সূচনা: প্রাচীন ভারতে কৃষিই প্রধান জীবিকা হলেও সে সময় বাণিজ্যেরও যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটেছিল। প্রাচীন যুগে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উভয় বাণিজ্যই চলত।
[1] সিন্ধু সভ্যতার যুগ: সিন্ধু সভ্যতায় স্থল এবং নদী উভয় পথেই অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য চলত বলে জানা যায়। জন মার্শাল, মার্টিমার ভুইলার, ড. ইরফান হাবিব প্রমুখ এযুগের বাণিজ্যের বিভিন্ন প্রমাণ তুলে ধরেছেন। এযুগে খাদ্যসামগ্রী, সুতিব, প্রসাধন সামগ্রী, ধাতুর অলংকার প্রভৃতির বাণিজ্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সম্ভবত স্থলপথে পশু-টানা গাড়ি এবং জলপথে নৌকা ও জাহাজের মাধ্যমে মালপত্র বহন করা হত। সিন্ধু উপত্যকার সঙ্গে মেসােপটেমিয়া, সুমের প্রভৃতি বাণিজ্যের প্রমাণ পাওয়া যায়।
[2] ঋক-বৈদিক ও পরবর্তী বৈদিক যুগ: ঋক-বৈদিক যুগে বাণিজ্যের প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এই সময় যে বাণিজ্যের কাজ চলত তার কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ঋগবেদে ‘পশি’ নামে একশ্রেণি অনার্য ধনী বণিকের এবং ‘সমুদ্র’ কথাটির উল্লেখ থেকে এযুগে বাণিজ্যের অস্তিত্বের প্রমাণ মেলে। বৈদিক সাহিত্যে শত-অরিত্র’ নামে শত বঁড়বিশিষ্ট জলযান ও ধনার্থী বণিকের সমুদ্রযাত্রা ও সমুদ্র-স্তুতির উল্লেখ পাওয়া যায়। পরবর্তী বৈদিক যুগে উদ্বৃত্ত কৃষি-উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে শিল্প ও বাণিজ্যের অগ্রগতি ঘটে।
[3] প্রাক-মৌর্যযুগ: প্রাক্-মৌর্য যুগে গাঙ্গেয় উপত্যকায় কৃষির ব্যাপক অগ্রগতির পাশাপাশি শিল্প ও বাণিজ্যের ও যথেষ্ট অগ্রগতি হয়। মহাজনপদগুলির উত্থান, নগরের বিকাশ, মুদ্রার প্রচলন প্রভৃতি এযুগে বাণিজ্যের বিকাশে সহায়তা করেছিল। রাজগৃহ, চম্পা, বৈশালী, বারাণসী, উজ্জয়িনী, কৌশাম্বী, শ্রাবস্তী প্রভৃতি নগরী এই সময় বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে।
[4] মৌর্যযুগ: মৌর্যযুগে যােগাযােগ ব্যবস্থার উন্নতি, মুদ্রার ব্যাপক প্রচলন, কেন্দ্রীভূত শাসন, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, বাণিজ্যের সরকারি সহায়তা প্রভৃতির ফলে বাণিজ্যের অগ্রগতি সহজতর হয়েছিল। বণিকদের পণ্য চলাচলের নিরাপত্তার জন্য রাস্তায় পাহারার ব্যবস্থা ছিল।
[5] গুপ্ত ও গুপ্ত-পরবর্তী যুগ: গুপ্তযুগে শান্তি ও সমৃদ্ধির ফলে বাণিজ্যের অগ্রগতির ধারা অব্যাহত ছিল। এই সময় তাম্রলিপ্ত, ভূগুকচ্ছ, কল্যাপ, কাবেরীপত্তনম্ প্রভৃতি বন্দর থেকে পারস্য, বাইজানটাইন, ইথিওপিয়া, চিন, সিংহল, ব্রহ্মদেশ ও অন্যান্য দূরবর্তী দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চলত।
উপসংহার: গুপ্ত-পরবর্তী যুগে ব্যাবসাবাণিজ্য যথেষ্ট পিছিয়ে পড়েছিল বলে ড. রামশরণ শর্মা প্রমুখ মনে করেন। এই সময় রােম সাম্রাজ্যের পতনের ফলে ভারত-রােম বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
Leave a comment