(১) সাক্ষাৎ প্রত্যক্ষণ: এই প্রত্যক্ষণ মৌলিক প্রত্যক্ষপ নামে পরিচিত। এই প্রকার প্রত্যক্ষণে পাঁচটি জ্ঞানেন্দ্রিয়ের মধ্যে যে-কোনাে একটির দ্বারা বস্তুর কোনাে বিশেষ গুণকে নির্ধারণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, আমরা যখন এক টুকরাে বরফ স্পর্শ করি তখন তার ঠান্ডা ভাবটি জানতে পারি।
(২) অর্জিত প্রত্যক্ষণ: কোনাে একটি সংবেদন একটি বিশেষ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে অনুভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমেও তার প্রত্যক্ষণ ঘটে, তবে ওই প্রকার প্রত্যক্ষপকে অর্জিত প্রত্যক্ষণ বলে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বরফে হাত দিয়ে ঠান্ডা অনুভব করার সঙ্গে সঙ্গে বরফের সাদা রঙের গুণটিও দর্শন সংবেদনের মাধ্যমে প্রত্যক্ষিত হয়। বরফের এই সাদা রং প্রত্যক্ষণ হল অর্জিত প্রত্যক্ষণ।
(৩) সংপ্রত্যক্ষণ: আমাদের মনে যেসব অভিজ্ঞতা ইতিমধ্যেই সুসংবদ্ধ হয়ে আছে, সেইসব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই কোনাে নতুন ঘটনাকে আমরা প্রত্যক্ষ করি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একজন সাধারণ মানুষ যখন একটি প্রাণীকে দেখে, তখন সে তাকে কেবল একটি প্রাণী হিসেবেই দেখে। অন্যদিকে কোনাে প্রাণী-বিশারদ যখন সেই প্রাণীটিকে দেখেন, তখন তিনি প্রাণীটির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যকে পূর্ব-অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে শনাক্ত করার চেষ্টা করেন এবং প্রাণীটি কোন্ পর্বের বা শ্রেণির অন্তর্গত সে-বিষয়ে অভিমত ব্যক্ত করেন। একেই সংপ্রত্যক্ষণ বলে।
আধুনিক শিক্ষায় প্রত্যক্ষণের গুরুত্ব অপরিসীম। নীচে প্রত্যক্ষণের কয়েকটি শিক্ষামূলক গুরুত্ব সংক্ষেপে আলােচনা করা হল一
(১) শিখন ও প্রত্যক্ষণের পারস্পরিক প্রভাব: শিখনের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষণের মূল্য অপরিসীম। প্রত্যক্ষণের সময় যে অতীত। অভিজ্ঞতা আমাদের মনের মধ্যে কাজ করে তার পুরােটাই শিখন থেকে আসে। কারও মতে শিখন এবং প্রত্যক্ষ পরস্পরকে সহায়তা করে এবং পরস্পরকে প্রভাবিত করে।
(২) অনুকরণের ক্ষেত্রে অবশ্যক: অনুকরণের মাধ্যমে শিখনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে প্রত্যক্ষণের ওপর নির্ভর করতে। হয়। কারণ শিক্ষার্থী প্রাথমিক অবস্থায় শিক্ষকদের বা বয়স্কদের প্রত্যক্ষণের মাধ্যমে অনুকরণ করে।
(৩) দক্ষতা অর্জনে সহায়ক: কোনাে বিশেষ বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রেও প্রত্যক্ষণ শিক্ষার্থীকে যথেষ্ট সাহায্য করে। যে-কোনাে কাজের উৎকর্ষ নির্ভর করে দক্ষতার ওপর। এই দক্ষতা অর্জন উপযুক্ত নিখুঁত প্রত্যক্ষণের উপর নির্ভর করে।
(৪) সমস্যা সমাধানে সহায়ক: সমস্যা সমাধান একটি গুরুত্বপূর্ণ শিখন। সমস্যাপূর্ণ পরিস্থিতিতে কী ধরনের ঘটনাক্রম বা উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়, সেইসব বিষয় ভালােভাবে প্রত্যক্ষণ না করলে সমস্যার সমাধান সম্ভব হয় না।
(৫) পাঠ প্রস্তুতিতে সহায়ক: প্রতিদিনকার পাঠ প্রস্তুত করার সময় শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বিষয়বস্তুকে সঠিক প্রত্যক্ষণের প্রয়ােজন হয়। প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রত্যক্ষণ করার উপযুক্ত ক্ষমতা অর্জন করা উচিত।
(৬) জ্ঞানের বাস্তব প্রয়োগে প্রয়োজনীয়: অর্জিত জ্ঞান যদি সঠিক ক্ষেত্রে সঠিকভাবে প্রয়ােগ করা না যায়, তাহলে সেই জ্ঞান মূল্যহীন। এই কারণে কোনাে জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা অর্জনের সময় ওই জ্ঞানের বা অভিজ্ঞতার সামগ্রিক রূপটি প্রত্যক্ষ করা প্রয়ােজন। অন্যথায় ওই জ্ঞান প্রয়ােগের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে অসুবিধায় পড়তে হয়।
ওপরের আলােচনা থেকে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, শিক্ষার উদ্দেশ্যকে সফল করতে গেলে প্রত্যক্ষ অপরিহার্য।
Leave a comment