‘ফিফ’ কথাটির অর্থ হল শর্তের বিনিময়ে কোনাে ব্যক্তিকে কিছু জমি বা পদ প্রদান করা। মধ্যযুগের সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় সামন্তপ্রভুর প্রতি নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনের বিনিময়ে অধীনস্থ সামন্ত বা প্রজা যে ভূখণ্ড লাভ করতেন তাকেই ‘ফিফ’ বলা হত।
সামন্তপ্রভু একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তার উর্ধ্বতন প্রভুর প্রতি আনুগত্য ও সেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর কাছ থেকে জমি ও নিরাপত্তার আশ্বাস লাভ করতেন এবং নিজ এলাকায় সামন্ত হিসেবে অভিষিক্ত হতেন। এই অনুষ্ঠান ‘ইনভেস্টিচার নামে পরিচিত ছিল।
সামন্ততন্ত্রের উত্থানের পর ইউরােপের বিভিন্ন দেশে সামন্তপ্রভুরা নিজ নিজ এলাকায় সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নিজেদের চূড়ান্ত ক্ষমতার প্রকাশ ঘটাতে সক্ষম হন।
[1] স্বাধীন শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা: সামন্তপ্রভুরা তাদের নিজের জমিদারি অঞ্চলে সম্পূর্ণ স্বাধীন শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। তারা নিজ নিজ এলাকায় দুর্গ নির্মাণ, আইন প্রণয়ন ও বিচারকার্য পরিচালনা করতেন। নিজ প্রভাবাধীন অঞ্চলের প্রজাদের ওপর সামন্তপ্রভুর চূড়ান্ত শাসন প্রতিষ্ঠিত হত।
[2] কর কাঠামাে নির্মাণ ও কর আদায়: সামন্তপ্রভুরা তাদের নিজের অধীনস্থ প্রজাদের কাছ থেকে ভূমিকর, উৎপাদন কর, সম্পত্তি কর প্রভৃতি ছাড়াও সামন্তপ্রভুর রাস্তাঘাট, পশুচারণ ভূমি, জলাশয়, বন প্রভৃতি ব্যবহারের জন্যও প্রভু তার অধীনস্থ প্রজাদের কাছ থেকে কর আদায় করতেন।
[3] মুদ্রার প্রচলন: কোনাে কোনাে সামন্তপ্রভু দুর্বল কেন্দ্রীয় শক্তিকে উপেক্ষা করে নিজের অধীনস্থ অঞ্চলে পৃথক মুদ্রারও প্রচলন করতেন। ফলে নিজ প্রভাবাধীন অঞ্চলে সামন্তপ্রভু একটি ক্ষুদ্র ও স্বাধীন রাষ্ট্রের শাসকের মতাে ক্ষমতা ভোগ করতেন।
[4] জনকল্যাণমূলক কাজ: সামন্তপ্রভুরা নিজেদের এলাকায় পুরােনাে রাস্তাঘাট, সাঁকো, খাল প্রভৃতি মেরামত করতেন ও নতুন রাস্তাঘাট, সাঁকো, খাল, জলাশয় প্রভৃতি নির্মাণ করতেন। তিনি নিজ এলাকায় বাজার বসাতেন এবং পশুচারণের জন্য কৃষককে পশুচারণ ভূমি প্রদান করতেন।
[5] ভূখণ্ড দখল: নতুন ভূখণ্ড দখল ও অধিক ক্ষমতা অর্জনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সামন্তপ্রভু প্রায়ই নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে লিপ্ত হতেন৷ যুদ্ধে জয়ী সামন্তপ্রভু পরাজিত অন্য সামন্তপ্রভুর ভূখণ্ড ও তার অধীনস্থ প্রজাদের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতেন।
[6] প্রজাদের রক্ষা: সাধারণ প্রজারা সামন্তপ্রভুর হাতে নিজেদের সমস্ত সম্পত্তি হস্তান্তর করতেন এবং তার প্রতি চূড়ান্ত আনুগত্য জানাতেন। বিনিময়ে প্রভু তাঁর ক্ষমতার দ্বারা তার অধীনস্থ প্রজাদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা ও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতেন।
উপসংহার: মধ্যযুগের ইউরােপে সামন্তপ্রভুদের ক্ষমতা ছিল চূড়ান্ত। তাঁরা দেশের সর্বোচ্চ শাসক সম্রাটের প্রতি নামে মাত্র আনুগত্য জানিয়ে নিজ নিজ এলাকায় স্বাধীনভাবে শাসন পরিচালনা করতেন। বিভিন্ন স্তরের সামন্তপ্রভুদের আর্থিক ও সামাজিক চাপে জর্জরিত হয়ে দেশের দরিদ্র কৃষক ও ভূমিদাসশ্রেণি প্রচণ্ড দুঃখ-দারিদ্র্যে দিন কাটাতে বাধ্য হত।
Leave a comment