প্রশ্নঃ প্রতিষ্ঠান ও সংঘের পার্থক্য আলােচনা কর।

অথবা, প্রতিষ্ঠান ও সংঘের পার্থক্য বর্ণনা কর।

ভূমিকাঃ সামাজিক প্রতিষ্ঠান সমাজজীবনের প্রধান ভিত। মানুষের সংঘবদ্ধ জীবনের চেতনা থেকেই সামাজিক প্রতিষ্ঠানের উৎপত্তি এবং এর মাধ্যমেই সমাজজীবন প্রবহমান। মানবসমাজের বৈচিত্র্য ও জটিলতা সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যদিয়েই প্রকাশিত হয়। সমাজবিজ্ঞানী গিডিংসের মতে, মানবসমাজের যা কিছু মহৎ ও কল্যাণকর, তার সবকিছুই সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এক যুগ হতে অন্য যুগে বর্তায়। তাই মানবসমাজের বিকাশ ও অগ্রগতি তথা সুশৃঙ্খল সমাজজীবন গঠনের ক্ষেত্রে সামাজিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়ােজনীয়তা অপরিসীম।

সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং সংঘ বা সমিতির মধ্যে পার্থক্যঃ নিচে সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং সংঘের মধ্যে পার্থক্যসমূহ উপস্থাপন করা হলাে-

(১) সংজ্ঞাগতঃ সাধারণভাবে প্রতিষ্ঠান বলতে কতকগুলাে প্রতিষ্ঠিত কার্যাবলির সমষ্টিকে বুঝায়। আর মানুষ সংঘবদ্ধভাবেই এসব কার্যপ্রণালি নিয়ন্ত্রণ করে। সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সমাজের মানুষ তাদের সহজাত প্রয়ােজন মিটিয়ে থাকে। অন্যদিকে সমাজের কিছুসংখ্যক জনসমষ্টি যখন বিশেষ কোন উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে মিলিত হয় তখন আমরা তাকে সংঘ বা সমিতি বলে অভিহিত করতে পারি। অর্থাৎ সংঘ বা সমিতি হলাে সমাজের সেই সংগঠন যা অপেক্ষাকৃত বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে এবং যা সামাজিক ব্যাপারে সুপরিচালিত রীতি ও ব্যবস্থার অঙ্গ।

(২) তাত্ত্বিকগণের সংজ্ঞায়ঃ সামাজিক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে সমাজস্থ মানুষের উদ্দেশ্যসাধনের সমাজ অনুমােদিত পন্থা। সমাজবিজ্ঞানী এইচ, ই, বার্নস বলেন, সামাজিক প্রতিষ্ঠান হলাে সমাজ কাঠামাের উপাদান এবং সামাজিক কার্যাবলির সমষ্টি। যার মাধ্যমে মানবসমাজ সংগঠিত হয় এবং মানুষের প্রয়ােজনীয় বহুমুখী কাজকর্ম পরিচালিত হয়। অন্যদিকে সংঘ বা সমিতি হচ্ছে উদ্দেশ্য হাসিলের লক্ষ্যে গঠিত একটি কর্মপ্রণালি। সংঘ সম্পর্কে বিখ্যাত তাত্ত্বিক ম্যাকাইভার বলেন, যখন কোনাে উদ্দেশ্যসাধনের নিমিত্তে মুষ্টিমেয় লােক সমাজবদ্ধ হয়, তখন তাকে সংঘ বলা হয়।

(৩) উদাহরণঃ ইংরেজিতে ‘Institution’ শব্দটি দু’টি অর্থে ব্যবহৃত হয়। প্রথমত, এর অর্থ হচ্ছে প্রতিষ্ঠান যেমনঃ পরিবার, বিবাহ, রাষ্ট্র ইত্যাদি সুনির্দিষ্ট নিয়ম ও নীতিমালার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গড়ে ওঠে। দ্বিতীয়ত প্রতিষ্ঠান মানে হচ্ছে একই ধরনের কর্মপদ্ধতি যার মাধ্যমে গােষ্ঠীর কার্যকলাপের বৈশিষ্ট্য সূচিত হয়। যেমনঃ স্বামী-স্ত্রীর বৈধ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয় বিবাহ নামক এক কর্ম প্রক্রিয়া বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। সুতরাং উদাহরণ থেকে দেখা যাচ্ছে, সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও সংঘ বা সমিতি সমাজ জীবনের আলাদা দুটি প্রত্যয় হলেও এগুলাের কার্যক্ষেত্রে সম্পর্কও রয়েছে।

(৪) কার্যাবলিঃ সামাজিক প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য কোনাে পদ্ধতি বা কার্যকরি পরিষদ বা কোনােরূপ নীতিমালা প্রণয়নের প্রয়ােজন হয় না। তবে প্রতিষ্ঠান গঠিত হয় কতকগুলাে নিয়মনীতিকে অনুসরণ করে। কিন্তু সংঘ বা সমিতির কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য একটি কার্যকরি পরিষদ এবং নীতিমালা থাকা একান্ত প্রয়ােজনীয়। কেননা সংঘ বা সমিতি একটি অস্থায়ী ও উদ্দেশ্যসাধনের নিমিত্ত সংগঠন।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং সংঘ বা সমিতি ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। এগুলাে সমাজবিজ্ঞানের মৌল প্রত্যয়গুলাের মধ্যে অন্যতম। সমাজের প্রত্যেকটি মানুষ কোনাে না কোনােভাবে সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও নিয়মনীতির আওতাভুক্ত। অন্যদিকে সমাজজীবনের এ সকল নিয়মনীতিতে চলতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যারও সম্মুখীন হতে হয়।