ছে সম্মুখপানে। মানুষের সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও ব্যাপক উন্নতি তুরান্বিত হচ্ছে। বস্তুগত সংস্কৃতির দ্রুত উন্নতি ও প্রসারের ফলে সাংস্কৃতিক ব্যবধান সৃষ্টি হচ্ছে। তাই একটি সুস্থ, সাবলিল ও গতিশীল সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য, সংস্কৃতির বিভিন্ন অংশ ও উপাদানের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকা বাঞ্ছনীয়।
Leave a comment